
জন্মসূত্রে একজন কাতালুনিয়ান তিনি। বার্সেলোনার ‘বি’ দল থেকে উঠে এসেছেন, বার্সেলোনা ছাড়া কখনো কিছু কল্পনাও করেননি। বয়স মাত্র ৩০, এরই মধ্যে বার্সেলোনার হয়ে ৫০০ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। ক্যারিয়ারের নতুন মাইলফলক অর্জনের উপলক্ষে স্প্যানিশ পত্রিকা ‘স্পোর্ত’কে একান্ত এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সার্জিও বুস্কেটস। সেখানে নিজেকে ও বার্সেলোনাকে নিয়ে বলেছেন খোলাখুলি।

সেই কোপা কাতালুনিয়া থেকে ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের সময়ে সবকিছুর শুরু হয়েছিলো। আপনার স্মৃতি কী বলে?
আমি তখনও ১৯ বছরের কম বয়সী। ডাক পাওয়াটা আমার জন্য একটা চমক ছিল, তবে দারুণ খুশি ছিলাম। আমি ‘বি’ দলের সাথে অনুশীলন করতাম। একবার বা দুইবার প্রথম দলের সাথে অনুশীলন করেছিলাম। আমার অভিষেক নিয়ে খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম, যদিও ওটা অফিশিয়াল ম্যাচ ছিল না। আর কোপা কাতালুনিয়ায় খুব বেশিক্ষণ খেলতেও পারিনি।
আপনি প্রথম দলে আসার পর থেকে ৮৮.৭ শতাংশ খেলায় শুরুর একাদশে ছিলেন। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে ৫০০ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন…
প্রতিযোগিতার পরের দিকের ম্যাচগুলোতে খেলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। দুই লেগ প্রতিযোগিতা খেলেছি, অনেক ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছি। প্রথম বছরটা আর দ্বিতীয় বছরের অল্প কিছু সময় বাদ দিলে আমি অনেক ম্যাচই খেলার সুযোগ পেয়েছি। ইনজুরি বোধহয় আমাকে একটু সমীহ করে চলে। আশা করি, ওটা (ইনজুরি) আমাকে থামাবে না এবং আমি বার্সাতে আরও অনেক কিছু দিতে পারবো।
আপনার ওপর গার্দিওলার প্রভাব কতটা?
বিশাল প্রভাব। এটা পরিষ্কার যে উনি আমাকে আগে থেকেই (বি’ দলে থাকতে) চিনতেন। উনি জানতেন, আমি খেলোয়াড় হিসেবে কেমন। আমার ওপর ওনার অনেক প্রভাব। উনি আমাকে সুযোগ দিয়েছেন, ওনার আমার ওপর আস্থা ছিল। উনি আমাকে বার্সেলোনার ইতিহাসের সেরা দলটার অংশ করেছিলেন, গ্রেট খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া একটা দলের অংশ করে নিয়েছিলেন। আমি ওনার কাছ থেকে আরও ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠতে শিখেছি।

ফুটবলকে দেখার তার যে দৃষ্টিভঙ্গি ,সেটা কি এখনও আলাদা কিছু?
হ্যাঁ। আমার ক্যারিয়ারে উনি যে অর্থ বহন করেন, সেজন্য তার প্রতি আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা আছে। তিনি যেভাবে খেলাটাকে পড়তে পারেন, ফুটবল বুঝতে পারেন, আপনাকে সূত্রটা দিতে পারেন, নিজের আইডিয়া বোঝাতে পারেন, সেজন্য আমি তার প্রশংসা করি। তিনি অনন্য একজন।
আপনি বলেছিলেন, আপনি পেপকে পেতে বার্সেলোনা ছাড়তেও পারেন…
আমি বলেছিলাম যে, আমি এটা ভাবতে পারি। এটা স্বাভাবিক, কারণ আমার মনে সবসময়ই উনি আছেন। আমার ক্যারিয়ারে তার গুরুত্ব অনেকখানি।
আপনার সাথে বার্সার ২০২৩ অবধি চুক্তি আছে। আপনি কি নিজেকে বার্সা ছাড়া কোথাও কল্পনা করতে পারেন?
আমি নিজেকে কখনো অন্য কোথাও কল্পনা করিনি। আমি গার্দিওলার ব্যাপারে ওটা এজন্য বলিনি যে, আমি বার্সেলোনা ছাড়তে চাই। আমি বলেছি যে, উনি আমার মনে আছেন; কারণ এটাই স্বাভাবিক। এদিকে আমি আর আমার ক্লাব পরস্পরের জন্য তৈরি হয়েছি। আমি বিশ্বের সেরা ক্লাবটাকে নিজের বাড়ি বলে মনে করি, বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সাথে থাকতে পারি। আমি প্রতি বছর শিরোপার জন্য লড়াই করি, বেশ কিছু শিরোপা জিততেও পারি। বাস্তবিক অর্থেই অন্য কোথাও আমি এসব পাবো না।
আপনি কি এই ‘এক ক্লাবের খেলোয়াড়’ হয়ে থাকতে পছন্দ করবেন?
আমি মনে করি, আমি সেটাই হবো। এটা সত্যি যে, আজকের দিনে খেলোয়াড়রা ইউরোপে সেরা অবস্থাটা হারানোর পর তারা কিছু অপরিচিত লিগে খেলার সুযোগ পায়। সেটা ভিন্ন এক ব্যাপার।

