Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকাপে অর্ধশতকের দেখা পাননি যারা!

রেকর্ড নিয়ে কত ধরনের কথাবার্তাই তো হয়। এবি ডি ভিলিয়ার্স টানা বারো টেস্টে হাফ সেঞ্চুরি করলে রেকর্ড হয়। সেই রেকর্ড মুমিনুল হক ভাঙতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দিস্তার পর দিস্তা কাগজ খরচ হয়।

তা ফিফটি করা যখন রেকর্ড, ফিফটি না করাও তো একধরনের রেকর্ডই। নিউ জিল্যান্ডের জিওফ হাওয়ার্থ তো টানা ৩৬ ইনিংসে ফিফটি না করে হইচই-ই ফেলে দিয়েছিলেন।

সেই জিওফ হাওয়ার্থ প্রথম তিন বিশ্বকাপে খেলেছিলেন, সেখানে চারবার পঞ্চাশও পেরিয়েছিলেন। কিন্তু এমন অনেক ক্রিকেটারই আছেন, জীবনে অনেক অর্ধশতকের দেখা পেলেও বিশ্বকাপে পাননি কোনো অর্ধশতকের দেখা।

যে তালিকায় দলের এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যানদের, আরও বিস্তৃত করে বললে বোলারদেরই প্রাধান্য থাকবে বলে লেখকের বিশ্বাস। কিন্তু বিশ্বকাপের ম্যাচে দলের হয়ে টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডারে ব্যাট করার পরও যারা অর্ধশতকের দেখা পাননি, সে তালিকার প্রথম ছয়জনকে নিয়ে রচনার বাকি অংশ।

১. ওয়াসিম আকরাম (৩৮ ম্যাচ)

ক্রিকেটবিশ্ব তাকে চেনে সুইং বোলিংয়ের রাজা হিসেবে। ভয়ংকর সুন্দর ফাস্ট বোলিংয়ের অনুপম প্রদর্শনী মেলে ধরে বিশ্বকে বাধ্য করেছিলেন ক্রিকেটের প্রেমে পড়তে। তার চেয়েও বেশি তার প্রেমে পড়তে।

বোলিংয়ের কারণে আড়ালে পড়ে যায়, নয়তো ব্যাটিংটাও খারাপ করতেন না। টেস্টে তো ২৫৭ রানের এক ইনিংসও খেলেছিলেন। ওয়ানডেতেও যখন আছে ৮৬ রানের এক ইনিংস, সাথে তিন থেকে এগারো, যেকোনো পজিশনে ব্যাটিং করবার অভিজ্ঞতা তখন তাকে ‘মিনি অলরাউন্ডার’ বলে স্বীকৃতি দেয়াই যায়। ওয়ানডেতে আছে ছয়খানা অর্ধশতকও, কিন্তু বিশ্বকাপে অর্ধশতকের দেখা পাননি একবারও।

ব্যাটসম্যান ওয়াসিম আকরামের সবচেয়ে বড় অর্জন; Image Credit: Twitter

অর্ধশতকের সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন গত শতাব্দীর শেষ বিশ্বকাপে। যদিও নেমেছিলেন আট নম্বরে, তবে ব্যাটে ঝড় তুলে সেদিন খেলেছিলেন ২৯ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস, দিনশেষে পাকিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঝে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিলো এই ইনিংসই, জয়-পরাজয়ের পার্থক্য যখন ২৩ রানের, তখন এই ইনিংসকেই তো নির্ণায়ক বলতে হয়।

এমন পার্থক্য তো বহু ম্যাচেই গড়ে দিয়েছিলেন ব্যাট হাতে, ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালেও তো। কচ্ছপগতিতে চলা পাকিস্তানের ইনিংসে খরগোশের গতি দিয়েছিলেন ব্যাট হাতে, ১৯ বলে ৩৩ রানে।

