Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইউরো ২০২০: গ্রুপ ‘এ’ ব্যবচ্ছেদ

ইউরো ২০২০ শুরু হতে আর বেশি বাকি নেই। সময় যত গড়াচ্ছে, টুর্নামেন্টটি নিয়ে পরিবেশ তত গরম হচ্ছে। দলগুলোও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রতিপক্ষের জন্য। গ্রুপপর্বের প্রাক্কালে প্রতিপক্ষ নিয়ে চলছে গবেষণা, সেভাবেই এগোচ্ছে পরিকল্পনাও। গ্রুপপর্বের লড়াই শুরুর আগে কোনোটিকে বলা হচ্ছে গ্রুপ অফ ডেথ, আবার কোনোটিকে বলা হচ্ছে এক ফেভারিটের গ্রুপ। এই গ্রুপগুলোর মধ্যে আমরা আজ আলোচনা করব ইউরো ২০২০ এর গ্রুপ-এ নিয়ে। এবারের ইউরোর ৬টি গ্রুপের মধ্যে গ্রুপ-এ’তে জায়গা পেয়েছে ইতালি, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড ও ওয়েলস।

এবার ইউরোর উদ্বোধনী খেলাটি হবে গ্রুপ-এ’র দুই দল ইতালি ও তুরস্কের মধ্যে। প্রায় কাছাকাছি মান এবং ফর্মের দলগুলো এক গ্রুপে পড়াতে অন্য গ্রুপগুলোর তুলনায় এই গ্রুপে প্রতিযোগিতা তুলনামূলক বেশিই আশা করা যাচ্ছে। তবে ইতালিকে এদের মধ্যে ফেভারিট মানতেই হবে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের পর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হারেনি রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা। ২০২০-২১ মৌসুমের উয়েফা ন্যাশনস লিগে তারা ছিল এ-লিগের ১ নাম্বার গ্রুপে, যেখানে তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও বসনিয়া-হার্জেগোভিনাকে পেছনে ফেলে। গ্রুপের একটি ম্যাচেও হারেনি তারা। এছাড়াও আজ্জুরিরা পাচ্ছে গ্রুপপর্বের ৩টি ম্যাচেই ঘরের মাঠ স্ত্যাদিও অলিম্পিকোতে খেলার সুযোগ। ধারণক্ষমতার ২৫% দর্শক মাঠে ঢোকার অনুমতি পেলেও সেই বিশাল গ্যালারিতে থাকবেন প্রায় ১৮,০০০ দর্শক যা আজ্জুরিদের উজ্জীবিত করতে যথেষ্ট।

ইতালি

ইতালি স্কোয়াড; Image Credit: Italy on Twitter

২০২০ সাল থেকেই ইতালিকে আমরা মাঠে দেখছি ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলতে। কমপক্ষে একজন বা অনেক সময় দুইজন হোল্ডিং মিডফিল্ডারকে নিয়ে দল সাজানো হয়, যাতে তাদের ডিরেক্ট পাসে একদম গোলকিপারের কাছ থেকে ‘প্লেয়িং ফ্রম দ্য ব্যাক’ সিস্টেমে আক্রমণ তৈরিতে সুবিধা হয়। এভাবে প্রতিপক্ষের বাকি খেলোয়াড়দের উপরে উঠতেও ফুঁসলায় তারা।

ইতালির মধ্যমাঠে এমন কিছু খেলোয়াড় আছেন, যাদের দূরপাল্লার পাসিং খুব ভালো। জর্জিনহো, লোকাতেল্লি ও ভেরাত্তি বিপক্ষের খেলোয়াড়দের উপরে উঠে আসার সুবিধা নিয়ে  তাদের দুর্দান্ত পাসিং স্কিলে খুঁজে নেন খালি জায়গায় থাকা ফরোয়ার্ডকে। আর এভাবে আক্রমণ তৈরির সময় কখনই দুই ফুলব্যাক একসাথে উপরে ওঠেন না। একজন নিচে থেকে তিনজনের রক্ষণদুর্গ তৈরি করেন, এতে পাস দিয়ে বিল্ডআপের সময় পাসিং অপশন একটি বেশি থাকে। যেদিকের ফুলব্যাক নিচে থাকেন, সেইদিকের উইঙ্গার একটু ভেতরের দিকে চেপে আসেন, আর তাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তার একটু পেছনে থাকেন একজন হোল্ডিং মিডফিল্ডার।

