Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মোহাম্মদ নাঈম: ক্লাসের খারাপ, ব্যাটিংয়ের ভালো ছাত্র

২০১৮-১৯ মৌসুমের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে উড়েছিল নতুনের কেতন। লিগের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় প্রথম দুটি নামই দুই তরুণের। ১৬ ম্যাচে ৮১৪ রান করে শীর্ষে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলা সাইফ হাসান। সমানসংখ্যক ম্যাচে ৮০৭ রান করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক মোহাম্মদ নাঈম শেখ। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন। ওই বছরই ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ দিয়ে লিস্ট-এ ক্রিকেটে অভিষেক হয় নাঈমের। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে প্রথম আসরেই নিজের প্রতিভা মেলে ধরেছেন ১৯ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। সেঞ্চুরি না পেলেও ৫৫৬ রান করেছিলেন। এই বছরের জন্য রূপগঞ্জ নাঈমকে রিটেইন করতে ভুল করেনি। ক্লাবের আস্থার প্রতিদানটাও শতভাগ পূরণ করেছেন তিনি। মুমিনুল হক, নাঈম ইসলাম, শাহরিয়ার নাফিসদের মতো অভিজ্ঞদের ভিড়ে প্রিমিয়ার লিগে রানার্সআপ হওয়া রূপগঞ্জের সেরা ব্যাটসম্যান নাঈম। ১৬ ইনিংস খেলেছেন, যেখানে ব্যাটিং গড় ছিল ৫৩.৮০ গড়ে, স্ট্রাইকরেট ৯৪.৩৮। ছিল তিনটি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি।

দারুণ ছন্দে থেকেই নাঈম শেষ করেছেন প্রিমিয়ার লিগ। শেষ দুই ম্যাচে করেছেন দু’টি সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার আসরে নিজের জাতটা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন এই টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান। প্রিমিয়ার লিগে এমন সফলতার রহস্য, নিজের ব্যাটিংয়ের আদ্যন্ত, ক্রিকেটার হিসেবে গড়ার গল্পটাও শুনিয়েছেন নাঈম।

Image Credit: Naim Sheikh Facebook Page

গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৫৫৬ রান করেছিলেন। এবার ৮০৭ রান করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দুই মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগ খুব ভালো কেটেছে আপনার। নিজের পারফরম্যান্সে কতটা খুশি?

ভালোর তো শেষ নেই। খুশি হওয়ার তেমন কিছু নেই। আমার মনে হয় ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনার আরও অনেক জায়গা আছে। আমি আরও বেশি রান করতে পারতাম, ছোট ছোট ভুলের জন্য সেটা হয়নি। আর আমি ব্যাটিং নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। এত খুশি হওয়ারও কিছু নেই। আমি মনে করি, আমি চেষ্টা করলে আরও ভালো ব্যাটসম্যান হতে পারবো।

পাঁচশ’র বেশি রান করলেও গত বছর লিগে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না। এবার তিনটি সেঞ্চুরি, তাও শেষ দুই ম্যাচে দু’টি। বড় ইনিংস খেলার ক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ে কী কী পরিবর্তন এনেছেন?

গত বছর মনে হয় চারটি ৮০ প্লাস রানের ইনিংস ছিল, একশ’ হয়নি। যখন নিজের পারফরম্যান্স দেখতাম, তখন নিজের কাছে খুব খারাপ লাগত যে একশ’ করতে পারিনি। খুব আফসোস হত। ৩০-৪০ করেও অনেকগুলো ম্যাচে আউট হয়েছি। এগুলো খারাপ লাগতো। চিন্তা করতাম, একটু যদি চেষ্টা করতাম, তাহলে সেঞ্চুরি হতে পারতো। আমি অনেক চিন্তা করে দেখেছি, আমার ধৈর্য্যে সমস্যা ছিল। আমি চিন্তা করে দেখেছি যে, এখানে উন্নতি আনতে পারলে আমি বড় ইনিংস খেলতে পারবো।

ফিটনেসের একটা ব্যাপার আছে। আর মানসিকভাবে ৮০ হওয়ার পর আমি ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলতাম। তেড়েফুঁড়ে শট খেলে আউট হয়ে গিয়েছিলাম বেশ কয়েকবার। এই ছোটখাটো ভুলগুলো ঠিক করার পর আমার মনে হয় এবার তিনটা সেঞ্চুরি করতে পেরেছি। এবার দলের হয়ে আমি বড় অবদান রাখতে পেরেছি, যার কারণে টিম এগিয়ে ছিল। আমার টিমমেটরাও খুব খুশি, আমি গত বছরের ভুলগুলো ঠিক করেছি।

অনুশীলনে ফ্রেমে বন্দী; Image Ceedit: Naim Sheikh Facebook Page

নিজের ভুল ধরতে পারা, সেগুলো নিয়ে কাজ করা এবং কাজ করার পর ব্যাটসম্যান হিসেবে সফল হওয়াটা নিশ্চয়ই অনেক তৃপ্তির বিষয়…

