Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একজন ব্রায়ান লারার বীরত্বগাঁথা

‘লোন ওয়ারিয়র’ কিংবা ‘নিঃসঙ্গ যোদ্ধা’ শব্দ যুগল খেলাধুলায় খুব পরিচিত। কোনো দলের ভার একা একজন খেলোয়াড় বইতে থাকলে তাকে বলা হয় লোন ওয়ারিয়র। যেমন, সাকিব আল হাসানকে একটা সময়ে এই বিশেষণে বিশেষায়িত করা হতো। অথবা জিনেদিন জিদান? গোটা ফ্রান্সের গুরুভার নিজের প্রশস্ত কাঁধজোড়ায় বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে। কোনো খেলোয়াড় যদি ম্যাচের গতিপথ একাই ঘুরিয়ে দেন, তবে তাকেও লোন ওয়ারিয়র বলা যায়।

এরকমই এক নিঃসঙ্গ যোদ্ধার বীরত্ব দেখেছিল বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভাল। সময়টা ১৯৯৯ সাল, ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফির তৃতীয় টেস্ট। অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিলে যে টেস্ট সিরিজ খেলে, তার আনুষ্ঠানিক নাম ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি। তৃতীয় টেস্টে যাওয়ার আগে পূর্ববর্তী দুটি টেস্টের স্কোরকার্ডে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া দরকার। তাহলে ঘটনার পরম্পরা বুঝতে সুবিধা হবে।

প্রথম টেস্ট হয়েছিল পোর্ট অব স্পেনে, সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারল ৩১২ রানে। খেলায় হারজিত থাকবেই, কিন্তু সমস্যাটা হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের হারার ধরনে। টার্গেট ছিল ৩৬৪ রানের, সেই টার্গেটে খেলতে নেমে মাত্র ৫১ রানে অলআউট হলো তারা। সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল পুরো দলের ওপর।

১-০’তে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হলো কিংস্টনে। প্রথম ইনিংসে লারা করলেন ২১৩ রান। এটা সেই টেস্ট, যে টেস্টের টসের সময় স্টিভ ওয়াহ লারাকে বিদ্রূপের সুরে বলেছিলেন, “ভালো করে খেলার চেষ্টা করো, কেমন?” খোঁচাটা যে আগের টেস্টের পারফর্মেন্সের উদ্দেশ্যে মেরেছেন স্টিভ, সেটা বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি লারার। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তিনি বলেছিলেন, এই অসভ্যতার শেষ আমি দেখতে চাই।” এই ঘটনার পরেই লারার সেই ২১৩। তার এই ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ানদের এমনই চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল যে, চতুর্থ ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের সামনে মাত্র ৩ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিতে পেরেছিল তারা। সেই টেস্টে ১০ উইকেটে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজ হয়ে গেল ১-১।

সিরিজে সমতা নিয়ে কেনসিংটন ওভালে টস করতে নামলেন ব্রায়ান লারা এবং স্টিভ ওয়াহ। সিরিজে টানা তৃতীয়বারের মতো টসে জিতলেন স্টিভ। ব্যাটিং নিলেন তিনি। নেমেই অ্যামব্রোসের তোপের মুখে পড়ল তার দল। স্ল্যাটার আর মার্ক ওয়াহকে তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বানিয়ে দিলেন ৩৬/৩। সেখান থেকে ল্যাঙ্গার আর স্টিভ মিলে ১০৮ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে নিলেন। দলীয় ১৪৪ রানে ল্যাঙ্গার ফিরলে ক্রিজে এলেন রিকি পন্টিং, স্টিভের সাথে ২৮১ রানের জুটি গড়ে দলকে নিয়ে গেলেন মজবুত অবস্থানে। তখনই পেরি আর ওয়ালশের আঘাতে, স্কোর ৪২৫/৪ থেকে হয়ে গেল ৪২৯/৭। পন্টিংয়ের সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছিল আগেই, কিন্তু কপাল পুড়ল স্টিভের, দ্বিশতক থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকা অবস্থায় আউট হয়ে গেলেন। এরপরে ওয়ার্ন, গিলেস্পি আর ম্যাকগ্রা মিলে কিছু রান করায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ হলো ৪৯০ রানে।

