একসময় এশিয়া একাদশ বনাম বিশ্ব একাদশ, এশিয়া বনাম আফ্রিকা একাদশ- এরকম জমজমাট সব ম্যাচ দেখত ক্রিকেট বিশ্ব। কোভিড-১৯ এর কারণে বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা মাঠে বসে এশিয়া আর বিশ্ব একাদশের ম্যাচ দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তেমনিভাবে বাঁহাতি আর ডানহাতি দের মধ্যে খেলা হলে কেমন হত?
ক্রিকেট তারকা থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ আর সাংবাদিকরা প্রায়ই নিজেদের পছন্দের সর্বকালের সেরা একাদশ বানিয়ে থাকেন। প্রত্যেকটি বড় টুর্নামেন্ট বা প্রত্যেক ক্রিকেটবর্ষ শেষে সবসময়ই সেরা একাদশ প্রকাশ করা হয়। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন বিশ্ব বাঁহাতি একাদশ নামের জম্পেশ একটা দল বানিয়ে ফেলা যাক!
তার আগে দুয়েকটা নিয়ম উল্লেখ করা যেতে পারে –
-
দলটা হবে ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্য।
-
যেসব খেলোয়াড় বোলিং করেন বাঁ হাতে কিন্তু ব্যাটিং করেন ডানহাতে অথবা উল্টোটা- তাদের এড়িয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। তবে এমন কাউকে টিমে নিতেই হলে শুধু ব্যাটসম্যান বা বোলার হিসেবে নেয়া হবে।
১. ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
ওপেনার হিসেবে এই নামটি নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার কথা না। অস্ট্রেলিয়ান এই বিধ্বংসী ওপেনার দলের জন্য এনে দিতে পারেন কাঙ্ক্ষিত শুরু। ওডিআইতে ৪৫.৮০ গড় আর ৯৫.৭৬ স্ট্রাইক রেটও ঠিকমত বোঝাতে পারবে না ওয়ার্নারের গুরুত্ব। ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটে যেকোনো দলেই অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারেন এই অজি ওপেনার।
২. তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)
ওয়ার্নারের সাথে ওপেনিংয়ে কার্যকর এক পার্টনার হতে পারেন বাংলাদেশের তামিম ইকবাল। যারা ভ্রু কুচকাচ্ছেন বাংলাদেশি বলে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে কি না তাদের জন্য অন্য অপশনগুলোও যাচাই করা যাক।
প্রথমেই যার কথা ভাবা যেতে পারে তিনি হচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেহেতু এই টিমে একজন উইকেট কিপার অবশ্যই লাগবে এ কারণে ডি কক অবশ্যই কঠিন প্রার্থী হতে পারতেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডি ককের কিছুটা পড়তি ফর্ম তামিমের পক্ষে কাজ করবে।
আরেকজন যিনি বিবেচনায় আসবেন তিনি ভারতের শিখার ধাওয়ান। চলুন কিছু পরিসংখ্যান দেখে আসা যাক। পুরো ক্যারিয়ার বিবেচনায় ডি ককের ৪৪.৬৫ গড় আর শিখার ধাওয়ানের ৪৫.১৪ গড় দুটোই তামিমের ৩৬.৭৪ গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। তবে গত কয়েকবছর বিবেচনায় অনেক এগিয়ে আছেন তামিম। গত দুই বছরে তামিমের ৪৯.৩৩ এর বিপরীতে ডি কক এবং ধাওয়ানের গড় যথাক্রমে ৪২.৫০ এবং ৪২.৮০। তবে তামিমের ৮০.৯২ স্ট্রাইক রেট ডি ককের ৯৭.৫৫ এবং ধাওয়ানের ৯৫.৯৫ স্ট্রাইক রেটের চেয়ে কম। যেহেতু এই দলে হার্ডহিটারদের অভাব নেই, সেহেতু তামিম রাখতে পারেন অ্যাঙ্কর রোল।
৩. সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
শুধুমাত্র এই বাঁহাতি টিমে নয়, বিশ্বের যেকোনো একাদশে অনায়াসে ঢোকার যোগ্যতা রাখেন সাকিব আল হাসান। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে আগে বাংলাদেশ টিমে তিনে ব্যাটিংয়ে শুরু করার পর থেকে যে দুর্দান্ত ব্যাটিং ফর্ম দেখিয়েছেন সাকিব, তাতে এই টিমের নাম্বার থ্রি পজিশনে ব্যাট করার গুরুদায়িত্ব তার কাঁধেই বর্তাবে। সাথে ১০টি ওয়ার্ল্ড ক্লাস ওভার তো আছেই। বিশ্বের সেরা এই অলরাউন্ডার যে একের ভেতর দুই!
