Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সনাথ জয়াসুরিয়া: ওয়ানডে ক্রিকেটের দিনবদলের নায়ক

১.

১৯৯৬ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের ম্যাচে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি ভারত ও শ্রীলঙ্কা। সেসময়ে শক্তির বিচারে ভারতের আশেপাশেও শ্রীলঙ্কার নাম আসতো না। ঘরের মাঠে ভারত হেসেখেলে শ্রীলঙ্কাকে হারাবে এটাই সবার ধারণা ছিল। টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শচীন টেন্ডুলকারের অনবদ্য ১৩৭ রানে ভর করে ভারত যখন ২৭১ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করালো, তখন ভারতের বড় জয়টা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষাই মনে হচ্ছিলো। কিন্তু নাটকের মূল অংশ তখনো বাকি রয়ে গিয়েছিলো। এই বড় রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ভারতীয় বোলারদের উপর তাণ্ডবলীলা চালাতে শুরু করলেন সনাথ জয়াসুরিয়া । তার বেধড়ক পিটুনির কারণে মাত্র তিন ওভারেই ৪২ রান তুলে ফেলে শ্রীলঙ্কা! 

১৯৯৬ বিশ্বকাপে সনাথ জয়াসুরিয়া; Image Source : Sportskeeda

প্রথম তিন ওভারে ৪২ রান সেই যুগ তো বটেই এই টি-টুয়েন্টির যুগেও স্বপ্নীল সূচনা। জয়াসুরিয়া সেদিন এমনই রণমূর্তি ধারণ করেছিলেন যে, তাকে আটকানোর কোনো উপায়ই ভারত খুঁজে পাচ্ছিলো না। জয়াসুরিয়ার এই ঝড়ের বড় অংশটা ভারতীয় অলরাউন্ডার মনোজ প্রভাকরের উপর দিয়েই গিয়েছিলো। সেই ঝড়ের প্রভাব এতটাই গুরুতর ছিল যে বেচারা প্রভাকর পেস বোলিং বাদ দিয়ে জয়াসুরিয়ার বিপক্ষে স্পিনার হিসেবে বোলিং করতে এসেছিলেন! শেষপর্যন্ত সেই প্রভাকরের হাতে ক্যাচ দিয়েই কুম্বলের বলে ব্যক্তিগত ৭৯ রানে যখন জয়াসুরিয়া ফিরে যান তখন ২০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ১৩৭/৩! জয়াসুরিয়ার এই দাপুটে ইনিংসের কল্যাণে ৬ উইকেটে ম্যাচটি জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা। জয়াসুরিয়ার ঐ একটা ইনিংস পুরো লঙ্কান দলের আত্মবিশ্বাসকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। এ কারণে এই ৭৯ রানের ইনিংসটাকে অনেকেই জয়াসুরিয়ার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস বলে থাকেন। 

২.

দিল্লির সেদিনের ঝড়ো ইনিংসটা জয়াসুরিয়ার ক্যারিয়ারকে খুব ভালোভাবে তুলে ধরে। জয়াসুরিয়া এমন একজন খেলোয়াড় ছিলেন যিনি নিজের দিনে একাই যেকোনো প্রতিপক্ষকে ছারখার করে দিতেন। এমন বিধ্বংসী একজন ব্যাটসম্যানের শুরুটা কিন্তু খুব সাদামাটাভাবেই হয়েছিলো। ১৯৬৯ সালের ৩০ জুন শ্রীলঙ্কার মাতারায় জন্মগ্রহণ করেন সনাথ জয়াসুরিয়া। সেসময়ে শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের প্রায় সিংহভাগ খেলোয়াড়ই কলম্বো থেকে উঠে আসতো, সেদিক থেকে জয়াসুরিয়া ছিলেন ব্যতিক্রম। মাতারার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে উঠলেও ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকে পড়েন জয়াসুরিয়া। স্কুল ক্রিকেটে অসাধারণ পারফর্মেন্সের কারণে ১৯৮৮ সালের অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দলে সুযোগ পেয়ে যান জয়াসুরিয়া। সেসময়ে জয়াসুরিয়া ছিলেন একজন বোলিং অলরাউন্ডার, বাঁহাতি স্পিনের সাথে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের হয়ে খেলতেন তিনি। যুব বিশ্বকাপে ভালো খেলার সুবাদে শ্রীলঙ্কা বি দলের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন জয়াসুরিয়া।  

