Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইউরো-জয়ের দৌড়ে যারা এগিয়ে : ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল

২০১৬ সালের জুলাইয়ের ১১ তারিখ। সেই রাতে স্তাতে দে ফ্রান্সে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কাঁদলেন দুইবার করে। প্রথমবার মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায়, দ্বিতীয়বার ডাগআউটের সামনে দাঁড়িয়ে বুনো উল্লাসে ঝড়ালেন আনন্দাশ্রু। পুরো পর্তুগালই তো সেদিন ছিল রোনালদোর প্রতিচ্ছবি।

এক ইউসেবিও বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়ার পর থেকে ছিল না কোনো বড় সাফল্য। ২০০৪ সালের সোনালি প্রজন্মের ফিগো-ডেকোরাও হেরেছিলেন ইউরোর ফাইনালে। সেখানে অনেকটা মধ্যমমানের দল নিয়ে ইউরো জয়! ফার্নান্দো সান্তোস সে সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর হলে রোনালদো ছিলেন তার জিয়নকাঠি।

দেখতে দেখতে দোরগোড়ায় আরেকটি ইউরো। সেই সান্তোস আর সেই রোনালদোই রয়ে গেছেন, আর দুই একজন ছাড়া সব নতুন মুখ। ইউরোপিয়ান লিগে দাপিয়ে বেড়ানো সেসব খেলোয়াড় নিয়ে পর্তুগাল আর সেই মাঝারি মানের দল নেই। বরং শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে পর্তুগিজদের নাম। সে মিশনে রোনালদো, ব্রুনোরা সফল হবেন কি না, সেটা সময়ই বলে দিব। তবে তার আগে চলুন দেখে আসা যাক পর্তুগাল দল নিয়ে খুঁটিনাটি সব কিছু।

রক্ষণভাগ

“আক্রমণভাগ আপনাকে ম্যাচ জেতাবে, কিন্তু রক্ষণভাগ জেতাবে শিরোপা।”

ফার্গির সেই বিখ্যাত উক্তির যথার্থতা নতুন করে ভেঙে বলার কিছুই নেই। আধুনিক ফুটবলে এই কথাটি আরো বেশি ধ্রুব সত্য। তবে ফার্নান্দো সান্তোস কি সেটি ভুলে বসেছেন? কারণ স্কোয়াডে সান্তোস সেন্টারব্যাক হিসেবে নাম ঘোষনা করেছেন মাত্র তিনজনের। তাতেও হয়তো হয়ে যেত। কিন্তু পিলে চমকানো ব্যাপার এই যে তিনজনের মধ্যে দুইজনের বয়সই যথাক্রমে ৩৭ এবং ৩৮। একজন জোসে ফন্ত, আরেকজন পেপে। পোর্তো আর লিলের হয়ে এই দুইজন দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও বয়সটাই একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখে গেল। এই দুইজন বাদে আরেকজন হলেন রুবেন দিয়াজ। সদ্যই শেষ হওয়া প্রিমিয়ারলীগে দুর্দান্ত খেলা দিয়াজই হতে যাচ্ছেন রক্ষণের মূল কাণ্ডারি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।   

কোচ ফার্নান্দো সান্তোস; Image Credit: Getty Images

অন্যদিকে ফুলব্যাক নিয়ে সান্তোস সম্ভবত সবচেয়ে স্বস্তিতে রয়েছেন। ইনজুরির জন্য রিকার্ডো পেরেইরা দলে ডাক না পেলেও গুয়েরেরো, ক্যান্সেলোরা আছেন নিজেদের চেনা ছন্দেই। ব্যাকআপ হিসেবে নুনো মেন্ডেস-সেমেদোও চলনসই।

