Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রিভালদো: এক খলনায়কের অমরত্ব প্রাপ্তির গল্প

দৃশ্যপট ১: ১৯৯৬ সাল

আটলান্টা অলিম্পিক, ব্রাজিল সেমিফাইনালে মুখোমুখি হলো নাইজেরিয়ার। সেদিন অবধি ব্রাজিলের ইতিহাসের অধরা এই শিরোপাটি জেতার জন্য মুখিয়ে গোটা দল। দলের উঠতি তারকা রিভালদো। তারই ভুল পাস থেকে গোল পেয়ে যায় নাইজেরিয়া, আর ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ হয় ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে না পারার মধ্য দিয়ে। পুরো ব্রাজিলের কাছে তিনি হয়ে যান ভিলেন। সেই থেকে শুরু, এরপর ব্রাজিলের সকল ব্যর্থতার প্রাথমিক কারণ হিসেবে তাকেই ধরা হতো!

দৃশ্যপট ২: ২০০২ সাল

জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপ ফাইনাল, ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নিলেন রিভালদো, জার্মান গোলরক্ষক অলিভার কান ধরতে পারলেন না, ফিরতি শটে গোল করেন রোনালদো। এর কিছুক্ষণ পর রাইট উইং থেকে আসা সহজ একটি পাসকে রিভালদো পায়ের ফাঁক দিয়ে যেতে দিলেন চকিতে, সামনে থাকা তিন ডিফেন্ডার বুঝেই উঠতে পারেনি, প্রায় ফাঁকায় বল পেয়ে গোল করে ব্রাজিলকে পঞ্চম বিশ্বকাপটি জিতিয়ে দিলেন রোনালদো। ভিলেন রিভালদো পরিণত হলেন বীরে।

ছেলেবেলায় অপুষ্টিতে ভোগা রিভালদো কালক্রমে বনে যান ইতিহাসের অন্যতম সেরা; Source: Dream Team

বিখ্যাত হলুদ জার্সি পরার স্বপ্ন থাকে ব্রাজিলের সব তরুণেরই, তারও ছিল। কিন্তু নিজ দেশেই বহুল নিন্দিত এই খেলোয়াড় কীভাবে সব সামলে ঠিকই পেয়ে গেলেন অমরত্ব? তার কারণ জানতে আগে জানা দরকার তার শৈশব। রেসিফের বস্তিতে তার বেড়ে ওঠা। অসম্ভব দারিদ্র্যের প্রকোপের মাঝে কাটে শৈশব। সমুদ্র সৈকতে পানীয় বিক্রি করতেন হাতে নিয়ে নিয়ে। অপুষ্টিতে চোয়াল ভাঙতে ভাঙতে কুৎসিততম অবস্থায় পৌছে, হারান দুটো দাঁতও। ১৫ বছর বয়সে হারিয়ে ফেলেন বাবাকে, চারিদিকে দেখেন অন্ধকার। এতকিছুর মাঝেও হারাননি ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা। পাতলা, লিকলিকে, হাড্ডিসার রিভালদো দিনে ১০-১২ মাইল হেঁটে ট্রেনিং করতে যেতেন, ফিরে এসে আবার ফেরিওয়ালার কাজ।

