Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ভবিষ্যৎকথন

টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয় দলের নিয়মিত মুখ মুরালি বিজয় ইতিমধ্যেই ১২টি টেস্ট শতক এবং ১৫টি অর্ধশতকের সাহায্যে প্রায় চার হাজার টেস্ট রান করেছেন। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্যসমাপ্ত টেস্ট সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে নিষ্প্রভ থাকার কারণে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। বিশেষ করে লর্ডস টেস্টের দুই ইনিংসেই শূন্য রানে সাজঘরে ফেরার কারণে পরবর্তী টেস্টে তাকে বাদ দেওয়া হয়। তৃতীয় টেস্টে দল থেকে বাদ পড়ার পর শেষ দুই টেস্টে মূল স্কোয়াড থেকেই বাদ পড়েন বিজয়। 

বর্তমানে ভারতের টপ অর্ডার এবং মিডল অর্ডারে জায়গা পাওয়া বেশ কঠিন। বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার সুযোগের অপেক্ষায় থাকছেন। তাই টপ অর্ডারে কেউ টানা কয়েক ম্যাচ ব্যর্থ হলেই নিজের জায়গা হারান। এবং খুব সহসা দলে জায়গা পায় না। বিজয়ের সাথেও তাই ঘটেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথে দল থেকে বাদ পড়ার পর তিনি ভেঙে পড়েননি। নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠানোর জন্য কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে এসেক্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। সেখানে পাঁচ ইনিংসে ব্যাট করে যথাক্রমে ৫৬, ১০০, ৮৫, ৮০ এবং দুই রানের ইনিংস খেলেন। তারপরও নির্বাচকদের সুনজরে আসতে পারেননি তিনি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের জন্য ঘোষিত ভারতীয় স্কোয়াডে ডাক পাননি বিজয়।

লর্ডস টেস্টের দুই ইনিংসে শূন্য রানে ফিরে গিয়েছিলেন মুরালি বিজয়, এরপর আর দলে ডাক পাননি তিনি; Image Source: Associated Press

মুরালি বিজয় দল থেকে বাদ পড়ার পর জানান, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দল থেকে বাদ দেওয়ার পর প্রধান নির্বাচক কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। একইরকম ঘটনা ঘটেছে করুণ নায়ারের সাথেও, তিনিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মূল স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েন। এই সময়ে কোনো নির্বাচকই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, এমনটাই জানান তিনি। এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মূল স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে জায়গা পাননি। তাকে টপকে দলে জায়গা করে নেন হানুমা বিহারি। বিহারি শেষ দুই টেস্টের জন্য স্কোয়াডে ডাক পেয়ে শেষ টেস্টে একাদশে জায়গা পান। সুযোগ পেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ৫৬ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতে তিন উইকেট শিকার করেছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ৬০ ব্যাটিং গড়ে রান করা এই ব্যাটসম্যান। তারপরও টিম কম্বিনেশনের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একাদশে জায়গা পাননি তিনি।

করুণ নায়ার দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পরের ম্যাচেই দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর আর মাত্র তিনটি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। নায়ার সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন ২০১৭ সালের মার্চে, এরপর স্কোয়াডে থাকলেও মূল একাদশে জায়গা হয়নি তার। 

দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিপক্ষে দ্বিশতক হাঁকিয়ে দলের ভাবনায় আসেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল; Image Source: PTI

করুণ নায়ার, মুরালি বিজয়, শিখর ধাওয়ানরা নিজেদেরকে যোগ্য মনে করলেও নির্বাচকদের কাছে তাদের দলে রাখার কাজটা মোটেও সহজ নয়। কারণ প্রতিনিয়ত নির্বাচকদের দরজার কড়া নাড়ছেন রঞ্জী ট্রফিতে রানের পাহাড় গড়া প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানরা। তাদের মধ্যেই এমন একজন ব্যাটসম্যান হলেন মায়াঙ্কা আগারওয়াল। গত কয়েক মৌসুম ধরে রানের ফোয়ারা ছোটানো আগারওয়াল বেশ কিছুদিন ধরেই নজরকাড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আসছেন ; তবুও বর্তমান ভারতীয় দলে জায়গাটা পাওয়া আর হয়ে উঠছিলো না তার। অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের জন্য দলে ডাক পেলেন এই তরুণ ব্যাটসম্যান।

১.

