Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিকেটের রাজপুত্র বনাম ঈশ্বর

সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান কে?

উত্তরটা বেশ কঠিন। সাধারণভাবে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান বলা হয় স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে। কিন্তু ক্রিকেটে বর্তমানে তিনটা ফরম্যাট আছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্র্যাডম্যান দুটো ফরম্যাটে না খেলার কারণে তুলনা করাটা কঠিন হয়ে যায়। এজন্য বেশিরভাগ সময়েই ফরম্যাট ভিত্তিক সেরা ব্যাটসম্যান নির্বাচন করা হয়। সেখানে দেখা যায়, যে ভিভ রিচার্ডস ওয়ানডে ফরম্যাটে নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান হন, তিনিই আবার টেস্টে নাম্বার ফাইভ হয়ে যান।

এর মাঝেও আবার সমস্যা আছে। ভিন্ন ভিন্ন যুগের খেলোয়াড়দের মধ্যে তুলনা করা আসলেই উচিত না। ভিন্ন সময়, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন প্রতিপক্ষ, ভিন্ন মানসিকতা– এসব পরিবর্তন তো সব খেলাতেই হচ্ছে, কিন্তু ক্রিকেটের মতো পরিবর্তন আর কোনো খেলাতেই এতটা হয়নি। ক্রিকেট বোঝেন এমন যে কেউই স্বীকার করবেন যে, বর্তমান আইন-কানুন বেশির ভাগই ব্যাটসম্যানদের সুবিধার কথা ভেবে করা। কাজেই এই যুগের বোলারদের তুলনায় আগের যুগের বোলারদের অনেক ভয়ঙ্কর মনে হবে। বিপরীতক্রমে, আগের যুগের চেয়ে এই যুগের ব্যাটসম্যানদের অনেক বেশী দানবীয় মনে হবে। খুব দক্ষ না হলে আপনার পক্ষে ক্রিকেটের ফ্যাক্টগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করাটা অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে যাবে।

শচীন টেন্ডুলকার, ২০১৩। ছবিসূত্র: IANS

তবে একই যুগের দুজন ব্যাটসম্যানের মধ্যে কিছুটা তুলনা করা সম্ভব। যদিও সেখানে দলের বিষয়টা এসে পড়ে। আপনি তুলনামূলক সবল দলে খেললে কিছুটা সুবিধা পাবেন, আবার তুলনামূলক দুর্বল দলে খেললে সেটাও আপনার খেলায় প্রভাব ফেলবে।

সবচেয়ে ভালো হতো যদি একই দলে দুজনকে খেলিয়ে প্রতিপক্ষ একই রেখে বিচার করা যেত। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই সেটা সম্ভব না। তাই আপেক্ষিকভাবে কিছুটা আলোচনা করতে হয়।

একই সময় খেলা এমনই দুজন ব্যাটসম্যান হচ্ছেন ক্রিকেটের ‘ঈশ্বর’ খ্যাত শচীন টেন্ডুলকার আর ‘রাজপুত্র’ ব্রায়ান লারা। তাদের তুলনাটা একসময় কিছুটা ‘পেলে বনাম ম্যারাডোনা’ কিংবা ‘মেসি বনাম রোনালদো’ ধরনের ছিল। কিন্তু পেলে-ম্যারাডোনা ভিন্ন সময়ের হওয়ায় মেসি-রোনালদোর সাথে তুলনাটা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ছিল। লারা-শচীনের সময়ের মৌলিক কিছু বিষয় একই রকম ছিল। যেমন খেলার ফরম্যাট, মৌলিক নিয়ম-কানুন, প্রতিপক্ষ ইত্যাদি।

ব্রায়ান লারা। ছবিসূত্র: madcrazyhatter.wordpress.com

২০১৭ সালে বসে আপনি যদি বিচার করেন কে সেরা, তাহলে চোখ বন্ধ করে শচীন টেন্ডুলকারকে সেরা বলে দিতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি ‘৯০ দশকের শুরু থেকে ক্রিকেটের মনোযোগী দর্শক হন আর যদি একটু ক্রিকেট বিশ্লেষণ করতে জানেন, তাহলে এক বাক্যে শচীনকে সেরা না-ও মানতে পারেন। যারা নিজ চোখে দুজনের খেলা দেখেছেন, তাদের অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছেন। পরিসংখ্যানে টেন্ডুলকার মোটামুটি বেশ ভালো ব্যবধানেই এগিয়ে। এরপরেও যারা কিনা ব্রায়ান লারাকে এগিয়ে রাখেন, তাদের যুক্তিগুলো আসলে কী?

