Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নাগেলসম্যানের অধীনে বায়ার্ন মিউনিখের ট্যাকটিক্যাল ব্যবচ্ছেদ

বর্তমান সময়ে ফুটবলের সেরা কোচদের তালিকায় কার কার নাম থাকবে? পেপ গার্দিওলা, ইয়ুর্গেন ক্লপ,  টমাস টুখেল, কার্লো আনচেলোত্তি… আরো বেশ কয়েকজন কোচের নামই থাকার কথা৷ কিন্তু এই তালিকায় যদি জুলিয়ান নাগেলসম্যানের নাম যোগ করা হয়, সেক্ষেত্রে অনেকের ভ্রু কুঁচকানোটাই স্বাভাবিক বৈকি। কারণ, উপরে উল্লেখিত কোচদের নামেভারে কোনোদিক থেকেই কমতি নেই, তাদের তুলনায় নাগেলসম্যানের অর্জনের খাতায় এখনো বলার মতো কিছুই জোটেনি। কিন্তু আজ থেকে কয়েক বছর পর এই তালিকায় নাগেলসম্যানের নামটাও যুক্ত হবে, সেটা অনেকটা বাজি ধরেই বলা যায়।

বুন্দেসলিগার অন্যান্য দলগুলো থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় কিনে এনে নিজেদের দলকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বায়ার্ন মিউনিখের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। তবে এবার কোনো ফুটবলার নয়, লিগ প্রতিপক্ষ আরবি লাইপজিগ থেকে বুন্দেসলিগার সবচেয়ে প্রতিভাবান কোচ নাগেলসম্যানকে তারা কিনে এনেছে ২৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। বলাই বাহুল্য, এটা ছিল কোচদের ক্ষেত্রে রেকর্ড সাইনিং, এর আগে এত পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কোনো কোচকে কেউ দলে ভেড়ায়নি।

image credit: Getty Images 

আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় নাগেলসম্যান নয়, বরং আজ আমরা আলোচনা করবো নাগেলসম্যানের অধীনে বায়ার্ন মিউনিখের ট্যাকটিক্স এবং খেলার ধরন নিয়ে।

ফর্মেশন

নাগেলসম্যান তার পূর্বসূরি হ্যান্সি ফ্লিকের মতোই বায়ার্নকে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলাচ্ছেন। ফ্লিকের বায়ার্নের সাথে নাগেলসম্যানের বায়ার্নের খেলার ধরনে খুব একটা পার্থক্য নেই, তবে তার একাদশ নির্বাচনে পরিবর্তন হয়েছে বেশ কয়েকটি। 

image credit: The Mastermindsite

রক্ষণভাগে ডেভিড আলাবার শূন্যস্থান পূরণে তিনি দলে ভিড়িয়েছেন লাইপজিগ ডিফেন্ডার উপামেকানোকে। কিংসলে ক্যোমান ছিলেন ফ্লিকের দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, কিন্তু নাগেলসম্যানের অধীনে তিনি সুযোগ পাচ্ছেন কালেভদ্রেই। অন্যদিকে, নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা সানে এবার নাগেলসম্যানের অধীনে ফর্মে ফিরেছেন বেশ ভালোভাবেই, আক্রমণ গড়ে তোলার কাজে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন প্রতিনিয়ত। এর বাইরে বায়ার্ন মিউনিখের নিয়মিত একাদশে আর কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

বিল্ডআপ

নাগেলসম্যান তার সেন্টারব্যাকদের বল পায়ে দক্ষতার উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেন। এজন্য বিল্ডআপের শুরুতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে দুই সেন্টারব্যাকের। সেন্টারব্যাক পজিশনে খেলা সুলে, উপামেকানো এবং লুকাস হার্নান্দেজের সবাই বল পায়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী। এজন্য বিল্ডআপের শুরুতে প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা বায়ার্নের দুই সেন্টারব্যাককে প্রেস করলেও সাধারণত খুব বেশি সুবিধা করতে পারে না। 

বিল্ডআপের সময় বায়ার্নের রাইটব্যাক পাভার্ড উপরে না উঠে দুই সেন্টারব্যাকের সাথে মিলে থ্রি-ম্যান ব্যাকলাইন তৈরি করে। এসময় মিডফিল্ডার কিমিখ মিডফিল্ড থেকে অনেকটাই নিচে নেমে এসে তিন সেন্টারব্যাকের সাথে ডায়মন্ড আকৃতি তৈরি করেন। এতে করে প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের সামনে একাধিক পাসিং অপশন তৈরি হয়, ফলে প্রতিপক্ষের পক্ষে বায়ার্নের বিল্ডআপকে নষ্ট করে বল কেড়ে নেওয়াটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বিল্ডআপের সময় অপর ফুলব্যাক ডেভিস তার লাইন থেকে অনেকটা উপরে উঠে যায়, এতে করে তার জন্য আক্রমণে অংশ নেওয়াটা আরো সহজ হয়ে পড়ে। ফলে লেফট উইঙ্গার সানে আরো মাঝের দিকে সরে আসার সুযোগ পান। অপর উইঙ্গার ন্যাব্রি তখন ডানপাশের টাচলাইন এরিয়ায় অবস্থান করেন। অর্থাৎ ডেভিস এবং ন্যাব্রি দুইপাশের টাচলাইন এরিয়ায় অবস্থান করে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সলাইনকে প্রসারিত হতে বাধ্য করেন।

