Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বার্সেলোনা নয়, স্পেনে তরুণ প্রতিভার সূতিকাগার এখন রিয়াল মাদ্রিদ

নিঃসন্দেহে এযাবৎকালের সবচেয়ে সফলতম দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। চলমান শতাব্দীতে দল দুটির অর্জিত শিরোপাসংখ্যাই তাদেরকে এই তকমা দিতে বাধ্য করেছে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তপোক্ত অবস্থানে থাকা উভয় দলেরই রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত ফুটবল একাডেমি। লা মাসিয়া ফুটবল একাডেমি থেকে উঠে আসা জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, সার্জিও বুস্কেটস, কার্লোস পুয়োল, জেরার্ড পিকের মতো কিংবদন্তিরা বার্সেলোনাকে উপহার দিয়েছেন নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম সময়।

তবে লা মাসিয়া একাডেমির শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার নিঃসন্দেহে লিওনেল মেসি। ৬টি ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসির হাতেই উঠেছিল সর্বশেষ ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ ফুটবলারের পুরস্কার। কাতালান এই ক্লাবটির এই শতকে আসা সফলতার সিংহভাগই এসেছে তার জাদুকরী পারফরম্যান্সের কল্যাণে।

লা মাসিয়া গ্র্যাজুয়েট একঝাঁক তারকা ফুটবলার; Image Source: AS English

অপরদিকে, রিয়ালের লা ফেব্রিকা থেকে উঠে আসা ফুটবলারদের মধ্যে সর্বাধিক সুখ্যাতি পেয়েছেন ইকার ক্যাসিয়াস, আলবারো আরবেলোয়া, আলভিরো মোরাতা, দানি কারভাহাল ও নাচো ফার্নান্দেজরা। গ্যালাকটিকোস যুগের স্রষ্টা ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের রিয়াল মাদ্রিদ বিগত বছরগুলোতে তরুণ ফুটবলার তৈরিতে ভালোভাবেই নজর দিয়েছে। তবে বার্সেলোনার মতো একাডেমি থেকে অনেক অনেক ফুটবলারকে গড়ে তুলতে না পারলেও ভিন্ন পন্থায় তরুণদের তারকাখ্যাতি দিতে সমর্থ হয়েছে দলটি।

কয়েকজন লা ফেব্রিকা গ্র্যাজুয়েট; Image Source: Artwork by Hannah Carroll, B/R Report

তরুণ ফুটবলারদের তারকা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উভয় ক্লাবের কার্যক্রম পুরোপুরি ভিন্ন। বার্সেলোনা লা মাসিয়া থেকে প্রতিভাবানদের মূল দলে যুক্ত করে বরাবরই সফলতা পেয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ও স্পেনের বিভিন্ন ক্লাবে আলোচিত প্রতিভাবানদের কম দামে দলে ভিড়িয়ে সফল হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ৬ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের ক্যাসেমিরো, ৩.৯ মিলিয়নের মার্কো অ্যাসেনসিও, লুকাস ভাসকেজরা রিয়ালের সফলতার আদর্শ উদাহরণ।

২০১২ সালে লেভান্তের বিপক্ষে ম্যাচে ১১ জন লা মাসিয়া গ্র্যাজুয়েট ফুটবলারকে একাদশে রেখেছিল বার্সেলোনা। লা মাসিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে এর চেয়ে বেশি উদাহরণ হয়তো প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এসব পরিসংখ্যান দিয়ে দুই দলের মধ্যকার অতীতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুলনা করা গেলেও বর্তমান সময়ে তরুণ ফুটবলার তৈরিতে তাদের সফলতা ব্যর্থতার হিসেব-নিকেশ করা যাবে না। কারণ বর্তমান সময়ে উভয় ক্লাব তরুণদের নিয়ে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। তবে সকল বিষয়ের মতো এই বিষয়ের সুরাহা করা অসম্ভব কিছু নয়।

লা মাসিয়া গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে বার্সা একাদশ; Image Source: Goal.com