৪. ইয়ন মরগান (ইংল্যান্ড); অধিনায়ক
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মরগান বিশ্ব বাঁহাতি একাদশেরও অধিনায়কত্ব করবেন। ইংলিশ এই ক্রিকেটার তার ধূর্ত নেতৃত্বের পাশাপাশি বিগ হিটিং সামর্থ্য দিয়ে সচল রাখবেন রানের চাকা। দ্রুত উইকেট পড়ে গেলে দলকে টেনে তোলার কাজটাও সারতে পারবেন দক্ষভাবে। এখনকার দুর্ধর্ষ ইংল্যান্ড দলের বদলে যাওয়ার অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে ধরা হয় তাকে।
৫. বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)
অলরাউন্ডার হিসেবে নয়, নিখাঁদ ব্যাটসম্যান হিসেবে থাকবেন বেন স্টোকস। তিনি যে বল করেন ডানহাতে! বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হলেও স্টোকসের সবচেয়ে বড় পরিচয় একজন ম্যাচ উইনার হিসেবে। অতিমানবীয় সব ইনিংস খেলা নিজের অভ্যাসে পরিণত করেছেন সাম্প্রতিক কালে। ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল অথবা হেডিংলি টেস্টে তার অতিমানবীয় দুটো ইনিংস ক্রিকেট-রুপকথারই অংশ হয়ে পড়েছে। এমন একজনকে ছাড়া বাঁহাতি একাদশের কথা চিন্তাই করা যাবে না।
৬. নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ); উইকেটকিপার
বাঁহাতি উইকেটকিপারদের সংখ্যা বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে খুব একটা নেই। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট আর কুমার সাঙ্গাকারাদের মতো অলটাইম গ্রেটদের জায়গায় বর্তমানে আছেন সম্ভবত চারজন। দক্ষিণ আফ্রিকার ডি কক, অস্ট্রেলিয়ার অ্যালেক্স ক্যারি, শ্রীলঙ্কার কুশল পেরেরা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান। পরিসংখ্যান এবং অভিজ্ঞতায় নিঃসন্দেহে ডি কক এগিয়ে থাকলেও নিয়মিত ওপেনিংয়ে ব্যাট করেন বলে বাদ পড়বেন। একই কারণে কুশল পেরেরাকেও বাদ দিতে হচ্ছে। ক্যারি আর পুরানের মধ্যে ক্যারিয়ার রেকর্ডস আর হার্ড হিটিং সামর্থ্যের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান নিকোলাস পুরানই এগিয়ে যাবেন। এ পর্যন্ত ২৫টি ম্যাচ খেলে তার মোট রান ৪৯.০৫ গড়ে ৯৩২। আর স্ট্রাইক রেট? ঈর্ষণীয় ১০৬.৫১!
