প্রিমিয়ার লিগে চলতি মৌসুমের প্রথমার্ধটা অপরাজিতভাবেই শেষ করল লিভারপুল। রবিবার ঘরের মাঠে উলভারহ্যাম্পটনকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। আর এই জয়ের মাধ্যমে ১৯ ম্যাচে ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষেই কেবল অবস্থান নয় তাদের, একই সাথে এক ম্যাচ কম খেলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা লিস্টার (৪২) ও ম্যানচেস্টার সিটির (৪১) চেয়ে তারা এগিয়ে রয়েছে যথাক্রমে ১৩ ও ১৪ পয়েন্টে।
কিন্তু ম্যাচশেষে লিভারপুলের জয় এবং এমন অভাবনীয় অগ্রগামিতাকে ছাপিয়ে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে, তা হলো ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর বিতর্ক। টানা দ্বিতীয় ম্যাচের মতো উলভসদের শিকার হতে হলো এই বিতর্কিত ভিএআরের।
অ্যানফিল্ডে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচটিতে লিভারপুল জয় পেয়েছে ৪২ মিনিটে সাদিও মানের একমাত্র গোলের সুবাদে। বিল্ডআপের সময় হ্যান্ডবল হওয়ায় শুরুতে গোলটি বাতিল করেছিলেন রেফারি অ্যান্থনি টেইলর। কিন্তু পরবর্তীতে ভিএআর রায় দেয় যে, অ্যাডাম লালানার অ্যাসিস্টটি তার হাতে লেগে নয়, এসেছে কাঁধ ছুঁয়ে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ লিড পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। কিন্তু এখানে বিতর্কের মূল রসদ হলো, মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে পরিষ্কারভাবেই বলটি হাতে লেগেছিল লিভারপুল ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইকের, যেটি ভিএআর এড়িয়ে যায়।
এরপর প্রথমার্ধেরই ইনজুরি সময়ে পেদ্রো নেতোর গোলে সমতা ফেরায় উলভস। প্রাথমিকভাবে গোলটিকে স্বীকৃতিও দেন টেইলর। অথচ ভিএআর থেকে বেরিয়ে আসে যে, নেতোর কাছে বল পৌঁছানোর আগেই সংক্ষিপ্ততম মার্জিনে অফসাইডে ছিলেন তার সতীর্থ জনি। ফলে বাতিল হয়ে যায় গোলটি।
উলভসের দুর্ভাগ্য শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। এর আগে বৃহস্পতিবার ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার পরও নাটকীয়ভাবে ৩-২ ব্যবধানে জয় তারা পেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেদিনও সিটির চেয়ে ভিএআরকেই মনে হয়েছিল তাদের বড় প্রতিপক্ষ। ভিএআরের কারণেই সেদিন তাদের বিরুদ্ধে একটি পেনাল্টি উপহার পেয়েছিল সিটি। আবার ভিএআর বাদ সেধেছিল রাহিম স্টার্লিংয়ের প্রথম শটটি ঠেকিয়ে দেয়ার পরও। বক্সের ভিতর সীমালঙ্ঘনের অভিযোগে দ্বিতীয়বার শট নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল স্টার্লিংকে, এবং সে দফায় ঠিকই বল জালে জড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।
প্রতিক্রিয়া
সব মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগের প্রতি সপ্তাহেই ভিএআর নিয়ে নিত্যনতুন সব বিতর্কের উদ্ভব ঘটছে, যাতে উলভস অধিনায়ক কনর কোডি যারপরনাই অসন্তুষ্ট। লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে তিনি বলেন:
“মনে হচ্ছে আমরা খুব বড় ধরনের অবিচারের শিকার হয়েছি। আমি কিছুতেই বিষয়টিকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না। এটি খুবই হাস্যকর। আমার মনে হচ্ছে, ভিএআর কাজ করছে না। কেউ কেউ বলে থাকেন, এর মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমরা খেলোয়াড়রা মাঠে খেলি, এবং আমার কাছে এটিকে সঠিক মনে হচ্ছে না।
“এটা মেনে নেয়া খুবই শক্ত। পরপর দুইটি ম্যাচে আমাদের সাথে এমন হলো, তা-ও আবার সম্ভবত বিশ্বের সেরা দুইটি দলের বিপক্ষে। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাছেই ছিল, এবং লিভারপুলকে খুব শক্তভাবে চেপেও ধরেছিলাম। কিন্তু এটি খুবই হতাশাজনক যে, এখন আমরা এখানে দাঁড়িয়ে উলভস কেমন খেলেছে তা আলোচনা না করে কথা বলছি ভিএআর নিয়ে।”