বাবাকে হারানোর বছরখানেকের মধ্যে সান্তা ক্রুজ নামের একটি ছোট ক্লাবে প্রথম পেশাদার চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ক্লাবের ডাক্তার বা অনেক কর্মকর্তাই তাকে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন না তার শারীরিক সক্ষমতাকে সন্দেহ করে। যখন মাঠে নামতেন, লিকলিকে, দন্তহীন ভগ্নচোয়ালের রিভালদোকে মাঠের দর্শকরা ‘কুৎসিত হাঁস’ বলে দুয়ো দিতো। সেবার ১৪টি গোল করলেও তাকে রাখেনি সান্তা ক্রুজ, প্রায় পানির দরেই বেচে দেয় মগি মিরিম নামে আরেক ক্লাবে। পারফর্মেন্স মোটামুটি, কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার জন্য তাকে দীর্ঘমেয়াদে কেউ রাখতে চায় না। সেই সুযোগে ব্রাজিলিয়ান জায়ান্ট ক্লাব করিন্থিয়ান্স তাকে ধারে নিয়ে নেয়। বড় আসরে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। স্ট্রাইকার না হয়েও ৩০ ম্যাচে ১১ গোল করেন। করিন্থিয়ান্স তাকে রাখতে চাইলেও তাদেরই প্রতিদ্বন্দ্বী পালমেইরাস তাকে মগি মিরিম থেকে কিনে নেয়। না, আর পেছন ফেরা নয়, ৪৫ ম্যাচে ২১ গোল করে দুই বছরে ক্লাবকে লিগ সহ তিনটি কাপ জেতান। নজরে পড়েন ইউরোপিয়ান দলগুলোর। স্প্যানিশ ক্লাব দেপোরতিভো তাকে কিনে নেয়।

বার্সার রিভালদো ছিল সেই সময়ের এক ত্রাস; Source: Goal.com

রিভালদো আদতে কোনো স্ট্রাইকার ছিলেন না, ছিলেন মূলত প্লেমেকার বা সেকেন্ড স্ট্রাইকার। দেপোরতিভোতে তিনি ছিলেন এককথায় ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’। পালমেইরাসে তিনি দুই মৌসুমে করেছিলেন ২১ গোল আর ইউরোপে এসে প্রথম মৌসুমেই করেন ২১ গোল, সাথে তিনিই ছিলেন দলের আসল প্লেমেকার। তুখোড় অলরাউন্ডিং প্রদর্শনীতে গড়পড়তা দেপোরতিভোকে তুলে আনেন চতুর্থ স্থানে। নজরে পড়েন বার্সেলোনার। ২৬ মিলিয়ন পাউন্ডে বার্সা তাকে দলে ভেড়ায়।

বার্সেলোনা থেকে বিশ্বকাপ

রিভালদোর বার্সেলোনা অধ্যায়কে লিওন ওয়াইল্ড নামের এক সাংবাদিক খুব সুন্দর করে বলেছেন, ‘অ্যা গ্রেট প্লেয়ার ইন নট সো গ্রেট টিম’। কী! বার্সা গ্রেট নয়! না, পাঠক রেগে যাবেন না। নব্বইয়ের শুরুতে ক্রুয়েফ যখন দায়িত্ব নেন, তখন বার্সেলোনা টানা চারটি লিগ জেতে। শুধু জয় না, সে দলটির খেলা ছিল ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরাদের কাতারের। সেই ক্রুয়েফের দলের ছন্দপতন হয়, দুই বছর লিগে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ হয় বার্সেলোনা। ক্রুয়েফকে বিদায় নিতে হয়, রবসন কোচ হয়ে আসেন, যার স্টাইল আবার ফ্যানদের পছন্দ না। তিনিও লিগ জিততে ব্যর্থ হন, সরে যেতে হয় তাকেও। বার্সেলোনা বোর্ড প্রথম মৌসুমেই রেকর্ড গোল করা রোনালদোকে ধরে রাখতে পারেনি। সব মিলিয়ে তথৈবচ অবস্থা। এদিকে রিভালদোও জাতীয় দলে স্থায়ী নন, তাই বার্সেলোনা তার কাছে ছিলো এক অপার সুযোগ।

সেই সুযোগ তিনি দু’হাত ভরে লুফে নিলেন। ভ্যান হালের অধীনে ৩৪ ম্যাচে ১৯ গোল করে বার্সেলোনাকে চার বছর বাদে লা লিগা ও কোপা দেল রে জেতালেন। ডাবল জেতা ওই মৌসুমের সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফর্মার ছিলেন তিনিই। স্ট্রাইকার না হয়েও ১৯ গোল, সাথে মারাত্মক সব শ্যুট, স্পিড, বডি ফেইন্ট সব মিলিয়ে ছিলেন যেন এক পরিপূর্ণ প্যাকেজ। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ফেভারিট ব্রাজিল দলের আশা জাগানিয়া এক সদস্য হয়েই গেলেন তিনি।