শ্রীলঙ্কা বি দলের হয়ে পাকিস্তান সফরে গিয়ে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোয় জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়ে যান জয়াসুরিয়া। মেলবোর্নে ১৯৮৯ সালের বক্সিং ডেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মধ্য দিয়ে জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেক হয়। কিন্তু অভিষেকটা একদমই সুবিধার হয়নি, ম্যাচে এক ওভার বোলিং করার সুযোগও পাননি। আর ব্যাট হাতে পাঁচ নম্বরে নেমে মাত্র ৩ রানেই সাজঘরে ফিরে যান। ১৯৯১ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে জয়াসুরিয়ার, ড্র হওয়া সেই ম্যাচে একটি ইনিংসেই ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন জয়াসুরিয়া। ছয় নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে ৩৫ রান করেন। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে জয়াসুরিয়া একদমই সুবিধা করতে পারেননি। 

৩.

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয়াসুরিয়া প্রথম সাফল্য পান ১৯৯৩ সালে, তবে সেটা ব্যাট হাতে নয়! বাঁহাতি স্পিনের বিষে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ২৯ রানে ৬ উইকেট নেন। শ্রীলঙ্কা সেই ম্যাচ জিতে নেয় ৮ উইকেটে আর ম্যাচসেরা হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেন জয়াসুরিয়া। বল হাতে ভালো পারফর্ম করায় সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মোটামুটি স্থায়ী হয়ে গিয়েছিলেন জয়াসুরিয়া। কিন্তু ব্যাট হাতে কিছুতেই নিজেকে প্রমাণ করতে পারছিলেন না তিনি। এমন সময়ে টিম ম্যানেজমেন্টের একটা সিদ্ধান্ত ব্যাটসম্যান জয়াসুরিয়ার ক্যারিয়ার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেয়।

টিম ম্যানেজমেন্ট জয়াসুরিয়ার ব্যাটিং স্টাইল পর্যালোচনা করে দেখেন যে, কাট আর পুল শটে দক্ষ জয়াসুরিয়া আরেকটা শট খেলতেও ভীষণ পটু। সেটি হচ্ছে লফটেড কাট শট। কিন্তু সেসময়ের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান জয়াসুরিয়া ইনিংসের মাঝপথে এসব লফটেড শট খেলতে গিয়ে প্রায়ই বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ আউট হয়ে যেতেন। তখন টিম ম্যানেজমেন্টের মাথায় নতুন এক বুদ্ধি চলে আসে। জয়াসুরিয়া যদি ওপেনার হিসেবে খেলতে নামেন তাহলে প্রথম দশ ওভারে ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের সুযোগ নিয়ে জয়াসুরিয়া তার প্রিয় লফটেড শটগুলো বেশ সহজেই খেলতে পারবেন। এ কারণেই ১৯৯৪ সালে জয়াসুরিয়াকে ওপেনার হিসেবে খেলানো শুরু করে শ্রীলঙ্কা।

ওপেনার হিসেবে খেলা শুরুর পর আস্তে আস্তে নিজের ব্যাটিং প্রতিভার সদ্ব্যবহার করতে শুরু করেন জয়াসুরিয়া। সেই বছরের ডিসেম্বরেই ওপেনার হিসেবে খেলতে নেমে জয়াসুরিয়া পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৩ বলে ১৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। অবশ্য এই দুর্দান্ত ইনিংসটি বৃষ্টির কারণে মাটি হয়ে যায়, ম্যাচটা পরিত্যক্ত হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পেয়ে যান নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। তবে এই ইনিংসের পর আবারো নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকেন জয়াসুরিয়া, ১৯৯৬ বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজের দশ ম্যাচে জয়াসুরিয়ার সর্বোচ্চ রান ছিল মাত্র ৩০! 

৪.