এদিকে ভিএআরের এমন আচরণ তো বটেই, পাশাপাশি এর কার্যপ্রক্রিয়া নিয়েও নাখোশ উলভস বস নুনো এসপিরিতো সান্তো। তিনি বলেন:
“সিদ্ধান্তগুলো টেলিভিশন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে শত মাইল দূর থেকে নিচ্ছেন একজন রেফারি, যিনি খেলাটিকে অনুভবই করতে পারছেন না। অ্যানফিল্ড অনবদ্য, কিন্তু তারা যে আজ আদতে না হওয়া একটি গোল উদযাপন করল, এটি মানা যায় না।”
এমনকি যে লিভারপুল এ ম্যাচে ভিএআরের সুবাদে অল্পের জন্য বেঁচে গেল, এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপক্ষ শিবির যাদেরকে ব্যঙ্গ করে ডাকছে ‘Li-VAR-Pool‘ নামে, তাদের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপও মনে করেন, সময় এসেছে ভিএআরের নিয়মে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আনার।
“ভিএআরের কাজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ। আমি রেফারিদের (মাঠে দায়িত্বরত) সরাসরি স্ক্রিনের কাছে যাওয়াটাই পছন্দ করব। কারণ, মাঠের পাশেই একটি স্ক্রিন পড়ে আছে, কিন্তু কেউ সেটিকে ব্যবহার করছে না।”
বিশেষজ্ঞ অভিমত
ফুটবল হলো গোলের খেলা। দর্শকরা গোল দেখতেই মাঠে আসে। অথচ ভিএআরের কারণে দর্শকরা তাদের আকাঙ্ক্ষিত সেই গোল দেখা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। হিসাব করে দেখা গেছে, এবারের প্রিমিয়ার লিগ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ভিএআর কর্তৃক ২২টি গোল বাতিল হয়েছে ন্যূনতম মার্জিনে অফসাইড হওয়ার কারণে। আর তাই ভিএআরের উপর চটেছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরাও। স্কাই স্পোর্টসের পণ্ডিত গ্রায়েম সোন যেমন মনে করেন, ভিএআরের নিয়মাবলিতে পরিবর্তন আনা আবশ্যক।
“আমরা বিনোদন দুনিয়ায় রয়েছি। অথচ আমরা সাধারণ মানুষকে গোলের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছি। আমাদের যা কর্তব্য তা হলো, যদি একজন আক্রমণকারীর শরীরের কিছুটা অংশও অনসাইড পজিশনে থাকে, তাহলেও সেটিকে অফসাইড না দেয়া। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। প্রতিদিনই হতাশার পরিমাণ বেড়ে চলেছে।”
সমস্যা বিদ্যমান আইনেও
তবে এখানে শুধু ভিএআরকেই দোষারোপ করলে চলবে না। কারণ, অফসাইডের এই নিয়মটি কেবল ভিএআরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। এফএ’র নীতিমালায় সরাসরি বলা আছে,
“মাথা, শরীর কিংবা পায়ের যেকোনো অংশ অফসাইড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”
কিন্তু অফসাইডের নিয়ম মানার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ভিএআরের কিছু করার না থাকলেও, ভ্যান ডাইকের হ্যান্ডবলটি এড়িয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় অবশ্যই ভিএআরের দায়ই সবচেয়ে বেশি। মাঠে দায়িত্বরত রেফারি যেখানে গোল বাতিল করে দিয়েছেন, সেখানে ভিএআর কেন স্রেফ একজনের উপর হ্যান্ডবলের অভিযোগ পরখ করবে, এবং অন্যজন পার পেয়ে যাবে, এটি কোনোভাবেই যুক্তিগ্রাহ্য নয়।
শীর্ষমহলের বক্তব্য
এ ধরনের ঘটনার কারণে অনেক প্রিমিয়ার লিগ ভক্তই ভিএআরকে অভিহিত করছে ‘ফুটবলের সাথে হওয়া সবচেয়ে বাজে ঘটনা’ হিসেবে। অথচ নভেম্বরে এ ব্যাপারে প্রিমিয়ার লিগের চিফ অফ অফিশিয়েটিং মাইক রাইলিকে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি একদম ভিন্ন জবাব নিয়ে হাজির হয়েছিলেন:
“আমরা আমাদের জীবদ্দশায় ফুটবলের অন্যতম উত্তেজনাকর বিষয়টির সাথে যুক্ত রয়েছি!”