অনবদ্য খেলার স্বীকৃতিস্বরূপ জেতেন ব্যালন ডি অর; Source: republica.com

আসলে সেই ১৯৯৪ বিশ্বকাপটা ছিল রোনালদোর। তাই রিভালদো একটু আড়ালেই ছিলেন। বিশ্বকাপের আগে থেকেই বার্সালোনার হয়ে দুর্দান্ত খেলতে থাকা রিভালদো লিগ বিশ্বকাপে মরক্কোর সাথে গ্রুপ পর্বেই ১ গোল পেয়ে যান। কিন্তু আসল জাত চেনান ডেনমার্কের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে। ম্যাচের ২য় মিনিটেই পিছিয়ে যায় ব্রাজিল, ১১ মিনিটে ম্যাচে ফেরান বেবেতো। ২৭ মিনিটে গোল করে এগিয়ে নিয়ে যান রিভালদো, কিন্তু ৫০ মিনিটে আবারও ডেনমার্ক সমতায় ফেরে। শেষ পর্যন্ত ৬০ মিনিটে জয়সূচক গোলটা আসে রিভালদোর পা থেকেই। সেমিতেও দুর্দান্ত খেলেন তিনি। ম্যাচে ব্রাজিলের পক্ষে রোনালদো লিমার করা একমাত্র গোলের অ্যাসিস্টও ছিল রিভালদোর। কিন্তু ফাইনালটা ছিল পুরো ব্রাজিল দলেরই ব্যর্থতার এক গল্প। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে পুরো দলের ব্যর্থতায় রিভালদোও আর তেমনভাবে চোখে পড়েননি। তবে সেই বিশ্বকপের অল স্টার দলে ঠিকই সুযোগ পেয়ে যান। পুরো টুর্নামেন্টে ৩টি গোল আর দুটি অ্যাসিস্ট করেন রিভালদো।

সেই সময়টায় তিনিই ছিলেন ক্লাবের মূল ভরসাস্থল; Source: Goal.com

বিশ্বকাপ থেকে ফিরে বার্সায় তিনি ঠিক সেখান থেকেই শুরু করলেন যেখানে রেখে গিয়েছিলেন। ২৪ গোল করে আবারো বার্সেলোনাকে লিগ জেতান তিনি। জিদান, বেকহ্যামদের টপকে জিতে নেন ফিফা বর্ষসেরা খেতাব ও ব্যালন ডি অর। এরপরেই ভ্যান গালের সাথে তার মনোমালিন্য শুরু হয়। ভ্যান গাল চাইতেন তিনি যেন একদম লেফট উইং ঘেঁষে খেলেন। অথচ তিনি প্লেমেকার, প্রচুর গোলও করেন, বাঁ পায়ে করেন প্রচণ্ড গতির শ্যুট। মাত্র ৮টি গোল এসেছে তার ডান পা থেকে, আর বাঁ পায়ের দুরপাল্লার গোল ছিল ৩৫টি! রিভালদো রাজি হলেন না। মনোমালিন্য নিয়েও সেবার ১০ গোল করেন। ভ্যান গাল সে মৌসুমেই বরখাস্ত হন। আর নতুন কোচ তাকে তার প্রিয় পজিশনে খেলতে দেন। সেবার বার্সা দেখে তার সবচেয়ে রুদ্ররূপকে। প্লেমেকার হয়েও ৩৬ গোল করেন তিনি। তবে কেন বলা হয়েছিল ‘অ্যা গ্রেট প্লেয়ার ইন অ্যা নট সো গ্রেট বার্সা টিম’? গোল সংখ্যায় রিভালদোর চরম উন্নতি হলেও বার্সেলোনার হয় অবনতি, সেবার লিগে ৫ম স্থানে থেকে শেষ ম্যাচ খেলতে যায় বার্সা। ভ্যালেন্সিয়ার সাথে ম্যাচ, যারা তিন পয়েন্ট এগিয়ে চতুর্থ স্থানে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার জন্য বার্সাকে জিততেই হবে তাতে। স্প্যানিশ লিগের সেরা ডিফেন্স তখন ভ্যালেন্সিয়ার, সেই ডিফেন্সের সামনে বার্সার ভরসা কেবল রিভালদো। ভ্যালেন্সিয়া জানতো, কেবল তাকে আটকালেই কাজ হয়ে যায়। ফ্রি-কিক থেকে প্রথমেই এগিয়ে দেন রিভালদো, কিছুক্ষণ পর সমতায় ফিরে ভ্যালেন্সিয়া। এরপর দূরপাল্লার এক গোলে বার্সাকে আবার এগিয়ে দিলেও আবারো গোল হজম করে বসে বার্সা। আর ৯০ সেকেন্ড বাকি, সবাই তার দিকে তাকিয়ে। ডি-বক্সের বাইরে একটি বল বুক দিয়ে রিসিভ করে ওভারহেড কিকে বার্সার ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এক গোলে দলকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলানোর অবস্থানে নিয়ে যান রিভালদো। এমনও ম্যাচ হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে, তিনি হ্যাটট্রিক করেছেন, কিন্তু তার দলের ডিফেন্স তা বজায় রাখতে পারেনি!

