কিছুদিন আগে কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পেরেছিল যে এমন কিছু ঘটবে? কিংবা মেসি নিজেও কি কখনো ভেবেছিলেন বার্সেলোনা ছেড়ে অন্য কোন ক্লাবের জার্সি গায়ে চড়াতে হবে?
লিওনেল মেসির বার্সেলোনার হয়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে সাংবাদিক থেকে শুরু করে বার্সেলোনার হর্তাকর্তাদের কারো মনেই কোনো সংশয় ছিল না। বিভিন্ন সাংবাদিক বিভিন্ন সূত্র থেকে বারবার খবর দিয়েছেন, মেসির বার্সার হয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করাটা সময়ের অপেক্ষামাত্র। সভাপতি হুয়ান লাপোর্তাও বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে বলে এসেছেন, মেসির সাথে নতুন চুক্তির পথে নেই কোনো বাধা, চুক্তির কাজ এগুচ্ছে ঠিকমতোই।
কিন্তু একটি দিনের মাঝে সব পালটে গেল। ছুটি কাটিয়ে মেসি এসেছিলেন বার্সেলোনার হয়ে নতুন চুক্তিপত্রে সই করতে, কিন্তু চুক্তি সইয়ের বদলে সেদিন ক্লাবের সাথে তার বিচ্ছেদ ঘটে গেল। আর ক্লাব ও মেসির পথ আলাদা হয়ে যাবার পেছনে রয়েছে ছোট ছোট কিছু ঘটনা, আবার যেগুলো একত্রে করলে তৈরি হয় বিরাট কিছু।
লিওনেল মেসি যেখানে নিশ্চিতভাবে বার্সেলোনার হয়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করছিলেন, সেটি শেষ পর্যন্ত আটকে গেল লা লিগার নিয়মের মারপ্যাঁচ ও বার্সেলোনার অনিয়ন্ত্রিত বেতন কাঠামোর কারণে। সকল সত্য চকিতেই যেন মিথ্যে হয়ে গেল। আর মেসি? তিনি দু’ বছরের চুক্তিতে পিএসজিতে যোগদান করলেন, তাও বিনামূল্যে।
মেসির সাথে পিএসজির চুক্তি অনুযায়ী, মেসি প্রতি বছর প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ইউরো আয় করবেন, এবং একই সাথে দুই বছর পর তিনি চাইলে তার চুক্তি আরো একটি বছর বাড়াতে পারবেন। মেসি ২০০০ সালে বার্সেলোনার একাডেমি লা মাসিয়াতে যোগ দেন। যুব স্তর ও মূল দলে খেলে করেছেন ছয়শ’র বেশি গোল ও তিনশ’র মতো অ্যাসিস্ট। বার্সেলোনা ছাড়ার আগে ক্লাবের অধিকাংশ রেকর্ড ভেঙে যেমন সেখানে নিজের নাম লিখেছেন, তেমনই নিজেও গড়েছেন বেশ কিছু নতুন রেকর্ড। ক্লাবের সেরা খেলোয়াড় যখন ক্লাব ছেড়ে অন্য কোনো দলে নাম লেখায়, সেখানে যেমন পুরোনো ক্লাবের অভাবনীয় ক্ষতি, তেমনই নতুন ক্লাব মুখিয়ে থাকে এমন একজন খেলোয়াড়কে তার দলের হয়ে মাঠে নামানোর জন্য। তাই প্যারিসে সবাই অপেক্ষা করেছিল, কবে মেসি নামতে তাদের জার্সি গায়ে।
পিএসজির হয়ে মেসির অভিষেক হয়ে গেছে। পেশাগত জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি বার্সেলোনা ছাড়া অন্য কোনো পেশাদার ক্লাবের জার্সিতে খেললেন। অভিষেক পর্ব শেষ এখন নতুন এক প্রশ্নের জবাবের জন্য অপেক্ষা করে সমগ্র ফুটবল সমর্থক। পিএসজির তারকাখচিত দলে কোচ পচেত্তিনো কীভাবে মেসিকে ব্যবহার করবেন?
