Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘০৮ থেকে ‘২৩: কিছু না বদলানোটাই ‘সিএসকে ওয়ে’

যেকোনো টুর্নামেন্ট শেষেই প্রশ্নটা ওঠে, শিরোপাজয়ী দলটা জিতল কী করে? আইপিএলের ষোড়শ আসর শেষেও তাই অবধারিত প্রশ্ন হওয়া উচিত, চেন্নাই সুপার কিংস কীভাবে ঘরে তুলল পঞ্চম শিরোপা?

তবে যতটা আলোড়ন তোলার কথা প্রশ্নটা, ততটা তুলতে পারছে কই! ১৪ আসরে খেলে ১০ বারই ফাইনাল, সিএসকের সাফল্যপ্রাপ্তির খবরটা যেন ডাল-ভাতের মতো নিয়মিতই হয়ে গেছে। প্রশ্নটা জোরেশোরে না ওঠার এর চেয়েও বড় কারণ আছে। সিএসকে তো ট্রফি জিতল সেভাবেই, যেভাবে তারা ১০ বছর আগে জিতেছে।

আরও একটা ওপেনিং জুটি

সেই ম্যাথু হেইডেন-মুরালি বিজয় দিয়ে শুরু, এরপর মাইক হাসি-বিজয়, শেন ওয়াটসন-ফ্যাফ ডু প্লেসিস ঘুরে রুতুরাজ গায়কোয়াড়-ডু প্লেসি দুর্দান্ত একটা উদ্বোধনী জুটি চেন্নাই ফ্র‍্যাঞ্চাইজির সমার্থকই হয়ে গেছে। আর ডু প্লেসি থেকে ডেভন কনওয়েতে পালাবদলটা যেমন মসৃণতায় হলো, টায়ার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে পণ্যের দূতিয়ালিতে কাজে লাগাতে পারে এটা।

বিগত বছরগুলোর তুলনায় চেন্নাই ওপেনাররা একটু বেশি আক্রমণে উঠছেন এবার, সেটা অনভিজ্ঞ বোলিং লাইন-আপটাকে বাড়তি রানের নিরাপত্তা দিতেই বোধ হয়। এক আইপিএল মৌসুমের প্রথম দুই ওভারে কমপক্ষে ৫০ রান করেছেন, এমন ব্যাটারদের মধ্যে চেন্নাইয়ের মুরালি বিজয়ই কেবল ১১২.৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছিলেন একবার, সেটাও ২০১০ সালে। সেখানে এবার রুতুরাজ ব্যাট করছেন ১২১.০৫ স্ট্রাইক রেটে। আর উইকেট না হারানোর কাজে তো চেন্নাইকে ভালো হতেই হবে। এখন পর্যন্ত ১৪ ইনিংস খেলে তারা প্রথম দুই ওভারে উইকেট হারিয়েছে মাত্র একবার। পুরো আইপিএলের পাওয়ারপ্লেতেই সবচেয়ে কম – ৯ – উইকেট হারানোর রেকর্ডও তাদের।

শুধু ক্রিকেট তো নয়, জীবনেও কেমন করে একটা ভালো জুটি গড়া যায়, রুতুরাজ-কনওয়ে জুটিটা যেন শিখিয়ে যাচ্ছেন সেটাও। ফাইনালের আগ পর্যন্ত সেট হতে কিছুটা সময় নিতে চাইছিলেন কনওয়ে, সে কারণে নিজের খেলাটাই বদলে ফেলেছিলেন রুতুরাজ। এবারের আগের তার সর্বোচ্চ পাওয়ারপ্লে স্ট্রাইকরেট ছিল ১১৩.৪১। কিন্তু, এবার গ্রুপপর্বের পাওয়ারপ্লেতে তিনি ব্যাট করেছেন ১৪৭.১৭ স্ট্রাইক রেটে। কেবল যশস্বী জওসওয়াল, ফ্যাফ ডু প্লেসি আর ঈশান কিষাণকেই পাওয়া যাচ্ছিল তার ওপরে। বাড়তি ঝুঁকি না নিয়েই কনওয়ে তাই গড়তে পারছিলেন বড় স্কোরের ভিত্তি।

