Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আমাদের শিক্ষাসফর || দ্বিতীয় পর্ব

লিটন দাস কোনো ভণিতা করেননি, কোনো নতুন তত্ত্বও দেননি। বরং সেই আদ্যিকাল থেকে বাংলাদেশের অধিনায়কেরা যে বুলি আওড়ে চলেছেন, লিটন দাস সে কথাগুলোই বললেন সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৫৭ বলে অলআউট হয়ে,

‘আমরা শিখছি। শিখছি এখানকার উইকেট ও কন্ডিশনে কীভাবে খেলতে হয়। আশা করি পরেরবার ভালো করব।’

কিন্তু ভক্তমনে প্রশ্ন জাগে, লিটন দাসদের এই শিক্ষাসফরের পালা শেষ হবে কবে? শেষ ছয় বছরে বিদেশি দলগুলোর ভেতরে নিউজিল্যান্ডে সবচেয়ে বেশিবার সফর করেছে বাংলাদেশই, কিন্তু পারফরম্যান্সের গ্রাফটা সফরকে সফর নিম্নমুখীই হচ্ছে কেবল।

চট করেই পট পরিবর্তন হবে, দিগন্তে এমন কিছুর আভাসও তো মিলছে না। দেশের ক্রিকেটের সর্ববিভাগেই এমন করুণ হাল, যে তাকে এই দুই পর্বের প্রতিবেদনেও পুরোটা তুলে ধরা গেল না। প্রথম পর্বের ধারাবাহিকতায় এবার রইলো দ্বিতীয় পর্ব। 

নির্বাচকেরা যুক্তি শেখাচ্ছেন

দল নির্বাচনে নির্বাচকরা কতটুকু স্বচ্ছতা বজায় রাখছেন, শুরুতে সে আলাপটুকু সেরে নেয়াই ভালো। নানান সময়েই জাতীয় দলের নির্বাচক কমিটি অদ্ভুতুড়ে সব যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন তাদের সিদ্ধান্তের সাফাই গাইতে। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে মোসাদ্দেক হোসেনের জায়গায় হুট করেই খেলিয়ে দেয়া হয়েছিল সাব্বির রহমানকে। দুই ইনিংস মিলিয়ে সাব্বির খেলতে পারেননি ৬ বলও, রানসংখ্যার উল্লেখ না করাই শ্রেয়। মোসাদ্দেকের বদলে সাব্বিরকে কেন টানা হলো একাদশে, এ প্রশ্নে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন অদ্ভুত এক যুক্তি দেখিয়েছিলেন।

‘টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওকে (সাব্বির) নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। ওর তো অনুশীলনও দরকার। তাকে যদি কোথাও না রাখি, তাহলে তো অনুশীলনের সুবিধাও পাবে না।’

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না, এমন অভিযোগ অনেকদিনের। প্রশ্নটা হচ্ছে, যে দেশের টেস্ট ক্রিকেটকে টি-টোয়েন্টি দলের প্রস্তুতি মঞ্চ হিসেবে দেখেন খোদ নির্বাচকেরাই, তাদের টেস্ট খেলবার প্রয়োজনীয়তা কোথায়?

দৃশ্যটা যেন প্রতীকী। বারেবারেই এমন মাথা নিচু করা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন সাব্বির; Image credit: AFP

দল নির্বাচনে ধারাবাহিকতার অভাবের দৃষ্টান্ত ফুরোচ্ছে না সাব্বিরেই। ২০১৭ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাজে খেলে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়েন ইমরুল কায়েস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যে ওপেনারের ব্যাটিং গড় তখনও ১০ ছোঁয়নি, এমনকি স্ট্রাইকরেট ৯০-য়েরও কম, তাকে বাদ দেয়াটা বিতর্ক তোলেনি স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু সবাইকে তাজ্জব বানিয়ে এক সিরিজ পরেই কায়েসকে ফের স্কোয়াডে ভেড়ান নির্বাচকেরা। এবং আরও একবার হাজির করেন হাস্যরসে ভরা এক যুক্তি,

‘আমরা চাচ্ছি, যারা ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে ভালো ব্যাটিং করতে পারে, যেহেতু ও টেস্টে ওপেন করে। শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনে পেসারদের আধিক্য থাকবে। ইন্ডিয়াও অনেক পেসার নিয়ে খেলে। ওই সব চিন্তা করেই তৃতীয় ওপেনার হিসেবে ওকে নেয়া।’

ওশেন থমাসের গতির তোড়ে কায়েসকে হাঁসফাঁস করতে দেখা দর্শকেরা কেমন করে মেনে নেবেন এই ব্যাখ্যা?