সেটাই একটু দেখার চেষ্টা করি।

একজন ব্যাটসম্যান কতটুকু ভালো কিংবা খারাপ সেটা নির্ধারণ করার জন্য বিভিন্ন নির্ধারক আছে, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এই নিয়ে তাদের মতামত দিয়ে থাকেন। তবে সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন নির্দিষ্ট ব্যাটসম্যানকে যে বোলার বল করেছেন তিনি। শচীন টেন্ডুলকার আর ব্রায়ান লারার সময়ের বেশির ভাগ বোলারের মন্তব্য লারার পক্ষেই গিয়েছে। এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, এই দুজনেই ক্যারিয়ারের বিভিন্ন পর্যায়ে পরস্পরকে এতবার ছাড়িয়ে গেছেন যে, বিভিন্ন বোলারও মত পাল্টেছেন কয়েকবার। কাজেই এই দুজনের ব্যাপারে সর্বশেষ মতামতটা নিলে বিচারটা অনেক নিঁখুত হবে।

ব্রায়ান লারা, ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৪০০ রানের ইংসের মাঝে উদযাপনরত। ছবিসূত্র: cricket.com.au

একজন খেলোয়াড়ের খেলায় তার সতীর্থদের সাহায্যের বিষয়টা অনেক প্রভাব ফেলে। ১০ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাবার পর ব্যাটিংয়ে নামা আর ১০০ রানে ১ উইকেট পড়ে যাবার পর ব্যাটিংয়ে নামার মাঝে অনেক পার্থক্য। এদিক থেকে নিশ্চিতভাবেই লারার চেয়ে শচীন তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো সতীর্থ পেয়েছেন। লারার যখন আবির্ভাব, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাম্রাজ্য অস্তায়মান। নতুন কোনো তারকা খেলোয়াড় সেভাবে উঠে আসেনি। শুরুর দিকে দুই বোলার কার্টলি এমব্রোস আর কোর্টনি ওয়ালশের সামান্য সহযোগিতা বাদ দিলে ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় ভঙ্গুর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রায় একাই টেনেছেন তিনি। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকভাবে কোনো খেলোয়াড়ের সাহায্য পাননি। বিপক্ষ দল জানতো যে, লারাকে আউট করা মানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রায় ৯০% খেলা শেষ। প্রতিটি ম্যাচেই এই চাপ নিয়ে লারাকে মাঠে নামতে হতো। প্রায়ই দেখা যেত, লারা যখন ব্যাটিংয়ে নামছেন, তখন প্রথম ১০ রানেই হয়তো ২ উইকেট নেই।

ওয়ানডে ক্রিকেটের ৩৯ বছরের ইতিহাসে প্রথম দ্বিশতকের পর শচীন, ২০১০ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। ছবিসূত্র: MANAN VATSYAYANA/AFP/Getty Images)

