Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চিটাগাং ভাইকিংস এবং রাজশাহী কিংস: তরুণ এবং অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গড়া দুটি দল

চিটাগাং ভাইকিংস

বিপিএলের ৬ষ্ঠ আসরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার আগে জোরেশোরে গুঞ্জন উঠেছিলো, তারা নাকি এবার বিপিএলে অংশগ্রহণই করবে না। সব ধোঁয়াশা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত অবশ্য দল গঠন করে চিটাগং ভাইকিংস।

দল হিসেবে তাদের খুব একটা সাফল্য নেই। নাম বদলালেও বিপিএলে তাদের ভাগ্য বদলায়নি। এখন পর্যন্ত তাদের সেরা সাফল্য বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে রানার্সআপ এবং চতুর্থ আসরে প্লে-অফে ওঠা। এছাড়া বাকি তিন আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিলো চিটাগাং ভাইকিংসকে। সর্বশেষ আসরে তো তারা মাত্র তিনটিতে জয় পেয়েছিলো। ১২ ম্যাচের মধ্যে আটটিতেই পরাজিত হয়ে টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করে চিটাগাং।

তাদের এমন ব্যর্থতার পেছনে মূলত দায়ী ছিল অগোছালো একাদশ। শুরুতে তাদের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন পাকিস্তানির সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। টুর্নামেন্টের মাঝপথে ব্যাট হাতে রানের দেখা না পাওয়ার কারণে অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি। পরে লুক রঙ্কি দায়িত্ব নিলেও ভাগ্য ফেরাতে পারেননি।

অনেক টালবাহানার পর বিপিএল খেলতে রাজি হয় চিটাগাং ভাইকিংস। তাদের আইকন ক্রিকেটার কে হবেন সেটা নিয়েও অনেক জলঘোলা হয়েছিলো। কারণ মুশফিকুর রহিমকে চাহিদা অনুযায়ী পারিশ্রমিক দিতে অস্বীকৃতি জানায় চিটাগাং ভাইকিংসের ম্যানেজমেন্ট। শেষপর্যন্ত বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের মধ্যস্থতায় মুশফিকুর রহিমকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয় তারা।

রবার্ট ফ্রাইলিঙ্ক; Image Source: AFP

প্লেয়ার ড্রাফটের মধ্যে নামকরা ক্রিকেটার না কিনলেও বেশ কার্যকরী কিছু ক্রিকেটারকে দিয়ে দল সাজায় ভাইকিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যামেরুন ডেলপোর্ট, রবার্ট ফ্রাইলিঙ্ক; জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা, আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শাহজাদ, নাজিবুল্লাহ জাদ্রান এবং শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকাদের মতো বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে দল সাজায় তারা।

দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন মুশফিকুর রহিম, সাদমান ইসলাম, আবু জায়েদ রাহি, খালেদ আহমেদ, নাঈম হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, সানজামুল ইসলাম এবং পাঁচ বছর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা মোহাম্মদ আশরাফুলের মতো ক্রিকেটাররা। মুশফিকুর রহিম ছাড়া বড় কোনো নাম না থাকলেও দেশি-বিদেশিদের সংমিশ্রণে লড়াকু একটা দল গঠন করেছে চিটাগাং ভাইকিংস।

চিটাগাং ভাইকিংসের স্কোয়াড – মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), সানজামুল ইসলাম, সিকান্দার রাজা, মোহাম্মদ শাহজাদ, রবার্ট ফ্রাইলিঙ্ক, মোসাদ্দেক হোসেন, আবু জায়েদ, খালেদ আহমেদ, নাঈম হাসান, ক্যামেরুন ডেলপোর্ট, দাসুন শানাকা, মোহাম্মদ আশরাফুল, রবিউল হক, ইয়াসির আলি, নিহাদুজ্জামান, নাজিবুল্লাহ জাদ্রান এবং সাদমান ইসলাম।

চিটাগাং ভাইকিংসের ম্যাচের মোড় ঘুরানো কিংবা একাই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে, এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা নেই বললেই চলে। তবে তাদের দলে রয়েছে বেশকিছু প্রতিভাবান ক্রিকেটার। এদের মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ২০১৮ সালে বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহ করেছেন। টি-টোয়েন্টিতেও ক্যারিয়ার সেরা সময় কাটিয়েছিলেন ২০১৮ সালে।

চিটাগাং ভাইকিংসের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ; Image Source: Getty Images

মুশফিকুর রহিম বিপিএলে এখন পর্যন্ত ৫৮ ম্যাচ খেলে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৩২.৩০ ব্যাটিং গড়ে তিনি ১,৩৫৭ রান সংগ্রহ করেছেন। মোসাদ্দেক হোসেনও বেশ কয়েকবছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেট খেলেছেন। এর আগে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে বিপিএলে ৩৪ ম্যাচ খেলেছেন মোসাদ্দেক। এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার বল হাতেও বেশ কার্যকরী। এছাড়া মোহাম্মাদ আশরাফুল, ইয়াসির আলি এবং সাদমান ইসলামও বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম।

আবু জায়েদ, খালেদ আহমেদ এবং নাঈম হাসান- তিনজনই গতবছর বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। চিটাগাং ভাইকিংসের জন্য এটি একটি প্লাস পয়েন্ট। কারণ তাদের দলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সক্রিয় তিনজন বোলার রয়েছে।

বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ক্যামেরুন ডেলপোর্ট এবং সিকান্দার রাজা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মোহাম্মদ শাহজাদও নিজের দিনে একাই প্রতিপক্ষকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অলরাউন্ডার ডেলপোর্ট আইপিএলেও খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই অভিজ্ঞ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার ১৭১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।