সে সময়ের ক্রিকেটেও ১০০.৭১ স্ট্রাইক রেট বলে, দলের প্রয়োজনে এমন ঝড় নিত্যই তুলেছেন বিশ্বকাপের ম্যাচে। যদিও বারকয়েক পাঁচে আর ছয়ে ব্যাটিং করলেও বিশ্বকাপে আর অর্ধশতকের দেখা মেলেনি।

তা না হয় না-ই মিললো, বোলিংয়ের কারিকুরিতে অমরত্ব তো মিলেছে।

২. ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (৩২ ম্যাচ)

তালিকার প্রথম দুটি নামই এমন দুজনের, ক্রিকেট বিশ্বে যাদের মূল পরিচিতি বোলার হিসেবেই। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট যে তাদের ব্যাটিং সামর্থ্যেও প্রবলভাবে বিশ্বাস করতো, সে তো ব্যাটিং লাইনআপে তাদের প্রমোশন প্রাপ্তিই বুঝিয়ে দেয়।

ওয়াসিম আকরাম তো তা-ও মিডল অর্ডারে উঠে এসেছিলেন, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি এক লাফে হয়ে গিয়েছিলেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। স্টিভেন ফ্লেমিংয়ের সাথে ইনিংসের সূচনা করতে নেমেছিলেন দুবার, অবশ্য নিউ জিল্যান্ডের সে উদ্দেশ্য দুবারই ব্যর্থ।

নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচেই খেলেছিলেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে, ২৫ বলে ১৩ রান করে থেমে যাওয়ায় পরের চার ম্যাচে আর ব্যাটিং পাননি। ষষ্ঠ ম্যাচে আবারও ব্যাটিং পেয়েছিলেন, ওপেনার হিসেবেই। সেই ম্যাচেও মাত্র ১০ রানেই সাজঘরে ফিরলে তাকে আর ওপেনিংয়ে পাঠানোর সাহস করেনি নিউ জিল্যান্ড। পরের ম্যাচে তো অবনতির চরমে পৌঁছে নেমেছিলেন নয় নম্বরে।

প্যাভিলিয়নের পথে ভেট্টোরি; Image Credit: AFP/Getty Images

সেই যে অবনমন ঘটেছিলো, এরপরে আর উন্নয়ন ঘটেছিলো মোটে এক ধাপ, অবশ্য বিশ্বকাপ সর্বোচ্চ ৪৪ রান এসেছিলো সেই নয় নম্বরে নেমেই।

৩২ ম্যাচের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে ব্যাটিং পাননি প্রায় অর্ধেক ম্যাচেই। বাদবাকি যে ১৭ ম্যাচে ব্যাটিং পেয়েছিলেন, তাতে আর ফিফটির দেখা পাননি।

৩. জন্টি রোডস (২৪ ম্যাচ)

ব্যাটিং, বোলিংয়ের বাইরে ক্রিকেটে যে ফিল্ডিং বলেও আরেকটি মৌলিক বিষয় থাকে, তা এই সাউথ আফ্রিকান ভদ্রলোকই প্রথম শিখিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের মঞ্চেও প্রথম আগমনী বার্তা শুনিয়েছিলেন ফিল্ডিং দিয়েই, ইনজামাম-উল-হককে রান আউটের সেই মুহূর্ত তো ক্রিকেটের হল অব ফেমেরই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট পজিশনে এমনই কর্তৃত্ব অর্জন করেছিলেন, যে ওটাকে ‘রোডসের বাপ-দাদার ভিটে’ বললেও অত্যুক্তি হবে না মোটেই।

ফিল্ডিংকে নতুন উচ্চতায় নিয়েছিলো যে রানআউট; Image Credit: V.V. Krishnan/The Hindu

সমসাময়িক বাকিদের চেয়ে ফিল্ডিংয়ে এতটাই এগিয়ে ছিলেন যে, কেবল ফিল্ডিং দিয়েই বিশ্বের যেকোনো দলে অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারতেন। সাথে অবশ্য ব্যাটিংটাও পারতেন। প্রথম কয়েক বছর যেমন-তেমন, পরে ব্যাটিংটাকেও এমন সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন, কী টেস্ট, কী ওয়ানডে কোনো ফরম্যাটেই গড় পঞ্চাশের নিচে নামেনি।