রুতুরাজ-কনওয়ে, নিশ্চিত করেই এবারের আইপিএল-সেরা জুটি। Image credit: BCCI

আবার ফাইনালে দেখা গেল উল্টোটা। কনওয়েই আগ্রাসন দেখালেন বেশি, পছন্দের ম্যাচ-আপ রাশিদ খান আসা অব্দি অপেক্ষা করলেন রুতুরাজ। এই যে, একে অপরের পরিপূরক হওয়া, এই না আদর্শ জুটির বৈশিষ্ট্য।

রায়না ২.০

ওপেনিং জুটি যা-ই করুক, তিনে নেমে ঝড় তুলবেন সুরেশ রায়না – সিএসকের ম্যাচ মানে একরকম যেন ভবিতব্যই ছিল। রায়নার অবসরের পরে তিনের ওই শূন্যস্থান কে পূরণ করবেন, এ নিয়ে দুর্ভাবনার কারণ ছিল বৈকি। কে জানত, আজিঙ্কা রাহানেকেই রায়না বানিয়ে ছাড়বে তারা!

টি-টোয়েন্টিটা তার খেলা নয় বলে একরকম রায় দিয়ে দিয়েছিলেন সবাই। যেই টেস্ট দলের অপরিহার্য সদস্য ছিলেন মাঝে, সেখানেও দলছুট প্রায় বছরখানেক। হ্যাঁ, ঘরোয়া ক্রিকেটে একটা সফল মৌসুম কাটিয়েছিলেন, ৫৮.৯৩ গড়ে ৮৮৪ রান করেছেন মুম্বাইয়ের হয়ে, কিন্তু এর ছিটেফোঁটাও আইপিএলে অনূদিত হবে, এমন ভাবনা কষ্টকল্পনাই ছিল। বিশেষ করে, মৌসুমের শুরুর দুই ম্যাচ সিএসকে তাকে বেঞ্চে রেখেই দল ঘোষণার পরে তো আরও। মৌসুমটা রাহানে শেষ করেছেন ১৭২.৪৯ স্ট্রাইক রেটে ৩২৬ রান করে।

পাওয়ার হিটার না হলেও হাতে স্ট্রোক আছে, লম্বা ক্যারিয়ারে রাহানের এই শংসাপত্র অন্তত ছিল। কিন্তু, ২০২২-এর পাইকারি নিলামে সিএসকে যখন শিভম দুবেকে দলে টানল, তখন তার তাগড়া শরীর বাদে কী-ই বা ছিল বলার মতো?

দুবে, দুবে, শিভম দুবে। Image credit: PTI

মেরেকেটে ২২ গড়ে ৩৯৯ রান, স্ট্রাইকরেটটাও ১২০-এর ঘরে। টেকনিকটাও সেরকম ব্যাকরণসম্মত নয় বলে দুবের পক্ষে বাজি ধরাটা সহজ ছিল না। কিন্তু, সিএসকে ম্যানেজমেন্ট সেই সাহসটাই করেছিল। প্রতিদানটা কী দারুণভাবেই না দিলেন তিনি!

দুই মৌসুম আগের আইপিএলটা চেন্নাই জিতেছিল মঈন আলীকে স্পিন হিটার হিসেবে প্রমোশন দিয়ে। এই মৌসুমটা তার খারাপই গেল যদিও, ফাইনালে তো ব্যাট-বল কোনোটাতেই কোনো অংশ থাকল না তার, তবে চেন্নাই সেই অভাবটা বোধ করল না দুবের কারণে।