বিশ্বকাপের আগের সিরিজে এমন বাজে ফর্ম সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের বিশ্বকাপ পরিকল্পনার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে জয়াসুরিয়াকে রাখা হলো! আসলে শ্রীলঙ্কার টিম ম্যানেজমেন্ট পিঞ্চ হিটার তত্ত্ব ব্যবহার করে সেই বিশ্বকাপে বড় কিছু করার পরিকল্পনা করছিলো। এই পিঞ্চ হিটার তত্ত্ব সর্বপ্রথম দেখা গিয়েছিলো ১৯৯২ সালে। প্রথম দশ ওভারে ত্রিশ গজের বাইরের বৃত্তে মাত্র দুজন খেলোয়াড় থাকলেও সেই যুগে প্রথম দশ ওভারে কোনো দলই সেভাবে মেরে খেলতো না! কারণ তখন বৃত্তের বাইরে কম খেলোয়াড় থাকার সুবিধা নেওয়ার চেয়ে নতুন বলে টিকে থাকাটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হতো। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মার্ক গ্রেটব্যাচ দেখিয়েছিলেন যে একটু ভিন্ন স্টাইলে ব্যাট চালালে প্রথম দশ ওভারে ভালো একটা শুরু পাওয়া সম্ভব। গ্রেটব্যাচের সেই তত্ত্বকে কাজে লাগানোর জন্য লঙ্কান টিম ম্যানেজমেন্ট সনাথ জয়াসুরিয়া ও রমেশ কালুভিথারানাকে ওপেনার হিসেবে বিশ্বকাপে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯৯২ এর নিউজিল্যান্ডের চেয়ে ১৯৯৬ এর শ্রীলঙ্কা আরো বেশি কার্যকরী উপায়ে পিঞ্চ হিটার তত্ত্বকে কাজে লাগায়। জয়াসুরিয়া আর কালুভিথারানার জুটি প্রতিপক্ষের উপর তাণ্ডব চালাতে শুরু করে। সেই আসরে জয়াসুরিয়া একটু বেশিই ভয়ঙ্কর ছিলেন। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে ঐ ৭৯ রানের ইনিংসটি শ্রীলঙ্কা দলের মনোবল অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিলো। জয়াসুরিয়ার এই রণমূর্তি দেখে তাকে অনেকেই মাতারা হারিকেন  বলে ডাকা শুরু করে। গ্রুপের বাকি দুই দল অস্ট্রেলিয়া ও উইন্ডিজ শ্রীলঙ্কাকে ওয়াকওভার দেওয়ায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় শ্রীলঙ্কা, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। 

কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়াসুরিয়া; Image Source : Cricketsoccer

ফয়াসালাবাদে আগে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৩৫ রান সংগ্রহ করে ইংলিশরা। সেসময়ের বিচারে ২৩৫ রান বেশ ভালো একটা পুঁজি হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু মাতারা হারিকেনের তাণ্ডবলীলা শুরু হলে ২৩৫ রান কি আর ধোপে টিকতে পারে? ৪৪ বলে ৮২ রানের এক ঝড়ো ইনিংসে ইংলিশ বোলিং লাইনআপকে গুঁড়িয়ে দেন জয়াসুরিয়া। তার এই অসাধারণ ইনিংসে ভর করে ৯ ওভার হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। ব্যাট হাতে ৮২ রানের ইনিংসের সাথে বল হাতে ২ উইকেট নেওয়ায় ম্যাচসেরার পুরস্কারটা জয়াসুরিয়ার হাতেই উঠে।

সেমিফাইনালে ব্যাট হাতে মাত্র ১ রানেই সাজঘরে ফিরে যান জয়াসুরিয়া। তবে ম্যাচে বল হাতে জ্বলে উঠেন তিনি। শ্রীলঙ্কার ২৫১ রানের জবাবটা টেন্ডুলকারের ব্যাটে ভর করে বেশ ভালোভাবেই দিচ্ছিলো ভারত। টেন্ডুলকার এতটাই সাবলীলভাবে ব্যাট করছিলেন যে মনে হচ্ছিলো তিনি একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিবেন। তখনই শ্রীলঙ্কার ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন জয়াসুরিয়া, টেন্ডুলকারকে স্ট্যাম্পড আউট করে শ্রীলঙ্কাকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন। এই এক উইকেটের পতন পুরো খেলাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। ৯৮/১ স্কোরলাইন থেকে চোখের পলকে ১২০/৮ এ পরিণত হয় ভারত! খেলার এই অবস্থায় ভারতের দর্শকরা মাঠে মারমুখী হয়ে গেলে খেলা বন্ধ করে শ্রীলঙ্কাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। অসাধারণ এক ক্যামিওর জন্য সেদিন ডি সিলভা ম্যাচসেরা হলেও জয়াসুরিয়ার ১২ রানে ৩ উইকেটের অসাধারণ স্পেলটাও শ্রীলঙ্কার সেদিনের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলো। 