ক্যারিয়ার শেষ করেছিলেন টেস্টে ১৭ আর ওয়ানডেতে ৩৩ খানা অর্ধশতক নিয়ে, তবে এর কোনোটাই বিশ্বকাপে নয়।

বিশ্বকাপ খেলেছিলেন চারটি। অর্ধশতকের সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন প্রথম বিশ্বকাপেই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেদিন ৩৮ বলে রান করেছিলেন ৪৩, তিন চারের সাহায্যে।

পরে আরও একবার পৌঁছেছিলেন ৪৩ রানে, সেবারে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, ১৯৯৯ সালের এজবাস্টনের সেই মহানাটকীয় ম্যাচে

মাঝে বারকয়েক ত্রিশের ঘর পেরিয়েছিলেন, বেশিরভাগ সময়ে দলের রান বাড়ানোর দায়িত্বটা তার কাঁধে থাকায়, ঝড়ো ২০-২৫ রানের ইনিংস খেলেও আউট হয়েছেন কয়েক ম্যাচে। তবে ব্যাটসম্যানের প্রথম ল্যান্ডমার্ক পঞ্চাশ ছাড়াতে পারেননি কখনোই।

তাই ক্যারিয়ার গড় যেখানে পঁয়ত্রিশ ছাড়ানো, সেখানে বিশ্বকাপ গড় মোটে ২০.৮২, ২৪ ম্যাচ আর ২০ ইনিংসে রানটা তাই ৩৫৪।

৪. গাই হুইটাল (২০ ম্যাচ)

ক্রিকবাজ তাকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলছে, ‘an efficient hard hitting batsman’। অবশ্য এতটুকু পড়ার পরে যখন জানবেন, তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট মোটে ৬৭.৪, তখন হার্ডহিটারের সংজ্ঞা আপনার কাছে পাল্টে যেতে বাধ্য।

বিশ্বকাপে তার দশা তো আরও করুণ। ১৪৭ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ ম্যাচ পেয়েছিলেন ২০টি, তাতে মোট সংগ্রহ মোটে ২৪৬ রান। অর্ধশতক দূরে থাক, সর্বোচ্চ রানই তুলেছিলেন ৩৫, শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে। এরপরে ৩০ রানের কোটাই ছুঁয়েছিলেন আর মাত্র একবার।

গাই হুইটালের জন্য এ দৃশ্য ছিলো নিয়মিত; Image Credit: ESPNcricinfo Ltd

বিশ্বকাপের শুরু আর শেষটা তো ছিলো রীতিমতো বিধ্বস্ত, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪ রান তুলতেই খেলেছিলেন ৬২ বল, শেষ ম্যাচে তো রানের খাতা খোলার আগেই ধরেছিলেন প্যাভিলিয়নের পথ। এমনিতেই ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড় ২২.৫৪, বিশ্বকাপের ময়দানে তা আরও খারাপ, ১৪.৪৭।

সাথে যোগ করুন অবাক করা ৪৯.৫০ স্ট্রাইক রেট। বিশ্বকাপের চাপটা যে তিনি নিতে পারেননি, সে তো বলাই বাহুল্য।

৫. মনোজ প্রভাকর (১৯ ম্যাচ)

১৩০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ব্যাটিং করেছেন নয়টি ভিন্ন পজিশনে, সবচেয়ে বেশি ওপেনিংয়ে, ৪৬ বার। বিশ্বকাপেও ওপেন করেছিলেন একবার, ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। আগুনজ্বলা ইডেনের সেই ম্যাচে বরফশীতল এক ইনিংস খেলেছিলেন মনোজ প্রভাকর। ৩৬ বল খেলেও সেদিন ছুঁতে পারেননি দুই অংকের কোটা, সাত সংখ্যাটা সবার জন্য তো আর লাকি নয়!