নির্বাচকেরা জলঘোলা করেছেন দেশের মাটিতে সর্বশেষ সিরিজের দল ঘোষণা করতে গিয়েও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে রাখা হবে না, তা অনেকটা অনুমিতই ছিল। নানা সময়েই নানা সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বলেছেন, বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ১ উইকেট পাবার পর তিনি নিজেই আর জাতীয় দলে সুযোগ দেখেন না।

মাশরাফির জাতীয় দলকে দেয়ার মতো আর কিছুই নেই, সামনে এগোতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নির্বাচকদের থাকতেই পারে। ইয়ান হিলির মতো উইকেটরক্ষকের ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচ খেলতে চাওয়ার আকুতিও তো অবলীলায় অগ্রাহ্য করেছিলেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকরা। কিন্তু তার আগে খেলোয়াড়টির সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করে তবেই তারা উপনীত হয়েছিলেন সিদ্ধান্তে। মাশরাফির ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটা কি একই ছিল?

নির্বাচক হাবিবুল বাশারকে বলতে শোনা গিয়েছে, মাশরাফিকে ওয়ানডে দলে রাখা হবে না, এ কথা প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু মাশরাফিকে জানিয়েছেন। কিন্তু মাশরাফি বলছেন ভিন্ন কথা।

‘নান্নু ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। কিন্তু এসব কোনো কিছু নিয়েই (ওয়ানডে দল থেকে বাদ দেয়া) কথা হয়নি।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে মাশরাফি তো মহীরূহের পর্যায়েই পড়বেন। সেই তাকেও যদি নির্বাচকরা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন করে রাখেন, দলের তরুণ ক্রিকেটারদের অবস্থা ভেবে শঙ্কিত হতেই হচ্ছে।

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের যুক্তিগুলো হাসির খোরাক জোগায়; Image credit: jagonews24

নির্বাচকদের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার যে তারা হচ্ছেন না, এরই বা নিশ্চয়তা কোথায়? কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া নাঈম ইসলাম, মার্শাল আইয়ুব কিংবা আরিফুল হকরা তো আতঙ্কই বাড়ান কেবল!

পেশাদারিত্ব শেখাচ্ছে বোর্ড

কেবল নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশের ভরাডুবিই তো নয়, গত কিছুদিন দেশের ক্রিকেটাঙ্গন সরগরম হয়েছে সাকিব আল হাসান আর মাশরাফি বিন মুর্তজার বিস্ফোরক কিছু মন্তব্যেও। ক্রিকেটাররা নয়, তাদের কাঠগড়ায় উঠেছেন বোর্ড কর্তারা।

মাশরাফির তোলা প্রথম অভিযোগটিই যথেষ্ট গুরুতর, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাদের নামিয়ে দিচ্ছে মিথ্যেবাদীর কাতারে। গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দলে মাশরাফিকে না রাখার কারণ হিসেবে বোর্ড দাঁড় করিয়েছিল তার ফিটনেস ঘাটতিকে। কিন্তু মাশরাফি সম্প্রতি একাত্তর টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, বোর্ড তার সামনে অন্তত একটি দৃষ্টান্ত হাজির করুক, যেখানে ফিটনেস টেস্টে তার নামের পাশে ‘অকৃতকার্য’ লেখা রয়েছে। আর প্রমাণ উপস্থাপনে যদি অপারগ হয় বোর্ড, তাহলে তো বোর্ডের পেশাদারিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। যে কথাগুলো বলতে কোনো তথ্য-প্রমাণাদির দরকার পড়ে না, সেসব বাতেলা চায়ের দোকানে করা চলে। কিন্তু দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদ অলঙ্কৃত করা কেউ যদি এমন ‘ভিত্তিহীন’ তথ্য উপস্থাপন করেন, তাহলে মাশরাফির তোলা প্রশ্নটিরই পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে, ‘তারা কি আদৌ অফিস করে?’

অবশ্য বোর্ডের অপেশাদার আচরণের এমন উদাহরণ হাজির করা যাবে ভুরি ভুরি। সর্বশেষ সাকিবের আইপিএল খেলতে যাওয়া নিয়েই যেমন হলো। অথচ শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে বিশ্রাম চেয়ে সাকিব কিন্তু বোর্ডের কাছে অনুমতি দাবি করেছিলেন যথাসম্ভব বিধি-বিধান মেনেই। জোর করে কাউকে খেলানোর মানে হয় না বুঝতে পেরে বিসিবি তাকে অনুমতিও দিয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে এরপরই। সংবাদমাধ্যমে এসে মুখ খুলতে শুরু করেন বিসিবি পরিচালকেরা। বিশেষ করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তো পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, সাকিব ২০১৮ সাল থেকেই টেস্ট খেলতে অনাগ্রহী। সাকিব আল হাসান যে বক্তব্যের স্পষ্ট বিরোধিতা করেছেন সম্প্রতি দেয়া একটি লাইভ সাক্ষাৎকারে,