রঞ্জী ট্রফিতে ১,১৬০ রান, বিজয় হাজারে ট্রফিতে ৭২৩ রান, ইংল্যান্ড সফরে দুটি শতক, দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিপক্ষে দ্বিশতক – এত কিছুর পর অবশেষে প্রথমবারের মতো ভারতের স্কোয়াডে ডাক পেলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। তবে ভারতের মূল একাদশে সম্ভবত এখনই সুযোগ পাওয়া হচ্ছে না তার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের মূল একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন আরেক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান পৃথ্বী শ’, আর সুযোগ পেয়েই তা কাজে লাগিয়ে ১৩৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। এতে করে আগারওয়ালের অপেক্ষা আরও কিছুটা দীর্ঘায়িত হলো।

২০১৭ সালের নভেম্বরে রঞ্জী ট্রফিতে সহস্রাধিক রান করেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল; Image Source: ESPNcricinfo

মায়াঙ্ক আগারওয়াল ২০১৭-১৮ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। কর্ণাটকের এই উদ্বোধনীয় ব্যাটসম্যান টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলেন জোড়া শূন্য রানের ইনিংস দিয়ে। কিন্তু এরপর ১১ ইনিংসে ট্রিপল সেঞ্চুরি সহ পাঁচটি শতকের সাহায্যে ১০৫.৪৫ ব্যাটিং গড় এবং ৬৮.৮০ স্ট্রাইক রেইটের সাহায্যে ১,১৬০ রান করে টুর্নামেন্ট শেষ করেন। ২০১৭ সালের শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই রঞ্জী ট্রফিতে সহস্রাধিক রান সংগ্রহ করেছিলেন। তার ইনিংসগুলো ছিলো যথাক্রমে ৩০৪*, ১৭৬, ২৩, ৯০, ১৩৩*, ১৭৩ এবং ১০৪*।

এক ঘরোয়া মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েন মায়াঙ্ক আগারওয়াল; Image Source: ESPNcricinfo

রঞ্জী ট্রফিতে দুর্দান্ত সাফল্যের পর সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে ১৪৫ স্ট্রাইকরেটে ২৫৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর বিজয় হাজারে ট্রফিতে ৭৬.৪৬ ব্যাটিং গড়ে এবং ১০৭.৯০ স্ট্রাইকরেটে ৭২৩ রান করেছিলেন। তিনি ঐ মৌসুমে সবমিলিয়ে আটটি শতকের সাহায্যে ২,১৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন, যা কোনো ভারতীয় ক্রিকেটারের এক ঘরোয়া মৌসুমে সর্বাধিক রানের রেকর্ড।

এমন দুর্দান্ত সাফল্যের পর অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান কিংবা এশিয়া কাপের স্কোয়াডে জায়গা করে নিবেন তিনি। তবে বিগ বাজেটের আইপিএলে এসেই ছন্দপতন হয় তার। পুরো টুর্নামেন্টেই যেন নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে ১১ ম্যাচে ১২ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ১২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ আসরে সফলতা পেলে হয়তো আরও আগেই জাতীয় দলে ডাক পেতেন তিনি।

আইপিএলে ব্যর্থ ছিলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল; Image Source: BCCI

আইপিএলে নিজের ব্যর্থতা সম্পর্কে মায়াঙ্ক আগারওয়াল বলেন,

“আইপিএল অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম, আইপিএলে ভালো করতে পারলে নিঃসন্দেহে অনেক বড় পরিবর্তন হতো। আমি মনে করি, আমি নিজেকে নিচের দিকে ঠেলে দিয়েছি। আইপিএলে রান করা উচিৎ ছিল আমার। কিন্তু আইপিএলের পর যখন ঠাণ্ডা মাথায় বসলাম, তখন দুই মাস আগের কথা ভেবে বললাম, দ্যাটস ওকে। আমার একটা বাজে আইপিএল গেলো, কিন্তু এখান থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। তারপর আমি নিজে নিজেকে বলেছি, শুধুমাত্র একটা টুর্নামেন্টের দিকে তাকালে হবে না। হ্যাঁ, ঐ দুই মাস আমার ভালো কাটেনি। কিন্তু শেখার দিক থেকে আমার সময়টা বেশ কেটেছে।”

২.