ব্রায়ান লারা; Source: Power102fm

ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপর্যয়ে পড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক প্রান্তে ওপেনার শেরউইন ক্যাম্পবেল খেলে যাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু অন্য প্রান্তে মড়ক লেগেছিল যেন রীতিমতো। আগের টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান লারা করলেন ৮, একপর্যায়ে স্কোর হলো ৯৮/৬। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু হলো এখান থেকেই। ক্যাম্পবেলের সাথে যোগ দিলেন রিডলি জ্যাকবস, দলকে ২৫১ রানে নিয়ে গেলেন তারা দুজন। তার পরেই আউট হয়ে গেলেন জ্যাকবস, ২৬৫ রানে গেলেন সেঞ্চুরিয়ান ক্যাম্পবেল। তারপরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস ৩২৯ পর্যন্ত যাওয়ার কৃতিত্ব পেরি, অ্যামব্রোস আর ওয়ালশের। এই তিনজন মিলে করলেন ৬৪। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামল ৩২৯ রানে, অস্ট্রেলিয়া পেল ১৬১ রানের লিড।

প্রথম ইনিংসে ওয়ালশের বোলিং ফিগার ছিল ৩৮ – ৮ – ১২১ -২। তার মতো একজন বোলারের জন্য ভালো বলা যায় না কোনোভাবেই। প্রথম ইনিংসের ‘পাওনা’ দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করার সময় তুলতে শুরু করলেন তিনি। ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে একাই ধসিয়ে দিলেন। অলআউট হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া করল ১৪৬। তবে এত কম স্কোরের পিছনে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের দায়ও নেহাত কম না। অহেতুক রান নিতে গিয়ে রান আউট হলেন স্ল্যাটার, হাস্যকর ভুলে বোল্ড হলেন স্টিভ। ১৪৬ এর সাথে ১৬১ মিলে হলো ৩০৭, জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে টার্গেট ৩০৮।

লক্ষ্য যেখানে ৩০৮, চার দিন খেলা হওয়ার পরে পিচ যেখানে ফেটে চৌচির, প্রতিপক্ষ দলে যেখানে আছেন ম্যাকগ্রা, গিলেস্পি, ওয়ার্ন, ম্যাকগিলের মতো বোলাররা, জয় সেখানে অসম্ভব। তবে নেপোলিয়ন তো সেই কবেই বলে গিয়েছেন, “অসম্ভব বলে কোনো শব্দ নেই।”

অসম্ভবকে সম্ভব করতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হলো খুবই ভালো। বিনা উইকেটে ৭২ রান তুলে ফেললেন ক্যাম্পবেল আর আদ্রিয়ান গ্রিফিথ। এই সময়ে ক্যাম্পবেলকে ফেরালেন ম্যাকগ্রা, ৭৭ রানে ডেভ জোসেফকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেললেন ম্যাকগিল। এর পরপরই গিলেস্পি তুলে নিলেন নাইটওয়াচম্যান পেদ্রো কলিন্সকে। ৩ উইকেট পড়ার পর নামলেন লারা। গ্রিফিথের সাথে দিনের বাকি সময়টুকু কাটিয়ে ড্রেসিংরুমে যখন ফিরছেন তখন স্কোর ৮৫/৩। জিততে তখনও লাগে ২২৩। হাতে আছে পুরো ১ দিন, সবচেয়ে বড় কথা, ক্রিজে অপরাজিত আছেন ব্রায়ান লারা। এই ম্যাচে জয় পাওয়া এখনও অসম্ভব কিছু নয়। কেনসিংটন ওভালের দর্শকরা তখনো জানে না, পরদিন যে ঘটনার সাক্ষী তারা হবে, তা নিয়ে গল্প করে যেতে পারবে সারা জীবন।

পরদিন খেলা শুরু হতে না হতেই ফিরে গেলেন গ্রিফিথ, কয়েক ওভার পর তার পথ ধরলেন কার্ল হুপার। স্কোর ১০৫/৫। অস্ট্রেলিয়ার জয় তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। খেলার এই অবস্থায় ক্রিজে আসলেন জিমি অ্যাডামস। লারা আর অ্যাডামস মিলে আগের টেস্টেই ৩২২ রানের জুটি গড়েছেন। এবারও কি হবে সেরকম কিছু? তেমন বড় জুটি হলো না। তবে যা হলো, পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটাও কম কিছু নয়। ১৬১/৫ স্কোর নিয়ে লাঞ্চে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পথ এখনো অনেক বাকি বটে, কিন্তু লারা আছেন না!