হ্যাঁ, এটা আমার কাছে মনে হয়েছে। আমি গত বছর যেই ভুল গুলো করেছি, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করেছি। এরপর সেটা নিয়ে কাজ করেছি। তারপর সফলতা এসেছে। এটার জন্য আমি একটু খুশি। আমার চিন্তাভাবনা ক্রিকেট নিয়েই থাকে। আমার এবার কী ভুলগুলো ছিল, কী কী করলে আরও ব্যাটিং ভালো হতে পারতো, দলকে কীভাবে আরও বেশি রান দিতে পারতাম, এইসব নিয়ে চিন্তা করেছি। গত বছর থেকে এবার ভালো হয়েছে। সামনেরবার চিন্তা করবো আরও ভালো কিছু করার। এত রান করতে পারবো কি না, সেটা নিশ্চিত না। তবে আরও ভালো ব্যাটিং করা, প্রক্রিয়াটা ঠিক রাখার চেষ্টা করব। আমি এর থেকে আরও পরিচ্ছন্ন ইনিংস খেলতে চাইবো।

আপনি সোজা ব্যাটে খেলতে পছন্দ করেন। এটাই আপনার সহজাত ব্যাটিং স্টাইল, নাকি তৈরি করতে হয়েছে?

আমি যখন ব্যাটিং শুরু করি, আমার কোচ আমাকে এভাবেই শিখিয়েছে। আমি সবসময় সোজা ব্যাটে খেলে আসছি। অনূর্ধ্ব-১৯ কোচ, নির্বাচকরা সবাই একটা কারণেই পছন্দ করতো, কারণ আমি সোজা ব্যাটে ব্যাটিং করতাম। আমি অনেক উপভোগ করি বিষয়টা। যখন সেট হয়ে যাই, তখন রানের জন্য এদিক-ওদিক তো খেলতে হয়ই। আমি আমার পরিকল্পনার বাইরে যতবার গিয়েছি, ততবার আউট হয়েছি। এবার আমি আমার পরিকল্পনার বাইরে যাইনি, চিন্তা করেছি আউট হলে পরিকল্পনার মধ্যে থেকে আউট হবো, কোনো সমস্যা নেই।

ঘরোয়া লিগে রানের তুবড়ি ছুটিয়েছেন নিয়মিতই; Image Credit: Dhaka Tribune

এবারের প্রিমিয়ার লিগে ব্যাটিংয়ে আপনার স্ট্রাইকরেট ছিল চোখে পড়ার মতো। ৯৪.৩৮ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। বাউন্ডারির সঙ্গে সিঙ্গেলসের উপরও জোর দিয়েছেন। স্ট্রাইক রোটেট করার চিন্তা থেকেই কি এমন ব্যাটিং?

গত বছর মনে হয় আশি স্ট্রাইকরেটে খেলেছি, এবার ৯৪ প্লাস ছিল মনে হয়। আমি ৩০-৪০ রান করলেও দেখা যেtO, ছয়-সাতটা বাউন্ডারি থাকত। বাউন্ডারিতেই আমার রান হয়ে যেতো, কিন্তু সিঙ্গেল বের করতে পারতাম না, আটকে যেতাম। জাতীয় দলের বোলাররা বল করলে দেখা যেতো, ফিল্ড সেটআপ খুব ভালো থাকতো, আমার সিঙ্গেল বের হত না। পরিকল্পনা খুব ভালো ছিল না।

এরপর নাঈম ভাই (নাঈম ইসলাম) বলেছিল যে, তুমি এটার ওপর কাজ করতে পারো। তাহলে উন্নতি হবে, রান বাড়বে। গতবার মুশফিক ভাই ছিল, এবার আবার সৌরভ ভাই (মুমিনুল হক) আসার পর ওনার ব্যাটিং দেখেছি। তিন-চারটা ম্যাচ যাওয়ার পর দেখেছি যে, স্ট্রাইকরেট ঠিকই আছে। পরিকল্পনায় থাকার পর যখন দেখলাম স্ট্রাইকরেট ঠিকই আছে, এরপর আমি অন্য কিছু চিন্তাই করিনি। ওইটা আমি মাথায় নেইনি। যতগুলো ম্যাচ খেলেছি, টি-টোয়েন্টিসহ, আমি চিন্তা করেছি যে, পরিকল্পনায় থাকলে আমার স্ট্রাইকরেট ঠিক থাকবে।

অনেক রান করেছেন প্রিমিয়ার লিগে এবার। তারপরও ব্যক্তিগতভাবে ব্যাটিংয়ের কোন কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে বলে মনে করেন?