বর্তমান সময়ে তরুণ ফুটবলার তৈরিতে দুই দলের সফলতা, ব্যর্থতার অঙ্ক কষতে জানা দরকার সাম্প্রতিককালের লা মাসিয়া গ্রাজুয়েটরা কে কোথায় আছে, সে সম্পর্কে। এছাড়াও তাদের চুক্তি ও ভবিষ্যত নিয়ে বার্সেলোনার পরিকল্পনা কেমন হতে পারে, সেসব কিছুই বিস্তারিত জানা দরকার। সেই সাথে রিয়াল মাদ্রিদের তরুণ ফুটবলারদের দলবদল, বর্তমান পারফরম্যান্স ও দলে তাদের অবস্থান কেমন, তা নিয়েও আলোচনা করা জরুরি। চলুন জেনে নিই, তরুণ ফুটবলার তৈরিতে বর্তমান সময়ে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে কোন দলটি এগিয়ে রয়েছে, সে সম্পর্কে।

বার্সেলোনায় একাডেমি গ্র্যাজুয়েট ও তরুণ ফুটবলারদের পরিস্থিতি

গতমাসে অনুষ্ঠিত শীতকালীন দলবদলে সাময়িক সময়ের জন্য বার্সেলোনা ছেড়েছেন কয়েকজন আলোচিত একাডেমি গ্র্যাজুয়েট ফুটবলার। ২২ বছর বয়সী প্রতিভাবান মিডফিল্ডার কার্লোস আলেনাকে চলতি মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ধারে খেলার জন্য রিয়াল বেতিসে পাঠিয়েছে দলের কর্তারা। সাবেক কোচ ভালভার্দের অধীনে গত মৌসুমে পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি তিনি। গত ডিসেম্বর অবধি বার্সার হয়ে ১৩ ম্যাচ ২টি গোল করেন আলেনা।

কার্লোস আলেনা; Image Source: Sports India show.com

২০১৮-১৯ মৌসুমে অভিষেক হওয়া উইঙ্গার কার্লোস পেরেজও বার্সেলোনা ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন ইতালিয়ান ক্লাব রোমায়। ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৭৪ মিনিট খেলে করেন ১ গোল এবং ২টি অ্যাসিস্ট। একই পথে হেঁটেছেন আরেক প্রতিভাবান ডিফেন্ডার মুসা ওয়েগ। ২০১৮ সালে বার্সা ‘বি’ দলে নাম লেখানোর পর মূল দলে খেলেছেন কয়েকটি ম্যাচ। কিন্তু পর্যাপ্ত খেলার আশায় গত জানুয়ারিতেই ফরাসি ক্লাব নিসে যোগ দিয়েছেন এই সেনেগালীয় ফুটবলার।

কার্লোস পেরেজ; Image Source: As.com

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বেশ ঘটা করেই ডিফেন্ডার জাঁঁ-ক্লেয়ার তোদিবোকে দলে ভেড়ায় বার্সেলোনা। ফরাসি ক্লাব তুলুজ থেকে একপ্রকার বিনে পয়সায় এই প্রতিভাবানকে পেয়েছিল দলটি। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই তার নতুন ঠিকানা হয়েছে জার্মান ক্লাব শালকেতে। আলেনা, পেরেজদের মতো তাকেও মৌসুমের শেষ অবধি ধারে খেলতে পাঠানো হয়েছে। জানুয়ারিতে বার্সেলোনা ছাড়া আরেক স্ট্রাইকার আবেল রুইজ। চলতি বছরের জুন অবধি পর্তুগিজ ক্লাব ব্রাগায় খেলবেন ২০ বছর বয়সী এই ফুটবলার।

জাঁঁ-ক্লেয়ার তোদিবো; Image Source: European football rumours

ধারে অন্য দলে খেলার সঙ্গে রিয়ালে সফলতা কিংবা ব্যর্থতার তুলনা করা যায় না। কিন্তু উল্লিখিত ৫ ফুটবলারের লোন চুক্তির শর্তাবলী দেখলে আশ্চর্য হওয়া ছাড়া উপায়ও নেই। প্রত্যেকের চুক্তিতে বিক্রি করার মতো দাম যুক্ত করে রেখেছে বার্সেলোনা। সে হিসেবে তারা যেসব ক্লাবে এই ৬ মাস খেলবেন, সেখানেই স্থায়ীভাবে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবেন। তাই অনেকটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই ক’জনের পুনরায় বার্সায় ফেরা অনিশ্চিত। কারণ, চুক্তিতে উল্লিখিত বিক্রির বিষয়টি বার্সেলোনা মূল দলে তাদের গুরুত্ব কতটুকু, সেটা যেমনভাবে প্রমাণ করে; তেমনি কখনও ফিরে আসলেও নিয়মিত খেলতে পারবে কি না, সে বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