ইতালির আক্রমণের আরেকটি কী-পয়েন্ট হচ্ছে বক্সের বাইরে থেকে তাদের দূরপাল্লার শট। যেকোনো হাফ ক্লিয়ারেন্স বা ফরোয়ার্ডদের থেকে ব্যাকপাস পেয়ে সেটি ফিরতি শটে জালে পাঠানোতে তাদের মিডফিল্ডারদের ভালোই সুনাম রয়েছে। আক্রমণে ইতালির মূল শক্তি হল তাদের গতিসম্পন্ন ফরোয়ার্ডদের মুভমেন্ট। তিনজনের ফরোয়ার্ড লাইনের ডান পাশটায় খেলেন ডমেনিকো বেরার্ডি। বল নিয়ে তিনি চমৎকারভাবে কাট-ইন করে বক্সে ঢুকে পড়েন। মাঝে থাকেন সিরো ইমোবিলের মতো স্ট্রাইকার যিনি ২০১৯-২০ মৌসুমের ইউরোপীয় গোল্ডেন বুট জিতেছেন। আর লেফটে মোটামুটি অটো-চয়েস হিসেবে আছেন লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে। তিনিও চমৎকারভাবে কাট ইনসাইডের পাশেপাশি আরো সামনে নিয়ে ইমোবিলে বরাবর ক্রস ফেলেন। এই তিনজনের নিজে যে মিডফিল্ড লাইন থাকে, তারা বল সাপ্লাই দিতে হারানো বল আবার জিতে আবার উপরে পাঠান।

দুর্বল দলের বিপক্ষে ইতালি সচরাচর খেলে অতিরিক্ত প্রেসিং করে। তুলনামূলক দুর্বল দল হওয়ায় এতে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল খাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। কিন্তু যদি মোটামুটি ভাল দল বা শক্তিশালী দলের সাথে খেলা হয়, তখন ইতালি রক্ষণাত্মকভাবে তাদের তাদের ফরমেশন পরিবর্তন করে ৪-৩-৩ থেকে ৪-৫-১’এ নিয়ে আসে, আর মিড ও লো-ব্লক ডিফেন্সে খেলতে থাকে। নয়জন খেলোয়াড় একসাথে নিচে নেমে যাওয়ার সুবিধা ইতালি পায় যখন কোনো খেলোয়াড়কে চার্জ করতে বা হাওয়ায় ভাসা বল হেড দিয়ে জিততে যেকোনো একজন খেলোয়াড় তার জায়গা থেকে সরে যান। এ সময়ে ইন্ডিভিজুয়াল ডুয়েলে জিততে যেকোনো একজন সেন্টারব্যাক একটু সামনে চলে আসেন। ফলে তাদের শেপ ভেঙে গেলেও সেই সিবি আরেকটু এগিয়ে যান যদি সেই বলটি বিপক্ষ দল আবার ব্যাক-পাস করে। এতে তৈরি হওয়া বিশাল ফাঁকা জায়গা কভার করতে মিডফিল্ড থেকে একজন নেমে আসেন নিচে।

ইতালির দুর্বলতার কথা বলতে গেলে বলতে হবে তাদের ফুলব্যাকদের কথা। তবে এই দুর্বলতা তারা কাটায় একবারে মাত্র একজনকে উপরে ওঠার লাইসেন্স দিয়ে। মাঠে ইতালির মূল খেলোয়াড় হবেন সিরো ইমোবিলে, মার্কো ভেরাত্তি, এবং জিয়ানলুইজি ডোনারুমা।

চিরো ইম্মোবিলে কি পারবেন ক্লাবে তার দুর্দান্ত ফর্ম জাতীয়দলে নিয়ে আসতে? Image Credit: Forza Italian Football

