Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মিরাকল অফ মেলবোর্ন: এভাবেও ফিরে আসা যায়!

ক্রিকেট নাকি গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার টনি গ্রেগের এই উক্তিটি ঠিক কতটা যথার্থ, তা ক্রিকেট ইতিহাসের বেশ কিছু নাটকীয় ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখলেই আঁচ করা যায়। নিশ্চিত হারের মুখ থেকে দোর্দণ্ড দাপটে ফিরে আসার অনেক নজির ক্রিকেট ইতিহাসে আছে। একবিংশ শতাব্দীতে এমন চূড়ান্ত নাটকীয় ম্যাচগুলোর তালিকা করলে সেখানে ২০১০ সালে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া বনাম শ্রীলঙ্কার মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি অবশ্যই থাকবে। আট বছর আগের সেই ম্যাচটিতে ঠিক কী ঘটেছিলো, কেমন ছিল সেই ম্যাচের নাটকীয়তা- চলুন জেনে আসা যাক সেসব গল্প।

শুরুর প্রেক্ষাপট

২০১০ সালের অক্টোবরের শেষদিকে একটি টি-টুয়েন্টি ও তিনটি ওয়ানডে খেলতে অস্ট্রেলিয়া সফরে যায় শ্রীলঙ্কা। অতীতে কখনোই অজিদের মাঠে সিরিজ জিততে পারেনি লঙ্কানরা তাই এ দফায় সিরিজ জিতে সেই অপূর্ণতা ঘোচানোর লক্ষ্যে বদ্ধ পরিকর ছিল দলটি। একমাত্র টি-টুয়েন্টি সাত উইকেটে জিতে নিয়ে সফরের শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করে শ্রীলঙ্কা। ৩রা নভেম্বর মেলবোর্নে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয় দু’দল।

নাটক শুরুর পূর্বভাগ

নিয়মিত অধিনায়ক রিকি পন্টিং ইনজুরির কারণে না খেলায় এ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেন মাইকেল ক্লার্ক। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ইনিংসের শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকায় শুরু থেকেই বেশ বিপদের মধ্যে ছিল অজিরা। শেষপর্যন্ত মাইকেল হাসির অপরাজিত ৭১ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ২৩৯ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায় অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কার পক্ষে পেসার থিসারা পেরেরা ৪৬ রানের বিনিময়ে তুলে নেন ৫ উইকেট। 

৫ উইকেট তুলে নিয়ে অজিদের বড় ধাক্কা দেন থিসারা পেরারা; Image Source: espncricino.com

টার্গেট হিসেবে ২৪০ রান খুব কঠিন কোনো লক্ষ্য নয়। তবে মেলবোর্নের বিশাল বড় মাঠের কারণে এরকম মধ্যম মানের সংগ্রহই এখানে অনেক সময় বড় হয়ে ওঠে। এই টার্গেট তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলায় লঙ্কানদের ওপর চাপটা আরো বেড়ে যায়। তৃতীয় উইকেট জুটিতে অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারার সাথে আরেক অভিজ্ঞ সারথি মাহেলা জয়াবর্ধনের ৫৪ রানের জুটিতে সেই চাপ কিছুটা সামলে ওঠে শ্রীলঙ্কা। তবে মাহেলা ব্যক্তিগত ১৯ রানে ডোহার্টির বলে আউট হওয়ার পর আবারো চাপে পড়ে যায় দলটি।

নিজের অভিষেক ম্যাচে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের উপর ছড়ি ঘোরাতে থাকেন জেভিয়ার ডোহার্টি, তার বলেই মাত্র ৪ রান করে আউট হয়ে যান চামারা সিলভা। একপ্রান্তে একা লড়ে যাওয়া কুমার সাঙ্গাকারাকে ব্যক্তিগত ৪৯ রানে ফিরিয়ে দিয়ে লঙ্কানদের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটাও দেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ডোহার্টির ৪ উইকেটের স্পেলের তোপে পড়ে মাত্র ১০৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারার দ্বারপ্রান্তে চলে যায় শ্রীলঙ্কা। 

