Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যে তালিকায় শীর্ষে সাকিব ও আশরাফুল

ক্রিকেটের ইতিহাস যেমন সমৃদ্ধ, এর রেকর্ডের পাতাও বেশ ভারি। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দাঁড় করানো যায় রেকর্ডের একের পর এক তালিকা। তেমনি, এক তালিকায় সবার শীর্ষে আছেন সাকিব আল হাসান এবং মোহাম্মদ আশরাফুল। অবশ্য যদি তাদের কাছে সুযোগ আসতো, তাহলে এক বাক্যেই রায় দিতেন, এই তালিকায় নিজেদের নাম সবার উপরে দেখতে চান না।  

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পরাজিত দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচসেরা পুরস্কার জিতেছেন সাকিব আল হাসান এবং মোহাম্মদ আশরাফুল। তারা দুইজনই দলকে জয়ের বন্দরে না পৌঁছালেও তিনবার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন। এই তালিকায় তাদের সঙ্গী হিসাবে আছেন দুই কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার এবং ওয়াসিম আকরাম। তারাও তিনবার করে পরাজিত দলের হয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন।

পরাজিত দলের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন সাকিব এবং আশরাফুল ; Image Credit: Getty Images

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ২৩৮৭ ম্যাচের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৩ জন ক্রিকেটার পরাজিত দলের হয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন। জয়ী দলের পক্ষে ম্যাচসেরার পুরস্কার জয়ী ক্রিকেটারের সংখ্যা ৩৯৮। 

সাকিব আল হাসান

টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছয়বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন সাকিব আল হাসান, যার মধ্যে তিনবার পরাজিত দলের হয়ে। অন্যদিকে মোহাম্মদ আশরাফুল তিনবারই ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। সবক’টিই পরাজিত দলের সদস্য হিসাবে। 

১.

সাকিব আল হাসান ; Image Credit: RANDY BROOKS

সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন, যার মধ্যে বাংলাদেশ ৩৫ ম্যাচে পরাজিত হয়েছে। এই ৩৫ ম্যাচের মধ্যে তিনি তিনবার ম্যাচসেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। তিনটি ম্যাচই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

২০০৮ সালের ২৬শে ডিসেম্বর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ১০৭ রানে পরাজিত হলেও ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন সাকিব আল হাসান। বল হাতে প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেটসহ মোট ছয় উইকেট এবং ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে সাত নাম্বারে ব্যাট করে ৯৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। চতুর্থ ইনিংসে মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং হেরাথের মতো স্পিনারদের বিপক্ষে লড়াকু এই ইনিংস খেলার সুবাদে তিনি ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। 

২.

Image Credit: Robert Cianflone

২০শে মার্চ, ২০১০ সাল। ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ।

টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ৪১৯ রান সংগ্রহ করেছিল, যার মধ্যে অধিনায়ক সাকিবের অবদান ৪৯ রান। জবাবে ইংল্যান্ড ৪৯৬ রান সংগ্রহ করে; সাকিব নেন চার উইকেট। ৭৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৬৯ রানে ছয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে ২৮৫ রান সংগ্রহ করতে সাহায্য করেন সাকিব। মজার ব্যাপার, এই ম্যাচেও তিনি ৯৬ রান করে তড়িঘড়ি করে খেলতে গিয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে সাজঘরে ফেরেন। জবাবে বাংলাদেশের দেওয়া ২০৯ রানের লক্ষ্য নয় উইকেট হাতে রেখে সহজেই টপকে যায় ইংল্যান্ড।  ব্যাট হাতে মোট ১৪৫ রান এবং চার উইকেট শিকারের দরুন ম্যাচসেরা পুরস্কার উঠে সাকিবের হাতে।

৩.

Image Credit: MARTY MELVILLE

১৭ই ডিসেম্বর, ২০১১ সাল। ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া বাংলাদেশ শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। মাত্র ৪৩ রান তুলতেই চার উইকেট হারিয়ে বসে। এরপর শাহরিয়ার নাফীসের ৯৭ রান এবং সাকিবের ১৪৪ রানের উপর ভর করে ৩৩৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। সাকিব ১৪৪ রান করে রানআউটের শিকার হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের ৩৩৮ রানের জবাবে পাকিস্তান ৪৭০ রান করে। ব্যাট হাতে ১৪৪ রান করার পর বল হাতে ছয় উইকেট শিকার করেন সাকিব। বাংলাদেশ ম্যাচের শেষ দিনে নয় উইকেটে পরাজিত হলেও ম্যাচে মোট ১৫০ রান এবং সাত উইকেট শিকার করার ফলে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান।

মোহাম্মদ আশরাফুল

১.