১৯৮৭ বিশ্বকাপে মনোজ প্রভাকর; Image Credit: Getty Images

এর আগে-পরে বিশ্বকাপের ম্যাচে আর ওপেন করেননি। ব্যাটিংই পেয়েছিলেন মাত্র ১১ বার, এর মাঝেই ব্যাটিং পজিশন অদলবদল হয়েছে চারবার। সবচেয়ে বেশি তিনবার করে ব্যাট করেছেন আট আর নয় নাম্বারে, একবার তো হয়ে গিয়েছিলেন ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যান, এত পরিবর্তনও বদলাতে পারেনি মনোজ প্রভাকরের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের গল্প, ১১ ইনিংস ব্যাট করে, ২ বার অপরাজিত থেকেও পেরোতে পারেননি পঞ্চাশ রানের কোটা।

এক ম্যাচে পঞ্চাশ পেরোনো দূরে থাক, গোটা বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারেই তো সর্বসাকুল্যে রান করেছেন ৪৫।

গড়? ৫.০০!

৬. হিতেশ মোদি (১৮ ম্যাচ)

তালিকার পরের নামটি কেনিয়ার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার হিতেশ মোদির। গত শতাব্দী আর এ শতাব্দী মিলিয়ে খেলেছিলেন তিন বিশ্বকাপে। পঞ্চাশ যে পেরোতে পারেননি, সে তো এই লেখায় তার নাম দেখেই বুঝে গিয়েছেন।

পঞ্চাশ পেরোবেন কী, চল্লিশের ঘরেই পৌঁছেছিলেন মোটে একবার। ৮২ বলে ৪১ রানের সেই ইনিংসই হয়ে আছে, বিশ্বকাপে তার সর্বোচ্চ। যে ইনিংস কেনিয়ার হয়ে খেলায় নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারেন তিনি।

১৯৯৬ বিশ্বকাপের বিপ্লব, পিঞ্চ হিটিংয়ের আরও এক প্রদর্শনীতে সেদিন শ্রীলংকা রান তুলেছিলো ৩৯৮। এমনকি অর্জুনা রানাতুঙ্গাও সেদিন হয়ে গিয়েছিলেন মাতারা হারিকেন। ৭৫ রান তুলেছিলেন মাত্র ৪০ বলে।

এমনই কষ্টেসৃষ্টে উইকেটে টিকে থাকাকে নিয়ম বানিয়েছিলেন হিতেশ মোদি; Image Credit: Reuters

সেই দিনে ঐ পাহাড়সম রান তাড়া করার প্রশ্নই আসে না, হিতেশ মোদির ক্ষেত্রে তো চেষ্টাটাই আসে না। পাঁচ নম্বরে নেমে অমন টুকটুক ব্যাটিং কী করে করেছিলেন, তা আজও বিস্ময় জাগায়! কেবল কেনিয়া বলেই এমন ইনিংসের পরও জাতীয় দলে টিকে ছিলেন, এমনকি পরবর্তী দুই বিশ্বকাপেও খেলেছিলেন।

২০০৩ সালের সেই কেনিয়া-রূপকথাও অবশ্য পারেনি হিতেশ মোদিকে জাগাতে। মোদি পারেননি পঞ্চাশ রানের মাইলফলক ছুঁতে।

অবশ্য পঞ্চাশ রান ছোঁবেন কী, স্ট্রাইক রেট পঞ্চাশ পার করতেই যে তার গলদঘর্ম হবার যোগাড় ছিলো। বিশ্বকাপের যে ১৪ ইনিংসে ব্যাট হাতে ক্রিজে নেমেছিলেন তাতে স্ট্রাইক রেটই ৫০ ছাড়িয়েছিলো চারবার, সর্বোচ্চ ৬৬.৬৭

কে জানে, মোদি কোন পঞ্চাশ পেরোনোকে ধ্যানজ্ঞান করেছিলেন!

This article is in bangla language. The biggest event in world cricket is about to launch in the town and everybody is talking about the best performers in world cup, the most number of half-centuries scores by an individual. But, do you know, there are some players who couldn't score a single half-century in their world cup career? Necessary references have been hyperlinked.

Featured Image © Reuters

Related Articles