অন্যদিকে শচীন টেন্ডুলকার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ভালো ব্যাটসম্যানদের সহায়তা পেয়েছেন। শুরুতে তাকে কিছুটা ভুগতে হয়েছে ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকে সুযোগ না পাওয়ার কারণে। কিন্তু ১৯৯৪/৯৫ এর পর থেকে টপ অর্ডারে মোটামুটি থিতু হয়ে গিয়েছিলেন শচীন। ১৯৯৭/৯৮ এর সময় থেকে যখন সৌরভ, দ্রাবিড়দের আবির্ভাব ঘটলো, তখন আস্তে আস্তে ভারতীয় দলে শচীন নির্ভরতা কমতে লাগলো। এমন নয় যে, শচীনের উপর একেবারেই নির্ভরতা ছিল না। তবে শচীনের পাশাপাশি রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলী, বীরেন্দর শেওয়াগ, যুবরাজ সিং, মাহেন্দ্র সিং ধোনীরাও আলো ছড়ানোয় শচীন কিছুটা নির্ভার হয়ে যেতে পেরেছিলেন। এমনকি ক্যারিয়ারের কিছুটা সময় গাঙ্গুলীর ওয়ানডে পারফর্মেন্স আর দ্রাবিড়ের টেস্ট পারফর্মেন্স শচীনের চেয়ে ভালো ছিল। এছাড়া বোলিংয়েও বেশ কিছু ট্যালেন্ট পেয়ে যায় ভারত। হরভজন সিং, জহির খানের মতো নবীনদের সাথে অভিজ্ঞ কুম্বলে বেশ ভালো সার্ভিস দেন। সাথে টেস্টে উঠে আসেন ভি ভি এস লক্ষণের মতো খেলোয়াড়।

সতীর্থদের সহযোগিতার কথা বলে শচীনের ক্রেডিটকে কমানোর সুযোগ নেই। তবে এই সহযোগিতা লারা পেলে কিংবা লারার মতো অবস্থায় শচীন পড়লে কী হতে পারতো, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।

ওয়ানডেতে ভালো করার আরেকটা ফ্যাক্টর হচ্ছে, নিজের পছন্দ মতো ব্যাটিং অর্ডারে ব্যাটিং করা। যেটা কিনা লারা বেশির ভাগ সময়েই পাননি। লারার সবচেয়ে স্বাছন্দ্যের জায়গা ছিল ৩ নম্বরে। তবে ওপেনিংয়েও তিনি ভালো খেলেছেন। নিচের তালিকা লক্ষ্য করলে আরেকটু ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

এখানে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন কম সংখ্যক ম্যাচ খেললেও লারাকে প্রায়ই দলের প্রয়োজনে একটু নিচের দিকে নেমে ব্যাটিং করতে হয়েছে, যেটা স্বাভাবিকভাবেই তার পারফর্মেন্সে আঘাত হেনেছে। অথচ নিজের পছন্দের পজিশনে দুজনের ব্যাটিংয়ে খুব বেশি পার্থক্য নেই। আর অপছন্দের পজিশনেও দুজনের পারফর্মেন্স প্রায় সমান।

শচীন সম্পর্কে একটা কথা বেশ প্রচলিত যে, চাপের মুখে শচীন ভালো করতে পারেন না। অথচ বড় দল যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া কিংবা পাকিস্তান, যাদের কিনা বোলিং লাইন আপ ভালো, তাদের বিপক্ষে লারার চেয়ে শচীনের পারফর্মেন্স বেশ ভালো। কিন্তু পরিসংখ্যান সবসময় আপনার কাছে সত্যটা তুলে ধরতে সক্ষম হবে না। একটু লক্ষ্য করুন।

একটি দলের বোলিংয়ে ‘মূল বোলার’ বলে একটা ফ্যাক্টর থাকে। লারা-শচীনের সময় পাকিস্তানের মূল বোলার ধরা হতো ওয়াসিম আকরামকে, দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালান ডোনাল্ড-শন পোলককে, অষ্ট্রেলিয়ার ম্যাকগ্রাকে। এই চার বোলারের বিপক্ষে দুই ব্যাটসম্যানের পারফর্মেন্সটা একটু লক্ষ্য করি। (ডোনাল্ড-পোলকের ক্ষেত্রে ধরা হয়েছে কমপক্ষে একজন বোলার খেলেছেন অথবা একসাথে দুজন খেলেছেন।)





এবার আমরা আসি ওয়ানডেতে। ওয়ানডেতেও এই বোলারদের বিপক্ষে এ দুজনের পারফর্মেন্সটা একটু লক্ষ্য করি।




টেস্ট আর ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই গ্রেট বোলারদের বিপক্ষে দুজনের পারফর্মেন্সই তাদের ক্যারিয়ারের গড়ের চেয়ে খারাপ। এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে শচীনের চেয়ে লারার পারফর্মেন্স তুলনামূলক ভালো। এছাড়া লারা আরেকটা কারণে একটু দুর্ভাগা যে, গ্রেট বোলারদের বিপক্ষে তাকে শচীনের তুলনায় অনেক বেশি ম্যাচ খেলতে হয়েছে।