মধ্যভাগ

মধ্যভাগ নিয়ে বলতে গেলে স্মরণকালের সেরা মাঝমাঠ নিয়েই ইউরোতে যাচ্ছে পর্তুগিজ দল। ব্যালান্সড টিম বিবেচনায় পর্তুগালের মাঝমাঠ এই মুহূর্তে ইউরোপের অন্যতম সেরা। তবে সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে কিছু খেলোয়াড় হয়তো দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলতে পারে। রিয়াল বেটিসে একদমই মাঠে সময় পাননি কারভালহো, একই কথা প্রযোজ্য পিএসজির দানিলোর ক্ষেত্রেও। দানিলো তো কখনো খেলেছেন সেন্টারব্যাকে, কখনো বা ডিফেন্সিভ মিডে। অথচ ডিফেন্সিভ মিডে সান্তোস প্রাধান্য দিতেন এই দুইজনকেই। সংবাদ সম্মেলনে এই নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে সান্তোস বলেছিলেন,

“কারভালহো সময় পায়নি, সেটি মাথায় রেখেই দলে নিয়েছি তাকে। কারণ দলে কারভালহোর মতো কোয়ালিটি এনে দেওয়ার সক্ষমতা কম খেলোয়াড়েরই রয়েছে।”

তবে রেনাতো সাঞ্চেজের ফিরে আসা কিংবা সার্জিও অলিভিয়েরার দুর্দান্ত ফর্ম পর্তুগালের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এছাড়া মাঝমাঠের কাণ্ডারি ব্রুনো ফার্নান্দেজকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রিমিয়ার লিগে একটি দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো ব্রুনোর দিকেই তাকিয়ে আছে পর্তুগাল ভক্তকুল। সাথে মৌতিনহোরাও আছেন অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে। তবে আলাদা করে বলতে হয় পেদ্রো গঞ্জালভেসের নাম। স্পোর্টিং সিপির হয়ে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এই মৌসুমে করেছেন ২৩ গোল, যা ইউরোপিয়ান লিগে যেকোনো মিডফিল্ডার থেকে বেশি।

দলে জায়গা পাননি এইরকম উল্লেখযোগ্য নাম একটিই, বেনফিকার পিজ্জি। দুর্দান্ত খেলেও জায়গা হয়নি তার দলে। তবে ক্লাব সতীর্থ রাফা সিলভা ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন। অভিজ্ঞতা, তারুণ্য, ফর্ম, ও বৈচিত্র্যের মিশেলে পর্তুগালের মাঝমাঠই হতে পারে এবারের তুরুপের তাস।

চোখ থাকবে যে দুইজনের উপর; Image Credit: Getty Images

আক্রমণভাগ

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। লিডার, ক্যাপ্টেন কিংবা আক্রমণভাগের কাণ্ডারি – যা’ই বলুন না কেন, এই একটি নামই অর্ধেক চাপ বয়ে নিতে সক্ষম। স্বাভাবিকভাবেই পর্তুগিজ অধিনায়ককে ঘিরেই আবর্তিত হবে পর্তুগালের আক্রমণভাগ। তবে এবারের ইউরোতে শুধু রোনালদোই নন, আন্দ্রে সিলভা, জোয়াও ফেলিক্স, বার্নার্ডো সিলভা, ডিয়েগো জোটাদের নিয়ে দুর্দান্ত এক আক্রমণভাগ পর্তুগালের। তাতে এক মধুর সমস্যায় পড়েছেন ফার্নান্দো সান্তোস, কাকে রেখে কাকে খেলাবেন! পেদ্রো নেতো ইনজুরির কারণে বাদ পড়লেও ফিট থেকেও সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় জায়গা হয়নি রাফায়েল লিয়াও ও ফ্রান্সিসকো ত্রিনকাওয়ের।

সম্ভাব্য দল

পারতপক্ষে ৪-৩-৩ ফরমেশনের বাইরে খুব কম ফর্মেশনেই দলকে সাজিয়েছেন ফার্নান্দো সান্তোস। এই একই ফর্মেশনে পর্তুগালকে ইউরোতে দেখার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে রোনালদোকে পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার না খেলিয়ে শ্যাডো স্ট্রাইকার হিসেবে দেখা যাওয়ার কথা। তার সামনে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে বাজির ঘোড়া হতে পারেন ডিয়েগো জোটা কিংবা আন্দ্রে সিলভা। তবে রোনালদোর মতোই আরেক উইংয়ে বার্নার্ডো সিলভার একাদশে থাকাটা অনুমিতই।

