রোহিত শর্মার ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল ২০০৭ সালে। অভিষেকের পর থেকে প্রায় অর্ধ যুগ মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলেছিলেন তিনি। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। মিডল-অর্ডারে ৮৪ ম্যাচ খেলে ৩১.৭২ ব্যাটিং গড়ে ১,৯৬৭ রান করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে ২০১১ সালে ১৩ ম্যাচে ৭২.৭৫ ব্যাটিং গড়ে ৫৮২ রান করেছিলেন। ২০১১ সালে ধারাবাহিকভাবে রান পাওয়ার পর ২০১২ সালে নিয়মিত দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ১৪ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ১২.৯২ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ১৬৮ রান তুলে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি।
ভারতীয় দলে এমন টানা ব্যর্থতার পর আরও সুযোগ পাওয়ার ঘটনা কম। তবে তৎকালীন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি তাকে আরও সুযোগ দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। বীরেন্দর শেবাগের অবসরের পর তাকে ২০১৩ সালে ওয়ানডেতে ইনিংস উদ্বোধন করতে পাঠানো হয়। একই বছর টেস্ট ক্রিকেটেও অভিষেক ঘটে তার। ওয়ানডেতে ওপেনার হিসাবে খেললেও টেস্ট খেলেছিলেন মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে। ওয়ানডেতে ওপেনার হিসাবে ব্যাট করতে নামার পর থেকেই রোহিতের ক্যারিয়ার বদলে যায়। এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১৩২ ইনিংসে ওপেনিং করে ২৫টি শতকের সাহায্যে ৫৭.৪৩ ব্যাটিং গড়ে ৬,৭১৯ রান সংগ্রহ করেছেন।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ওপেনার হিসাবে ধারাবাহিকভাবে রান করলেও টেস্ট ক্রিকেটে মিডল-অর্ডারে ব্যাট করে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থেকে মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলেছিলেন ২৭টি টেস্ট। এই ২৭ ম্যাচে ৩৯.৬২ ব্যাটিং গড়ে ১,৫৮৫ রান করেছিলেন, যার মধ্যে ঘরের মাঠে নয় ম্যাচে ৮৫.৪৪ গড়ে ৭৬৯ রান এবং বাইরের দেশে ১৮ ম্যাচে মাত্র ২৬.৩২ গড়ে ৮১৬ রান করেছিলেন।
রোহিত শর্মা ওয়ানডে ক্রিকেটে নিয়মিত বড় বড় ইনিংস খেলছিলেন বটে, তবে টেস্ট ক্রিকেটে মিডল-অর্ডারে রাহানের সাথে প্রতিযোগিতা করে পেরে উঠছিলেন না, বিশেষ করে দেশের বাইরে। অন্যদিকে, টেস্ট ক্রিকেটে গত কয়েক বছরে ভারতীয় ওপেনাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। মুরালি বিজয়, শিখর ধাওয়ান এবং লোকেশ রাহুল কেউই ধারাবাহিকভাবে রান পাননি। নবাগত পৃথ্বী শ’ ডোপ টেস্টে উত্তীর্ণ হতে না পেরে বর্তমানে নির্বাসনে আছেন। এমতাবস্থায় রোহিত শর্মাকে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ওপেনার হিসাবে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওপেনার হিসাবে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করেন রোহিত শর্মা। প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের ইনিংস খেলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন ১২৭ রানের ইনিংস। তিনি প্রথম ওপেনার হিসাবে নিজের অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে শতক হাঁকান। সুনীল গাভাস্কারের পর ভারতের দ্বিতীয় ওপেনার হিসাবে জোড়া শতক হাঁকানোর রেকর্ডও গড়েন ওপেনার হিসাবে নিজের প্রথম টেস্টেই। দ্রুত রান তোলার দিকে মনোযোগী থাকা রোহিত ম্যাচে মোট ১৩টি ছয় হাঁকিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১২টি ছয় হাঁকিয়েছিলেন পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম।
সিরিজের প্রথম টেস্টে জোড়া শতক হাঁকানোর পর দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪ রান করে আউট হন, এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে হয়নি। দ্বিতীয় টেস্টে রানের দেখা না পেলেও তৃতীয় টেস্টে রোহিত রানের দেখা পান। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বি-শতক হাঁকিয়ে ২১২ রানে থামেন তিনি। ওপেনার হিসাবে নিজের প্রথম সিরিজে চার ইনিংসে ১৩২.২৫ ব্যাটিং গড়ে ৫৩৪ রান করেন তিনি। ভারতীয় ওপেনারদের মধ্যে এক সিরিজে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন শুধুমাত্র বীরেন্দর শেবাগ। তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০৪ সালে ছয় ইনিংসে ৫৪৪ রান করেছিলেন। চার ইনিংস ব্যাট করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন রোহিত শর্মাই। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ফলস্বরূপ সিরিজসেরার পুরষ্কার জেতেন তিনি।
মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করা রোহিত শর্মার মতো আরও কয়েকজন ব্যাটসম্যান ওপেনার হিসাবে ক্যারিয়ার গড়ে সফলতা পেয়েছেন। চলুন, জেনে আসা যাক সেসব ক্রিকেটারদের সম্পর্কে।
বীরেন্দর শেবাগ (ভারত)
অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর দলের টপ-অর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তার কমতি ছিল না। তাই তিনি ওয়ানডে ওপেনার বীরেন্দর শেবাগকে টেস্ট ক্রিকেটেও ওপেনিং করার দায়িত্ব দেন। আক্রমণাত্মক এই ব্যাটসম্যানের টেস্ট ক্রিকেটে খেলা নিয়েও অনেকের দ্বিমত ছিল। সবার সব প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে অভিষেক টেস্ট ইনিংসে ছয় নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে ১০৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন শেবাগ। এরপর ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ টেস্টে মিডল-অর্ডারে ব্যাট করার পর ইনিংস উদ্বোধন করার দায়িত্ব পান তিনি। অভিষেক টেস্ট ইনিংসের মতো ওপেনার হিসাবে নিজের প্রথম ইনিংসেও অসাধারণ ব্যাটিং করে ৯৬ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে সমালোচকদের মুখ খোলার সুযোগ দেননি। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৪ রান করার পর ওপেনার হিসাবে তৃতীয় ইনিংসে ১০৬ রান করেছিলেন।
ওপেনার হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর বীরেন্দর শেবাগ একের পর বিধ্বংসী ইনিংস খেলতে থাকেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতক হাঁকানোর দুই ম্যাচ পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪৭ রানের ইনিংস খেলেন। ২০০৩ সালে মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনে ২৩৩ বলে ১৯৫ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দেন তিনি। এই ইনিংসের পর তিনি তার পরবর্তী দশটি শতকের সবক’টিকে ১৫০+ রানের ইনিংসে পরিণত করেছিলেন। এর মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩০৯ রান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১৯ রানের ইনিংস ছাড়াও রয়েছে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি, যার মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৯৩ রানের একটি ইনিংস রয়েছে। ঐ ইনিংসকে ট্রিপল সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারলে সবচেয়ে বেশি ট্রিপল সেঞ্চুরির মালিক হতেন তিনিই।
বীরেন্দর শেবাগকে খুব বেশিদিন মিডল-অর্ডারে ব্যাট করতে হয়নি। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্টেই ওপেনার হিসাবে প্রথমবারের মতো খেলতে নামেন। এরপর ১৭০ ইনিংসে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নেমে ৫০.০৪ ব্যাটিং গড়ে ৮,২০৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। মিডল-অর্ডারে দশ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৭.৯০ ব্যাটিং গড়ে তিনি ৩৭৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি ইনিংস উদ্বোধন করতে নামার পর থেকে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। গৌতম গম্ভীরের সাথে সফলভাবে জুটি বেধে ভারতকে বিশ্বসেরা টেস্ট দলগুলোর অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি।
সাইমন ক্যাটিচ (অস্ট্রেলিয়া)
মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে ২০০১ সালে সাইমন ক্যাটিচের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। তিনি মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেন। এই সময়ে তিনি ৩৮ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৬ ব্যাটিং গড়ে ১,২৬০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে নিজের শেষ চার ইনিংসে যথাক্রমে ১, ০, ২ এবং ০ রানের ইনিংস খেললে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। বাজে ফর্মের কারণে ২০০৭ সালে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও বাদ পড়েছিলেন তিনি।