৭. মিচেল স্যান্টনার (নিউজিল্যান্ড)
শেষের দিকে নেমে কার্যকর কিছু রান আর বুদ্ধিদীপ্ত ১০ ওভার। দলের দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে থাকবেন নিউজিল্যান্ডের মিচেল স্যান্টনার। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যেকোনো অধিনায়কের জন্য এক মোক্ষম অস্ত্র তিনি। আঁটসাঁট বোলিং করে প্রতিপক্ষের রানের চাকা আটকে ফেলতে তার যে জুড়ি মেলা ভার সেই প্রমাণ দিচ্ছে স্যান্টনারের ক্যারিয়ার ইকোনমি রেট (৪.৮৯)।
৮. মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
দুর্ধর্ষ সব ইয়র্কারে প্রতিপক্ষের স্টাম্প গুড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রথম পেস বোলার হিসেবে থাকবেন অজি মিচেল স্টার্ক। ১৫০ কিলোমিটার বেগের ইনসুইঙ্গার বা ব্যাটের পাশ দিয়ে সাঁ করে চলে যাওয়া আউটসুইং অথবা ব্যাটসম্যানকে মাটিতে শুইয়ে দেয়া সব বাউন্সার- একজন পেসারের জন্য যত অস্ত্র থাকা দরকার সবই যে আছে মিচেল স্টার্কের ভান্ডারে। থাক, আমরা না হয় কোনো পরিসংখ্যানের কথা না-ই বললাম!
৯. কুলদিপ যাদব (ভারত)
দলের স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে খেলবেন ভারতের কুলদিপ যাদব। পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিম এই পজিশনের জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুললেও বোলিং আক্রমণে বৈচিত্রতা আনার জন্য রাখা হয়েছে ভারতের এই চায়নাম্যান বোলারকে। তার রেকর্ডও দুর্দান্ত। ৬০ ম্যাচে নিয়েছেন ১০৪ উইকেট। গড় মাত্র ২৬.১৬! তাছাড়া আধুনিক ক্রিকেটে রিস্ট স্পিনার ছাড়া সীমিত ওভারের কোনো দল কল্পনাই করা যায় না।
১০. ট্রেন্ট বোল্ট (নিউজিল্যান্ড)
বিশ্ব বাঁহাতি একাদশের পক্ষে শুরুতেই উইকেট তুলে নেয়ার জন্য নতুন বল হাতে তুলে নেবেন নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট। সম্ভবত বিশ্বের সেরা সুইং বোলার হিসেবে বোল্টকেই নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবেন যে কেউই। বোল্ট এই টিমে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমিরের জায়গা নিয়ে নেয়ায় কেউই আপত্তি করবেন বলে মনে হয় না।
১১. শেলডন কর্ট্রেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
প্রথমেই বলে নেয়া যাক, এই পজিশনের জন্য কাকে নেয়া যায় সেটা ঠিক করতে সবচেয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে।
প্রথমেই যার নাম মাথায় এসেছে তিনি মুস্তাফিজুর রহমান। তবে ফিজের বিশেষত্ব ডেথ বোলিং হওয়ায় এবং দলে ইতোমধ্যে দুজন বিশ্বমানের ডেথ বোলার থাকায় বাদ পড়েছেন ফিজ। তবে ফিজের সাম্প্রতিক ফর্মও তার পক্ষে কথা বলবে না। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির বাদ পড়েছেন পেস বোলিং অ্যাটাকের বৈচিত্র্যের স্বার্থে। অতএব, তৃতীয় পেসার হিসেবে এমন একজনকে লাগবে যিনি ইনিংসের মাঝামাঝি বল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন এবং যিনি হবেন ‘হিট দ্য ডেক হার্ড’ টাইপের বোলার। সবকিছু বিবেচনায় সামনে আসেন দুজন। পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেলডন কর্ট্রেল।
দুজনের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলেও খুব একটা পার্থক্য করা যাবে না। তবে গড় আর স্ট্রাইক রেটে কর্ট্রেল এগিয়ে আছেন খানিকটা। তবে একটা ব্যাপারে কর্ট্রেল নিঃসন্দেহে এগিয়ে আছেন। সেলিব্রেশনে! উইকেট পাওয়ার পর স্যালুট দেয়ার দৃশ্যটার জন্য হলেও তাকে দলে রাখা যায়!
অনারেবল মেনশন
কুইন্টন ডি কক, ওয়াহাব রিয়াজ, মুস্তাফিজুর রহমান।
বিশ্ব বাঁহাতি একাদশের বিপক্ষে খেলবে কারা? নিশ্চয়ই বিশ্ব ডানহাতি একাদশ। ঝটপট বানিয়ে ফেলুন আপনার পছন্দের ডানহাতি একাদশ।