আইপিএলে নিজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারলেও ইন্ডিয়া ‘এ’ দলের পক্ষে নিয়মিত পারফর্ম করেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চারদিনের ম্যাচে ২২০ রান, ইংল্যান্ড সফরে দু’টি শতক এবং ইন্ডিয়া ‘বি’ দলের হয়ে চারদেশীয় সিরিজে একটি শতক এবং একটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন তিনি। সবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৯০ রানের ইনিংস খেলে নির্বাচকদের সুনজরে আসেন এবং প্রথমবারের মতো ভারতের ড্রেসিংরুমে প্রবেশ করার টিকেট পেয়ে যান।

২০১৮ সালে লিস্ট-এ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক মায়াঙ্ক আগারওয়াল; Image Source: Getty Images

পৃথ্বী শ’ নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করার দরুন মায়াঙ্ক আগারওয়াল যে এত দ্রুত টেস্ট ক্যাপ পাচ্ছেন না, সেটা হয়তো তিনি নিজেও জানেন। বাদ পড়া এবং দলে সুযোগ না পাওয়া ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে নির্বাচকেরাও জানিয়ে দিয়েছেন রঞ্জী ট্রফি এবং ইন্ডিয়া ‘এ’ দলের হয়ে নিয়মিত রান করার নির্দেশনা। মায়াঙ্ক সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই রান করে যাচ্ছেন। ২০১৮ মৌসুমে লিস্ট-এ ক্রিকেটে ২৪ ম্যাচে সাতটি শতক এবং ছয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬৯.২৬ ব্যাটিং গড়ে ১,৫৯৩ রান সংগ্রহ করেছেন, যা এই বছর লিস্ট-এ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ।কর্ণাটকের এই আক্রমণাত্মক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত ৪৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ এবং ৭০টি লিস্ট-এ ম্যাচ খেলেছেন। প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৫০.৩২ ব্যাটিং গড়ে ৩,৩৭২ এবং লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৫০.৩১ ব্যাটিং গড়ে ৩,৪৭২ রান করেছেন। স্বীকৃত প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ইতিমধ্যেই ২১টি শতক হাঁকিয়েছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল।

লিস্ট-এ এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পঞ্চাশের উপর ব্যাটিং গড়ে রান করেছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল; Image Source: ESPNcricinfo Ltd

৩.

মায়াঙ্ক আগারওয়াল ১৯৯১ সালে ১৬ই ফেব্রুয়ারি কর্ণাটকে জন্মগ্রহণ করেন। তার ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয় স্কুল ক্রিকেট দিয়ে। ১৩ বছর বয়সে ‘বিশপ কটন বয়েজ স্কুল’-এর আক্রমণাত্মক ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসাবে তার বেশ নামডাক ছিলো। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সব ধাপ অতিক্রম করে ২০০৮-০৯ মৌসুমে কুচবিহার অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে পাঁচ ম্যাচে ৫৪ গড়ে ৪৩২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর ২০০৯ সালে হোবার্টে অস্ট্রেলিয়া অনুর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ১৬০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

ভারত ‘এ’ দলের হয়ে অনেকদিন ধরে প্রতিনিধিত্ব করছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল; Image Source: PTI

মায়াঙ্ক আগারওয়াল ২০১০ সালে অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন, ছয় ম্যাচে ১৬৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। ঐ আসরে ভারতের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন লোকেশ রাহুল। তিনি ইতিমধ্যেই ভারতের হয়ে তিন ফরম্যাটেই শতক হাঁকিয়ে ফেলেছেন।

অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার প্রায় তিন বছর পর মায়াঙ্ক ২০১৩ সালে রঞ্জী ট্রফিতে খেলার সুযোগ পান। প্রথম শতক হাঁকাতে তার অপেক্ষা করতে হয় ২০১৫ সাল পর্যন্ত। ২০১৭ সালে এসে এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান নিজের সামর্থ্যানুযায়ী রান পাওয়া শুরু করেন। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মূল একাদশে জায়গা পাবেন কি না, তা এখন নির্ভর করছে নিয়মিত কোনো সদস্যকে টিম ম্যানেজমেন্টের বিশ্রাম দেওয়া-না দেওয়ার মতো দোলাচলের ওপর। তবে এই সিরিজে সুযোগ না পেলেও এই ফর্ম ধরে রাখতে পারলে যে খুব শীঘ্রই ভারতের হয়ে খেলতে দেখা যাবে মায়াঙ্ককে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

Featured Image Source: PTI

Related Articles