কী অফ স্পিন, কী লেগ স্পিন-চায়নাম্যান স্পিনারদের বিপক্ষে রীতিমতো সংহারমূর্তি ধারণ করেছিলেন এই মৌসুমে। স্পিনের বিপক্ষে কমপক্ষে ১০০ বল খেলেছেন, এমন ব্যাটারদের মধ্যে হেনরিখ ক্লাসেনের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট তার। প্রতিবার আউট হওয়ার আগে করে গেছেন সাড়ে ৫২ রান করে। মাঝের ওভারে স্পিনাররা যে পাত্তাই পেল না সিএসকের বিপক্ষে, দুবেই এর প্রধানতম কারণ। 

অন্য দলগুলোর সঙ্গে সিএসকের পার্থক্যটা পরিষ্কার হয়ে যায় দুবের এই রূপান্তরেই। স্পিনটা ভালো খেলেন তিনি, এই গুণটাই ধরতে পারেনি রাজস্থান রয়্যালস বা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। যা পেরেছে সিএসকে।

সে কাজটা তারা বরাবরই পারে।

জাদেজাই ত্রাণকর্তা

স্পিন দিয়ে আইপিএল জেতার ধারাটা সিএসকের বহু পুরনো। তাদের প্রধান নির্বাহী কাশী বিশ্বনাথন তো একবার পরিষ্কারই করে দিয়েছিলেন, মৌসুমের শুরুতে ঘরের মাঠের সাতটা ম্যাচকেই পাখির চোখ করেন তারা, আর এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের উইকেট তো বরাবরই স্পিন-সহায়ক।

আরও একবার জাদেজা। Image credit: BCCI

এই মৌসুমটায় স্পিনারদের জন্য ঠিক গোলাপ বিছিয়ে রাখেনি চিপকের উইকেট। সিএসকে স্পিনাররাও ম্যাচে ছড়ি ঘোরাতে পারেননি সেরকম। ক্রিকভিজের ইমপ্যাক্ট মডেল যেমন বলছে, মঈন আলী আর মহীশ থিকসানা – সিএসকের দুই অফ স্পিনারই ম্যাচে প্রভাব রেখেছেন নেতিবাচক। তবুও, এবারের আইপিএলে ৭-১৫ ওভারের দ্বিতীয় সেরা দল এরাই, রবীন্দ্র জাদেজার সৌজন্যে

১৬ ম্যাচে জাদেজা ওভারপ্রতি ৭.৫৬ রান খরচায় উইকেট নিয়েছেন ২০টি। উইকেট প্রাপ্তির হিসাবে এর চেয়ে সফল আইপিএল মৌসুম তিনি কাটাননি একবারও। ডানহাতি ব্যাটাররা তো রীতিমতো হাঁসফাঁস করেছেন তার বিপক্ষে। ৬.৩২ ইকোনমিতে জাদেজা ১২ বার শিকার করেছেন ডানহাতি ব্যাটারদের উইকেট।

ব্রাভোকে বদলে ব্রাভোর চেয়েও ভালো

শূন্যস্থান পূরণ করাটা সহজ ছিল না মোটেই জুতাটা যে ডোয়াইন ব্রাভো সমান লম্বা। লাসিথ মালিঙ্গাকে পাশে রাখলে আইপিএলের সেরা ডেথ বোলার তিনি নিশ্চিত করেই। চেন্নাই কীভাবে তার ঘাটতি পূরণ করবে, দেখতে হতোই।

পাথিরানাতে মুগ্ধ ধোনিও। Image credit: AP PHOTO

দেখা গেল মাথিশা পাথিরানা রূপে। স্লিঙ্গি অ্যাকশনে বল ছাড়েন বলে ‘বেবি মালিঙ্গা’ নাম পেয়ে গেছেন এরই মধ্যে, আর ব্রাভোর মতো চেন্নাইয়ের ডেথ বোলিংয়ের ভারটা একাই বইলেন এই শ্রীলঙ্কান পেসার। ইনিংসের দ্বিতীয় অর্ধেই বেশির ভাগ বল করেও ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৮ করে। শেষ ৪ ওভারে কমপক্ষে ৭৫ বল করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে তার ৮.০১ ইকোনমি রেটটা সবচেয়ে ভালো।

বয়সও মাত্র ২০, সিএসকে যে লম্বা রেসের ঘোড়াই বাগিয়েছে নিলামে, এ আর বলতে!

