লিওনেল মেসি বল পায়ে যতটা দক্ষ, বলা হয় কথা বলায় ততটা সাবলীল নন। কিন্তু স্পোর্ত পত্রিকাকে দেওয়া একান্ত এই সাক্ষাতকারে নিজের সব চিন্তা খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন বার্সেলোনার এই কিংবদন্তী।
কথা বলেছেন দল গঠন, প্রত্যাশা, নিজের কতৃত্ব, নেইমারের দলবদল, এমনকি রোনালদোর দেওয়া দাওয়াত নিয়েও। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটিই তুলে ধরা হলো সম্পূর্ণ বাংলায়।
দল হিসেবে গত মৌসুমটা আপনাদের (বার্সেলোনার) খুব ভালো যায়নি। যা-ই হোক, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আপনি অসাধারণ অর্জন করেছেন। ব্যালন ডি’অরের জন্য আপনি এবারও ফেবারিট। এই ব্যাপারগুলো কীভাবে মেলাবেন?
বছরটা খুব ভালো ছিলো না এই কারণে যে, শেষটা ভালো হয়নি। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচের আগ অবধি আমাদের খুব ভালো মৌসুম কাটছিলো। চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ায় পুরো মৌসুমটা দেখতে খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু আমরা আসলে ভালো করেছি। আমরা ট্রেবল জয়ের খুব কাছাকাছি ছিলাম। কিন্তু ওই একটা খেলা সব নষ্ট করে দিয়েছে। এরপর আমাদের জন্য কোপা দেল রে ফাইনাল খেলাটা কঠিন ছিলো। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভালো খেলেছিলাম। কিন্তু প্রথমার্ধেই তো খেলাটা আমরা দিয়ে এসেছিলাম। অবশ্যই এটা খারাপ একটা মৌসুম। কারণ, আমরা শুধুমাত্র লা লিগা জিতেছি। আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি।
আপনি কী মনে করেন, আপনি ব্যালন ডি’অরের জন্য ফেবারিট?
আমি জানি না। ব্যালন ডি’অরটা একটু আজব। কেউই সত্যি সত্যি জানে না যে, কে ফেবারিট। সম্প্রতি তারা ক্লাব ফলাফলের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। এটা খারাপ নয়। কখনো কখনো তারা বিশ্বকাপের জন্য দেয়; যেটা আবার সবাইকে সমান মূল্যায়িত করতে পারে না। আমি জানি না। সত্যি বলছি, আসলে এমন কোনো নির্দিষ্ট বাক্য নেই, যা দিয়ে আপনি ব্যালন ডি’অর জয়ীকে ব্যাখ্যা করতে পারেন। আমি কখনোই মনে করিনি যে, আমি ফেবারিট বা ফেবারিট নই। আমি আগেও যেমন বলেছি, ব্যক্তিগত পুরষ্কার আমার জন্য গৌণ ব্যাপার।
আপনার কী মনে হয়, দল এবার কেমন শুরু করলো? আপনি কি চিন্তিত?
না, আমি চিন্তিত নই। এটা একটু বিস্ময়কর। তবে আমাদের অনেক খেলোয়াড় ইনজুরিতে বাইরে ছিলো। অ্যাথলেটিকের বিপক্ষে আমরা ভালো খেলেছি। ওখানে গিয়ে খেলাটা সোজা নয়। আমরা শেষ তৃতীয়াংশে সঠিক পাসটা পাইনি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে অন্তত ম্যাচটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা পরাজয় দিয়ে খেলাটা শেষ করেছি। এটা আমাদের প্রাপ্য ছিলো না। এরপর বেটিসের বিপক্ষে আমি খুব ভালো একটা দলীয় পারফরম্যান্স দেখলাম। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধটা অসাধারণ ছিলো। কিন্তু আবারও একটা অ্যাওয়ে খেলা, ওসাসুনার বিপক্ষে আমাদের খেসারত দিতে হলো। আমি এতে চিন্তিত নই। তবে আমাদের বোঝা দরকার যে, আমাদের এভাবে শুরু করা উচিত না। এটা সত্যিই খুব খারাপ শুরু। আর এখন আন্তর্জাতিক বিরতির পর আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, সবকিছু যেন ঠিকমতো কাজ করে। আমরা যেন আরও শক্তিশালী হয়ে সামনের ম্যাচগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
যদি লা লিগা শিরোপা হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা যায়, সেটা কি মেনে নেবেন?