এর পরের মৌসুমে বার্সেলোনা আবার ভ্যান গালকে আনে কোচ হিসেবে, এটা পরিষ্কার হয়ে যায়, বার্সায় রিভালদোর সময় শেষ। চুক্তি শেষ হওয়ার এক বছর আগেই তাকে ছেড়ে দেয় বার্সেলোনা। রিভালদোর গোল বা অ্যাসিস্ট ঘাঁটলেই স্পষ্ট যে, তার অধিকাংশ অবদানই ছিল কঠিন প্রতিপক্ষের সাথে বা অ্যাওয়ে ম্যাচে। যেমন, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের সাথে তার পাঁচ গোলের চারটি গোলই ছিল জয় এনে দেওয়ার ম্যাচে।

কার্টুনে বার্সেলোনার মৌসুম বাঁচিয়ে দেয়া রিভালদোর সেই গোল; Source: Bicycle Model Ideas

ব্রাজিলের হয়ে অমরত্ব প্রাপ্তি

কিন্তু বার্সেলোনায় রিভালদোর ঔজ্জ্বল্য ব্রাজিলে ছিল তার জন্য গলার কাঁটা। ১৯৯৬ এর অলিম্পিকের পর থেকে ভিলেন বনে যাওয়া রিভালদোকে ব্রাজিলিয়ান মিডিয়া এমন বাজেভাবে দেখাতে থাকে যে, একপর্যায়ে আমজনতার ধারণা জন্মে যে, রিভালদো তার সেরাটা ব্রাজিলে না দিয়ে জমিয়ে রাখেন বার্সেলোনায় দেওয়ার জন্য বা তিনি নাকি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য দীর্ঘ সফর করে ব্রাজিলে আসতে চান না ইত্যাদি। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ হারার পর তাকে দোষারোপ করা হয় ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য। ঘরের মাঠে ব্রাজিলের ম্যাচ চলছে, রিভালদোর একটা ভুলপাস মানে গ্যালারি থেকে বিদ্রুপ, গোল বানিয়ে দিয়ে বা একবার তো গোল করেও দর্শকদের বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে তার। কিন্তু রিভালদোকে যথার্থই বলা হতো, ‘মোস্ট ইন্ট্রোভার্ট প্লেয়ার’, কখনো মুখে কিছু বলেননি। মাঠেই জবাব দিয়েছেন। ১৯৯৯ সালের কোপা আমেরিকার সেরা খেলোয়াড় হন তিনি। নকআউট পর্বে তারই এক অনবদ্য ফ্রি-কিক সহ অনিন্দ্যসুন্দর প্রদর্শনীতে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে ব্রাজিল। আর ফাইনালে উরুগুয়েকে ৩-০ গোলে হারানোর ম্যাচে তিনি করেন জোড়া গোল। এরপর ব্রাজিল যখন ২০০২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে  ধুঁকছিল, মিডিয়ায় আবারো বলির পাঁঠা হন তিনি।