বদলায়নি তো সিএসকে ম্যানেজমেন্টও

কী ৫০ রানের জয়, কী ৩২ রানে হার ধোনির মৌখিক অভিব্যক্তি দিয়ে তার ভেতরে অনুভূতির বদল হলো কি না, বোঝা কঠিন। তুষার দেশপান্ডে এক ওভারে ২৪ রান হজম করে ম্যাচ হারালেন কী রবীন্দ্র জাদেজা শেষ দুই বলে ছক্কা-চারে ম্যাচ জেতালেন, ধোনির মুখটা একই রকম ভাবলেশহীন। ২০০৮ সালেও যেমনটা থাকত।

ধোনিকে মাঠে দেখা যায় তো, সিএসকের সাফল্যের কৃতিত্ব বেশির ভাগটা তিনিই পান। তবে স্টিভেন ফ্লেমিং, মাইক হাসি, এরিক সিমন্স, ডোয়াইন ব্রাভোদের নিয়ে যে সিএসকে ম্যানেজমেন্ট – এমন অবিস্মরণীয় সাফল্যযাত্রায় তাদের অবদানটা ভোলার উপায় কোথায়!

খেলোয়াড়দের স্ত্রী-সন্তান-পরিবারদের টিম হোটেলে রাখার সুযোগ দিয়ে সিএসকে ম্যানেজমেন্ট যে আবহটা তৈরি করেছে, সেটাকে আইপিএল না বলে বনভোজন বলাই ভালো। এমনকি ম্যাচের সময়টুকু বাদে তাদের জীবনে ক্রিকেটটাই হয়ে পড়ে গৌণ। বিশ্বাস হবে কি না, দলটা পাঁচটা শিরোপা জিতল অনুশীলনটাকে ‘ঐচ্ছিক’ কাজের তালিকায় রেখেই।

সেই ২০০৮ থেকেই তো শুরু; Image credit: Hindustan Times

খেলার বাইরে খেলা থেকে খেলোয়াড়দের মুক্তি দিয়ে খেলা নিয়ে ভাবার কাজটা করেন কোচিং প্যানেল। দল গড়ার পরে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা দায়িত্ব ঠিক করেন তারা সবাই মিলে, খেলোয়াড়কে দায়িত্বটা ঠিকঠাক বুঝিয়েও দেন। এবং, পুরো মৌসুমজুড়ে খেলোয়াড়টির খোঁজ-খবর নেন, ওই ভূমিকায় তার কেমন লাগছে, কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, সমস্যা হলে কোথায় সমস্যা। এই কথোপকথনগুলোও কিন্তু কোনো টিম মিটিংয়ে নয়, হয় একান্তে। হয়তো বিকালে হাঁটতে হাঁটতে, কিংবা চা খেতে খেতে।

এমন অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার পরে খেলোয়াড় নিশ্চিত করেই ভরসা পান ম্যানেজমেন্টের ওপর, আর সিএসকে ম্যানেজমেন্টও তো ভরসা রাখতে জানে। এক-দুই ম্যাচ খারাপ খেললেই দল থেকে বাদ, এই ভয়টাও নেই সিএসকে ক্রিকেটারদের। 

সাম্প্রতিক উদাহরণটা টাটকাই। সিএসকে তাদের পঞ্চম শিরোপা জিতল, টানা ১১ ম্যাচে একই দল মাঠে নামিয়ে।

This article is in Bangla language. This article is an analysis on Chennai Super Kings' truimph for the 5th time in IPL. Necessary hyperlinks and images are attached inside.

Featured image © BCCI

Related Articles