মহাকাব্যিক জুটি

তখন ২৫.২ ওভারের খেলা হয়েছিলো, ক্রিজে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের সাথে যোগ দেন লাসিথ মালিঙ্গা। ম্যাথিউসের বয়স মাত্র ২৩ বছর, তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তখন দু’বছরও পার করেনি। আর মালিঙ্গা তো পুরোদস্তুর একজন বোলারই, এ ম্যাচের আগে ওয়ানডেতে তার সর্বোচ্চ সংগ্রহই ছিল মাত্র ১৬ রান। দুই উইকেট হাতে নিয়ে লঙ্কানদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল আরো ১৩৩ রান! তাই এমন পরিস্থিতিতে জয় থেকে শ্রীলঙ্কার হারই একমাত্র ফলাফল মনে হওয়াটা যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত ছিল। অবস্থা করুণ দেখে অনেক লঙ্কান সমর্থকও হয়তো মাঠ ছেড়ে বাড়ির পথও ধরে ফেলেছিলো। এমন পরিস্থিতিতে টনি গ্রেগ ধারাভাষ্য কক্ষে বলে উঠেন,

It’s 107/8, and Murali to come out. If Lanka wins this match it’ll be a miracle. 

সেই মিরাকলের আশাতেই হয়তো ম্যাথিউস তখনো হাল ছাড়েননি, ব্যাটিংয়ে আনাড়ি মালিঙ্গাকে নিয়েই অসম্ভব এই লক্ষ্যের পিছনে ছুটতে শুরু করেন। এদিকে এমন অবস্থা দেখে ২৭ তম ওভারেই ব্যাটিং পাওয়ার প্লে নেয় শ্রীলঙ্কা।  মালিঙ্গাকে যাতে জনসন, সিডলদের বোলিং তোপের সামনে পড়তে না হয় সেকারণে জুটির প্রথমদিকে ম্যাথিউস একাই পেসারদের বল খেলে যাচ্ছিলেন।

তবে সেদিন অজিদের সেরা বোলার ডোহার্টিকে তিনটি চার মারার পর মালিঙ্গাকে আরেকটু ভরসা করা শুরু করেন ম্যাথিউস। তাছাড়া ২৪০ রানের লক্ষ্যের কাছাকাছি যেতে হলে শুধুমাত্র একপ্রান্ত আগলে রাখলেই হবে না, রানের চাকাটাও সচল রাখতে হবে। তাই এরপর মালিঙ্গাকে সম্পূর্ণ ভরসা করে খেলতে শুরু করেন ম্যাথিউস। সেই আস্থার প্রতিদান বেশ ভালোভাবে দিতে শুরু করেন মালিঙ্গা, সিডল বোলিংয়ে আসার পর তার করা প্রথম ওভারেই দুটি চার মারেন তিনি। 

ফিফটির পর ম্যাথিউস; Image Source: espncricino.com

অন্যপ্রান্তে ম্যাথিউসও অজি বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন। দ্রুত পাওয়ার প্লে নেওয়াটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যাবে তা হয়তো কেউ ভাবেনি, এই ৫ ওভার থেকে ৪৫ রান সংগ্রহ করে খেলায় ফিরে আসার পথ খুঁজে পায় লঙ্কানরা। অবস্থা বেগতিক দেখে অজি অধিনায়ক ক্লার্ক বোলিং অপশনের সবাইকে একে একে নিয়ে আসেন কিন্তু কেউই এই জুটির সামনে সুবিধা করতে পারছিলেন না! ৩৭ তম ওভারে সিডলের বলে চার মেরে নিজের অর্ধশতক পূরন করেন ম্যাথিউস। তখন জয় থেকে আর ৪৪ রানে দূরে শ্রীলঙ্কা, অসম্ভব এক লক্ষ্যমাত্রাও তখন অনেক বেশি সম্ভব বলে মনে হচ্ছিলো।