২০২০-২১ সিজনের শুরুর দিকে বার্সেলোনার সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কোচ রোনাল্ড ক্যোম্যান দলের জন্য সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে বের করার জন্য দলকে নিয়ে বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। এজন্য পুরো সিজনজুড়ে মেসিকে মোট পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় খেলতে দেখা গেছে; রাইট উইঙ্গার, রাইট ফরোয়ার্ড, ফলস নাইন, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এমনকি কখনো কখনো দলের প্রয়োজনে লেফট ফরোয়ার্ড পজিশনেও খেলতে দেখা গেছে তাকে। যদিও, বলাই বাহুল্য, ভিন্ন ভিন্ন ভুমিকায় খেলতে হলেও মেসির পারফরম্যান্সে ছেদ পড়েনি একবিন্দুও। দলগতভাবে হয়তো বার্সেলোনা খুব একটা ভালো সিজন কাটাতে পারেনি, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে মেসি মনে রাখার মতোই একটি সিজন পার করেছেন। যদিও মৌসুমের শুরুর দিকে একটা বড় সময় গোলখরায় ভুগছিলেন তিনি। মেসি শেষমেশ ফুরিয়েই গেলেন কি না, গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছিল সেটা নিয়েও। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দুর্দান্তভাবে সকল সমালোচনার জবাব দিলেন তিনি। শুরুতে গোলের দেখা না পেলেও মৌসুম শেষ করেছেন লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েই।
মেসি সম্ভবত বর্তমান সময়ের একমাত্র ফুটবলার, যিনি একই সাথে খেলা গড়ে দেয়া এবং গোল করার মতো গুরুদায়িত্ব একসাথে পালন করেন। তবে দায়িত্ব পালন করাই কেবল নয়, উভয় ভূমিকায় তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন প্রতি মৌসুমে।
জাভি-ইনিয়েস্তার বিদায়ের পর মেসিকে তার স্বভাবসুলভ খেলার বাইরে গিয়ে প্রতিনিয়ত মিডফিল্ডে নেমে এসে খেলা গড়ে দেবার দায়িত্ব পালন করেছেন। আগে যেমন মেসি জাভি-ইনিয়েস্তার সাথে মিলে দলের আক্রমণে সাহায্য করতেন, তাদের বিদায়ের পর মেসিকে অনেকটা একা হাতেই প্লেমেকারের ভূমিকা সামলাতে হয়েছে। এক সময়ে ফলস নাইনে খেলা ভয়ঙ্কর গোলমেশিন মেসি যখন বেছে নিয়েছেন প্লেমেকারের ভূমিকা, তখন তার গোল করার হার বেশ কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ কারণেই মেসি অনন্য। ৪-৩-৩ ছকে মাঠের ডান পাশে নামলেও প্লেমেকারের কাজ করার জন্য তিনি অবস্থান করতেন মাঠের মাঝ অংশে। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি চলে যান প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে। হয় বল নিয়ে, নয়তো সতীর্থদের সাথে বল দেয়ানেয়া করে। এজন্য প্রতি মৌসুম শেষ দেখা যেত, বার্সেলোনার হয়ে মেসি প্লেমেকারের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন তো করেছেনই, গোলও করেছেন সবার থেকে বেশি। এজন্য একজন প্লেমেকার হবার পরও সর্বাধিক গোল দেবার পুরস্কার বারবারই এসেছে তার ঝুলিতে।
মেসিকে নিজে ভাবনাচিন্তা করার আগে কোচ পচেত্তিনোকে তাই মাথায় রাখতে হবে, মেসি নিছক কোনো প্লেমেকার নন, আবার শুধু গোল করতেই পটু কোনো খেলোয়াড়ও নন। মেসি হচ্ছেন আক্রমণভাগের ‘ওয়ান-ম্যান আর্মি’।