মার্ক কুকুরেয়া; Image Source: Fc Barcelona official

ধারে বার্সা ছেড়ে অন্য দলে খেলা তরুণদের ভাগ্য খুব বেশি ভালো হয়নি বিগত বছরগুলোতে। অন্তত লেফট ব্যাক মার্ক কুকুরেয়ার সঙ্গে হওয়া ঘটনাটি এমনটাই প্রমাণ করে। গত মৌসুমে স্প্যানিশ ক্লাব এবারে মুগ্ধতা ছড়ানো এই ডিফেন্ডারকে অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছিল বার্সা। অতঃপর জানুয়ারিতে এইবারের কাছ থেকে তাকে পুনরায় কিনে আরেক স্প্যানিশ ক্লাব গেটাফের নিকট ধারে পাঠায় ক্লাবটি। তিনি ভবিষ্যতে কখনও বার্সেলোনার জার্সি গায়ে জড়াতে পারবেন কি না, সেটি নিয়ে এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। কারণ এরই মধ্যে আরেক স্প্যানিশ লেফট ব্যাক জুনিয়র ফিরপোকে দলে ভিড়িয়েছে বার্সেলোনা।

আনসু ফাতি; Image Source: Marca

যদিও এতকিছুর মাঝে বার্সেলোনা সমর্থকদের মাতিয়ে রেখেছেন সময়ের সেরা একাডেমি গ্র্যাজুয়েট আনসু ফাতি। কোচ ভালভার্দের অধীনে মূল দলে সুযোগ পেয়ে ভক্তদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। গড়েছেন সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল করার অনন্য এক রেকর্ড। এছাড়াও লা লিগা ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে এক ম্যাচে দুই গোল করার রেকর্ডটিও এখন তার দখলে।

আনসু ফাতি; Image Source: Marca

ভালভার্দের বিদায়ের পর কিকে সেতিয়েন নিজের অভিষেক ম্যাচে ফাতিকে একাদশে রেখে ইতিবাচক দিক ইঙ্গিত করেছেন। চলতি মৌসুমে লা লিগায় ৫৮৫ মিনিট খেলে ৪ গোল এবং ১ অ্যাসিস্ট করা ১৭ বছর বয়সী এই প্রতিভাবানকে দলের ভবিষ্যত হিসেবে দেখছেন লিওনেল মেসি। ফাতির মতো রিকি পুইগও একাধিকবার কিকে সেতিয়েনের দলে ডাক পেয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, বার্সেলোনা তাদের নিয়ে ভবিষ্যতে কী পরিকল্পনা করে।

রিয়ালে তরুণ ফুটবলারদের পরিস্থিতি

আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি যে, বর্তমান সময়ে তরুণদের নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার কার্যক্রম পুরোপুরি ভিন্নরকম। বার্সেলোনার মতো রিয়াল মাদ্রিদ কখনোই একাডেমি নির্ভর ছিলো না। বরঞ্চ ইউরোপ, লাতিন আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে স্কাউট নিযুক্ত করে বয়সভিত্তিক দলের প্রতিভাবান ফুটবলারদের খু্ঁজতে ব্যস্ত তারা। বর্তমানে অবশ্য রিয়ালের দেখানো পথে হাঁটছে অন্যসব শীর্ষস্থানীয় দল। তবে রিয়ালের মতো সফলতা কোনো দলই পায়নি।

কার্লোস ক্যাসেমিরো; Image Source: Getty Images

কার্লোস ক্যাসেমিরো! বর্তমান সময়ের সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার তিনি। ২০১৩ সালে মাত্র ৬ মিলিয়ন ইউরো মূল্যে তাকে সাও পাওলো থেকে দলে নেয় রিয়াল। প্রথমদিকে রিয়াল ‘বি’ দলে খেললেও পরবর্তীতে অধিকতর উন্নতির জন্য তাকে পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোতে লোনে পাঠানো হয়। পোর্তোর হয়ে ২০১৪-১৫ মৌসুমে অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দেন ২১ বছর বয়সী ক্যাসেমিরো। সেবার হুলেন লোপেতেগির অধীনে দলটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