জয় থেকে শ্রীলঙ্কা যখন ২৪ রান দূরে তখন জুটি ভাঙতে নিজের সেরা পেসার মিশেল জনসনকে বোলিংয়ে আনেন ক্লার্ক, বিপদ আঁচ করতে পেরে সেই ওভারে সিঙ্গেল প্রত্যাখ্যান করে পুরো ওভার নিজেই খেলেন ম্যাথিউস। জনসনের ওভার থেকে ১১ রান তুলে জয়ের লক্ষ্যমাত্রাকে ১৩ রানে নিয়ে আসেন তিনি। পরের ওভারে ওয়াটসনের বলে দুই রান নিয়ে নিজের ফিফটি পূরণ করেন মালিঙ্গা। নবম উইকেটে রেকর্ড রানের জুটি গড়ে এক অসম্ভব জয়ের দিকে আস্তে আস্তে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন এই দুজন। 

জনসনের বলে ইনসাইড আউট শটে দারুণ এক ছয় মারার সময়ে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস; Image Source: espncricino.com

শেষের নাটক

জয়ের খুব কাছাকাছি চলে যাওয়ার পর ম্যাথিউস আর মালিঙ্গা বেশ ধীরেসুস্থে খেলতে থাকেন। একপর্যায়ে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন হয় ৪২ বলে মাত্র ৩ রান। এমন সময়ে অজি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক নিজেই বল হাতে চলে আসেন। প্রথম ২ বলে দুটি সিঙ্গেল নিয়ে স্কোর সমান করে ফেলে এই জুটি। ঐতিহাসিক জয় থেকে আর মাত্র ১ রান দূরে শ্রীলঙ্কা। এমন অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই সব ফিল্ডার ইনার সার্কেলে নিয়ে আসেন অজি অধিনায়ক ক্লার্ক। তবে জয়ের জন্য খুব বেশি অস্থির হয়ে গিয়েছিলো এই জুটি, তাই তাড়াহুড়ো করে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন লাসিথ মালিঙ্গা! 

ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে নবম উইকেট জুটিতে রেকর্ড ১৩২ রান যোগ করে ৪৮ বলে ৫৬ রান করে মালিঙ্গা যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তখনো তার মুখে রাজ্যের চিন্তা। এভাবে এত দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তীরে এসে তরী ডুববে না তো? আশার কথা একটাই, স্ট্রাইকে তখন ম্যাথিউস। ক্লার্কের ওভারের বাকি ২ বল থেকে সেই ১ রান নিতে পারলে শেষ ব্যাটসম্যান মুরালিকে আর কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে না। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও ক্লার্কের ওই ২ বল থেকে রান বের করতে ব্যর্থ ম্যাথিউস! 

শেষ ধাপে নাটকের রঙ্গমঞ্চে ব্যাটসম্যান মুরালিই হয়ে ওঠেন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। ব্যাটিংয়ে যখনই সুযোগ পেয়েছেন তখনই পাগলাটে ধাঁচে ব্যাট চালিয়ে সবাইকে বিনোদন দিয়েছেন সর্বকালের সেরা এই অফ স্পিনার। তিনি কি পারবেন মাথা ঠাণ্ডা রেখে এই মহাকাঙ্ক্ষিত একটা রান বের করে নিতে? বল হাতে তখন অজি মিডিয়াম পেসার শেন ওয়াটসন, একদম আঁটসাঁট মাঠ সাজিয়ে মুরালির চাপটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অজি অধিনায়ক শেন ওয়াটসন। ওয়াটসনের ওভারের প্রথম বল, মুরালি সেই বলে কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন, তবে সেখান থেকেও কোনো রান আসেনি! 