মেসি যেহেতু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা নিয়ে কথা বলেছেন, আপনাদের ড্রেসিংরুম কি এটাতে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে?
ও (মেসি) যা বলে, লোকেরা সেটা হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে এবং রোমাঞ্চিত হয়। আমরা কঠিন একটা গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভালো খেলছি। কিন্তু এটা খুব জটিল একটি প্রতিযোগিতা। আমাদের এটা মনে আছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা এই প্রতিযোগিতায় ভালো করিনি। একবার যখন সেরা দলগুলোর বিপক্ষে নকআউট পর্ব শুরু হবে, আপনি একটু ফর্মে না থাকলেই ছিটকে যাবেন। এটা আমাদের সাথে সম্প্রতিই হয়েছে। আমরা এবার এটার জন্য প্রস্তুত আছি, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের এই ব্যাপারটার (প্রস্তুতির) অভাব ছিলো।
পুয়োল অবসর নেওয়ার পর থেকেই আপনি বার্সার পুরোধাদের একজন। এটা আপনার কাছে কী অর্থ বহন করে? এবং পুয়োলের জার্সি নম্বর ধারণ করাটা কতটা গর্বের?
পুয়োল আমার সাথে নিজে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি খুব খুশি হবেন যদি আমি এই নাম্বারটা নিই। বলেছেন, তার চোখে আমার চেয়ে ভালো এটার জন্য কেউ নেই। আমার জন্য এটি অনেক বড় একটি সম্মান, একে ‘না’ বলাটা অসম্ভব ব্যাপার। আর বার্সার একজন অধিনায়ক হওয়াটা আমার জন্য সত্যিই আনন্দের একটি উপলক্ষ ছিলো। আপনাকে একসময় দায়িত্ব তো নিতেই হবে, আর যত ভালোভাবে সম্ভব দলকে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।
আপনাকে একজন অধিনায়ক হিসেবে ডেম্বেলের পরিস্থিতির মতো পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছে…
আমার মনে হয় না ওটা বাইরে থেকে যতটা মনে হয়েছে, অত কঠিন কোনো পরিস্থিতি ছিলো। উসমানে ভালো ছেলে, তরুণ। সে বিদেশ থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো, ওর মানিয়ে নেওয়ার একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। ও খুব ভালো একজন ফুটবলার। আমরা ওকে সবাই সহায়তা করতে চেয়েছি, ও আমাদের অনেক কিছু দিতে পারে।
লা মাসিয়া (বার্সেলোনার অ্যাকাডেমি) সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
শুরু থেকেই ক্লাবের ভাগ্য ভালো ছিল, প্রত্যেক প্রজন্মেই এখানে ভালো ভালো খেলোয়াড় এসেছে। এমনটা সবসময় হবে না। আমাদের এটা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ওখান থেকে অনেক কিছুই খেয়াল রাখতে হবে; খেলোয়াড়দের মান, তারা যেভাবে খেলোয়াড় খুঁজে বের করে অ্যাকাডেমিতে তাদের ভালোভাবে সামলানোর জন্য তৈরি করে, তাদের (অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের) যেভাবে প্রথম দলে আস্থায় রাখা হয়, এসব। সেই সাথে অ্যাকাডেমি থেকে যেন প্রথম দলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়, এবং বার্সা ‘বি’ যেন ভালোভাবে চলে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। তারা (খেলোয়াড়রা) যেন যখন সুযোগ পাবে, তখন প্রস্তুত থাকে। এটা আপনি আশা করতে পারেন না যে, আপনি অ্যাকাডেমি থেকে বেরিয়েছেন মানেই আপনি নতুন জাভি, ইনিয়েস্তা, পুয়োল বা ভালদেস। তাদের সুযোগ পাওয়ার সুবিধাটা কাজে লাগাতে জানতে হবে। আবার সেই ভাগ্যটাও থাকতে হবে, কারণ বার্সেলোনার মূল দলের খেলোয়াড় হওয়াটা কঠিন একটা ব্যাপার।

ওরিওল বুস্কেটস (বার্সেলোনা ‘বি’ দলের খেলোয়াড়; সার্জিও বুস্কেটসের আত্মীয় নন) তো একজন ‘বুস্কেটস’। তার সম্পর্কে আপনার চিন্তা কী?
সে ভালো। ওর কিছু দুর্ভাগ্য আছে, কারণ ইনজুরি ওর উন্নতির পথে বারবার বাঁধা দিয়েছে। তবে সে খুব ভালো সেরে উঠেছে এখন, আর নিজের ছন্দ খুঁজে পেয়েছে। এটা সে আগেও করেছে। আমি নিশ্চিত, সে একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠবে। ওর প্রথম দলে খেলার যোগ্যতা আছে। তবে এটা ধরে রাখা ও লড়াই করাটা সহজ ব্যাপার নয়। কারণ একজন বড় খেলোয়াড় হওয়ার পাশাপাশি পরের ধাপে যে গেলে কী করতে হবে, সেটাও তার জানা থাকা চাই।