রিভালদো তার আসল বীরত্বগাথা রচনা করেন ২০০২ বিশ্বকাপে। গ্রুপপর্ব থেকে শুরু করে কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি টানা পাঁচ ম্যাচেই গোল করেন তিনি, রোনালদো-রোনালদিনহোর সাথে গড়ে তুলেন অদম্য আক্রমণভাগ। কোয়ার্টার ফাইনালে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ডের সাথে সমতাসূচক গোলটিও তারই করা। চিরায়ত এক ব্রাজিলিয়ান ভিলেন ব্রাজিলকে এনে দিলেন পঞ্চম বিশ্বকাপ, অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞের মতে, ব্রাজিলের এই জয়ের আসল নায়ক রিভালদোই।

২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের আসল রূপকার ছিলেন তিনি; Source: Dawn

বিশ্বকাপ জেতার পর রিভালদো ভ্যান গাল আসায় বার্সেলোনা ছেড়ে যোগ দেন এসি মিলানে। পরিপূর্ণ এক ক্যারিয়ারে বাকি ছিল কেবল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। যে মৌসুমে যোগ দেন, সেই মৌসুমেই মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতেন, তবে সব কিছুর কি আর মধুর সমাপ্তি থাকে? মিলানে তিনি কখনোই নিয়মিত হতে পারেননি, তার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় মূলত বেঞ্চে বসেই। বয়স ৩১ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, ধারও কমছে, বুঝে গেলেন, ইতালিতে আর হবে না। এরপর ওলিম্পিয়াকোসের হয়ে খেলতে গ্রিসে গেলেন, সেখানেও ট্রফি জয় ছিল অব্যাহত। এরপর আরো অনেক বছর খেলা চালিয়ে গেলেন বিভিন্ন ক্লাবে। দারিদ্র্য তাকে যে খেলা থেকে সরিয়ে রাখতে পারেনি, সেই খেলা এত সহজে ছাড়েননি। অবসরে গেছেন ৪৫ পেরিয়ে।

আসলে রিভালদো ছিলেন ১৯৯৬ থেকে ২০০২ পর্যন্ত নিজের সামর্থ্যের চূড়ায়। তার জিদানের মতো মোহনীয়তা ছিল না, রোনালদোর মতো গোলস্কোরিং ছিল না, বেকহ্যামের মতো স্টাইল, স্পিড বা ক্রস ছিল না। কিন্তু তিনি ছিলেন এসবের মিশ্রণ, পরিপূর্ণ প্যাকেজ। বার্সা কিংবদন্তী জাভির মতে, বার্সার ইতিহাসে রিভালদোকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় না। হয়তো এর একটি বড় কারণ, বার্সার হয়ে তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারেননি। কিন্তু যে সময়ে, যে দলের সাথে তিনি টানা দুটো লিগ জিতেছেন বার্সার হয়ে, তা যেকোনো ইতিহাস-সচেতন বার্সা সমর্থক মনে রাখবেনই। একদম তরুণ বয়স থেকেই নিজের আবেগের স্থান ব্রাজিলের জনগণের বৈমাত্রেয় আচরণকেও ভালবাসায় পরিণত করেছেন নিজের ধৈর্য আর খেলা দিয়ে। রেসিফের বস্তি থেকে বিশ্বজয়ী রিভালদো বিশ্বের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা একজন খেলোয়াড়, যিনি একাধারে শিরোপা, দারিদ্র্য, হিংসা, প্রতিকূলতা সব জয় করেছেন। ফুটবল ম্যাচ তো সহজেই জেতা যায়, কিন্তু এত সহজে কি হিংসাকে পরাজিত করা যায়?

ফিচার ইমেজ সোর্স: 101-Great-Goals

Related Articles