Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অপ্রতিরোধ্য লিভারপুল, হোঁচট খেয়েছে চেলসি

টানা ছয় ম্যাচ জিতে এবারের প্রিমিয়ার লিগে অভাবনীয় সূচনা পেয়েছে লিভারপুল। তবে টানা পাঁচ ম্যাচ জেতার পর ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেডের বিপক্ষে ড্র করে হোঁচট খেয়েছে চেলসি। এদিকে ম্যানসিটি এবং আর্সেনালের জয়ের ধারাও অব্যাহত রয়েছে। আর ঘরের মাঠে উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে ড্র করে এই মৌসুমে নিজেদের পারফরম্যান্সকে আবারও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। 

শনিবার প্রিমিয়ার লিগে মোট আটটি ম্যাচ ছিল। দিনের প্রথম ম্যাচে ঘরের মাঠে ওয়াটফোর্ডের মুখোমুখি হয় ফুলহ্যাম। ম্যাচটি শেষ হয় ১-১ গোলে। কার্ডিফে অ্যাওয়ে ম্যাচে মুখোমুখি হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। গত সপ্তাহে ইউসিএলের ম্যাচে ঘরের মাঠে অলিম্পিক লিঁওর কাছে হারার ফলে কিছুটা তেঁতে ছিল সিটিজেনরা, আর সেই ঝালটা স্বাগতিকদের উপর বেশ ভালোভাবেই ঝাড়তে শুরু করে তারা। বিশেষ করে প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিটে কার্ডিফের উপর দিয়ে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেয় দলটি।

ঝড়ের শুরুটা করেন ম্যানসিটি স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো, ৩২ মিনিটে বার্নার্ডো সিলভার পাস থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন এই বর্ষীয়ান স্ট্রাইকার। এর ৩ মিনিট পরেই লেরয় সানের ক্রসে ‘নো লুক হেডে’ গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আগের গোলের যোগানদাতা বার্নার্ডো সিলভা। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে দূরপাল্লার এক শটে গোল করে সিটিজেনদের ৩-০ গোলে এগিয়ে দেন ইকেই গুন্ডোগান। 

অদ্ভুতুড়ে এক গোলের পর বার্নার্ডো সিলভা; Image Source : Mancity.com

দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমেই জ্বলে ওঠেন এই মৌসুমেই দলে যোগ দেওয়া রিয়াদ মাহারেজ। ৬৭ মিনিটে গুন্ডোগানের মাপা এক পাসে গোল করেন এই আলজেরিয়ান। আর খেলা শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে এই মাহারেজের গোলেই ম্যানসিটির ৫-০ গোলের বড় জয় নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে ধাক্কা খাওয়ার পর টানা চার ম্যাচ জিতে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে বেশ ভালোভাবেই টিকে রইলো সিটিজেনরা।

জয়রথ ধরে রাখার লক্ষ্যে ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে সাউদাম্পটনের মুখোমুখি হয় লিভারপুল। ম্যাচের দশ মিনিটে ওয়েসলির আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় অলরেডরা। এর ঠিক ১০ মিনিট পরেই ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডের নেওয়া কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন জোয়েল ম্যাটিপ। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে এই মৌসুমেই দলে যোগ দেওয়া জের্দান শাকিরির দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিক গোলবারে লেগে ফিরে এলেও ফিরতি বলে গোল করে প্রথমার্ধেই লিভারপুলকে ৩-০ গোলে এগিয়ে দেন মোহাম্মদ সালাহ। 

গোলের পর উল্লসিত সালাহ; Image Source: Daily Express

দ্বিতীয়ার্ধেও সাউদাম্পটনের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে অলরেডরা। তবে ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় কোনো আক্রমণই আর সাফল্যের মুখ দেখেনি। তাতে অবশ্য ক্ষতি কিছু হয়নি, ৩-০ গোলের সহজ জয়ে এই মৌসুমে নিজেদের শতভাগ সাফল্যের রেকর্ডটা ধরে রাখলো তারা। 

এই মৌসুমে নিজেদের ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারছিলো না লেস্টার সিটি। ফলে ঘরের মাঠ কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে হাডার্সফিল্ডের বিপক্ষে বেশ চাপে থেকেই খেলতে নেমেছিলো তারা। খেলা শুরুর মাত্র পাঁচ মিনিটে জাঙ্কার করা গোলে পিছিয়ে পড়লে লেস্টারের চাপটা আরো বেড়ে যায়। তবে এরপরই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। ১৯ মিনিটে জেমি ভার্ডির পাস থেকে গোল করে খেলায় সমতায় ফেরান কেলেচি ইহানেচো। ৬৬ মিনিটে লেস্টারকে এগিয়ে দেন জেমস ম্যাডিনসন। আর ৭৫ মিনিটে গোল করে লেস্টারের জয় নিশ্চিত করেন অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার জেমি ভার্ডি। 

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত সপ্তাহে দারুণ এক জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে উলভারহ্যাম্পটনের মুখোমুখি হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সেই ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করা পল পগবা এই ম্যাচেও সেই ধারা বজায় রাখেন। ১৮ মিনিটে তার পাস থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ফ্রেড। রেড ডেভিলদের হয়ে এটি ফ্রেডের প্রথম গোল। প্রথমার্ধে কোনো দলই আর গোল পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতো স্বাগতিকরা, কিন্তু পগবার দারুণ এক ফ্রি-কিক অসাধারণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন উলভস গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও। 