প্রথমেই বলবো, আমি যেই ম্যাচ গুলোয় ফিফটি করে আউট হয়েছি, আমি যদি ধৈর্য্য নিয়ে একটু কাজ করা যায়, তাহলে তিনটা একশ’র জায়গায় আরও বেশিও হতে পারতো। আমার ধৈর্য্যের জায়গাটা ঠিক থাকলে হয়তো আমি আরও ভালো ইনিংস খেলতে পারতাম।

আরেকটা জিনিস হচ্ছে, আমার ব্যাল্যান্স। আমার ব্যালান্স যদি ঠিক থাকে, তাহলে যত জোরের বলই হোক, আমি সহজে মানিয়ে নিতে পারবো। স্পিনের বিপক্ষে যেভাবে ব্যাট করছি, সেই দিক থেকে আমি খুশি। আর পেস বলে ব্যাল্যান্সের দিকে যদি আরও মনোযোগী হই, তাহলে আরও ভালো ব্যাটিং করতে পারবো।

সতীর্থদের সঙ্গে; Image Credit: Naim Sheikh Facebook Page

ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে এবার বিপিএলও খেলেছিলেন। বিপিএলের অভিজ্ঞতা প্রিমিয়ার লিগে কতটা কাজে লেগেছে?

আমার ভালো খেলার পেছনে ঢাকা ডায়নামাইটস দলের সাথে থাকা অনেক বড় কারণ। সেখানে ভালো ভালো বোলাররা ছিল, প্লেয়াররা ছিল। ওদের থেকে টুকিটাকি সাহায্য পেয়েছি, যেগুলো আমার অনেক কাজে লেগেছে। অনেক বড় বড় প্লেয়ার, কোচ ছিল। পুরো বিপিএলটা আমার জন্য ভালোই কেটেছে। যদিও আমি আমার জায়গায় খেলতে পারিনি। যেখানে দল সুযোগ দিয়েছে, সেখানে চেষ্টা করেছি, সফল হইনি। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের আগে খুব ভালো প্রস্তুতি ছিল বলা যায়।

বাঁহাতি ওপেনার হিসেবে আপনার আইডল কে?

আমি কুমার সাঙ্গাকারাকে খুব অনুকরণ করি, আর দেশের মধ্যে তামিম ভাই। এই দু’জনকে খুব পছন্দ করি।

এবার আপনার ক্রিকেটার হওয়ার গল্পটা শুনতে চাই…

২০১৫ সালে এইচএসসি ফলাফল যখন খুব খারাপ হয়, তখন মন খুব খারাপ ছিল। তখন আমি খুব ক্রিকেট খেলতাম। তখন থেকেই আমার ক্রিকেট খেলাটা শুরু। এসএসসির পর ক্রিকেট খেলেছি, কিন্তু আমি পেশাদার ক্রিকেটার ছিলাম না। কিন্তু এইচএসসির পর সিরিয়াসলি নিই খেলাটাকে। আমি কখনোই ভালো ছাত্র ছিলাম না, শুধু খেলাধুলা করতাম। বন্ধুরা সবাই খুব ভালো ছাত্র, সবাই ভালো জায়গায় পড়াশোনা করছে। আমিই কখনো ভালো ছাত্র ছিলাম না, খেলার প্রতিই সবসময় মনোযোগ ছিল আমার।

যখন খেলতেন অনূর্ধ্ব-১৮ দলে; Image Credit: Naim Sheikh Facebook Page

এইচএসসির পর আমি প্রথম অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেট খেলি। এরপর বিভাগীয় ক্রিকেট খেলেছি। বিভাগীয় ক্রিকেটে আমি তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করেছিলাম। আমি সবসময় চিন্তা করেছিলাম, সব জায়গায় শীর্ষে থাকবো। এমন চেষ্টা সবসময় ছিল আমার মধ্যে। আমার এক বড় ভাই, আশরাফুল আলম আসিফ, তিনি বলেছিলেন, তুই এত কম অনুশীলন করেই প্রথমবার তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করলি, ভালোমতো অনুশীলন করলে তুই আরও বেশি রান করতে পারবি। সেখান থেকে আমি আরও চেষ্টা করি। আমি যেহেতু তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করে আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পাইনি, আমি চেষ্টা করেছি এক নম্বর হওয়ার, যেন সবার আগে আমাকে পছন্দ করে নির্বাচকরা।

এরপর আমি অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি রান করি, বিভাগীয় ক্রিকেটও খেলি। সেখানেও ইচ্ছে ছিল সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হব। তখন আমার সমস্যা ছিল, ৩০-৪০ করে আউট হয়ে যেতাম। আমি একশ’ করতে পারতাম না। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে নির্বাচকদের নজরে আসতে হলে একশ’ করতে হয়, ৫০-৬০ করলে হয় না। আমি দুই সেঞ্চুরি আর চার ফিফটিতে অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ে সর্বোচ্চ রান করেছিলাম, ৬১৫ রান করেছিলাম। এরপর চ্যালেঞ্জ সিরিজে ডাক পেয়েছিলাম। ওইখানে আবার ১৪৭ রানের ইনিংস খেলেছিলাম, ফিফটি ছিল তিন-চারটা। সেখানে সর্বোচ্চ রানস্কোরার ছিলাম। এরপর আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে এসেছি। সেখান থেকে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ, নেপাল সিরিজ, আফগানিস্তান সিরিজে খেলি। বিশ্বকাপের পর প্রিমিয়ার লিগে খেলেছিলাম।

This article is in Bangla language. It is about an emerging Bangladeshi batsman Mohammad Naim Sheikh, who talked about his growing up, his evolution, development, thought process and future plans.

Featured Image: BCB

Related Articles