জয়াসুরিয়ার বলে স্ট্যাম্পড আউট হচ্ছেন টেন্ডুলকার; Image Source : Hindusthan Times

ফাইনালে বোলিং বা ব্যাটিং কোনোটাতেই তেমন সুবিধা করতে পারেননি জয়াসুরিয়া। বল হাতে ৮ ওভারে ৪১ রানে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ বলে ৯ রান করে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় তাকে। অবশ্য জয়াসুরিয়া জ্বলে না উঠলেও ডি সিলভার অনবদ্য এক সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের এই অবিশ্বাস্য সাফল্যে জয়াসুরিয়ার অলরাউন্ড নৈপুণ্য বিশাল ভূমিকা রেখেছিলো, ব্যাট হাতে ৬ ম্যাচে ১৩১.৫৫ স্ট্রাইক রেটে ২২১ রানের সাথে বল হাতে ৬ ম্যাচে জয়াসুরিয়া নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। এ কারণেই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে সনাথ জয়াসুরিয়াকে নির্বাচিত করা হয়। 

বিশ্বকাপ হাতে শ্রীলঙ্কা দল; Image Source : Critique Cricket

৫.

অনেকেই ভেবেছিলো, শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়টা স্রেফ অঘটন, পরবর্তীতে লঙ্কানরা হয়তো এই সাফল্য ধরে রাখতে পারবে না। কিন্তু সমালোচকদের সেসব চিন্তা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপের পরেও পরাশক্তিদের মতো পারফর্ম করতে থাকে শ্রীলঙ্কা। আর এই সাফল্যে বড় অবদান রাখেন সনাথ জয়াসুরিয়া। সেই বছরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ১৭ বলে ফিফটি করে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন জয়াসুরিয়া, এই রেকর্ড দীর্ঘ ১৯ বছর অক্ষুণ্ন ছিল। এছাড়া সেই বছরে পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেন জয়াসুরিয়া। জয়াসুরিয়া সবচেয়ে বড় চমকটা দেখান ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে কলম্বো টেস্টে। সেই ম্যাচে প্রথম লঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন তিনি! শুধু তা-ই নয়, এই টেস্টে রোশান মহানামার সাথে জয়াসুরিয়ার গড়া ৫৭৬ রানের জুটি ছিল টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জুটি। জয়াসুরিয়ার এই মহাকাব্যিক ইনিংসে ভর করেই ৬ উকেটে ৯৫২ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা, যা এখনো টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।  

৫৭৬ রানের মহাকাব্যিক সেই জুটি গড়ার পথে জয়াসুরিয়া ও মহানামা; Image Source : Dailypost

সেই সিরিজের পরের ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে ১৯৯ রানের ইনিংস খেলেন জয়াসুরিয়া। পরের বছর কেনিংটন ওভালে ইংলিশ বোলারদের তুলোধুনো করে অসাধারণ এক ডাবল সেঞ্চুরি করেন জয়াসুরিয়া। তার সেই ডাবল সেঞ্চুরিতে ভর করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটের জয় পায় লঙ্কানরা। বিধ্বংসী ব্যাটিং স্টাইলে শুধু ওয়ানডে নয়, টেস্টেও যে সাফল্য পাওয়া যায় এটা জয়াসুরিয়া ভালোভাবেই প্রমাণ করেন। এমন পারফর্মেন্সের জন্য সবাই আশা করেছিলো ১৯৯৯ বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কা তাদের সাফল্যের ধারা ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু সেই আসরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় লঙ্কানদের। জয়াসুরিয়ার নিজের জন্যেও বিশ্বকাপটা একদমই ভালো যায়নি। পুরো আসরে একটি ফিফটির দেখাও সেবার জয়াসুরিয়া পাননি। 

৫.