পচেত্তিনোর হাতে এখন আক্রমণের তিনটি অস্ত্র। মেসি-নেইমার-এমবাপে। যদিও শুধুমাত্র এই তারকাত্রয়ীই নয়, আক্রমণভাগে খেলানোর জন্য পচেত্তিনোর হাতে রয়েছে ডি মারিয়া, ইকার্দি, ড্রাক্সলার এবং সারাবিয়ার মতো তারকাবহুল ফুটবলারও। অবশ্য এই তিনজনের তারকাদ্যুতির কাছে বাকিদের কিছুটা ফিকে লাগাটাই স্বাভাবিক।
পচেত্তিনো সাধারণত তার দলকে ৪-৩-৩, ৪-২-৩-১ এবং ম্যাচভেদে ৪-৪-২ ছকে দলকে খেলিয়ে থাকেন। মেসি আসার আগে ৪-৩-৩ ছকে আক্রমণভাগের বাম অংশে নেইমার, স্ট্রাইকারের ভুমিকায় ইকার্দি ও রাইট উইংগার হিসেবে এমবাপেকে দেখা গেছে। এছাড়াও, স্ট্রাইকার হিসেবে এমবাপেকে নামিয়ে ডানে ডি মারিয়াকেও দেখা গেছে বেশ কিছু ম্যাচে।
তবে তিনি যদি মেসি, নেইমার এবং এমবাপেকে একসাথে আক্রমণভাগে ব্যবহার করতে চান, তবে ৪-৩-৩ ফর্মেশন কার্যকরী না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। গত সিজন অনুযায়ী, মেসি প্রতি ম্যাচে গড়ে প্রতিপক্ষের উপর বল দখলের জন্য চেষ্টা করেন ৮.৬৬ বার, নেইমার এবং এমবাপের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ১৩.৪ এবং ৬.৯২। অর্থাৎ এই আক্রমণত্রয়ীর কেউই বল পায়ে না থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষকে প্রেস করে বল পুনর্দখল করার প্রতি আগ্রহী নন, যে কারণে আক্রমণভাগে এই তিনজন থাকলে প্রতিপক্ষের পক্ষে খুব সহজেই বল পায়ে পিএসজির ফরোয়ার্ড অংশ অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। ফলে পিএসজির মিডফিল্ডারদের উপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি হবে।
এছাড়াও এমন পরিসংখ্যান ছাড়াও খালি চোখে মাঠের খেলা ও পচেত্তিনোর ফুটবল দর্শনের দিকে খেয়াল রাখলেও ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়। ৪-৩-৩ ছকে ফুলব্যাকের ভুমিকায় থাকবেন হাকিমি ও ব্রেনাত। পচেত্তিনো চান গতিশীল প্রেসিং ফুটবল ও উইংব্যাক আক্রমণ। যখন এই ছকে পিএসজি আক্রমণে যাবে, মেসি ডান পাশ থেকে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে কিছুটা ভেতরে চলে যাবেন, যে পজিশনের নাম হাফ-স্পেস। একই কাজ করবেন বাম পাশে থাকা নেইমারও। আর এতে করে উইং অংশে যে শূন্যতা তৈরি হবে, যেখানে চলে আসবেন দলের ফুলব্যাকেরা। তাহলে আক্রমণের সময় পিএসজি আসলে হামলে পড়ছে মোট ৫ জন খেলোয়াড় নিয়ে।
কিন্তু এমন আক্রমণের পর প্রতিপক্ষের কাছে বল হারানো পর তৈরি হতে পারে আসল সমস্যা। ৪-৩-৩ ছকে ডিফেন্ডার মাত্র দুইজন। আর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের কারণে তখন তিনজন বলা যায়। কিন্তু ফুলব্যাকেরা যে তাদের পজিশন ছেড়ে উপরে চলে এসেছেন, তাদের স্থান তখন একেবারেই ফাঁকা। আর কাউন্টার অ্যাটাকের সময় এই শূন্যতা হতে পারে দলের অন্যতম বড় দুর্বলতা। কিন্তু এখানে যদি পচেত্তিনো ৩-৪-৩ ছক ব্যবহার করেন, তাহলে এই শূন্যস্থান ও কাউন্টার অ্যাটাকের প্রবণতা বেশ কমে আসে। কিন্তু পিএসজিতে আসার পর তাকে এমন ট্যাকটিক্স ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
কিন্তু পিএসজি তো ৪-৩-৩ ছকে খেলে এসেছে আগে থেকেই, কিন্তু তখন তো তাদের সামনে এমন সমস্যা এসে উপস্থিত হয়নি! এর উত্তর দলে ডি মারিয়া থাকার প্রভাব। কিন্তু মেসি আসার পর এই দর্শনে পরিবর্তন আনাই সময়ের ব্যাপারমাত্র। ৪-৪-২ ছক তুলনামূলক রক্ষনাত্মক হওয়ায় এই ট্যাকটিক্স ব্যবহার করে আক্রমণের সময় মেসি-নেইমার-এমবাপে থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল বের করে আনাটাও বেশ কঠিন হবে। যে কারণে পচেত্তিনো হয়তো ৪-৪-২ ফর্মেশনের দিকেও যাবেন না।