কিন্তু মাইক ও তার দলের “উত্তেজনাকর বিষয়টি” যে ফুটবল দুনিয়ায় সমালোচনার ঝড় তুলেছে, তা ঠাহর করতে পেরেছে খোদ ফিফাও। তাই সরাসরি প্রিমিয়ার লিগকে ইঙ্গিত না করলেও, তারা ভিএআর সম্পর্কে যে নতুন যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে প্রিমিয়ার লিগের দিকেই মূলত ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেই বিবৃতিতে তারা বলছে:
“বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ভিএআর প্রয়োগের শুরু থেকেই ফিফা প্রস্তাব জানিয়ে এসেছে, যেন ভিএআর কর্তৃক কোনো প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বর্জনের আগে রেফারিরা যেন একটি অন-ফিল্ড রিভিউও করে নেয়।”
বলাই বাহুল্য, প্রিমিয়ার লিগের রেফারিরা সে কাজটি করছেন না। কেননা, তাদের উপর মহল থেকেই এ বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
প্রিমিয়ার লিগে ভিএআরের এমন অসামঞ্জস্যতা নিয়ে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কেউই পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। ভিএআর নিয়ে কথা বলার জন্য সকল ক্লাবের নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেছিলেন মাইক রাইলি। কিন্তু টানা দুই ঘণ্টা চেষ্টা করার পরও তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি তিনি। প্রায় সব ক্লাব নির্বাহীরই এক দাবি, পরিবর্তন আনতে হবে ভিএআরের কিছু বিতর্কিত নীতিমালায়।
তবে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, অন্তত এ মৌসুমে তারা ভিএআর নীতিমালায় কোনো পরিবর্তনই আনবে না। মৌসুম শেষ হওয়ার পর তারা ভিএআর নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করবে, এবং কোনো প্রয়োজনের দরকার হলে আগামী মৌসুমে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। বিবিসি’র এক বিশ্লেষণে জানানো হয়েছে, ভিএআর ব্যবস্থাকে পুরোপুরি উচ্ছেদের কোনো চিন্তাই প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ করছে না।
প্রিমিয়ার লিগে ভিএআরের কার্যাবলি
প্রিমিয়ার লিগে এই মুহূর্তে মূলত চার ধরনের সিদ্ধান্ত দেয়া হয় ভিএআরের মাধ্যমে:
-
গোল: বিল্ডআপের সময় বিভিন্ন নিয়মভঙ্গের (ফাউল, হ্যান্ডবল, অফসাইড) উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ যে, একটি গোল থাকবে কি থাকবে না।
-
পেনাল্টি: রেফারি পেনাল্টি দিয়ে বা না দিয়ে ঠিক করেছেন কি না।
-
সরাসরি লাল কার্ড: মাঠে ঘটা কোনো ঘটনা এতটাই গুরুতর ছিল কি না যে, রেফারি লাল কার্ড দেখাতে বাধ্য হয়েছেন।
-
ভুল খেলোয়াড়কে শাস্তি: কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রেফারি ভুল খেলোয়াড়কে হলুদ বা লাল কার্ড দেখিয়েছেন কি না।
অন্যান্য প্রতিযোগিতায় ভিএআর