ইতালির সাম্প্রতিক ফর্ম ও স্কোয়াড দেখে নিশ্চিতভাবেই ইতালিকে ‘এ’ গ্রুপের ফেভারিট ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ন্যাশনস লিগে নিজেদের গ্রুপে প্রথম হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে তারা। এছাড়া রবার্তো মানচিনির অধীনে গত তিন বছরে তারা হেরেছে মাত্র ২টি খেলায়। গ্রুপ ‘এ’তে মূল যুদ্ধটি হবে দ্বিতীয় স্থান নিয়ে। অবশ্য ইউরোতে সেরা চার তৃতীয় দল শেষ ষোলোতে খেলার সুযোগ পায়, তাই প্রত্যেকেই চাইবে তৃতীয় হলেও পয়েন্ট যতটা সম্ভব বেশি আদায় করে নিতে।

তুরস্ক

গ্রুপের আরেক দল তুরস্ক ন্যাশনস লিগে সুবিধা করতে পারেনি মোটেও, ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা হয়েছিল গ্রুপে চতুর্থ। কিন্তু বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তারা রীতিমতো উড়ছে। তিন ম্যাচের ১টিতে ড্র ও ২টি জয় নিয়ে তারা নিজেদের গ্রুপে আছে প্রথম স্থানে। নেদারল্যান্ডসকেও তারা হারিয়েছিল ৪-২ গোলে। ন্যাশনস লিগের ব্যর্থতার পর আবার নতুন করে দল সাজানোর পর নতুন ট্যাকটিক্সে দারুণ করছে তারা। ব্যর্থ পরিকল্পনাগুলোও আস্তে আস্তে এখন কাজে লাগছে তাদের। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস ও নরওয়েকে হারানোতেই যার প্রমাণ পাওয়া যায়। তুরস্ক তাদের ফুটবলকে নতুন করে গড়ে তোলার যে মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছিল, তাতে তারা তাদের পাইপলাইনে পেয়ে গিয়েছে একঝাঁক তরুণ, উদীয়মান ও মেধাবী ফুটবলার। এছাড়া তাদের কোচ শেনল গুনেশ ছিলেন ২০০২ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত সাফল্য পাওয়া তুরস্ক দলটির কোচ। সেই হিসেবে সাফল্যের মূলমন্ত্রও তার জানা থাকারই কথা।

তুরস্ক স্কোয়াড; Image Credit: Max Sports

তুরস্ক তাদের সাম্প্রতিক খেলাগুলো খেলেছে ৪-১-৪-১ ফরমেশনে বা ৪-২-৩-১ ফরমেশনে। নিজেদের রক্ষণভাবে জমাট বেঁধে তারা অপেক্ষা করে কাউন্টার অ্যাটাকের। এতে প্রতিপক্ষ যদি উপরে উঠে এসে বল হারায়, তড়িৎগতিতে সেখান থেকে তারা প্রতিপক্ষের বক্সে হামলা চালায়। আর প্রতিপক্ষ নিজেরা যদি একটু ছাড় দিয়ে ছোট ছোট পাসে খেলা শুরু করে, তখন শুরু হয় তাদের হাই-প্রেসিং। কিন্তু প্রতিপক্ষ একটু শক্ত হলেই তারা আবার সব খেলোয়াড় নিয়ে নিচে গিয়ে বসে থাকে। তাদের চারজনের ডিফেন্স লাইনের সামনে সচরাচর থাকেন ওকায় ইয়োকুসলু। ৪ জনের দু’টি লাইনের মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে তিনি তাদের রক্ষণকে আরো দুর্ভেদ্য করে তোলেন।