টেন্ডুলকার পিক টাইমের গ্রেট বোলারদের বিপক্ষে খুব কমই সফল হয়েছেন। তার সফলতা বেশিরভাগই মধ্যম মানের বোলিংয়ের বিপক্ষে। এখানে একটা প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি গ্রেট বোলারদের বোলিং তারা খেলতে পারেন না? বিষয়টা আসলে তেমন কিছু নয়। বিষয়টা এমনও না যে, বেশিরভাগ সময়ে তারা গ্রেট বোলারদের বিপক্ষেই আউট হয়েছেন। তবে ওয়াসিম-ম্যাকগ্রার মতো বোলাররা শচীন-লারাদের আউট করতে না পারলেও তাদের সঙ্গীদের আউট করে একটা চাপ সৃষ্টি করে ফেলতেন। আর এই চাপটা শচীনের চেয়ে লারা একটু বেশি সামলাতে পারতেন।

এর প্রমাণ চাইলে পরবর্তী পরিচ্ছেদটি লক্ষ্য করুন।

২০০১ সালে উইজডেন থেকে গত শতাব্দীর সেরা ১০০টি টেস্ট ইনিংস আর সেরা ১০০টি ওয়ানডে ইনিংসের তালিকা প্রকাশ করা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সেরা ১০০-তে শচীনের ১টি ইনিংসও স্থান পায়নি। প্রথম ১৫টিতে লারার ৩টি ইনিংস স্থান পায়, যেখানে ২য়টিই হলো লারার মহাকাব্যিক অপরাজিত ১৫৩ রানের ইনিংস।

ধারণা করা হয়েছিল ওয়ানডেতে শচীনের বেশি ইনিংস সুযোগ পাবে। কিন্তু সেখানেও লারার আধিপত্য বেশি শচীনের চেয়ে। সেরা দশে লারার দুটো ইনিংস আর সব মিলিয়ে সেরা ১০০ তে লারার ইনিংস ৬টি। অন্যদিকে শচীনের ইনিংস স্থান পেয়েছে মাত্র ৩টি; সেটাও ২৩, ৩০ আর ৩৩ নম্বরে।

অপরাজিত ৪০০ রানের সেই ম্যাচের তৃতীয় দিনে ৩৮৫ করার পর সতীর্থরা সম্মাননা জানাচ্ছেন অধিনায়ক লারাকে। ছবিসূত্র: GORDON BROOKS/AFP/Getty Images

লারার সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত ছিল যে, লারা যেদিন খেলবেন, সেদিন দুনিয়ার কোনো বোলারের সাধ্য নেই তাকে থামানোর। অন্যদিকে টেন্ডুলকারের সম্পর্কে কথা প্রচলিত ছিল যে, তিনি সেঞ্চুরি করলেই ভারত ম্যাচ হারে; যদিও এই তথ্যটি ভুল। টেন্ডুলকারের করা ৫১টি ওডিআই সেঞ্চুরির মাঝে ৩৩টিতেই ভারত জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই ৩৩টি সেঞ্চুরির মাঝে ১০টি হচ্ছে জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া আর নামিবিয়ার মতো দলের বিপক্ষে। বড় দলের বড় বোলারের বিপক্ষে শচীনের পারফর্মেন্স মোটেও ‘শচীন সুলভ’ নয়।

একটা বিষয় লক্ষ্য করুন। বিশ্বকাপে শচীনের সেঞ্চুরি ৬টি। অথচ এই ৬টি সেঞ্চুরির মাঝে মাত্র ৩টি ম্যাচে ভারত জয় পায়। সেই ম্যাচ তিনটির একটি ছিল নামিবিয়ার বিপক্ষে আর দুটো ছিল কেনিয়ার বিপক্ষে। ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচগুলো ভারত জিততে পারেনি।