গত আড়াই বছরে বিশ্বের অধিকাংশ বড় ঘরোয়া লিগেই ভিএআর ব্যবস্থা প্রণীত হয়েছে। এছাড়া ২০১৭-১৮ মৌসুম থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ এবং ২০১৯ গ্রীষ্মে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপেও ভিএআর ব্যবস্থার উপস্থিতি ছিল।
এমনটি কখনোই দাবি করা যাবে না, অন্যান্য প্রতিযোগিতায় ভিএআরের মান পুরোপুরি সন্তোষজনক ছিল। ইউরোপের প্রতিটি বড় লিগেই ভিএআর নিয়ে কমবেশি বিতর্ক হয়েছে, এবং সময়ের সাথে সাথে সেগুলোর উপর গুরুত্বারোপ করে কিছু প্রয়োজনীয় পরিবর্তনও আনা হয়েছে।
চলুন দেখা যাক, সেসব লিগে ভিএআর প্রথম দিকে কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছিল, এবং পরবর্তীতে কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
বুন্দেসলিগা
২০১৭ সালে ভিএআর ব্যবস্থা চালু করার পর সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি হচ্ছিল, তা হলো, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে অনেক বেশি সময় লাগানো হচ্ছিল। তাছাড়া স্টেডিয়ামের স্ক্রিনেও কিছু দেখানো হচ্ছিল না, যে কারণে খেলোয়াড়দের মনে বিভ্রান্তি রয়ে যাচ্ছিল। এমনকি, কোনো ভিএআর যাচাই যে চলছে, সেটিও দর্শক বা খেলোয়াড়দের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না।
২০১৭-১৮ মৌসুমের প্রথমার্ধ শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মাঠের পাশের মনিটরগুলো আরো বেশি করে ব্যবহার করার। এরপর থেকে কিছুদিন ওইসব মনিটরের অত্যধিক ব্যবহার শুরু হয়েছিল বটে, তবে এখন সেখানে একটি সন্তোষজনক ভারসাম্য আনা সম্ভব হয়েছে। আরো বড় বিষয় হলো, রেফারিরা মনিটর ব্যবহার শুরুর পর থেকে খেলোয়াড়রা দেখতে পাচ্ছিলেন যে, আসলে ঘটনাটি কী ঘটেছে, ফলে তাদের মধ্যেও সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
লা লিগা
২০১৮ সালে ভিএআর চালু হওয়ার পর থেকে একদম সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জিনিসও যাচাই করে দেখা হচ্ছিল। ফলে প্রতি ম্যাচে ভিএআরের পেছনেই অনেকটা সময় চলে যাচ্ছিল, এবং খেলার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছিল। প্রতি ম্যাচেই স্বাভাবিক সময়ের সাথে সাত থেকে আট মিনিট অতিরিক্ত যোগ করতে হচ্ছিল।
কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও চলতি মৌসুমে রিভিউগুলো খুব তাড়াতাড়ি নেয়া হচ্ছে, এবং কোনো ঘটনার তাৎক্ষণিক রিভিউ করা সম্ভব না হলে সেটিকে বাদ দিয়েই খেলা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে খেলার স্বাভাবিক ছন্দ আবার ফিরে এসেছে।
সিরি আ
ইতালিতেও ২০১৭ সালে প্রথম ভিএআর আসার পর এটি ছিল খুবই ধীরগতির, যা সাধারণ দর্শকদের খেলা দেখার আনন্দ অনেকটাই মাটি করে দিচ্ছিল। সে তুলনায় এখন ভিএআরের গতি বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া এখন ইতালিতে লাল কার্ড প্রদর্শনের মতো সহিংসতাও কমে গেছে। কেননা খেলোয়াড়রা জানেন, কোনো ঘটনা মাঠের রেফারির চোখ এড়িয়ে গেলেও ভিএআরে ঠিকই ধরা পড়বে।