‘আমি টেস্ট খেলব না, এমন কিছু কখনো বলি নাই।’

বারেবারেই আলটপকা মন্তব্য করে শিরোনাম হয়েছেন বিসিবি সভাপতি আর তার পারিষদরা; Image credit: Prothom Alo

এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হবার পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্রিকেটারদের প্রকাশ্য সমালোচনায় মেতেছিলেন আরেক বিসিবি পরিচালক নাইমুর রহমান দুর্জয়

‘আমরা যখনই ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের আয়োজন করি, তখনই প্লেয়ারদের যত পারসোনাল এনেগজমেন্ট থাকে, পারসোনাল ইন্টারেস্টগুলো সামনে আসে, পারসোনাল এন্ডোর্সমেন্ট থাকে। শুটিং, ফিজিক্যাল চেকআপ আছেই।’

প্রশ্নটা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্রিকেটারদের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করাকেও আজকাল পেশাদারিত্ব বলে মানা হচ্ছে নাকি?

মাশরাফি তাই দাবি করছেন ক্রিকেটারদের সম্মান। তার ভাষ্যে, খেলা চলাকালীন ভিআইপি গ্যালারিতে বসে বোর্ড কর্তারা নাকি ব্যস্ত হয়ে ওঠেন ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স কাটাছেঁড়ায়। ‘এ তো চলে না’, ‘অমুক তো এর চেয়ে ভালো’ জাতীয় কথাবার্তা যখন আরেকজনের মাধ্যম হয়ে ক্রিকেটারদের কানে আসে, সেসব কথা ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে কুঁকড়ে দেয় ভীষণভাবে। ক্রিকেট বোর্ড থেকে যে আচরণবিধির খড়্গ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে ক্রিকেটারদের সামনে, সে বাধ্যবাধকতায় মুখ খুলতে পারেন না তাদের কেউ। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের আচরণবিধি কেবল ক্রিকেটারদের জন্যেই প্রযোজ্য হবে কেন?

ম্যাচ চলাকালীন হসপিটালিটি বক্সে, ম্যাচ হারের পর গণমাধ্যমের সামনে, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স কাটাছেঁড়া করে তাদের শূলে চড়ানোর সমস্ত যোগাড়যন্ত্রই করেন বোর্ড পরিচালকেরা। কিন্তু তাদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়নটা করবেন কে?

আচমকাই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন সাকিব-মাশরাফি। বলছেন, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং খালেদ মাহমুদ সুজন ছাড়া ক্রিকেট নিয়ে ভাবার মতো কাউকেই তারা দেখেন না ক্রিকেট বোর্ডে। সুজন যে কাজ করছেন, তা তো তার অধীনে থাকা গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির সাফল্যেই বোঝা যায়। অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে দুই বছরের সাধনায় বানিয়েছেন বিশ্বজয়ী। কিন্তু বাদবাকি কমিটিগুলো কী করছে?

কাজ করলেও গালিটা বেশি জুটেছে সুজনের ভাগেই। Image credit: Dhaka Tribune

অনূর্ধ্ব-১৯ পার করে আসা ক্রিকেটারদের জাতীয় দল উপযোগী করে তোলার দায়িত্ব বর্তায় ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি আর এইচপি কমিটির ওপর। ‘এ’ দল কিংবা হাই পারফরম্যান্স টিম গড়েপিটে জাতীয় দলের পাইপলাইন মজবুত করবেন তারাই। কিন্তু আকরাম খান কিংবা নাঈমুর রহমান দুর্জয়রা কি সে কাজটা সার্থকতার সঙ্গে করতে পারছেন? তাহলে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক যিনি, সেই নাজমুল হোসেন শান্ত জাতীয় দলে এসে খাবি খাচ্ছেন কেন? গত কয়েক বছরে জাতীয় দলে আগত একজন ক্রিকেটারও কি নিজের অবস্থান সুসংহত করতে পেরেছেন একাদশে? বছরে একবার আয়ারল্যান্ড উলভস, আরেকবার জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের সঙ্গে হেসেখেলে জিতেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার যে সংস্কৃতি চালু করেছেন পরিচালকেরা, সেটাও তো বন্ধ হওয়া জরুরি।