না। যখন মৌসুম শুরু হলো, আমরা সেই একই কথা আবারও বলেছি যে, আমরা সবকিছু জিততে চাই। আর সেজন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আমি আশা করি, আমরা খুব দ্রুত নিজেদের ফিরে পাবো এবং আমরা সবকিছু জিততে চাই। তবে এটা পরিষ্কার যে, আমি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চাই। কারণ, লম্বা সময় আগে আমি এটা জিতেছি। একটা ক্লাব হিসেবে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমাদের অবশ্যই চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে হবে। কিন্তু মৌসুমের এই শুরুতে আমি একটার বদলে আরেকটা জিততে চাই না। আমি দুটোই জিততে চাই।
আপনাদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী বেশি শক্তিশালী হলো- অ্যাটলেটিকো, রিয়াল মাদ্রিদ?
আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেকেই নতুন সাইনিং দিয়ে নিজেদের আরও শক্তিশালী করেছে। আমি বিশ্বাস করি অ্যাটলেটিকো অসাধারণ একটা দল এবং তারা খুব ভালো কিছু সাইনিং করেছে। মনে হয়েছিলো, ওরা বুঝি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওরা খুব ভালো একটা দল করেছে। সত্যিই ভালো, দলে অনেক অপশন আছে এবং খুব ভারসাম্যপূর্ণ। রিয়াল মাদ্রিদও ভালো সাইন করিয়েছে। তাদের আগে থেকেই হাতে যা খেলোয়াড় ছিলো, এর সাথে (এডেন) হ্যাজার্ডের মতো খেলোয়াড়কে দলে নিয়েছে। জুভেন্টাস খুব ভালো সাইন করিয়েছে; ম্যানচেস্টার সিটিও তাই। সবমিলিয়ে আমার মনে হয়, সবকিছু এখন আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং বড় দলগুলো আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
আপনারা অ্যানফিল্ডের বিপুল হতাশা নিয়ে এই মৌসুম শুরু করেছেন। আপনি এ নিয়ে কথাও বলেছেন। কিন্তু কখনো এটা ব্যাখ্যা করেননি যে, অ্যানফিল্ড বা রোমের এরকম একটা রাত আপনাকে কী শিক্ষা দিয়েছে?
ওই একটা ম্যাচের ব্যাপার নয় এটা। বরং চ্যাম্পিয়নস লিগের বিভিন্ন যে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে আমরা গেছি, সেটাই ব্যাপার। আপনি যদি এগিয়েও থাকেন, একটা খারাপ পারফরম্যান্স আপনাকে ছিটকে দিতে পারে। ইংলিশ স্টেডিয়ামগুলো তাদের দলগুলোকে অনেক সহায়তা করে। আপনি যদি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চান, তাহলে ঘরের বাইরে আপনাকে গোল করতে পারতে হবে। এটা খুব জরুরী। আমরা যখন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিলাম; তখনও এটাই ঘটেছিলো। আমি যদি ঠিকভাবে মনে করতে পারি, তাহলে আমরা প্রতিটা অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল করেছিলাম। সবকিছু ওপরে কথা হলো, আমরা খুব ভালো করেছিলাম, গোল করেছিলাম। আপনি যদি অ্যাওয়ে গোল করতে না পারেন, তাহলে কাজটা খুব কঠিন।
এটাই কী আপনার প্রধান শিক্ষা?
আমি তাই বিশ্বাস করি। আমি আগে থেকেই জানতাম, কারণ এটা অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু ওই ম্যাচটা একটা বড় ছাপ রেখে গেছে। একটা অ্যাওয়ে গোল অনেক বড় একটা ব্যাপার।
বার্সা ডি জং, গ্রিজমান, নেতো ও জুনিয়রকে কিনেছে। আপনি এবারের স্কোয়াডকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? এটা কি গতবারের চেয়ে ভালো স্কোয়াড?
আমি জানি না যে, এটা শ্রেয়তর কি না। গত বছরও আমাদের খুব ভালো স্কোয়াড ছিলো। এটা সত্যি যে, খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু খেলোয়াড় এসেছে এবার এবং এখন দলে অনেক বেশি বৈচিত্র আছে; সেটা মাঝমাঠ ও আক্রমণ, দুই জায়গাতেই। কিন্তু আগামী বছরটা ঠিক করে দেবে এটা শ্রেয়তর স্কোয়াড কি না। এটা নির্ভর করে, আমরা কী অর্জন করছি, তার ওপর।
বার্সা নেইমারকে ফেরাতে চেয়েছিলো। কিন্তু সেটা হয়নি। আপনি কি নেইমারকে ফিরতে দেখতে চেয়েছিলেন?