৬ই সেপ্টেম্বর, ২০০১ সাল। বাংলাদেশের হয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক জয়াসুরিয়া টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৯০ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেছিলেন অভিষিক্ত আশরাফুল। বাংলাদেশকে শত রানের নিচে বেঁধে রেখে ব্যাট করতে নেমে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন জয়াসুরিয়া, জয়াবর্ধনে এবং আতাপাত্তুরা – যার ফলে মাত্র ১০৩.৩ ওভারে পাঁচ উইকেটে ৫৫৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা।

Image Credit: SENA VIDANAGAMA / AFP

নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ব্যতিক্রম ছিলেন আশরাফুল, আমিনুল এবং নাইমুর। নাইমুর এবং আমিনুলের সাথে জুটি বেধে অভিষেক ম্যাচেই ১১৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন আশরাফুল। তার শতকের উপর ভর করে বাংলাদেশ ৩২৮ রান সংগ্রহ করলেও ইনিংস ও ১৩৭ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ। সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসাবে শতক হাঁকানোর সুবাদে মুরালিধরনের সাথে যৌথভাবে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

২.

১৭ই ডিসেম্বর, ২০০৪ সাল। চট্টগ্রামের এম. এ. আজিজ স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে পরাজিত হয়ে দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ।

পূর্ণশক্তির ভারত টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রাহুল দ্রাবিড়ের ১৬০ রান এবং গৌতম গম্ভীরের ১৩৯ রানের উপর ভর করে ৫৪০ রান সংগ্রহ করেছিল ভারত। জবাবে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৩৩৩ রানে অলআউট হয়ে ফলো-অনে পড়ে।

মোহাম্মদ আশরাফুলের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে একসময় মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ ফলো-অন এড়িয়ে ফেলবে। কিন্তু শেষ ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন রানআউট হলে তা আর হয়ে ওঠেনি। আশরাফুল একপ্রান্ত আগলে রেখে শেষ পর্যন্ত ১৫৮ রানে অপরাজিত ছিলেন, যা ঐ সময়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল।

আশরাফুলের ১৯৪ বলে ২৪টি চার এবং তিনটি ছয়ের মারে সাজানো অপরাজিত ১৫৮ রানের ইনিংসটির প্রশংসা করেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীও। তিনি বলেছিলেন, সিরিজের সেরা ইনিংস খেলেছেন আশরাফুলই। তার অনবদ্য শতকের পরও বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১২৪ রানেই সবক’টি উইকেট হারায়। এতে করে ইনিংস ও ৮৩ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। আশরাফুল তার দৃষ্টিনন্দন ইনিংসের পুরস্কারস্বরূপ ম্যাচসেরার অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন।

৩.

Image Credit: AFP / Getty Images

টেস্ট ক্রিকেটে মোহাম্মদ আশরাফুলের প্রিয় প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। টেস্টে তার ছয়টি শতকের মধ্যে পাঁচটিই এসেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অভিষেক টেস্টে শতক হাঁকিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরবর্তী শতক হাঁকিয়েছিলেন ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সালে।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৩১৯ রান সংগ্রহ করেছিল। দলের পক্ষে সাতজন ব্যাটসম্যান দুই অংকের রান করলেও মাত্র একজন ৩৫ রানের উপর করতে পেরেছেন। তিনি হলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তিনি এদিন ১৮৪ বলে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

আশরাফুলের শতকের উপর ভর করে বাংলাদেশ ৩১৯ রান সংগ্রহ করার পর শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রান করেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৯ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে ১৮১ রানে সবক’টি উইকেট হারালে শ্রীলঙ্কার সামনে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ১৬৩ রানের, যা আট উইকেট হাতে রেখেই টপকে যায় সফরকারীরা। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে পরাজিত হলেও ম্যাচের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসাবে শতক হাঁকিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন আশরাফুল।

This article is in Bangla language. It is about the shakib al hasan and mohammod ashraful's man of the match records in test cricket. They both won the most man of the match award for losing side in test. For references, please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: Graham Crouch/Getty Images

Related Articles