জাতীয় দলের কোচ নির্বাচনের প্রক্রিয়াতেও তো মস্ত বড় গলদ ধরা পড়ছে। বর্তমান প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বাংলাদেশে এসেছিলেন হাই পারফরম্যান্স দলের দায়িত্ব নিতে। বিসিবি নাকি তার দূরদর্শিতা, বাংলাদেশ দলকে নিয়ে তার পরিকল্পনায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল এতটাই যে এইচপির বদলে জাতীয় দলের জন্যই উপযুক্ত ভেবে বসে তাকে। অথচ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি তিনি। উল্টো তার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো ভিড়মি খাওয়াচ্ছে রীতিমতো। সৌম্যকে লোয়ার-অর্ডারে নামিয়ে দিয়ে ফিনিশার বানাবার চেষ্টা করলেন কয়েক ম্যাচ, সেই পরীক্ষায় ডাহা ফেল করে সৌম্যকে ফের তুলে আনলেন টপ-অর্ডারে। এমনকি সৌম্য-প্রেমে তিনি এতটাই বুঁদ হয়ে আছেন যে স্কোয়াডে থেকেও সাদমানের চোটে টেস্ট দলে সুযোগ পাননি সাইফ হাসান, অথচ বিকল্প ওপেনার হিসেবে স্কোয়াডে ছিলেন তিনিই। তার বদলে পত্রপাঠ ছুটে এসে জাতীয় দলের সাদা জার্সিটা গায়ে তুলেছিলেন সেই সৌম্য সরকারই, টেস্টে যার পারফরম্যান্সের এমনই হতশ্রী চেহারা যে বিসিবি তাকে জাতীয় দলের লাল বলের চুক্তিতেও রাখার সাহসটুকুও করেনি।

সৌম্যকে এমনই জাপটে জড়িয়ে রেখেছেন প্রধান কোচ; Image credit: bdnews24.com

ডমিঙ্গো যার বদলে এসেছেন, সেই স্টিভ রোডসকে ছাঁটাই করা হয়েছিল বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণে। কিন্তু তার আমলের ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক তার দায়িত্বে বহাল তবিয়তে টিকে আছেন এখন পর্যন্ত। তবে কি রোডসকে বরখাস্ত করে স্রেফ শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চেয়েছিল বিসিবি?

যে কোর্টনি ওয়ালশ বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব সামলেছেন প্রায় পৌনে তিন বছর, বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেবার আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোচিং করানোর বিন্দুবিসর্গ অভিজ্ঞতাও ছিল না তার। খেলোয়াড়ি জীবনে গড়া কীর্তিতেই গলে গিয়ে বিসিবি কর্তারা তাকে বিরাট কোচ ভেবে ফেলেছিলেন কি না, এ প্রশ্নটিও তোলাই যায়।

বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেবার আগে ওয়ালশের কোচিং অভিজ্ঞতা ছিলই না বলতে গেলে। Image credit: Md Manik/ Dhaka Tribune

বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে, সে-ও প্রায় ২১ বছর হতে চলল। অথচ দুই দশক পেরিয়ে এসেও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হচ্ছে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের নিম্নমান নিয়ে। এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগের খুলনা-রংপুর ম্যাচ চলাকালে ক্রিকেটাররা অবস্থান করছিলেন মশা-পোকার সঙ্গে একই সাজঘরে। মাঠের আউটফিল্ডে ঘাস বেশি নাকি বালি, এ নিয়েও তর্ক হতে পারে। আর প্রতিবার টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কর্তারা ভাঙা ক্যাসেটের মতো ভালো উইকেটের প্রতিশ্রুতি দিলেও অবস্থা বদলায় না একটিবারও। হাওয়াশূন্য মাঠেও উইকেটে বয়ে যাচ্ছে ধুলিঝড়, পপিং ক্রিজ মেরামত করতে পানি ফেলে তাতে মাটি ঢেলে হাতুড়ি ঠুকে মেরামত করা হচ্ছে, এমন বিরল দৃশ্যগুলোই অবলোকন করা গিয়েছে এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগের ঢাকা-রংপুর ম্যাচে। বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যানকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির কাঁধে দায় দিয়েই খালাস। মিরপুর-চট্টগ্রামের মাঠ রক্ষণাবেক্ষণ করেই কুল পান না তারা, সুদূর ওই রংপুরে মন দেবেন কখন?

এমন দৈন্যদশা নিয়েই চলছে দেশের ক্রিকেট। উন্নয়নের ফাঁপা বুলি ফুটছে বোর্ড কর্তাদের মুখে, অথচ বাস্তবে মিলছে লবডঙ্কা। ফলতঃ পাশের দেশের ক্রুনাল পান্ডিয়ারা জাতীয় দলে অভিষেক ম্যাচেই ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে ফেলছেন, বিপরীতে লিটন দাসরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় বছর কাটিয়েও শিখছেন।

বলি, এই শিক্ষাসফরের যাত্রা শেষ হবে কবে? গন্তব্যের পানে চেয়ে থেকে থেকে চোখ যে আমাদের ক্ষয়ে গেল!

This article is in Bangla language. This article is on the slow progression of Bangladesh cricket. Necessary hyperlinks and images are attached inside.

Featured image © Getty Images.

Related Articles