সত্যি বলছি, হ্যাঁ। আমি নেইমারকে ফিরে পেতে পছন্দ করতাম। যারা নেইমারের ফেরার বিপক্ষে, আমি তাদের বুঝতে পারি এবং ‘নেই’-এর সাথে কী হয়েছিলো, সে কীভাবে চলে গিয়েছিলো, সেটাও বোধগম্য ব্যাপার। কিন্তু স্রেফ খেলাধুলার জায়গা থেকে ভাবলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নেইমার বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন এবং তাকে স্কোয়াডে পাওয়া আমাদের লক্ষ্য অর্জনে আরও সহায়তা করতো। কিন্তু, শেষ অবধি এটা ঘটেনি। এখন আমাদের নিজেদের স্কোয়াড নিয়েই ভাবতে হবে এবং নিজেদের লক্ষ্যে মনোযোগ দিতে হবে।
আপনি কী মনে করেন, বার্সা তাকে ফেরানোর জন্য সম্ভব সবকিছু করেছে?
সত্যি বলতে কী, আমি জানি না। আসলে ওই দরকষাকষিটা কীভাবে হয়েছিলো, সে সম্পর্কে আমি বিস্তারিত জানি না। ফলে আমি এটা বলতে পারছি না যে, বার্সেলোনা সম্ভব সবকিছু করেছে কি না।
যেমনটা গুঞ্জন আছে, আপনারও কী মনে হয় যে, ক্লাব আসলে ড্রেসিংরুমকে খুশি করার জন্য একটা চেষ্টা করার অভিনয় করেছে?
আমি জানি না যে, বোর্ডে কী ঘটেছে। আমি জানি যে, আমি ‘নেই’-এর সাথে কথা বলেছি। আর ও আমাকে বলেছে যে, কী ঘটছে। ও ফেরার জন্য মরিয়া ছিলো। আমি জানি না, ক্লাব সত্যিই চেষ্টা করেছে কি না। আমি যেটা জানি, নেইমার আশা করছিলো যে, এটা হবে। আমি এটাও বুঝি যে, বার্সেলোনার সাথে তাদের যেসব পুরোনো ঘটনা আছে, তাতে পিএসজির সাথে দর কষাকষি করাটা সহজ ব্যাপার নয। আর এটা আরও কঠিন কারণ, নেইমার বিশ্বের সেরাদের একজন। এসব আলোচনা কখনোই সহজ হয় না। তবে আমি এ নিয়ে মতামত দিতে পারি না। কারণ, আমি সবকিছু জানি না। আমি সেটুকু জানি, যেটুকু প্রকাশিত হয়েছে এবং তারা যা বলেছে।
আপনি কি সবকিছু খুব ঘনিষ্ঠভাবে নজর রেখেছিলেন?
হ্যাঁ। অবশ্যই আমি ওকে চাচ্ছিলাম। শুধু খেলাধুলার কারণে নয়, ক্লাবের জন্যও। ওর ভাবমূর্তি, বাণিজ্য, পৃষ্ঠপোষকতা এবং এর সবকিছুও বাড়তে থাকতো। এটা ক্লাবকে অনেক এগিয়ে দিতো। কিন্তু ঘটনাটা ঘটেনি।
আপনি কি এই গ্রীষ্মে আর নেইমারের সাথে কথা বলেছেন? সে এই ব্যাপারটা কীভাবে নিলো?
এই ট্রান্সফার কাহিনী শেষ হওয়ার পর আর আমি ওর সাথে কথা বলিনি। আমি এরপর ইনজুরিতে পড়লাম এবং ও ট্রেনিং শুরু করলো। আমি যেটা জানি, ও ওখান থেকে চলে আসার জন্য এবং বার্সেলোনায় আসার জন্য মরিয়া ছিলো।
কোনো সময়ে কি মনে হয়েছিলো যে, চুক্তিটা হয়ে যাবে?
যেটা বললাম যে, প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন খবর প্রচার হচ্ছিলো এবং কোনোটাই পরিষ্কার হতে পারছিলাম না যে, আলোচনার ঠিক কী অবস্থা।
বলা হয়েছে, ড্রেসিংরুম নেইমারকে চাচ্ছিলো। এটা সত্যি?