বিশ্বকাপটা ভালো না কাটলেও সেই বিশ্বকাপের পরেই জয়াসুরিয়ার ক্যারিয়ারে আরেকটি স্বর্ণপালক যুক্ত হয়। অর্জুনা রানাতুঙ্গা অধিনায়কের পদ থেকে সরে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন সনাথ জয়াসুরিয়া। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব কাঁধে চাপার পর অনেক আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানই তাদের স্বভাবজাত ব্যাটিং স্টাইল ছেড়ে দিয়ে কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে শুরু করেন কিন্তু এদিক থেকে জয়াসুরিয়া ছিলেন ব্যতিক্রম। অধিনায়ক হওয়ার পরেও তিনি আগের সেই মাতারা হারিকেন রূপ ধরে রাখেন। ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গল টেস্টে ১৫৬ বলে ১৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন জয়াসুরিয়া, ম্যাচটা শ্রীলঙ্কা জিতে নেয় ইনিংস ও ১৫ রানে।

অধিনায়ক হিসেবে জয়াসুরিয়া নিজের সেরা ইনিংসটি খেলেন শারজায় ভারতের বিপক্ষে কোকাকোলা ট্রফির ফাইনালে। ম্যাচে শুরু থেকেই ভারতের বোলারদের উপর তাণ্ডব চালাতে শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিলো প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটা হয়তো গড়েই ফেলবেন জয়াসুরিয়া। কিন্তু সৌরভ গাঙ্গুলির বলে স্ট্যাম্পড আউট হলে ১৮৯ রানেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। জয়াসুরিয়ার এই ১৮৯ রান এখন পর্যন্ত কোনো লঙ্কান ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংস। 

১৮৯ রানের ম্যারাথন ইনিংস খেলার পথে জয়াসুরিয়া; Image Source : Dailymotion

ঘরের মাঠে ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জয়াসুরিয়ার নেতৃত্বে বেশ ভালো খেলা উপহার দেয় শ্রীলঙ্কা। টুর্নামেন্টের গ্রুপপর্বের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে শ্রীলঙ্কার সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেন জয়াসুরিয়া। সেমিফাইনালে অজিদের বিপক্ষে ৪২ রান করে দলকে ফাইনালে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখেন তিনি। বৃষ্টির বাগড়ায় ফাইনাল শেষ হতে না পারায় ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জয়াসুরিয়ার নেতৃত্বে এটি ছিল শ্রীলঙ্কার প্রথম মেজর ট্রফি। 

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হাতে গাঙ্গুলির সাথে জয়াসুরিয়া; Image Source : thepapare.com

২০০৩ এর শুরুটা দারুণভাবে করেন জয়াসুরিয়া, ভিবি সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন। বিশ্বকাপেও এই ভালো ফর্ম ধরে রাখেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দলের প্রথম ম্যাচে ১২৫ বলে ১২০ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন। জয়াসুরিয়ার নেতৃত্বে সেবার বেশ ভালোই খেলছিলো শ্রীলঙ্কা, তবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে সেমিফাইনালে বিদায় নেয় লঙ্কানরা। বিশ্বকাপের ঠিক পরেই শারজাহ কাপে জিম্বাবুয়ের কাছে অপ্রত্যাশিত এক হারে সেই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা  সেই হারের পরেই অধিনায়কের পদ থেকে সরে যান জয়াসুরিয়া। 

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পান জয়াসুরিয়া; Image Source : Cricketcountry

৬.

অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পরেও নিজের ভালো খেলার ধারাটা অব্যাহত রাখেন জয়াসুরিয়া। ২০০৪ সালের এশিয়া কাপে দুই সেঞ্চুরিতে ৭৩.২৫ গড়ে ২৯৩ রান করে দলের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। এ কারণে সেই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে জয়াসুরিয়াকেই নির্বাচিত করা হয়। সেবছরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফয়সালাবাদ টেস্টে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান জয়াসুরিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৩ রান করে দলের বড় জয় নিশ্চিত করায় ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও তার হাতেই উঠে। তবে ২০০৫ সালে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। সেই বছর কোনো ফরম্যাটেই সেঞ্চুরির দেখা পাননি মাতারা হারিকেন। 

২০০৪ এশিয়া কাপে জয়াসুরিয়া; Image Source : The Quint

কিন্তু ২০০৬ এর শুরুটা বেশ ভালোভাবে করেন জয়াসুরিয়া। সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন তিনি। সেই বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠেয় ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিকদের উপর তান্ডব চালান জয়াসুরিয়া। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তার ১২২ রানে ভর করেই বড় সংগ্রহ গড়ার ভিত পায় শ্রীলঙ্কা। আসল তাণ্ডবটা চালান সিরিজের শেষ ম্যাচে। আগের চার ম্যাচেই শ্রীলঙ্কা জেতায় এ ম্যাচটি ছিল ইংলিশদের সম্মান রক্ষার ম্যাচ। সেই সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে আগে ব্যাট করে ইংলিশরা ৩২১ রান করায় মনে হচ্ছিলো যে সান্ত্বনার জয়টা অন্তত স্বাগতিকরা পাবে। 