তুরস্কের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় চাঘলার সুইয়ুঞ্চু যদি মাঠে থাকেন, তবে তার দুর্দান্ত পাসিং স্কিল তুরস্ককে নিচ থেকে আক্রমণ সাজাতে সাহায্য করে। তুরস্ক প্রতিপক্ষকে প্রলুব্ধ করে সবাইকে উপরে উঠে আসতে, আর এতে তাদের সুবিধা হয় লম্বা ক্লিয়ারেন্স দিয়ে বা লাইন ব্রেকিং পাস দিয়ে বল সরাসরি স্ট্রাইকারের কাছে পৌছে দিতে। সেখানে এরপর তার সাথে আক্রমণে যুক্ত হন অন্য উইঙ্গার আর মিডফিল্ডাররা। তুরস্কের আক্রমণের একটি বিশেষ দিক হলো তারা বল নিয়ে ন্যারো পজিশনে চলে যাবে, প্রতিপক্ষের প্লেয়াররা সেখানে জমাট বাধা শুরু করলেই বল অন্য কোনোদিকে পাঠিয়ে দেবে। এতে সেখানে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা না থাকায় আক্রমণের সুবিধা হয়। এই সংকীর্ণ জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় বেশিরভাগ সময় বল হারায় তারা, এবং প্রতিপক্ষ এখানেই আক্রমণের সুযোগ পায়।

তবে তাদের আক্রমণভাগে থাকা খেলোয়াড়রা তুলনামূলক ভার্সেটাইল। যেমন কেনান কারাম্যান একই সাথে স্ট্রাইকার, সেকেন্ড স্ট্রাইকার ও দুই উইংয়েই খেলতে পারেন। আবার হাকান চালহানোলু অ্যাটাকিং বা ওয়াইড মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে পারেন। তুরস্কের স্ট্রাইকার বুরাক ইলমাজ ৩৫ বছর বয়সে এসে এই মৌসুমে বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখিয়েছেন। বর্ষীয়ান এই স্ট্রাইকার ২৮ ম্যাচে ১৬ গোল করে লিলকে লিগ-ওয়ান জিতিয়েছেন। এছাড়া তুরস্কের আক্রমণভাগে আরেকজনকেও হুমকিস্বরূপ দেখা হচ্ছে, মিডফিল্ডার ওজান তুফান। হোল্ডিং মিডে থাকা তুফানের বড় অস্ত্র তার দুর্দান্ত দূরপাল্লার শট।

তুরস্কের রক্ষণভাগ জমাট বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। সেখানে বলের ঘোরাফেরা তেমন হয় না, কিন্তু মিডফিল্ড থেকে ফরোয়ার্ড পর্যন্ত একদম ম্যাজিকের মতো করে বল চলে যায়। আর মাঠে তাদের মানসিকতা থাকে এমন, ‘গোল যতই হজম করি না কেন, তার চেয়ে বেশি গোল করব।’

তাদের মূল খেলোয়াড় থাকবেন মেরিহ ডেমিরাল, বুরাক ইলমাজ, হাকান চালহানোলু।

এই তুর্কি দলটি গত মার্চে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নেদারল্যান্ডসকে হারায় ৪-২ গোলে; Image Credit: Getty Images

ইতালির বিপক্ষের খেলাটি ছাড়া তাদের বাকি দু’টি খেলা হবে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু’র অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। প্রায় ৭০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার এই মাঠে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ দর্শককে মাঠে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে।

এবারের ইউরোতে খেলার সুযোগ পায়নি আজারবাইজান। অন্যদিকে, কূটনৈতিক ব্যাপার ছাড়াও তুরস্কের সাথে আজারবাইজানের মানুষদের সম্পর্ক খুবই ভালো। ফলে আজারবাইজানের দর্শকরা যে তুরস্ককে সমর্থন জানাবে, সেটাই স্বাভাবিক। সে হিসেবে মাঠটি তুরস্ককে হোম অ্যাডভান্টেজ দেবে, সেটা বলাই বাহুল্য। ফলে সুইজারল্যান্ড ও ওয়েলসের বিপক্ষের খেলা দুইটিকে তাদের ঘরের মাঠে খেলা হিসেবে ধরা যায়।

সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ডের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মোটামুটি ভাল। ন্যাশনস লিগে স্পেন, জার্মানি ও ইউক্রেনের সাথে একই গ্রুপে থেকেও তারা ৬ পয়েন্ট তুলে নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় হয়েছিল। ওয়াকওভারে পাওয়া একটি জয় কেবল ইউক্রেনের সাথে আসলেও তারা জার্মানি ও স্পেনের সাথে ড্র করতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়া বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ২ ম্যাচে ২ জয় নিয়ে গ্রুপে ইতালির পরই তারা আছে দ্বিতীয় স্থানে। 