উল্টো ৫৩ মিনিটে জোয়াও মৌতিনহোর গোলে খেলায় সমতা ফেরায় উলভারহ্যাম্পটন। এই গোলের সময়ে মৌতিনহোকে যেভাবে আনমার্কড রেখেছিলো রেড ডেভিল ডিফেন্ডাররা, তাতে অবাক না হয়ে উপায় নেই। এই গোলের পর উলভসের উপর বেশ চড়াও হয়ে খেলতে থাকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। শেষপর্যন্ত ঘরের মাঠে হোসে মরিনহোর দলকে হতাশাজনক এক ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়। 

হতাশাজনক ড্রয়ের পর রেড ডেভিল খেলোয়াড়েরা; Image Source: Channel News Asia

একই সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া অন্য ম্যাচগুলোতে বোর্নমাউথকে ৪-০ গোলে বার্নলি ও নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সাথে গোলশূন্য ড্র করেছে ক্রিস্টাল প্যালেস।

শনিবারের শেষ ম্যাচে ব্রাইটনের মুখোমুখি হয় টটেনহ্যাম হটস্পার। আগের দুই ম্যাচেই হারার ফলে এ ম্যাচে বেশ চাপের মধ্যেই ছিল স্পার্সরা। খেলার শুরু থেকেই জয়ের জন্য আক্রমণ করে খেলতে থাকলেও ব্রাইটনের কঠিন প্রতিরোধের কারণে লন্ডনের ক্লাবটি সুবিধা করতে পারছিলো না। ৪২ মিনিটে রেফারির এক ভুল সিদ্ধান্ত টটেনহ্যামের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। সেই সিদ্ধান্ত থেকে পাওয়া পেনাল্টি থেকে গোল দলকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন অধিনায়ক হ্যারি কেইন।

দ্বিতীয়ার্ধে গোল পরিশোধের জন্য কিছুটা আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকে ব্রাইটন। তবে গোলের দেখা তারা পাওয়ার বদলে উল্টো ৭৬ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় এরিক লামেলার গোলে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে দলটি। খেলার ৯৩ মিনিটে অ্যান্থনি নকার্ট একক নৈপুণ্যে অসাধারণ এক গোল করলেও তাতে ব্রাইটনের তেমন লাভ হয়নি। ২-১ গোলের এই জয় দিয়ে আবারো জয়ের পথ খুঁজে পায় টটেনহ্যাম।

রবিবার ইপিএলে ছিল মোট দুটি ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে টানা ষষ্ঠ জয়ের লক্ষ্যে ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে মুখোমুখি হয় চেলসি। তবে বৃহস্পতিবার পিএওকের বিপক্ষে ইউরোপা লিগের ম্যাচে নিয়মিত একাদশের প্রায় সবাইকে খেলানোয় খেলোয়াড়েরা সেই ক্লান্তি দূর করে ঠিক কতটুকু পারফর্ম করতে পারবে সেই ব্যাপারে ভক্তদের মনে কিছুটা শঙ্কা ছিল। আর সেই শঙ্কাই সত্যি হয়। পুরো ম্যাচে চেলসির দাপট থাকলেও খেলোয়াড়দের আগের মতো ঠিক চনমনে লাগছিলো না।

চেলসিকে রুখে দেওয়ার অন্যতম নায়ক ফ্যাবিয়ান্সকি; Image Source: Sportskeeda

সাথে মাঝমাঠে সৃজনশীলতার অভাবও এ ম্যাচে প্রকটভাবে ধরা পড়ে। কোভাচিচ, কান্তে কিংবা জর্জিনহো তিনজনের কেউই আক্রমণাত্মক ফাইনাল পাস দেওয়ার ব্যাপারে ঠিক পটু নন, তারা মাঝমাঠ দখলে রাখতেই দক্ষ। ফলে সেভাবে গোলের সুযোগও তৈরি করতে পারেনি ‘ব্লুজ’। হ্যামার্স গোলরক্ষক ফ্যাবিয়ান্সকিও যেন চীনের প্রাচীর হয়ে গিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত হতাশাজনক এক ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় চেলসিকে। 

এই রাউন্ডের শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠ এমিরেটস স্টেডিয়ামে এভারটনের মুখোমুখি হয় আর্সেনাল। প্রথমার্ধে অবশ্য কোনো দলই গোল করতে পারেনি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর্সেনালের দুই তারকা স্ট্রাইকারই জ্বলে উঠেন। ৫৬ মিনিটে আলেক্সান্দ্রে ল্যাকাজাত্তে ও ৫৯ মিনিটে অবামেয়াংয়ের গোলে ২-০ গোলের জয় পায় আর্সেনাল। নতুন কোচ উনাই এমেরির অধীনে এটা লিগে গানারদের টানা চতুর্থ জয়। 

ষষ্ঠ রাউন্ড শেষে ছয় ম্যাচের সবগুলোতে জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে লিভারপুল। সমান ১৬ পয়েন্ট ম্যানসিটি ও চেলসির, তবে গোল ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে সিটিজেনরা। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ওয়াটফোর্ড। লন্ডনের দুই ক্লাব আর্সেনাল ও স্পার্স দু’দলের পয়েন্টই ১২, তবে গোল ব্যবধানে পঞ্চম স্থানে স্পার্স আর ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে আর্সেনাল। ১০ পয়েন্ট নিয়ে এর পরের স্থানেই রয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর সমান ২ পয়েন্ট নিয়ে একদম তলানিতে রয়েছে তিন দল নিউক্যাসল ইউনাইটেড, কার্ডিফ সিটি ও হাডার্সফিল্ড টাউন। 

Featured Image: Evening Standard 

For references please check the hyperlinks inside the article.

Description: This article is in Bangla language. It's a weekly review of EPL. 

Related Articles