তারা অনেক কিছুই রিপোর্ট প্রকাশ করে। কিন্তু আমরা তাকে সই করাতে বলেছি কি না? না। অবশ্যই আমরা যা শুনছিলাম, তা নিয়ে কথা বলছিলাম। শুনছিলাম, নেইমার ফিরতে পারে। আমরা আমাদের মত দিয়েছি যে, ওর ফেরাটা ভালো হবে কি না। কিন্তু আমরা কখনোই বলিনি যে, ওকে সই করাতেই হবে। আমরা আমাদের মত দিয়েছি। যেমনটা গ্রিজমানের ক্ষেত্রে বা অন্য খেলোয়াড় যারা এসেছে, তাদের ক্ষেত্রে দিয়েছি। এমনকি যারা আসেনি, তাদের ক্ষেত্রেও।
শেষ অবধি দলবদল নিয়ে যা হলো, তাতে নেইমার না আসায় আপনি কি হতাশ?
না। আমি ওকে ফিরতে দেখলে খুশী হতাম। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের অসাধারণ একটা স্কোয়াড আছে। আমরা তাকে ছাড়াও সবকিছু অর্জন করতে পারি। ফলে না, আমি হতাশ নই। একমাত্র আমি ওর পাশে খেলতে পারলে খুশী হতাম; এটাই।
এই গ্রীষ্মেও বলা হয়েছে, ক্লাব (বার্সেলোনা) তাই করে, আপনি যা চান। এসব শুনলে কী মনে করেন?
আমি এখন এসব কথায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এটাই প্রথমবার নয় যে, আমি এসব শুনছি। তবে এটা পরিষ্কার যে, আসল ঘটনা তা নয়। একই কথা আমার জাতীয় দল নিয়েও বলা হয়। দাবি করা হয়, আমি খেলোয়াড় বা কোচ পছন্দ করি বা আমার বাবা করেন। এখন আর আমি এসবে খুব একটা পাত্তা দেই না। আমি আমার ভূমিকা জানি এবং সত্যিটা জানি।
তার মানে সত্যি হলো, আপনি এসব নিয়ন্ত্রণ করেন না?
অবশ্যই না। আমি স্রেফ একজন খেলোয়াড়। আমি একটা জিনিসই চাই সেটা হলো জয় এবং আরও শিরোপা তুলে ধরতে। আমি অবশ্যই আরেকটা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চাই এবং দলের জন্য সেরাটা দিতে চাই। সবকিছু ফুটবল খেলে করতে চাই।
সংবাদ প্রকাশ হয়েছিলো যে, বার্সা ড্রেসিংরুম নাকি গ্রিজমানকে চাচ্ছিলো না। কারণ, সে যেভাবে শুরুতে আসতে আপত্তি করেছিলো এবং পরে মন বদলেছিলো, তাতে বার্সার খেলোয়াড়রা নাকি আহত হয়েছিলো। আপনি কি তার সাথে এখনও সময় কাটাতে পেরেছেন?
সত্যি বলতে, খুব অল্প। ফেরার পর থেকে আমি ইনজুরিতে ছিলাম এবং একা একা ট্রেনিং করছিলাম। আমি গ্রুপের সাথে ছিলাম না। ওরা সবাই বাইরে সফরে গিয়েছিলো এবং ফেরার পর ড্রেসিংরুমে খুব সামান্য দেখা হয়েছে। কিন্তু আমি ট্রেনিং সেশনে ছিলাম না। আমরা সামনে অনেক কিছু শেয়ার করার মতো অনেক সময় পাবো।
আপনার কিছু সতীর্থ, যেমন পিকে বা সুয়ারেজ বলেছেন যে, তারা ডেম্বেলের পেশাদারিত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট নন। আপনি তাকে কীভাবে দেখেন?
আমি বিশ্বাস করি, সে অসাধারণ এক প্রতিভা যে যা চায়, তা-ই করতে চারে। সে খুবই অল্প বয়সী। আমি মনে করি, এই বছরটা তার সামনে এগিয়ে এসে বার্সেলোনা সমর্থক গোষ্ঠী যা দেখতে চায়, সেরকম কিছু করার জন্য দারুণ সুযোগ। তার এই পরিবর্তনটা আরও পেশাদারিত্বের সাথে আনতে হবে। তার এটা মাথায় ঢোকানো দরকার যে, সে যেন ততটাই সফল হয়, যতোটা বার্সেলোনা আশা করে। আমি আশা করি, সে যেসব ইনজুরিতে পড়েছিলো, সেই দুর্ভাগ্যগুলো তার আর ঘটবে না। গত বছর তাকে আমাদের যখন সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো, তখনই সে ইনজুরিতে পড়েছিলো। আশা করি, এ বছর সেটা ঘটবে না। আশা করি তার যা আছে, এবার সে সেটা দেখাতে পারবে; অনেক কিছুই আছে তার। একজন খেলোয়াড় হিসেবে সে অসাধারণ।
২০১৪-১৫ মৌসুম থেকে বার্সেলোনা যে ২১টি নতুন সাইনিং করিয়েছে, তার মধ্যে কেবল ছয়জন ক্লাবে আছে। বেশিরভাগ খেলোয়াড় এখানে থাকতে পারছে না কেনো?