কিন্তু এরপর যা হলো সেটা ইংলিশদের হয়ে দুঃস্বপ্ন হয়েই থাকবে। থারাঙ্গাকে সাথে নিয়ে ইংলিশ বোলারদের নিয়ে রীতিমত ছিনিমিনি খেলা শুরু করেন জয়াসুরিয়া! মাত্র ৩১.৫ ওভারেই ২৮৬ রান তুলে ফেলে এই জুটি, ১০২ বলে ১০৭ রান করা থারাঙ্গা কিছুটা ধীরস্থির থাকলেও জয়াসুরিয়া ছিল তার মাতারা হারিকেন রূপে। মাত্র ৯৯ বলে ১৫২ রান করেছিলেন জয়াসুরিয়া! এরকম তান্ডবলীলার ফলে ৩৮ ওভারের মধ্যে ৩২২ রান তাড়া করে ইংলিশদের হোয়াইটওয়াশ করে শ্রীলঙ্কা। এর তিনদিন পর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আরেকটি দেড় শতাধিক রানের ইনিংস খেলেন জয়াসুরিয়া। তার এই ইনিংসে ভর করে ৪৪৩ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা। এই ৪৪৩ রান সেসময়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল। 

২০০৭ বিশ্বকাপেও বেশ ভালো পারফর্ম করেন জয়াসুরিয়া। সেই আসরে দুটি ম্যাচে সেঞ্চুরির দেখা পান মাতারা হারিকেন। দল হিসেবে শ্রীলঙ্কাও বেশ ভালো খেলছিলো, যার ফলশ্রুতিতে ফাইনালে চলে যায় লঙ্কানরা। কিন্তু ফাইনালে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের দানবীয় ব্যাটিংয়ে ভর করে নির্ধারিত ৩৮ ওভারে ২৮১ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করা অস্ট্রেলিয়া। তবে জয়াসুরিয়ার ব্যাটে ভর করে সেই রানের জবাবটা বেশ ভালোভাবেই দিচ্ছিলো শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ব্যক্তিগত ৬৩ রানে জয়াসুরিয়া সাজঘরে ফিরলে পথ হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। শেষপর্যন্ত অজিদের কাছে ৫৩ রানে হেরে রানার্স আপ হিসেবেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় শ্রীলঙ্কাকে। 

২০০৭ বিশ্বকাপে জয়াসুরিয়া; Image Source : Yahoo News

৭.

২০০৭ বিশ্বকাপের পরেই জয়াসুরিয়ার শেষের শুরু হয়ে যায়। সেবছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে অবশ্য তিনি বেশ ভালো পারফর্মেন্স উপহার দেন। সেই আসরে দুটি ম্যাচে ফিফটি করেন জয়াসুরিয়া, যদিও তার দল সুপার এইট থেকেই বিদায় নেয়। সেই বছরের ডিসেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গল টেস্ট খেলে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায়ের সিদ্ধান্ত নেন জয়াসুরিয়া। সাদা জার্সিতে নিজের শেষ ম্যাচেও স্বভাবসুলভ ঝড়ো ইনিংস খেলেন, ১০৬ বলে ৭৮ রানের সেই ইনিংস খেলার পথে ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসনের ছয় বলে ছয়টি চার মারেন জয়াসুরিয়া। তার এই ঝড়ো ইনিংসের কল্যাণে প্রথম ইনিংসে ৯৩ রানে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও সেই টেস্ট জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা সত্ত্বেও জয়াসুরিয়ার টেস্ট পারফর্মেন্স বেশ ভালো ছিল, ১১০ টেস্ট খেলে ৪০ গড়ে ৬৯৭৩ রান সেই সাক্ষ্যই দেয়। 