ক্যাসেমিরো; Image Source: Twitter

মৌসুম শেষে তাকে ফিরিয়ে আনতে দুবার ভাবেনি রিয়ালের কর্তারা। ২০১৫ সাল থেকে এখন অবধি রিয়ালের মাঝমাঠ ও রক্ষণভাগকে দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন ক্যাসেমিরো। জিনেদিন জিদানের নেতৃত্বে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছিল রিয়াল। তখনও দলের সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন তিনি। চলতি মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে কম গোল হজম করার রেকর্ড গড়েছে। রিয়ালের এমন অভূতপূর্ব পারফরম্যান্সের পেছনে এই ব্রাজিলিয়ানের অবদান সর্বাধিক। লা লিগায় এখন পর্যন্ত ৭৪টি (সর্বাধিক) ট্যাকেল করে সর্বোচ্চ ৪৯টি সফল ট্যাকেল সম্পন্ন করেছেন ক্যাসেমিরো।

২০১৪ সালে ১৮ বছর বয়সী তরুণ মিডফিল্ডার মার্কো অ্যাসেনসিওকে নামমাত্র মূল্যে দলে ভিড়িয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেবার মৌসুমের শেষ পর্যন্ত নিজের শৈশব ক্লাব দেপোর্তিভো মায়োর্কাতে অবস্থান করেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে রিয়ালে যোগ দিয়ে ২০১৫-১৬ মৌসুমে এস্পানিওলে ধারে খেলেন অ্যাসেনসিও।

মার্কো অ্যাসেনসিও; Image Source: Twitter/Uefa

সেবার ১২ অ্যাসিস্ট এবং ৪টি গোল করে লা লিগার ‘ব্রেকথ্রু প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার পুরস্কার’ জেতেন তিনি। অতঃপর রিয়ালে ফিরে দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হন এই স্প্যানিয়ার্ড। অ্যাসেনসিও রিয়ালের একমাত্র ফুটবলার, যিনি কি না চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিযোগিতায় অভিষেক ম্যাচে গোল পেয়েছিলেন। চলতি মৌসুমের শুরুতে ইনজুরির কারণে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকলেও কিছুদিন আগেই প্রশিক্ষণে ফিরেছেন তিনি।

অভিষেক ম্যাচে রোনালদোর পরিবর্তে মাঠে নামছেন মার্টিন ওডেগার্ড; Image Source: Real Madrid Official

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ১৫ বছর বয়সী নরওয়েজিয়ান মিডফিল্ডার মার্টিন ওডেগার্ডকে দলে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। সেবার ‘বি’ টিমে খেললেও বছরের মাঝামাঝি সময়ে মূল দলে অভিষেক হয় তার। অতঃপর মে মাসের ২৩ তারিখে ১৬ বছর ১৫৬ দিন বয়সে রিয়ালের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক হয় তার। এর পূর্বে রিয়ালের কনিষ্ঠতম ফুটবলার ছিলেন সেবাস্তিয়ান লোসাদা। খুব অল্প বয়সে রিয়ালে যোগ দেয়ায় সর্বমোট ৩টি দলের হয়ে ধারে খেলেছেন ওডেগার্ড।

সোসিয়েদাদের জার্সিতে ওডেগার্ড; Image Source: Nurphoto via Getty Images

বর্তমানে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল সোসিয়েদাদে রয়েছেন ওডেগার্ড। চলতি মৌসুমে সোসিয়েদাদের হয়ে ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুম পার করছেন ২১ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। লিগে এখন অবধি ১৯ ম্যাচ খেলে ৪ গোল এবং ৫টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। এছাড়াও সোসিয়েদাদ এবার কোপা দেল রে-তেও দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এই প্রতিযোগিতায় ৪ ম্যাচে ৩ গোল ও ৩টি অ্যাসিস্ট রয়েছে ওডেগার্ডের। তাকে ভবিষ্যতে লুকা মডরিচের পরিপূরক হিসেবে দেখেন রিয়াল ভক্তরা।

ফেদে ভালভার্দে রিয়ালে যোগ দেন ২০১৬ সালে। বছরখানেক ‘বি’ দলে খেলার পর ২০১৭-১৮ মৌসুম দেপোর্তিভো লা করুনাতে ধারে খেলেন। সেখান থেকে ফিরে গত মৌসুমে রিয়াল মূল দলে অন্তর্ভুক্ত হন। গত মৌসুমে ক্লাব কর্তাদের মুগ্ধ করলেও চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন ২১ বছর বয়সী এই উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার।