বাকি থাকে ৪-২-৩-১ ফর্মেশন, এবং পিএসজির বর্তমান লাইনআপ থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্য এটাই হয়তো সম্ভাব্য সেরা ট্যাকটিক্স। ফর্মেশন অনুযায়ী আক্রমণভাগে সবার উপরে থাকবেন কিলিয়ান এমবাপে, তার নিচে সেকেন্ড স্ট্রাইকার রোলে থাকবেন মেসি। লেফট উইংয়ে থাকবেন নেইমার, তবে তাকে প্রতিনিয়তই লেফট উইং থেকে ড্রিবল করে ভেতরে ঢুকতে দেখা যাবে। রাইট উইংয়ে খেলতে দেখা যাবে ডি মারিয়াকে, তিনি চেষ্টা করবেন মেসির সাথে ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ পাসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে বিভ্রান্ত করে আক্রমণে যাওয়ার। তবে রাইটব্যাক রোলে থাকা হাকিমি বেশ আক্রমণাত্মক হওয়ায় হাকিমির ওভারল্যাপ করে উপরে উঠে আসার সময় তার ফেলে আসা শূন্যস্থান পুরণ করার দায়িত্বও থাকবে ডি মারিয়ার উপর।
রক্ষণের সময় পিএসজির ৪-২-৩-১ ফর্মেশনের আকৃতি কিছুটা পরিবর্তিত হবে। এসময় প্রায় মাঠের কর্নায়ের কাছাকাছি থাকা ডি মারিয়া এবং নেইমারকে সরাসরি প্রতিপক্ষকে প্রেস করে বল দখল পুনরায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। ফলে তখন পিএসজির ফর্মেশন কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে ৪-৪-২ এ রূপান্তরিত হবে পারে। নেইমারের প্রেস করার দক্ষতা মেসি এবং এমবাপের তুলনায় বেশ ভালো। একইসাথে রাইট উইংয়ে খেলা ডি মারিয়া কিংবা তার বিকল্প হিসেবে খেলা পাবলো সারাবিয়াও প্রতিপক্ষকে প্রেস করার দিক থেকে আক্রমণভাগের বাকি খেলোয়ারদের চেয়ে বেশ এগিয়ে। মেসি এবং এমবাপে থাকতে পারেন রক্ষণে অংশ নেবার দায়িত্বের বাইরে।তারা সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করবেন আক্রমণের দিকে। তবে প্রতিপক্ষের পায়ে বল থাকা অবস্থায় তারা প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জোনাল মার্কিং করে তাদের পাসিং অপশন বন্ধ করে দিতে চেষ্টা করবেন।
তবে ৪-৩-৩ ছক হোক, ৪-২-৩-১, অথবা ৪-২-২-২, লিওনেল মেসির ভূমিকা হবে একটিই, যে ভূমিকায় তিনি পুরো বিশ্বে পরিচিত, যে ভূমিকায় তিনি গত ৭ বছর কাটিয়েছেন; তাই পিএসজিতেও তিনি খেলবেন দলের মূল প্লেমেকার হিসেবে। জাভি বা ইনিয়েস্তা বিদায়ের পর মেসি বার্সেলোনার ৪-৩-৩ ছকের ডানপাশে নামলেও সবসময়ই তাকে খুঁজে পাওয়া যেত মধ্যমাঠের ঠিক উপরে। কারণ দলে উপযুক্ত প্লেমেকার না থাকায় নিচ থেকে খেলা গড়ে দেবার কাজ করে যেতে হয়েছে। তবে পিএসজির হয়ে তাকে এতটা নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা বেশ কম। মধ্যমাঠে পারেদেস ও ভেরাত্তি উভয়ে বল পায়ে দারুণ পারদর্শী। বার্সেলোনায় যে কাজটা মেসিকে নিচে নেমে করতে হয়েছে, পিএসজিতে সেই কাজের দায়িত্ব থাকবে এদের উপরে।
তাই ৪-২-৩-১ বা ৪-৩-৩ যেকোনো ছকে মেসি থাকবেন আক্রমণ ও মধ্যমাঠের কেন্দ্রবিন্দু। কারণ নিচ থেকে বল নিয়ে এসে তার কাছে পৌঁছে দেবার মতো খেলোয়াড়ের অভাব নেই পিএসজির একাদশে, আর এরপর মেসির করণীয় কী, সেটা তার থেকে ভালো আর কেউ জানে না।
তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, মেসির পর এই দলে দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে হয়তো নেইমারের নামই আসবে। তিনিও নাম্বার টেন হিসেবে খারাপ খেলেন না, তবে কেন মূল প্লেমেকারের দায়িত্ব মেসির পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
পচেত্তিনো পিএসজির কোচের আসনে বসার পরে বেশ কয়েক ম্যাচে নেইমারকে খেলিয়েছেন দলের মূল প্লেমেকারের ভূমিকায়। তিনি হতাশ করেছেন ঠিক তা নয়, তবে কোচের যে উদ্দেশ্যে তাকে এই ভূমিকা দিয়েছিলেন, তা সফল হয়নি। তিনি বেশ ক্যারিশম্যাটিক ড্রিবল করতে পছন্দ করেন। আর এমন খেলোয়াড় যে বল হারাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ড্রিবল করতে গিয়ে মাঝমাঠে হুটহাট বল হারানো গোল হজম করার কারণ হতে পারে। তাই তার থেকে এই ভূমিকায় ভরসা রাখা যায় মেসির উপর। যদিও নেইমারকে কম মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তার ড্রিবল করার বিশেষ দক্ষতা কাজে দেবে উইংয়ের বাম পাশে। এদিক থেকে ডিফেন্ডারদের গতি ও ড্রিবলের কৌশলে ধোঁকা দিয়ে হাফ-স্পেস ও ডি-বক্সে আসতে পারেন, সেখানে তিনি খুঁজে পাবেন মেসি ও এমবাপের মতো ভরসাযোগ্য ফিনিশার।
তাই পচেত্তিনোর ছক যেটাই হোক না কেন, ম্যাচে সেরা ত্রয়ী বা তাদের সাথে ডি মারিয়া থাকুক বা না থাকুক, নেইমার ও এমবাপে যে এ মৌসুম থেকে গোল করার কাজে আরো বেশি মনোযোগ দেবেন, বলাই বাহুল্য। আর মেসি থাকবেন মধ্যমাঠ এবং আক্রমণভাগের মাঝে সাঁকো হয়ে। ডি মারিয়া থাকলে আক্রমণ ছাড়াও তার কাজ হবে প্রেসিং ও রক্ষণে চোখ রাখা।
পচেত্তিনোর হাতে অস্ত্র ও কৌশলের কোনো অভাব নেই। তাই তিনি কোন ছকে তার একাদশ নামাচ্ছেন, সেটা মুখ্য নয়। মূল বিষয় হচ্ছে, তার একাদশের এগারো জন্য খেলোয়াড়ের সবার ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব থাকবে, সেটা তারা ম্যাচের সময় ঠিকমতো মাঠে ফুটিয়ে তুলতে পারছেন কি না। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এক বনে একের অধিক রাজা থাকতে না পারারই কথা। সেখানে পিএসজিতে তিন-তিনজন ‘রাজা’ একত্রে অবস্থান করছেন, পচেত্তিনো কি এদের একত্রে সামলে উঠতে পারবেন?
গত সিজনে দুর্দান্ত একটা দল নিয়েও লিলের কাছে লিগ শিরোপা হারানোর পর পচেত্তিনো তার চাকরি নিয়ে বেশ চাপেই রয়েছেন। তাই তার চেষ্টা থাকবে, যেকোন মূল্যেই লিগ ওয়ান শিরোপা পুনরোদ্ধারের। তবে বর্তমান সময়ের সেরা খেলোয়ারকে নিজেদের দলে নিয়ে আসার পর শুধুমাত্র ঘরোয়া শিরোপাজয়ের মাধ্যমেই পিএসজি বোর্ড খুশি হবে না, তা বলাই বাহুল্য। তাদের চোখ থাকবে অধরা ইউরোপসেরার মুকুট নিজেদের ঘরে নিয়ে আসার। হয়তো কিলিয়ান এমবাপের জন্য সেজন্যই চোখ কপালে তোলার মতো অঙ্কের প্রস্তাব পেয়েও তারা ফিরিয়ে দিল।
তাই ক্লাবের ইতিহাসের সেরা শক্তিশালী দল নিয়ে পিএসজি কি পারবে পাখির চোখ করে রাখা চ্যাম্পিয়নস লিগ ঘরে আনতে? লিওনেল মেসিও চান আরও একবার ছুঁয়ে দেখতে এই বিশেষ শিরোপা। তিনি কি পারবেন ক্যারিয়ারের শেষদিকে আরও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে? প্রশ্নগুলো আপাতত তোলা রইল সময়ের হাতেই।