কারণ, বার্সেলোনায় খেলাটা খুব কঠিন একটা কাজ। এটা পৃথিবীর বৃহত্তম একটা ক্লাব। এখানে সবকিছুই কঠিন। সমর্থকরা, গ্রুপটা, সংবাদ মাধ্যমের কাভারেজ; সব কঠিন। আপনি এখানে এলেন আর ন্যু ক্যাম্পে নেমে গেলেন, এটা এত সোজা নয়। অনেকের জন্য এটা সমস্যা হয় না। অনেকের দ্রুতই সমস্যা হয়। যখন কারো শক্ত মানসিকতা থাকে, আত্মবিশ্বাসী থাকে, তখন তার সবকিছু পক্ষে থাকে। কিন্তু সবাই তো সমান নয়। অনেক লোক একই জিনিসে একইভাবে মানিয়ে নিতে পারে না। বার্সেলোনার হয়ে খেলাটা কখনোই সোজা নয়।
গত কয়েক বছরে বার্সেলোনায় চারজন টেকনিক্যাল সচিব ছিলেন। এটা কেমন ব্যাপার এবং এটা দলকে কতটা প্রভাবিত করে?
না। সত্যি হলো, এটা আমাদের প্রভাবিত করে না। এটা ক্লাবের জন্য এবং আশেপাশে সবার জন্য ভালো ব্যাপার যে, এই পদগুলোতে যদি আরও স্থিতিশীলতা ও কম পরিবর্তন দেখা যায়। টেকনিক্যাল সচিবের ভূমিকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা এমন কারো দখলে থাকা উচিত, যে কি না ক্লাবকে খুব ভালো চেনে, যার নিজের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো শক্তি আছে। এই ভূমিকায় এসব বৈশিষ্ট্য আছে এমন কারোরই থাকা উচিত।
পুওল কি এই পদে মানিয়ে যান?
আমি জানি না, সে কী চায় বা তাকে নিয়ে পরিকল্পনা কী। তবে সে এই পথেই হাঁটছে। পুওল এই পদের জন্য আদর্শ একজন মানুষ। আমি জানি না, এটা সে পছন্দ করবে কি না। কারণ, ওর সাথে আমি এ নিয়ে কথা বলিনি। তবে তার যে ভাবমূর্তি, খেলোয়াড়ী জীবন থেকে যেটা তৈরি হয়েছে এবং সে ক্লাবের কাছে যে অর্থ বহন করে, তাতে সে খুব ভালো একটা পছন্দ।
গত বছরের খারাপ সমাপ্তির পর গুঞ্জন ছিলো যে, এর্নেস্তো ভালবার্দে বরখাস্ত হতে যাচ্ছেন। আপনি কি তাকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন?
যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন সবাই সবচেয়ে খারাপটা ভাবে। কারণ, আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। এর আগের বছরও একইরকম ঘটেছিলো। যদিও আমি মনে করি, এবারের ঘটনা বেশি খারাপ। আমি যেমন বলেছি, আমি মনে করি, খেলোয়াড়দেরই দোষারোপ করা উচিত। আমরা যে পারফরম্যান্স করি, তার সাথে কোচিং স্টাফের কোনো সম্পর্ক নেই। ওই মুহুর্তটার আগ অবধি আমরা অসাধারণ একটা মৌসুম কাটাচ্ছিলাম। আমরা লিগে দাপট দেখাচ্ছিলাম, কোপ দেল রে-এর ফাইনালে উঠেছিলাম। ওটা আসলে কোচিং টিমের বদলে আমাদের (খেলোয়াড়দের) ব্যাপার বেশি।
জোসেপ মারিয়া বার্তেমিউ বলেছেন, আপনার চুক্তি অনুযায়ী আপনি এই মৌসুম শেষে ফ্রি ট্রান্সফারের যোগ্য হয়ে যাবেন। এটা কি সত্যি এবং বার্সেলোনা সমর্থকদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
আমি এটা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারি না। কারণ, আমাদের চুক্তিত গোপনীয়তার একটা ব্যাপার আছে। আমি যেটা বলতে পারি যে আমি যত দিন সম্ভব বার্সেলোনায় থাকতে চাই। আমি আমার ক্যারিয়ার জুড়ে বলে এসেছি, এটা আমার বাড়ি। কিন্তু একইসাথে আমি লম্বা চুক্তি চাই না। আমি এখানে আছি কারণ আমি ফিট আছি, খেলার উপযুক্ত আছি এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকতে চাই বলে। আমি আগেও বলেছি, আমি একটা বিজয়ী দল দেখতে চাই। আমার কাছে অর্থ বা চুক্তির ধারা তেমন কোনো অর্থ বহন করে না। অন্যান্য ব্যাপার আমাকে বেশি অনুপ্রাণিত করে। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, একটা জয়ী দল পাওয়া।
তার মানে আপনার পরিকল্পনা হলো, আপনি কেমন বোধ করেন, তার ওপর নির্ভর করে এক এক বছরের জন্য চুক্তি করা?
আমার পরিকল্পনা হলো, আমি যতদিন ভালো পারফরম করবো এবং সে জন্য আমার শরীর সাড়া দেবে, ততদিন চালিয়ে যাওয়া। এরপর আমার চুক্তি নিয়ে আমি আর ভাবিত নই। আমার চুক্তি আমি নিজে দেখাশোনাও করি না। আমার বাবা এটা প্রেসিডেন্ট বা যার সাথে কথা বলতে হয়, বলেন। আমি শুধু আমার চিন্তাটা জানাই।
ফলে আপনার এখানে থাকার মূল শর্ত হলো, একটা বিজয়ী দল পাওয়া?
অবশ্যই। আমি জিততে চাই। আর আমি এই ক্লাবের হয়েই জিততে চাই। এটা আমার বাড়ি। আমার অন্য কোথাও যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই এবং জিততে চাই।
লিওনেল মেসি হওয়াটা কি ক্লান্তিকর ব্যাপার?
না, ক্লান্তির নয়। আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ যে, আমি অনেক অসাধারণ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছি। এটা সত্যি যে, কখনো কখনো আমি কারো নজরে না পড়তে পছন্দ করি। বিশেষ করে যখন বাচ্চাদের সাথে থাকি, ওদের স্কুলে বা রাস্তায় থাকি। কখনো কখনো আমি ৮:৩০টার সময় ওদের নিয়ে যাই এবং লোকেরা আমার কাছে অটোগ্রাফ চায়। তখনও আমি অর্ধেক ঘুমে থাকি। কিন্তু এসব নিয়ে অভিযোগ করা ঠিক না।
লুই এনরিকে যখন জানালেন যে, তার মেয়ে মারা গেছে, সেটা কেমন লেগেছিলো?
এটা ভয়ংকর ছিলো। ওর যে চিকিৎসা চলছিলো, সেটা জানার পরও এমন কিছু আমরা প্রত্যাশা করিনি। এটা এমন একটা ব্যাপার, যা নিয়ে আপনি ভাবতে চাইবেন না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে। কিন্তু ঘরের কাছে এমন ঘটনা ঘটলে সেটা বেশি অনুভব করা যায়।
সম্প্রতি ক্রিস্টিয়ানো (রোনালদো) বলেছেন, তিনি আপনাকে মধ্যাহ্নভোজের দাওয়াত দিতে চান। আপনি কি এটা গ্রহণ করবেন?
হ্যাঁ। আমার তো এটাতে কোনো সমস্যা নেই। আমি সবসময় বলেছি, ওর সাথে আমার কোনো ঝামেলা নেই। আমরা হয়তো একসাথে ড্রেসিংরুম শেয়ার করিনি বলে বন্ধু নই। কিন্তু আমার সাথে তার বিভিন্ন পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দেখা হয় এবং আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। সম্প্রতি একটা অনুষ্ঠানে আমার দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছি। আমি জানি না, আমরা ডিনারে মিলিত হবো কি না। কারণ, আমাদের পথ যে এক জায়গায় মিলবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব জীবন আছে, নিজস্ব দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু অবশ্যই তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করবো।
ফুটবল সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন এই বইগুলো