সুইজারল্যান্ড খেলে তাদের স্বাভাবিক তিনজনের ডিফেন্স লাইন নিয়ে। তাদের সামনে শিল্ডের মতো করে অবস্থান নেন দুইজন ডাবল পিভট করে থাকা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। সুইসরা আক্রমণে উপরে ওঠে তাদের উইং দিয়ে। তাদের সিবি আর সিএমরা তেমন একটা অংশ নেন না আক্রমণে। তাদের ফোকাস বল হারানোর পর সেটা পুনরোদ্ধারে। উইংব্যাকরা একই সাথে বক্সে ক্রস ফেলেন, আবার উইঙ্গার একপাশে বেশি চেপে গেলে তাকে সমর্থনের জন্য উইংব্যাকরা ভেতরের দিকে চলে আসেন।

সুইজারল্যান্ডের ৩ জন ফরোয়ার্ডের মধ্যে প্রচলিত রোলের একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড থাকেন। সচরাচর এই জায়গায় খেলেন হারিস সেফেরোভিচ বা মারিও গাভ্রানোভিচ। তাকে সমর্থন দেন একটু নিচে থাকা দুই ওয়াইড ফরোয়ার্ড-কাম-অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। এই রোলে থাকা দুইজন দলের মূল ভূমিকায় থাকেন। তারা অ্যাটাক উপরে নিয়ে আসেন নিচে থেকে ক্যারি করে, বল নিয়ে টাচলাইনের দিকে সরে গিয়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে সেদিকে টেনে ভেতরে জায়গা তৈরি করেন, আর উইংয়ে বল পেলে তা নিয়ে বক্সে ঢুকে শ্যুট করেন। সহজ করে বলতে গেলে, সুবিধামতো বল যোগান দেন তারা।

এখানে আলাদা করে বলতে হয় শাকিরির কথা। দুর্দান্ত ওয়ার্করেট দিয়ে তিনি সুইজারল্যান্ডের আক্রমণে শাণ দিতে থাকেন প্রতিনিয়ত।

সুইজারল্যান্ড স্কোয়াড; Image Source: Periskopi

সুইজারল্যান্ড তাদের খেলা গোছানো আর প্লেয়ারদের জায়গামতো অবস্থান নেওয়ার সুযোগ দিতে কোনো অ্যাটাক নষ্ট হওয়ার পর আবার গোলকিপার বা ডিফেন্ডারের কাছ থেকে খেলা বিল্ডআপ শুরু করে। তাদের ডিফেন্স লাইনের মূলমন্ত্র ফিজিক্যালিটি। প্রতিপক্ষের সাথে এই ব্যাটলে জিতে হলেও তারা বল ধরে রাখতে চান। তাদের এই বল ধরে রাখার মানসিকতা ও শেপ না ভেঙে খেলার কারণে গোল কম হজম করতে হয়। ইউরো ২০২০ বাছাইপর্বে ৮টি খেলায় তারা মাত্র ৬টি গোল হজম করে এভাবে খেলেই।

তাদের স্কোয়াডের খেলোয়াড়রাও অনেক ভার্সেটাইল। তাদের মিডফিল্ডে যেমন আছে ডিব্রিল স’র মতো উদ্যমী খেলোয়াড়, আবার রয়েছেন গ্রানিত সাকার মতো দুর্দান্ত পাসিং আর লং শ্যুট নেওয়ার মতো খেলোয়াড়। মধ্যমাঠেও আছেন ডেনিস জাকারিয়া বা রেমো ফ্রেউলার।

সেই উদযাপনে অধিনায়ক সাকা ও শাকিরি; Image Credit: Getty Image

সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় সুইজারল্যান্ড থেকে তুরস্ক কিছুটা এগিয়েই থাকবে। সেই সাথে আরো যুক্ত হয়েছে আনঅফিসিয়াল হোম অ্যাডভান্টেজ। তাই সুইজারল্যান্ডকে পেছনে ফেলে তুরস্কেরই এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই দলের মূল খেলোয়াড় হবেন জর্ডান শাকিরি ও গ্রানিত সাকা।