ঐ বছরেই আবার তার ভাগ্য বদলে যায়। নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ১,৫০৬ রান সংগ্রহের পর ২০০৮ সালে আবারও টেস্ট দলে ডাক পান তিনি।
প্রায় তিন বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ডাক পাওয়া ক্যাটিচ এইবার খেলেন ওপেনার হিসাবে। ওপেনার হিসাবে ব্যাট করতে নেমে নিজের দ্বিতীয় টেস্টেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেন। এর এক ইনিংস পর আবারও শতক হাঁকিয়ে ১৫৭ রানে থামেন। ক্যাটিচ তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রিসবেন টেস্টে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে তিনি ১৩১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ২০১০ সালে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগে ওপেনার হিসাবে ৬১ ইনিংস ব্যাট করে আটটি শতক এবং ১৭টি অর্ধশতকের সাহায্যে ২,৯২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
রবি শাস্ত্রী (ভারত)
রবি শাস্ত্রীর টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল ১৯৮১ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। নিজের অভিষেক টেস্টে তিনি দশ নাম্বারে ব্যাট করতে নেমেছিলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ইনিংসে দশ নাম্বারে ব্যাট করার পর চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করেন সাত নাম্বারে। সাতে এক ইনিংস ব্যাট করার পর পরবর্তী দুই ইনিংসে ব্যাট করেন যথাক্রমে নয় এবং দশ নাম্বারে। ক্যারিয়ারের শুরুতে তার নির্দিষ্ট কোনো ব্যাটিং পজিশন ছিল না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের চতুর্থ টেস্টের প্রথম ইনিংসে দশ নাম্বারে ব্যাট করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেন ছয় নাম্বারে। ছয়ে ব্যাট করতে নেমে ১৩৪ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এর এক ইনিংস পর আটে ব্যাট করতে নেমে মাত্র সাত রানের জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম শতক হাতছাড়া করেন শাস্ত্রী।
রবি শাস্ত্রী ১৯৮২ সালে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ইনিংস উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়ে শূন্য রানে ফিরে যান। পরের টেস্টেও তিনি ওপেনার হিসাবে খেলে প্রথম ইনিংসে ৬৬ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন।
টেস্ট ক্রিকেটে তিনি প্রথম শতকের দেখা পান পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনার হিসাবে খেলতে নেমেই। ১৯৮৩ সালে করাচিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২৭ বলে ১২৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এই ইনিংসের পরও নিয়মিত ওপেনার হিসাবে খেলার সুযোগ পাননি তিনি। পরের টেস্টেই তাকে মিডল-অর্ডারে পাঠানো হয়। ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসে আবারও ওপেনার হিসাবে খেলার সুযোগ পান তিনি। ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে ওপেনার হিসাবে নিজের প্রথম ইনিংসেই ১০০ রান করেন। একই সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৭ রানের ইনিংস খেলার পর ১৯৯২ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা ২০৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
শাস্ত্রী ৮০ টেস্টের ক্যারিয়ারে ওপেনার হিসাবে ২৬ ইনিংস ব্যাট করে চারটি শতকের সাহায্যে ৪৪.০৬ ব্যাটিং গড়ে ১,১০১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে ৩৩.২৮ ব্যাটিং গড়ে তার মোট রান ২,৭২৯।
উইলফ্রেড রোডস (ইংল্যান্ড)
উইলফ্রেড রোডস মূলত বোলার ছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলার হিসাবে। ব্যাটিং করেছিলেন দশ নাম্বার ব্যাটিং পজিশনে। দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাট করেছিলেন ১১ নাম্বারে। বোলার হিসাবে অভিষেকের ১৩ বছর পর ১৯১২ সালে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসাবে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন রোডস। জ্যাক হবসের সাথে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৩২৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন, যা ৩৬ বছর পর্যন্ত বিশ্বরেকর্ড হিসাবে বহাল ছিল।