ফেদে ভালভার্দে; Image Source: UEFA.com

জিনেদিন জিদান মৌসুমের শুরু থেকে পল পগবাকে দলে নেয়ার জন্য বেশ জোরাজুরি করেছিলেন। কিন্তু ক্লাব কর্তারা ভালভার্দের উপর আস্থা রাখায় পগবাকে চড়া দামে দলে নেয়নি রিয়াল। ক্লাবের আস্থার প্রতিদান ভালোভাবেই দিয়ে যাচ্ছেন ভালভার্দে। এখন অবধি ৪ অ্যাসিস্ট এবং ২টি গোল করেছেন তিনি। তার অভূতপূর্ব পারফরম্যান্সের কারণে লুকা মডরিচকে কয়েক ম্যাচ বেঞ্চে বসাতে বাধ্য হয়েছেন কোচ জিনেদিন জিদান।

রোনালদোর বিদায়ের পর রিয়ালের লেফট উইং একেবারে ফাঁকা পড়ে ছিলো। অতঃপর ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে দলে যোগ দেন ব্রাজিলিয়ান প্রতিভাবান ভিনিসিয়াস জুনিয়র। ফ্লেমেঙ্গো থেকে বেশ ঘটা করেই তাকে দলে ভিড়িয়েছিল রিয়াল। যদিও প্রথম মৌসুমে পার্থক্য গড়ে দেয়ার মতো পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারেননি ভিনিসিয়াস। এ মৌসুমে জিদানের অধীনে বেশ উন্নতি করেছেন ১৯ বছর বয়সী এই তারকা।

ভিনিসিয়াস জুনিয়র; Image Source: Marca

চলতি মাসের শুরুতে সোসিয়েদাদের বিপক্ষে কোপা দেলরের ম্যাচে ১১টি ড্রিবলিং সম্পন্ন করে সমর্থকদের নজর কাড়েন ভিনিসিয়াস। ২০০৮-০৯ মৌসুমের পর রিয়ালের হয়ে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ড্রিবলিং সম্পন্ন করার কীর্তি গড়েন তিনি। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন দলবদলে ডর্টমুন্ড, পিএসজির মতো দল তাকে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও রিয়াল বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে। রিয়ালের ভবিষ্যৎ তারকাদের একজন ভাবা হয় তাকে।

রিয়াল একাডেমি গ্র্যাজুয়েট তারকা খেলোয়াড়দের বর্তমান পরিস্থিতি

অন্য দল থেকে রিয়ালে যোগ দেওয়া খেলোয়াড়দের পাশাপাশি রিয়াল একাডেমির বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় বিভিন্ন সময় দলে শক্ত অবস্থান তৈরিতে সফল হয়েছেন। এদের মধ্যে দানি কারভাহাল সবার থেকে এগিয়ে। ‘বি’ দলের হয়ে মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্সের কারণে ২০১২ সালে তাকে জার্মান ক্লাব লেভারকুসেনে এক মৌসুম ধারে খেলার জন্য পাঠানো হয়। সেবার ৭ গোল এবং ১টি অ্যাসিস্ট করে রিয়াল কর্তাদের নজর কাড়েন এই একাডেমি গ্র্যাজুয়েট রাইট ব্যাক। লেভারকুসেন থেকে ফিরে রিয়ালে নিয়মিত হন কারভাহাল। এখন অবধি তার বিকল্প গড়ে তুলতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ।

দানি কারভাহাল; Image Source: B/R Report Football

তবে রাইট ব্যাক হিসেবে নিজেকে পাকাপোক্ত করে নিচ্ছেন রিয়ালের মরোক্কান ফুটবলার আশরাফ হাকিমি। দীর্ঘদিন রিয়াল মাদ্রিদ একাডেমির হয়ে খেলায় ২০১৭ সালে জিনেদিন জিদানের অধীনে মূল দলে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। সেবার দ্বিতীয় পছন্দের রাইট ব্যাক হিসেবে খেললেও পরবর্তী মৌসুমে জার্মান জায়ান্ট বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে যোগদেন হাকিমি। গত জানুয়ারিতে, ২০১৯ সালের আফ্রিকান বর্ষসেরা তরুণ ফুটবলারের পুরস্কার জেতেন তিনি।