লাঞ্চের পরে হাত খুলে খেলতে শুরু করলেন লারা। ওয়ার্নকে আছড়ে ফেললেন গ্রিনিজ। হেইন্স স্ট্যান্ডের ছাদে, হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গেল তার। ম্যাকগিলকে পাঠালেন মাঠের বাইরে। এসব দেখে স্টিভ নতুন বল নিয়ে তুলে দিলেন ম্যাকগ্রার হাতে।

হাত খোলা মাত্র শুরু করেছেন লারা; Source: espncricinfo.com

বল করতে এসেই বাউন্সার দিলেন ম্যাকগ্রা। লারা ছাড়তে চাইলেও সফল হলেন না পুরোপুরি, বল লাগল হেলমেটের পিছনে। ব্যালেন্স সামলে নিয়ে ১ রান নিলেন। রান নিয়ে ম্যাকগ্রার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। দুজন দুজনের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন, অশ্রাব্য কথা চালাচালিও হলো খানিকটা। টেস্ট ক্রিকেট পুরুষের খেলা, পৌরুষই এখানে মুখ্য। কে যেন একবার বলেছিলেন, “লারাকে কখনো আক্রমণ করতে যাবেন না, কারণ যে মুহূর্তে তিনি বুঝবেন আপনি ওকে আক্রমণ করছেন, সেই মুহূর্তে আপনি শেষ।”

ম্যাকগ্রা এবং লারার কথা চালাচালি; Source: Espncricinfo.com

ম্যাকগ্রার পরের ওভারেই তার প্রমাণ পাওয়া গেল। আগের ওভারের মতো আবারো বাউন্সার দিলেন তিনি, এবার আর ছাড়ার চেষ্টাও করলেন না লারা। ব্যাট চালালেন, মিড উইকেট দিয়ে সোজা বাউন্ডারির বাইরে। গিলেস্পি এলেন, ফ্রন্টফুট আর ব্যাকফুট দুইভাবেই তাকে বাউন্ডারি মারলেন লারা, আসলেন ওয়ার্ন, মিডঅন দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠালেন তাকেও। সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়ে গেল তার। হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ১১৮ বলে, সেঞ্চুরির সময় বলের সংখ্যা ১৬৯। পরের অর্ধ শতক এলো মাত্র ৫১ বলে। দলের স্কোর ২৩৪/৫, জয়ের জন্য দরকার আর ৭৪ রান। এই সময় লারার ক্যাচ উঠল ওয়ার্নের কাছে। ওয়ার্ন ধরলেনও, কিন্তু ধরেও ফেলে দিলেন। ভাগ্য যে সাহসীদেরকেই সাহায্য করে থাকে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল আরেকবার।

দলীয় ২৩৮ রানে জিমি অ্যাডামসকে বোল্ড করে ১৩৩ রানের জুটি ভাঙলেন ম্যাকগ্রা, জুটিতে জিমির অবদান মাত্র ৩৮। ২৩৮ থেকে ২৪৮, এই ১০ রানের মধ্যে একটা ছোটখাটো ঝড় বয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের উপর দিয়ে, ঝড়ের নাম গ্লেন ম্যাকগ্রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয়ে গেল ২৪৮/৮। দৃষ্টিসীমায় থাকা জয়টাকে হঠাৎ করেই মনে হতে লাগল সুদূরের কোনো বাতিঘর। লারা তখনো আছেন, কিন্তু বাকি ব্যাটসম্যানরা যদি আউট হয়ে যায়, তবে তিনিই বা একা কী করবেন?

লারার দিনে স্টিভ ওয়াহকেও দর্শক বনে যেতে হয়; Source: Espncricinfo.com

একটা যোগ্য সঙ্গ দরকার ছিল লারার। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আসা অ্যামব্রোস লারাকে সেই সঙ্গটা দিলেন। তাকে যতটা সম্ভব ননস্ট্রাইকে রেখে নিজে খেলতে লাগলেন লারা। সিঙ্গেল যেন না নিতে পারেন, সে জন্য ওভারের শেষ বলে ফিল্ডাররা ঘিরে ফেলল তাকে, সেই সাথে চলতে লাগল খিস্তি খেঁউড়। সেসবে কান না দিয়ে  ঠাণ্ডা মাথায় খেলতে লাগলেন। অ্যামব্রোসের সাথে ৫৪ রানের জুটি গড়ে দলকে নিয়ে গেলেন ৩০২-এ।

আর মাত্র ৬টি রান! ঠিক তখনই গিলেস্পির বলে এলিয়টের হাতে ধরা পড়লেন অ্যামব্রোস। স্কোর, ৩০২/৯। ম্যাচটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। যদি এর ১ রান আগে গিলেস্পির বলেই লারার ব্যাটে লাগা বলটা ধরতে পারতেন উইকেট কিপার ইয়ান হিলি, তাহলেই শেষ ছিল সব। কিন্তু এই ম্যাচের নায়ক হওয়ার নিয়তি যে শুধুই লারার। তার ব্যাটে আলতো চুমু দেয়া বলটা হাতে ধরেও রাখতে পারলেন না হিলি। লারার ক্যাচ মিসে উন্মাতাল হয়ে গেল কেনসিংটন ওভালের গ্যালারি।

শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে এলেন কোর্টনি ওয়ালশ। ব্যাটিংয়ে তার দক্ষতা কেমন তা অজানা নয় কারোরই। অ্যামব্রোস আউট হন গিলেস্পির ওভারের ৩য় বলে। ফলে ওয়ালশকেই খেলতে হলো বাকি ৩ বল। প্রত্যেকটা বল ঠেকানোর সাথে সাথে গর্জন উঠতে লাগল গ্যালারি থেকে। ওভার শেষ হতেই স্ট্রাইকে চলে গেলেন লারা। গিলেস্পির একটা নো বলের কারণে স্কোর তখন ৩০৩/৯। বল করতে এলেন ম্যাকগ্রা, তার ওভারের প্রথম বলে ২ রান নিয়ে স্কোরটাকে নিয়ে গেলেন ৩০৫-এ।

সেদিন সারাদিনে ম্যাকগ্রা প্রায় ৪০ ওভার বোলিং করা ফেলেছিলেন। শরীর আর চলছিল না তার। এ কারণেই বোধহয় ক্রান্তিকালে একটা ওয়াইড দিয়ে বসলেন। স্কোর ৩০৬/৯। ম্যাচ টাই হতে লাগে ১ রান, জিততে ২ রান। পঞ্চম বলে গায়ের জোরে মারলেন লারা। বাউন্ডারি হয়ে গেলে খেলা ওখানেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু না, হলো মাত্র ১। স্কোর সমান হয়ে গেল। ম্যাচের ভাগ্যে কী আছে, তা তখনো জানে না কেউ। কিন্তু এটা সবাই জেনে গেল যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারবে না আর।

ওভারের শেষ বল। ওয়ালশকে প্রলোভিত করার জন্য অফ স্ট্যাম্পের বাইরে একটা লোভনীয় বল দিলেন ম্যাকগ্রা। হারার চেয়ে টাই ভালো, এটাই হয়তো মাথায় ঘুরছিল তার। কিন্তু কীভাবে যেন নিজেকে সংবরণ করে নিলেন ওয়ালশ, ব্যাট এগিয়ে দিয়েও সরিয়ে নিলেন সময়মতো। ম্যাকগ্রার ওভার শেষ হওয়ার সাথে সাথে বুকের ভিতরে জমে থাকা নিঃশ্বাস ছাড়ল কেনসিংটন ওভালের দর্শকেরা। লারা স্ট্রাইকে যাচ্ছেন, আর কোনো চিন্তা নেই।

লারারও সম্ভবত আর এই স্নায়ুচাপ ভালো লাগছিল না। সেই সকাল থেকে খেলছেন, প্রেশার কতক্ষণ সামলে রাখা যায়? তাই গিলেস্পির ওভারের প্রথম বলেই সপাটে ব্যাট চালালেন, বল চলে গেল বাউন্ডারির বাইরে। জিতে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর তিনি হয়ে গেলেন টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা চেজের নায়ক। সময়ের হিসেবে ৫ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট, সাথে ২৫৬ বলে ১৯ চার এবং ১ ছয়ে অপরাজিত ১৫৩। একজন ব্রায়ান চার্লস লারা!

ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরির পরে। পিছনে গ্যালারি থেকে মাঠে ঢুকে পড়ছে দর্শক; Source: cricketcountry.com

উল্লাস বাঁধ মানছেই না লারার; Source: Espncricinfo.com

লারা বাউন্ডারি মারার সাথে সাথে উল্লাসে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল স্টেডিয়ামের দর্শক। মাঠে ঢুকে পড়ল তারা। পরদিন বার্বাডোজের খবরের কাগজ ডেইলি নেশনে শিরোনাম হলো, ম্যাচ অফ দ্য সেঞ্চুরি। স্টিভ ওয়াহও বললেন, এটা তার খেলা সেরা টেস্ট।

দর্শক পরিবেষ্টিত ব্রায়ান লারা; Source: cricketcountry.com

তবে সবচেয়ে মজার কথা বললেন ওয়ালশ। তিনি বললেন, “লারার অল্প একটু সাহায্য নিয়ে ম্যাচটা আমিই জিতিয়েছিলাম।” রসিকতাই বটে। অবশ্য এক অর্থে ঠিকও আছে। ওয়ালশ ওই ৫ বল না ঠেকাতে পারলে তো ট্র্যাজিক হিরো হয়েই মাঠ ছাড়তে হয় লারাকে। চাপের মুখে ম্যাচ বের করে আনা যদি একটি শিল্পের নাম হয়, তবে বলতেই হয়, লারার মতো দক্ষ শিল্পী ক্রিকেটে খুব বেশি আসেনি।

লারার জন্মদিনে, তার এক ভক্তের পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তথ্যসূত্র

ক্রিকেট কান্ট্রি এবং উৎপল শুভ্রের লেখা বই শচীন রূপকথা

ফিচার ছবি: The Telegraph

Related Articles