তিনি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ক্যারিয়ার শুরু হওয়া এই ক্রিকেটার যুদ্ধের পরও ক্রিকেট খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ১ থেকে শুরু করে ১১, সব পজিশনেই ব্যাটিং করেছিলেন। তবে সবচেয়ে সফল ছিলেন ওপেনার হিসাবে ব্যাট করতে নেমে।
১৯০৪ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তিনি ওপেনার হিসাবে ব্যাট করেছিলেন। এরপর ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে ফিরে গিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের শুরুতে যে পজিশনে ব্যাট করতেন।
তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ১১টি শতক হাঁকিয়েছিলেন, যার মধ্যে নয়টিই ওপেনার হিসাবে। রোডস মিডল-অর্ডারে ৫৫ ইনিংসে ব্যাট করে ২৩.১৩ ব্যাটিং গড়ে ৪৫৬ রান করেছিলেন। ওপেনার হিসাবে ৪৩ ইনিংস ব্যাট করে ৩৬.৭২ ব্যাটিং গড়ে করেছিলেন ১,৪৬৯ রান।
সনাৎ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সনাৎ জয়াসুরিয়ার অভিষেক ঘটেছিল বাঁহাতি স্পিনার হিসাবে, যে কি না ব্যাটিংও করতে পারেন। এরপর তাকে ১৯৯৩ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক ওপেনার হিসাবে খেলানো হয়, এবং তিনি সফলতা লাভ করেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে সফলতা পাওয়ার পর অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা তাকে টেস্ট ক্রিকেটেও ইনিংস উদ্বোধন করতে পাঠান। ১৯৯৪ সালে ওপেনার হিসাবে নিজের প্রথম টেস্টে নয় এবং এক রান করে সাজঘরে ফেরেন। এরপর এক বছর টেস্ট স্কোয়াডের বাইরে ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনার হিসাবেই ডাক পান। পুনরায় দলে ফিরে প্রথম ইনিংসে ৪৮ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১১২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন জয়াসুরিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শতক হাঁকানোর পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি জয়াসুরিয়াকে। পরের বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে কলম্বোতে ১১৩ রানের ইনিংস খেলার পর একই বছর (১৯৯৭ সালে) ভারতের বিপক্ষে ৩৪০ এবং ১৯৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। জয়াসুরিয়া মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে ৩৬ ইনিংসে একটি শতক হাঁকিয়ে ৩৩.৫৮ ব্যাটিং গড়ে ১,০৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ওপেনার হিসাবে ১৫২ ইনিংস ব্যাটিং করে ১৩টি শতকের সাহায্যে ৪১.৪৮ ব্যাটিং গড়ে করেছিলেন ৫,৯৩২ রান।
তিলকারত্নে দিলশান (শ্রীলঙ্কা)
দিলশানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল ১৯৯৯ সালে। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং পার্টটাইম অফস্পিন বোলার হিসাবে দলে তার অন্তর্ভুক্তি ঘটে। অভিষেকের দশ বছর পার হওয়ার পর নতুন রূপে আবির্ভাব ঘটে তার। তিন ফরম্যাটেই শ্রীলঙ্কার হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করার দায়িত্ব পান তিনি।
ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অপরাজিত ১৬৩ রানের ইনিংস খেলা দিলশান ক্যারিয়ারের প্রথম ৫৫ টেস্টে মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলে গিয়েছিলেন। তার পারফরম্যান্সও ছিল অধারাবাহিক।
ক্যারিয়ারের ৫৬তম টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৭২ বলে ৯২ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩১ বলে ১২৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন। ওপেনার হিসাবে খেলতে নামার পরই বদলে যায় তার ক্যারিয়ার। গড়পড়তা ব্যাটসম্যান থেকে হয়ে উঠেন সময়ের অন্যতম সেরা ওপেনার।
২০০৯ সালে ওপেনার হিসাবে নিজের প্রথম বছরে পাঁচ ম্যাচে তিনটি শতকের সাহায্যে ৬৫.৬২ ব্যাটিং গড়ে ৫২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তার ক্যারিয়ারসেরা ১৯৩ রানের ইনিংসটিও এসেছে ওপেনার হিসাবে ব্যাট করতে নেমে। কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১১ সালে এই ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
দিলশান মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে ৯২ ইনিংসে ৩৬ ব্যাটিং গড়ে ৩,৩২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ওপেনার হিসাবে ৫৩ ইনিংসে আটটি শতকের সাহায্যে ৪২.৫৪ ব্যাটিং গড়ে করেছিলেন ২,১৭০ রান।