লিগ ওয়ান
ভিএআর নিয়ে সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্টি রয়েছে ফ্রান্সে। ২০১৮ সালে প্রথম আসার পর থেকেই সবাই এটির সমালোচনায় মুখর। আগেও রেফারিরা অনেক ভুল করতেন বটে, কিন্তু এখন ভুলগুলো আরো বেশি চোখে পড়ছে। ভিএআরের উদ্দেশ্য বিতর্কের অবসান ঘটানো হলেও, এটি বরং বিতর্ক কয়েকগুণ উসকে দিয়েছে। এবং আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, প্রথম বছর পরও লিগ কর্তৃপক্ষ ভিএআর ব্যবস্থায় খুব বড় কোনো পরিবর্তন আনেননি।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিকভাবে ইউরোপের বাকি প্রধান চার লিগেও ভিএআর নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ছিল, কিন্তু ফ্রান্স বাদে বাকি তিন দেশেই প্রথম বছর শেষে বিভিন্ন পরিবর্তন আনার ফলে বিতর্কগুলো অনেকটাই কমে গেছে। তারপরও সব লিগেই সাধারণ কিছু বিতর্ক এখনো রয়েই গেছে। যেমন: লা লিগাতেও হ্যান্ডবল ও অফসাইডের নীতিমালা নিয়ে প্রতিনিয়তই বিতর্ক হচ্ছে। তবে যেমনটি আগেই বলেছি, এখানে ভিএআর নয়, দায়ী মূলত বিদ্যমান আইন। ভিএআর কেবল বিদ্যমান আইনের খুঁতগুলো আরো বেশি করে তুলে ধরছে। আবার সিরি আ-তে মাঠের রেফারি ও ভিএআর রেফারির মধ্যে যোগাযোগ করতে গিয়ে অনেক ভুল হয়ে যাচ্ছে।
ভিএআরে যেসব পরিবর্তন প্রয়োজন
প্রিমিয়ার লিগে যেহেতু ভিএআর এখনো এক বছরও পার করেনি, এবং মৌসুম শেষ হওয়ার আগে প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ কোনো পরিবর্তন আনবে না, তাই মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত যেসব সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে, তাতে যে আইনগুলো পরিবর্তনের দাবি সবচেয়ে বেশি থাকবে তা হলো:
-
ভিএআরের সিদ্ধান্তগুলো প্রিমিয়ার লিগের ব্রডকাস্ট হেডকোয়ার্টার স্টকলি পার্ক থেকে নেয়ার বদলে প্রতিটি ক্লাবের হোম গ্রাউন্ডেই যেন একটি করে ভিএআর বুথ থাকে।
-
রেফারিরা যেন কেবল ভিএআরের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল না হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে নিজেরাও মাঠের পাশের মনিটরে গিয়ে রিভিউ করে আসেন। বিশেষত, মাঠের রেফারির সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যেন অন-ফিল্ড রিভিউগুলো হয়।
-
অফসাইডের আইন যেন শিথিল করা হয়। ন্যূনতম মার্জিনের জন্যও অফসাইড ও গোল বাতিলের পরিবর্তে, শরীরের যেকোনো অংশ অনসাইডে থাকলেই যেন ওই খেলোয়াড়কে অনসাইড ধরা হয়।
-
বিল্ড-আপের ক্ষেত্রে কেবল একটি ফাউল, হ্যান্ডবল বা অফসাইড খতিয়ে দেখার পরিবর্তে যেন পুরো বিল্ড-আপটিকেই রিভিউ করা হয়।
এখন দেখার বিষয়, প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ খেলোয়াড়, কোচসহ সাধারণ ফুটবল প্রেমীদের দাবি কতটা আমলে নেয়। কেননা, এই দাবিগুলো মেনে নেয়ার উপরই নির্ভর করছে আগামী মৌসুমগুলোতে ভিএআর বিতর্কের অবসান ঘটা কিংবা না ঘটা।