ওয়েলস

গ্রুপের অপর দল ওয়েলসকে এই গ্রুপের সম্ভাব্য চতুর্থ দল হিসেবেই ধরা যায়। যদিও ন্যাশনস লিগের লিগ ‘বি’তে নিজেদের গ্রুপে তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। অবশ্য সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও বুলগেরিয়া। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তারা দুই ম্যাচের একটিতে জিতেছে ও একটিতে হেরেছে।

তাদের এখনকার ফরমেশনের চাইতে আগের ফরমেশনে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। চারজনের ডিফেন্স থেকে সরে এসে তারা এখন খেলে পাঁচজনের ডিফেন্স লাইন নিয়ে। সরাসরি ফরোয়ার্ড পাসিং সিস্টেম থেকে সরে এসে এখন তারা খেলেন জমাট ডিফেন্স থেকে একদম ফরোয়ার্ড লাইনে লং বল ফেলে। এই লং বলগুলো ধরার জন্য কিয়েফার মুরের উচ্চতা অনেকটাই সাহায্য করে তাদের।

তবে ওয়েলস আস্তে আস্তে ‘ফলস নাইন’ খেলানোও শুরু করছে। এই দলে এখন যেমন খেলেন জো রডন, ড্যানিয়েল জেমস ও নিকো উইলিয়ামসের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের তরুন তুর্কিরা, তেমনই আছেন প্রিমিয়ার লিগের সুপারস্টার গ্যারেথ বেল ও অ্যারন রামসি।

ওয়েলস স্কোয়াড; Image Credit: Sportskeeda

ফলস নাইন রেখে খেলা শুরু করার পর থেকে এই পজিশনে মুরের স্থলাভিষিক্ত হন হ্যারি উইলসন। তার দুই পাশে খেলেন গ্যারেথ বেল ও ড্যানিয়েল জেমস। এই দুই উইঙ্গার বল নিয়ে ভিতরে ঢুকে গিয়ে সেন্ট্রালি শ্যুটিং পজিশনে যেতে পারেন, আবার উইং থেকে ক্রসও করতে পারেন। এদিক দিয়ে গ্যারেথ বেলের ক্রসগুলো থাকে দুর্দান্ত। যদি উইলসনের চাইতে আরেকটু ভালো ফরোয়ার্ড পাওয়া যেত, তবে এভাবে বেশ কিছু গোল বেশিও পেতে পারতো ওয়েলস। ওহ, ড্যানিয়েল জেমস বল নিচে থেকে সাথে নিয়ে উপরে আক্রমণে নিয়ে আসতেও বেশ পারদর্শী।

ডিফেন্সিভলি ৫-৪-১ ফরমেশনে খেললেও তাদের আক্রমণে উপরে ওঠা কিন্তু কমেনি। কুইক শার্প পাসের মাধ্যমে তারা প্রতিপক্ষের ব্লকগুলো এড়িয়ে বল সামনে নিয়ে আসে। দুই উইংয়ে থাকা দুই দুর্দান্ত গতিসম্পন্ন উইঙ্গার এই আক্রমণ তৈরির সময় তড়িৎগতিতে খালি জায়গায় অবস্থান নিয়ে বল রিসিভ করে অন্য যারা আক্রমণে উঠে তাদের সাথে লিংক তৈরি করে।

ন্যাশনস লিগে তাদের এই সাফল্যের কৃতিত্ব তাদের কোচ রায়ান গিগসকে অনেকটাই দেওয়া যায়। ২০১৮ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলকে আস্তে আস্তে ধারাবাহিক করে তুলেছিলেন। কিন্তু মাঠের বাইরে কিছু বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে ইউরোতে আর ডাগআউটে থাকতে পারছেন না তিনি।