রক্ষণের দুই স্তম্ভ; Image Credit: NurPhoto via Getty Images

আক্রমণভাগ নিয়ে ভবিষৎবাণী করার চেষ্টা করা গেলেও মাঝমাঠ নিয়ে সেটি আদৌ সম্ভব নয়। এক ব্রুনো ফার্নান্দেজ ছাড়া বাকি যে কেউই দলে জায়গা পেতে পারেন কিংবা বাদ পড়তে পারেন। তবে সাম্প্রতিককালের ম্যাচ বিবেচনায় মৌতিনহো আর রুবেন নেভিস মূল একাদশে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে থাকতে পারেন। তাছাড়া দানিলো কিংবা অলিভিয়েরাকেও সান্তোস কয়েক ম্যাচে বাজিয়ে দেখেছেন। তাদেরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে মূল একাদশে জায়গা পাওয়ার।

রক্ষণভাগটা মোটামুটি অনুমিতই। দুই ফুলব্যাকে ক্যান্সেলো আর গুয়েরেরোর সুযোগ পাওয়াটা তর্কসাপেক্ষ। সাথে রুবেন দিয়াজের সঙ্গী হিসেবে জোসে ফন্তকেই দেখতে পাওয়ার কথা। আর গোলবারে গত ইউরোর মতোই থাকবেন রুই প্যাট্রিসিও।

শক্তিমত্তা

শক্তিমত্তার দিক দেখতে গেলে সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাটি হলো পর্তুগাল খেলোয়াড়দের সাম্প্রতিক ফর্ম। রোনালদো বরাবরের মতোই দুর্দান্ত, ২৯ গোল নিয়ে হয়েছেন সিরি-আ’র সর্বোচ্চ গোলদাতা। একই পথের যাত্রী আন্দ্রে সিলভাও, বুন্দেসলিগায় তার গোলসংখ্যা ২৮টি। ব্রুনো ফার্নান্দেজ কাটাচ্ছেন ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে, তার ঝুলিতে রয়েছে ১৮ গোল ও ১২ অ্যাসিস্ট। শুধু ব্রুনো ফার্নান্দেজ নয়, ইউরোপিয়ান লিগে মিডফিল্ডারের মধ্যে এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল করা মাঝমাঠের খেলোয়াড়দের মধ্যেই শুরুর দিকে রয়েছেন তিন পর্তুগিজ। পেদ্রো গঞ্জালভেসের কথা তো আগেই বলা হলো, ব্রুনো ফার্নান্দেজ এবং সার্জিও অলিভিয়েরাও (১৩ গোল)  আছেন এই তালিকায়। বার্নার্ডো সিলভাও ম্যানসিটির হয়ে আলো ছড়িয়েছেন বেশ।

দুর্দান্ত এক আক্রমণভাগ নিয়েই ইউরোতে আগমন; Image Credit: Roar Media

অন্যদিকে রেনাতো সানচেজ ও জোসে ফন্ত মিলে পিএসজিকে হটিয়ে চ্যাম্পিয়ন করেছেন লিলকে। রক্ষণভাগে বিশেষভাবে বলা যায় রুবেন দিয়াজ আর জোসে ফন্তের কথা। দিয়াজ তো রোনালদোর পর দ্বিতীয় পর্তুগিজ হিসেবে জিতে নিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগ প্লেয়ার অফ দ্য সিজন। অন্যদিকে ফন্তের নেতৃত্বে লিগ ওয়ানে এইবার চ্যাম্পিয়ন হয় লিল। সেরা পাঁচ লিগে সবচেয়ে কম গোল খাওয়া দলটিও লিল। পুরো মৌসুমজুড়ে লিলের জালে বল ঢুকেছে মাত্র ২৩ বার। বলা যায়, দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সব খেলোয়াড় এবং সাইডবেঞ্চের প্রতিভাই পর্তুগালের এবারের মূল শক্তিমত্তা।    