এ জায়গায় কেউ কেউ বলতে পারেন যে, সতীর্থদের ব্যর্থতায় শচীন সফলতা পাননি। কিন্তু লারা কি শচীনের তুলনায় ভালো সতীর্থ পেয়েছিলেন? রেকর্ড সেটা বলে না। লারা বিশ্বকাপে মাত্র দুটো সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। দুটোই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এর মাঝে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে দুরন্ত আফ্রিকাকে এক হাতে বিদায় করেছিলেন ৯৪ বলে ১১১ রানের একটা ইনিংস খেলে। লারাকে বলা হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’।

ক্রিকেট বোর্ড থেকেও লারা তুলনামূলক কম সমর্থন পেয়েছিলেন। ‘৯৭ সালে তো বোর্ডের সাথে বিদ্রোহ করে জাতীয় দল থেকে একবার অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ২০০৭ বিশ্বকাপ শেষে বোর্ডের সাথে বিরোধিতাতেই পুরোপুরি অবসর নিয়ে নেন। অথচ আরো কিছু দিন টেস্ট খেলা চালিয়ে যেতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। সাদা পোশাকে তার শেষ সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে গড় ছিল ৮৯.৬০। একটি ডাবল সেঞ্চুরি আর একটি সেঞ্চুরিও ছিল। অথচ লারা চলে যাবার পরও অনেকদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিং নিয়ে ভুগতে হয়েছিল। অন্যদিকে ভারতে অনেক তরুণ মেধাবী ক্রিকেটার থাকার পরও এবং তুলনামূলক খারাপ খেলার পরও শচীন বোর্ডের সমর্থন পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে বোর্ডের আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন এই চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যান।

লারা কি শচীনের চেয়ে কম ধারাবাহিক ছিলেন? পরিসংখ্যান কিন্তু তা বলে না। লারা আর শচীনের প্রতি হাজার রান করতে কয়টি ইনিংস লেগেছিল, সেটা একটু লক্ষ্য করুন।

লারা যদি শচীনের মতো সতীর্থ পেয়ে একটু নির্ভারভাবে খেলতে পারতেন, যদি নিজের পছন্দের ব্যাটিং পজিশনে ব্যাটিং করতে পারতেন, যদি শচীনের মতো গ্রেট বোলারদের মুখোমুখি কম হতেন’– তাহলে পরিসংখ্যান বলছে শচীনের চেয়ে লারার গড় আর রান সবই বেশি হতো।

২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর শচীনকে কাঁধে তুলে মাঠ প্রদক্ষিণ করে সতীর্থদের সম্মাননা। ছবিসূত্র: WallpapersByte

কিন্তু দিন শেষে বিচারটা ‘যদি কিন্তু’ দিয়ে হয় না। যেটা ঘটেছে সেটা দিয়েই হয়। আর এই কারণেই শচীন অনেক ব্যবধানেই লারার চেয়ে এগিয়ে থাকেন। শচীনের আরেকটি বড় ব্যাপার হলো, খেলাটার প্রতি আত্মনিবেদন। লারা অনেকটা ফুটবলের রোনালদিনহোর মতো, কিছুটা খামখেয়ালী। এমন অনেক দিন আছে যে, টেস্টের শেষ সেশনে ব্যাটিং করে তিনি চলে গেছেন হাসপাতালে, সেখান থেকে নাইট ক্লাবে রাত কাটিয়ে পরের দিন মাঠে নেমে আবার সেঞ্চুরিও করেছেন। অন্যদিকে টেন্ডুলকারের আরাধনা যেকোনো উঠতি ক্রিকেটারের জন্য আদর্শ। ক্রিকেটের জন্য নিজের পুরো জীবনটাকেই উৎসর্গ করেছেন তিনি, ক্রিকেটও তাকে দিয়েছে দুহাত ভরে।

প্রতিভার দিক থেকে লারা অনেকটা এগিয়ে থেকেও তাই শচীনের পরিশ্রমের কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে। কিন্তু যারা নিজ চোখে লারার ব্যাটিং দেখেছেন, তাদের চোখে লারা আক্ষেপের প্রতিশব্দ হয়েই রয়ে গেছেন।

ফিচার ছবি: ২০১৫ সালে নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে শচীন ও লারা। ছবিসূত্র: AFP PHOTO/JEWEL SAMAD

Related Articles