তবে ন্যাশনস লিগে তাদের সাফল্যটা ভাগ্যের জোরে এসেছে, সেটা বলা যেতেই পারে। কেন? তাদের অধিকাংশ জয় এসেছিল ১-০ স্কোরে। এত কাছাকাছি পার্থক্যে তিন পয়েন্ট নিয়ে গিয়ে জেতার সৌভাগ্য হয়তো ইতালি, তুরস্ক বা সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে না-ও হতে পারে। এমনকি ন্যাশনস লিগে যে একটি ম্যাচ গোলশূন্য ড্র করেছিল তারা, সেটাও খর্বশক্তির আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। সাথে বলে রাখা ভালো, এবারের ইউরোর মূলপর্বে আসতে বাছাইপর্বে যে খেলাগুলো খেলেছিল তারা, সেখানেও বেশিরভাগ খেলাই তারা জিতেছে ওই ১-০ ব্যবধানেই। বিশ্বকাপ বাছাইতে তারা যে খেলায় চেক রিপাবলিককে হারিয়েছিল, সেই খেলাতেও তারা জেতে একদম ৮১ মিনিটে ড্যানিয়েল জেমসের করা একমাত্র গোলে। চেক রিপাবলিক ন্যাশনস লিগের দলগুলোর চাইতে শক্তিশালী হলেও আহামরি কোনো দলও নয়।

অবশ্য একটি ইতিবাচক দিক হলো, তাদের রক্ষণভাগ খুবই দৃঢ়। নিজেরা গোল না করতে না পারলেও গোল না হজম করার ব্যাপারে তারা দৃঢপ্রতিজ্ঞ। তাদের মূল খেলোয়াড় থাকবেন নিঃসন্দেহেই গ্যারেথ বেল, ড্যানিয়েল উইলিয়ামস ও অ্যারন রামসি।

ওয়েলসের মূল ভরসা রিয়ালের মাদ্রিদ থেকে টটেনহ্যামে লোনে খেলা গ্যারেথ বেল; Image Credit: Getty Images

ওয়েলস কোনোভাবেই বাজে দল নয়। কিন্তু গ্রুপ ‘এ’তে প্রতিযোগিতাটা একটু বেশিই, আর বাকি দলগুলোর তুলনায় তাদের স্কোয়াডে স্টার প্লেয়ারের সংখ্যাও কমই বলা চলে। ড্র করার মানসিকতায় নেমে কোনোরকমে ১ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়াটাই হয়তো হবে তাদের মূল লক্ষ্য। তবে কোনোক্রমে একটি ম্যাচ জিতে সেরা চার তৃতীয় দলের একটি হয়ে শেষ ষোলো’র লড়াইয়ে অংশ নিতে দেখলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

তারা এতদিন যে পর্যায়ের প্রতিপক্ষের সাথে খেলে এসেছে, তাদের চাইতে নতুন প্রতিপক্ষগুলো সব দিক থেকেই এগিয়ে। তাই গ্রুপ ‘এ’তে থাকা অন্য দলগুলোর আক্রমণের সামনে ওয়েলসের এই রক্ষণ কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে, সেটিই দেখার বিষয়।

হেড টু হেড

  • ইতালি

            বনাম তুরস্ক (৭ জয়, ৩ ড্র, ০ পরাজয়)

            বনাম সুইজারল্যান্ড (২৮ জয়, ২২ ড্র, ৮ পরাজয়)

            বনাম ওয়েলস (৭ জয়, ০ ড্র, ২ পরাজয়)

  • তুরস্ক

            বনাম ইতালি (০ জয়, ৩ ড্র, ৭ পরাজয়)

            বনাম সুইজারল্যান্ড (৮ জয়, ৩ ড্র, ৪ পরাজয়)

            বনাম ওয়েলস (২ জয়, ১ ড্র, ৩ পরাজয়)

  • সুইজারল্যান্ড

            বনাম ইতালি (৮ জয়, ২২ ড্র, ২৮ পরাজয়)

            বনাম তুরস্ক (৪ জয়, ৩ ড্র, ৮ পরাজয়)

            বনাম ওয়েলস (৫ জয়, ১ ড্র, ২ পরাজয়)

  • ওয়েলস

            বনাম ইতালি (২ জয়, ০ ড্র, ৭ পরাজয়)

            বনাম সুইজারল্যান্ড (২ জয়, ০ ড্র, ৫ পরাজয়)

            বনাম তুরস্ক (৩ জয়, ১ ড্র, ২ পরাজয়)

Related Articles