দুর্বল দিক

ট্যাকটিক্যালি কিংবা ফর্ম বিবেচনায় পর্তুগাল যথেষ্ঠ শক্তিশালী। তবে ইউরোপের মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতায় বেশ পিছিয়ে দলটি। তারুণ্যে ভরা দলটির বড় মঞ্চে খেলার অনভিজ্ঞতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। একই গ্রুপে ফ্রান্স ও জার্মানির মতো হেভিওয়েট দল পড়ায় অভিজ্ঞতা এবং মাঠে মনোবল ধরে রাখার ব্যাপারটিই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে গ্রুপপর্বে।

সাম্প্রতিক ফর্ম

সাম্প্রতিক ফর্মের কথা বললেই ন্যাশনস লিগের কথা আসতেই পারে। সেখানে শিরোপাধারী দলটি পর্তুগালই। তবে ইউরোর বাছাইয়ে এক নম্বর দল হয়ে আসতে পারেনি ফার্নান্দো সান্তোসের শিষ্যরা, ইউক্রেনের পিছনে থেকে শেষ করেছিল বাছাইপর্ব। তবে ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পর্তুগাল হারের মুখ দেখেছে একটি ম্যাচে। এই সময়ের মধ্যে ১১টি ম্যাচ খেলে তাদের জয় সাতটিতে এবং ড্র তিনটিতে। একমাত্র হারটিও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে ১-০ গোলে।

পর্তুগালের বর্তমান দল; Image Source: Footxero

সম্ভাবনা

নক্ষত্রখচিত একেকটি দলে ভরপুর ইউরো। সেই ইউরোর নিয়ে প্রেডিকশন করাটা অনেকটা খড়ের গাঁদায় সুঁই খোজার মতো। তা্র উপর বিশেষ করে গ্রুপ-এফ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা আরো কঠিন। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জার্মান-বাধা পার হতে এত বেগ পোহানোর কথা নয় পর্তুগালের। সে হিসেবে নকআউট স্টেজে পর্তুগালকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বলতে গেলে শতভাগই। তবে ফ্রান্স-বেলজিয়ামের মতো হট ফেভারিটদের ভিড়ে পর্তুগালের দৌড় থামতে পারে শেষ চারেই। কিন্তু যে দলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবা ব্রুনো আলভেসের মতো সেনসেশনাল খেলোয়াড় থাকেন, সেই দলকে শিরোপা-দৌড় থেকে দূরে ভাবাটাই দুষ্কর!   

ট্রিভিয়া

  • আন্তর্জাতিক দলের কোচ হিসেবে ফার্নান্দো সান্তোস এখন পর্যন্ত ডাগআউটে দাড়িয়েছেন ১৫০ ম্যাচে, যার মধ্যে হেরেছেন মাত্র ২০টিতে।

  • আর এক গোল করলেই মিশেল প্লাতিনিকে (৯ গোল) ছাড়িয়ে ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতা হবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

  • শিরোপা ধরে রাখতে পারলে স্পেনের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে ব্যাক-টু-ব্যাক ইউরো জেতার সৌভাগ্য হবে পর্তুগালের।

  • ২০২০ ইউরোতে এক ম্যাচ খেললেই সর্বোচ্চ ৫টি ইউরোতে মাঠে নামার একক কৃতিত্ব অর্জন করবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

  • পর্তুগালের স্কোয়াডের মূল্য ৮২৯ মিলিয়ন ইউরো, যা ইউরোপে চতুর্থ সর্বোচ্চ আর বিশ্বে পঞ্চম।

This Bangla article is about the chances and tactics of team Portugal in Euro. Necesary link are given in the article. 

Feature Image source: Independent

Background Image: fifg/Adobe Stock

Related Articles