টেস্ট থেকে অবসর নিলেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পুরোদমে খেলে যাচ্ছিলেন জয়াসুরিয়া। ২০০৮ সালের এশিয়া কাপেও দুর্দান্ত পারফর্মেন্স উপহার দেন তিনি। সেই আসরের সুপার ফোরের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন জয়াসুরিয়া। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেও জ্বলে উঠেন মাতারা হারিকেন। জয়াসুরিয়ার ১১৪ বলে ১২৫ রানের ঝড়ো ইনিংস শ্রীলঙ্কার টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপ জয়ে বেশ বড় ভূমিকা রেখেছিলো। পরের বছর ডাম্বুলায় ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে ৪০ বছর বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন জয়াসুরিয়া। ২০০৯ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে দিলশানের সাথে বিধ্বংসী এক উদ্বোধনী জুটি গড়ে পুরো টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষকে নাচিয়ে ছেড়েছিলেন জয়াসুরিয়া। কিন্তু সেই আসরের ফাইনাল ম্যাচে দিলশান বা জয়াসুরিয়া কেউই জ্বলে উঠতে পারেননি, শ্রীলঙ্কাও আর পাকিস্তানের সাথে পেরে ওঠেনি। 

২০০৮ এশিয়া কাপে জয়াসুরিয়া; Image Source : espncricinfo

এই টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের পর নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকেন জয়াসুরিয়া। আসলে বয়সের ভারে তার ধার তখন অনেকখানি কমে গিয়েছিলো। কিন্তু ক্রিকেটকে খুব বেশি ভালোবাসার কারণে ক্রিকেট থেকে সরে যেতেও তার মন চাচ্ছিলো না। ব্যাটের ধার কমে গিয়েছে দেখে তাকে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলাতে শুরু করে শ্রীলঙ্কা, কিন্তু সেখানেও সাফল্য পাননি তিনি। প্রিয় খেলোয়াড়ের এমন অবস্থা দেখে অনেক ভক্তই জয়াসুরিয়াকে অবসর নেওয়ার কথা বলছিলেন। কিন্তু ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় ২০১১ বিশ্বকাপ খেলে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন জয়াসুরিয়া। শেষপর্যন্ত জয়াসুরিয়ার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি, ২০১১ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি তিনি। 

জয়াসুরিয়ার শেষটা সুখকর ছিল না; Image Source : Cricketcountry

২০১১ বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা দলের নির্বাচক হিসেবে যোগদান করার জন্যে জয়াসুরিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে জানান যে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেই তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন। বিদায়ী টি-টুয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে কোনোটাতেই অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি জয়াসুরিয়া। শেষ টি-টুয়েন্টিতে করেছিলেন ৮ রান আর শেষ ওয়ানডেতে মাত্র ২ রান! বিদায়টা যেমনই হোক, পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে জয়াসুরিয়া কতটা দাপুটে ছিলেন সেটা তো তার ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। ওয়ানডেতে ৪৪৫ ম্যাচ খেলে ৩২.১৩ গড়ে ১৩৪৩০ রান করেছিলেন জয়াসুরিয়া। সাথে বল হাতে ৩২৩ উইকেট তো আছেই। ক্যারিয়ারের প্রথম আট বছর ওপেনার হিসেবে খেললে ব্যাটিং গড়টা অবশ্য আরো ভালো হতে পারতো ।

তবে শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে একজন সনাথ জয়াসুরিয়ার অবদান তুলে ধরা সম্ভব নয়, আধুনিক ক্রিকেটে জয়াসুরিয়ার মতো বিপ্লবী ব্যাটসম্যানের অবদান অনেক বেশি। প্রথম দশ ওভারে শুধুমাত্র রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করতে হবে এই ধারণা ভাঙার ক্ষেত্রে জয়াসুরিয়ার সাফল্য অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিলো। জয়াসুরিয়ার দেখানো পথ ধরেই অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, বীরেন্দর শেওয়াগ, ক্রিস গেইলদের মতো মারকুটে ওপেনাররা উঠে এসেছিলেন। ব্যাট হাতে এমন আক্রমণাত্মক ভূমিকার সাথে বাঁহাতি স্পিনে কার্যকরী এক বোলার – সব মিলিয়ে সনাথ জয়াসুরিয়া ছিলেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পারফেক্ট একটা প্যাকেজ। যতদিন ক্রিকেট বেঁচে থাকবে ততদিন সনাথ জয়াসুরিয়াকেও ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে রাখবে, মনে রাখবে মাতারা হারিকেনের লণ্ডভণ্ড করা সেই ব্যাটিং।  

ফিচার ইমেজ : 99covers.co

Deshabandu Sanath Teran Jayasuriya is a former Sri Lankan cricketer and a former captain of the Sri Lankan national team. Considered one of the greatest One Day International players of all time, Jayasuriya is well known for his powerful striking and match winning all-round performances in ODI cricket.

Related Articles