বিগ বাজেটের দল না গড়লেও এবারের বিপিএলে দল হিসেবে চিটাগাং ভাইকিংস যেকোনো দলের বিপক্ষে জয় পাওয়ার সামর্থ্য রাখে।

রাজশাহী কিংস

রাজশাহী কিংস এর আগে বিপিএলের চারটি আসরে খেলেছে। এর মধ্যে তিন আসরে গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করার পর নক আউট পর্বে এসে বাদ পড়েছে তারা। বিপিএলে নিজেদের প্রথম তিন আসরের মধ্যে প্রথমবার সেমিফাইনালে, দ্বিতীয়বার প্লে-অফ এবং তৃতীয়বার ফাইনালে বাদ পড়ে রাজশাহী কিংস।

Image Source: Associated Press

শুধুমাত্র সর্বশেষ আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে তারা। ১২ ম্যাচের মধ্যে মাত্র চার জয়ে ৬ষ্ঠ স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করে তারা। ঐ আসরে তাদের দলে বেশকিছু প্রতিভাবান ক্রিকেটার ছিলো। তবুও তাদের ভরাডুবি থেকে রক্ষা করতে পারেনি কেউই। মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে দলে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, মুমিনুল হক এবং জাকির হাসানদের মতো তরুণ তুর্কীরা। এছাড়া বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে লুক রাইট, লেন্ডল সিমন্স, মোহাম্মদ সামি, ম্যালকম ওয়ালারদের মতো ক্রিকেটার থাকা সত্ত্বেও সফলতার মুখ দেখেনি রাজশাহী কিংস।

এবারের আসরে রাজশাহী কিংস ড্রাফট থেকে তাদের প্রথম পছন্দ হিসাবে দলে ভেড়ান ফর্মে থাকা সৌম্য সরকারকে। এছাড়া মুমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, জাকির হাসান এবং মোহাম্মদ সামিকে স্কোয়াডে রেখে দেয় রাজশাহী কিংস। এছাড়া ড্রাফট থেকে ফজলে মাহমুদ, আরাফাত সানি, মার্শাল আইয়ুব, কামরুল ইসলাম রাব্বি এবং আলাউদ্দিন বাবুর মতো বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে দলে নেন তারা।

বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট কোনো ক্রিকেটার না থাকলেও বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ এবং কার্যকরী ক্রিকেটার দলে রয়েছে। পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ এবং মোহাম্মদ সামি, শ্রীলঙ্কার ইসুরু উদানা এবং সেকুগে প্রসান্না ও রায়ান টেন ডসেট এবং লরি ইভান্সদের মতো নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানদেরকে দল সাজিয়েছে রাজশাহী কিংস।

রায়ান টেন ডসেট; Image Source: BCCI

দলে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থাকা সত্ত্বেও অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজকে, যার নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলেছিল। এছাড়া মিরাজ বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাটেই নিয়মিত খেলছেন। সাকিব, মাশরাফিদের সংস্পর্শে থেকে দল সামলানোর ক্ষেত্রে কতটা বিচক্ষণ হয়েছেন সেটাই দেখা যাবে এবারের আসরে।

রাজশাহী কিংসের স্কোয়াড – মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), মুমিনুল হক, মুস্তাফিজুর রহমান, জাকির হাসান, কাইস আহমেদ, ক্রিস্টিয়ান জংকার, সৌম্য সরকার, ফজলে মাহমুদ, আরাফাত সানি, আলাউদ্দিন বাবু, লরি ইভান্স, ইসুরু উদানা, মার্শাল আইয়ুব, কামরুল ইসলাম, রায়ান টেন ডসেট, সেকুগে প্রসান্না, মোহাম্মদ সামি এবং মোহাম্মদ হাফিজ।

রাজশাহী কিংসে এবার বেশ কয়েকজন ইনফর্ম ক্রিকেটারদের দিয়ে দল সাজিয়েছে। তাদের থেকে সেরাটা আদায় করে নেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজকে। রাজশাহী কিংসে সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজুর রহমান, জাকির হাসানদের মতো ভবিষ্যৎ তারকা ক্রিকেটারের পাশাপাশি নামকরা এবং ফর্মে থাকা বিদেশি ক্রিকেটারও আছে।

আফগানিস্তানের কাইস আহমেদ, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিস্টিয়ান জংকার এবং ইংল্যান্ডের লরি ইভান্সের নামডাক না থাকলেও তারা তিনজনই বেশ কার্যকরী ক্রিকেটার।

সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন লরি ইভান্স; Image Source: Getty Images

লরি ইভান্স ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২৩ ইনিংস ব্যাট করে দশটি অর্ধশত রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তিনি ২০১৮-তে ৬৫.৬৪ ব্যাটিং গড়ে ৯১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ক্রিস্টিয়ান জংকারের ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। নিজের অভিষেক ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে ৪৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এছাড়া আফগানিস্তানের লেগস্পিনার কাইস আহমেদ এবারের আসরের সারপ্রাইজ প্যাকেজ। ইতিমধ্যে এই লেগস্পিনার ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়ে এসেছেন।

এই তিন ক্রিকেটার ছাড়াও রায়ান টেন ডসেটের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে দলে নিয়েছে রাজশাহী। তিনি এর আগে বিপিএলে ২২ ম্যাচ খেলে ৩৭.৯৩ ব্যাটিং গড়ে ৫৬৯ রান করেছেন। এছাড়া তার ৩২০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। মোহাম্মদ সামি, সেকুগে প্রসন্নও এর আগে বিপিএলে পারফর্ম করেছেন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং বিদেশি ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে রাজশাহী কিংসের এবারের দল বেশ ভারসাম্যপূর্ণ।

This article is in Bangla language. It is about some Chittagong Vikings and rajshahi kings team preview. Please click on the hyperlinks to look for references.  

Featured Image : AFP

Related Articles