আনন্দে হাওয়ায় ভাসছেন মুরালি ও ম্যাথিউস; Image Source: espncricino.com

উত্তেজনার পারদ তখন তুঙ্গে, ওয়াটসন তার ওভারের দ্বিতীয় বলটি করলেন। এবার কিছুটা খেই হারিয়ে ফেললেন এই অজি পেসার, অনসাইড দিয়ে বের হয়ে যেতে থাকা বলে ফ্লিক করে দিলেন মুরালি। ফাইন লেগকে ফাঁকি দিয়ে চার! মুরালির আনন্দ তখন দেখে কে! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাজারখানেক উইকেটের মালিক হয়তো বল হাতে কখনো এতটা উল্লাস করেননি যতটা উল্লাস এই চারটি রান নিয়ে করেছিলেন! ১৫ বছর আগে যে মেলবোর্নে তাকে চাকিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হতে হয়েছিলো, সেই মাঠেই তিনি এবার অন্যরকম এক স্মৃতির সাক্ষী হলেন। 

সেদিন মাঠে স্বাগতিকদের চেয়ে লঙ্কান সমর্থকদের সংখ্যাই বেশি ছিল; Image Source: espncricino.com

পুরো শ্রীলঙ্কা দল তখন জয়ের মূল নায়ক লাসিথ মালিঙ্গা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে নিয়ে ব্যস্ত। তাদের জয়োৎসবের সাথে স্টেডিয়ামে উপস্থির হাজার দশেক লঙ্কান দর্শকের গর্জন- সবমিলিয়ে অভাবনীয় এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে অজিদের মুখে তখন রাজ্যের বিষাদ, এমন হার হয়তো তখনও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো দলটির। ম্যাচশেষে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক সাঙ্গাকারা এই জয়কে তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা দুটি জয়ের মধ্যে একটি বলে উল্লেখ করেন, আর জয়ের পুরো কৃতিত্বটাই ম্যাথিউস আর মালিঙ্গার জুটিকে দেন। 

এদিকে ব্যাট হাতে নিজের জীবনের সেরা ইনিংস খেলার পর মালিঙ্গা বলেন, “ওই পরিস্থিতিতে আট উইকেট হারানোর পর রান বের করার চেষ্টা না করে শুধু ক্রিজ আঁকড়ে রাখলে কোনো লাভ হবে না জানতাম। এ কারণেই শুরু থেকে মারমুখী ভঙ্গিতে খেলেছি। অ্যাঞ্জেলোকে ধন্যবাদ, ও যেভাবে প্রতিটা ওভারের পর সাহস যুগিয়েছে ও পরামর্শ দিয়েছে সেটা না হলে হয়তো এরকম ইনিংস খেলতে পারতাম না।” ৮১ বলে ৭৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে ঠাণ্ডা মাথায় দলকে জয়ের পথে নিয়ে যাওয়া ম্যাচসেরা ম্যাথিউস আবার পুরো কৃতিত্ব মালিঙ্গার কোর্টেই ঠেলে দেন! মালিঙ্গার অমন আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য নাকি তার নিজের জন্যেও ব্যাট করাটা সহজ হয়ে গিয়েছিলো।  

ঐতিহাসিক জয়ের দুই নায়ক মালিঙ্গা ও ম্যাথিউস; Image Source: deccanchronicle.com

মূল কৃতিত্ব যারই হোক, এই ম্যাচটি যে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্যাচ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই নাটকীয় জয়ের আত্মবিশ্বাসে ভর করে সিডনিতে পরের ম্যাচটিও জিতে নিয়ে প্রথমবারের মতো অজিদের মাঠে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় শ্রীলঙ্কা। অবিশ্বাস্য সেই ম্যাচের পর পেরিয়ে গেছে আটটি বছর, আজও অস্ট্রেলিয়ান সামারে খেলা শুরু হলে ধারাভাষ্যকাররা সেই ‘মিরাকল অফ মেলবোর্ন’ এর কথা উল্লেখ করেন। ক্রিকেটে অসম্ভব বলে কিছু নেই তার জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে এই ঐতিহাসিক ম্যাচ।

This article is in Bangla language. It's an article about the famous ODI match between Australia and Sri Lanka. 

Featured Image: abc.net.au 

For references please check the hyperlinks inside the article.

Related Articles