আশরাফ হাকিমি; Image Source: All Football Daily

ডর্টমুন্ডের হয়ে প্রথম মৌসুমে সবরকম প্রতিযোগিতায় ৭ অ্যাসিস্ট এবং ২টি গোল পেয়েছিলেন তিনি। চলতি মৌসুমে নিজেকে আরও একবার ছাড়িয়ে গেছেন ২১ বছর বয়সী এই তারকা। এখন পর্যন্ত ২৫ ম্যাচ খেলে ৯ অ্যাসিস্ট এবং ৬টি গোল করেছেন হাকিমি। ৬ গোলের ৪টিই তিনি করেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে। ২৮ বছর বয়সী কারভাহালের পরিপূরক হিসেবে মৌসুম শেষে হাকিমি রিয়ালে ফিরবেন বলে নিশ্চিত করেছে ক্লাব কর্তারা।

লুকাস ভাসকেজ; Image Source: Four Four Two

লুকাস ভাসকেজ! কোচ জিদানের প্রথম অধ্যায়ে ক্রসিং নির্ভর ফুটবলের অন্যতম হাতিয়ার ছিলেন এই স্প্যানিয়ার্ড। একাডেমিতে নজরকাড়া পারফরম্যান্স উপহার দেয়ায় ২০১৪-১৫ মৌসুমে এস্পানিওলে ধারে খেলেন তিনি। অতঃপর রিয়ালে ফিরে জিদানের অধীনে দলে নিয়মিত হন। ২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ম্যাচ যখন টাইব্রেকারে গড়ায় তখন ভাসকেজও পেনাল্টি শট নেন। তিনি দলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তারই ইঙ্গিত করেছিলেন কোচ জিনেদিন জিদান।

কুবো এবং রদ্রেগো; Image Source: Twitter

এগুলো ছিলো বিগত কয়েক বছরে বেড়ে মূল দলে পাকাপোক্ত অবস্থান তৈরি করা খেলোয়াড়দের কথা। চলতি মৌসুমের শুরুতে রিয়াল একাডেমির কয়েকজন খেলোয়াড় বিভিন্ন দলে ধারে খেলতে গিয়েছেন। এদের মধ্যে একাডেমি গ্র্যাজুয়েট সার্জিও রিগুলিয়ন অন্যতম। সেভিয়াতে রিয়ালের সাবেক কোচ লোপেতেগির অধীনে নজরকাড়া পারফরম্যান্স উপহার দিচ্ছেন এই লেফট ব্যাক। এছাড়াও লেগানেসের হয়ে মাতাচ্ছেন ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার অস্কার রদ্রিগেজ। একাডেমি গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে আরও কয়েকজন বিভিন্ন দলের হয়ে খেলছেন।

ভিনিসিয়াস, রিগুলিয়ন এবং অদ্রিয়জোলা; Image Source: 90Minfootball.com

লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, আগে-পরে বিভিন্ন দলে লোনে পাঠানো খেলোয়াড়দের চুক্তিতে বিক্রির কোনো সুযোগই রাখেনি রিয়াল। আর এখানেই বার্সেলোনার সঙ্গে পার্থক্য তৈরি হয়েছে তাদের। হয়তো এই কারণেই বর্তমান রিয়াল মাদ্রিদ দলে গ্যালাকটিকোস খ্যাত খেলোয়াড়দের সংখ্যা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কমে এসেছে। অন্যদিকে, বার্সেলোনা তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে ভিন্নভাবে কাজ শুরু করেছে। ক্লাব কর্তারা যদি তরুণদের নিয়ে বর্তমান সময়ের মতো কাজ চালিয়ে যান, তবে আশা করা যায়, রিয়ালে যোগ দেয়া জাপানি তারকা কুবো, ব্রাহিম দিয়াজ কিংবা রদ্রেগোরা হয়তো ভবিষ্যতে দলকে আরও সফলতা এনে দেবেন।

খেলাধুলা সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলো:

১) খেলা নয়, ধুলা
২) মজার খেলা দাবা
৩) জাতীয় খেলা কাবাডি

This article is about Real Madrid and Barcelona's youth development. Nowadays both is working different things with youngsters. But in every way, Real Madrid are more successful than Barcelona. They're the Spain's new kings of youth development.

All necessary sources have been hyperlinked.

Feature Image Source: As.com

Related Articles