বিল্ডআপের সময় বায়ার্ন মিউনিখের খেলোয়াড়দের পজিশন; image credit: Author

 

দুই মিডফিল্ডার মুলার এবং গোরেৎজকা মিডফিল্ডে ফাঁকা জায়গা খুঁজে বের করে সেখানে অবস্থান করেন। সাধারণত মুলার তার পজিশন থেকে কিছুটা ডানপাশে সরে গিয়ে রাইট হাফস্পেসে অবস্থান করেন এবং গোরেৎজকা প্রতিপক্ষ অর্ধের মাঝখানে অবস্থান করে সানের সাথে কুইক ওয়ান-টু পাসের মাধ্যমে সানেকে বক্সে ঢুকে গোল করার সুযোগ করে দেন। 

বিল্ডআপের শুরুতে পাভার্ড বেশিরভাগ সময় দুই সেন্টারব্যাকের সাথে অবস্থান করলেও প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডরা প্রেসিংয়ে অংশ না নিলে তখন তিনি তার লাইন ছেড়ে মিডফিল্ডে উঠে এসে কিমিখের সাথে ডাবল পিভট গঠন করেন। এতে করে কিমিখের পক্ষে আরো সহজ এবং দ্রুততার সাথে বল এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। আবার প্রতিপক্ষের মিড ব্লক প্রেসিংয়ের কারণে মাঠের মাঝের অংশ দিয়ে বল এগিয়ে না নেওয়া সম্ভব হলে সাধারণত দুই ধরনের অবস্থান দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুই সেন্টারব্যাক অথবা কিমিখ ওয়াইড এরিয়ায় ডেভিস বা ন্যাব্রিকে লক্ষ্য করে লং বল খেলে প্রতিপক্ষের মিডফিল্ড লাইন অতিক্রম করেন। অথবা গোরেৎজকা তার অবস্থান থেকে আরো নিচে নেমে কিমিখের সাথে পাস খেলে বল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

বায়ার্ন মিউনিখ এই সিজনে এখন পর্যন্ত ৭০টি গোল করেছে, ম্যাচপ্রতি ৩.১৮টি। এতে করেই আক্রমণে তাদের ক্ষিপ্রতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু এরপরও তারা বেশ ধীরগতিতে বিল্ডআপে অংশগ্রহণ করে। সাধারণত প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডলাইনকে অতিক্রম করে বল এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা কিমিখকেই করতে দেখা যায়। তবে কিমিখকে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা ম্যান মার্ক করলে দুইপাশের সেন্টারব্যাক (এক্ষেত্রে পাভার্ড এবং উপামেকানো বা হার্নান্দেজ) আরো ছড়িয়ে পড়ে মিডফিল্ডে গোরেৎজকা কিংবা মুলার বরাবর পাস দেয়। সেটাও সম্ভব না হলে মাঠের যেকোনো একপাশ ওভারক্রাউডেড করে অন্যপাশে বল সুইচ করার চেষ্টা করে। এভাবেই সাধারণত বায়ার্ন মিউনিখের বিল্ডআপ প্রক্রিয়া চলতে থাকে।

কিমিখকে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় মার্ক করে রাখায় সেন্টারব্যাকরা বল এগিয়ে নিতে সাহায্য করছেন; image credit: The Mastermindsite

আক্রমণ 

বায়ার্ন মিউনিখের আক্রমণ গড়ে তোলার মূল ভিত্তিই হচ্ছে ‘ইন বিটুইন দ্য লাইন’-এর ফাঁকা জায়গার সঠিক ব্যবহার। বিল্ডআপের সময় কিমিখ প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডার এবং ফরোয়ার্ডদের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় অবস্থান করে বল ডিস্ট্রিবিউটরের ভূমিকা পালন করেন। আবার মুলার, সানে এবং প্রায়শই গোরেৎজকা প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার এবং মিডফিল্ডারদের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় অবস্থান করে আক্রমণে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ‘ইন বিটুইন দ্য লাইনে’ অবস্থান করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের থেকে বেশ কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়। ফলে বল পায়ে আসার সাথে সাথেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা বল কেড়ে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারে না, এজন্য মুলার-সানেরা সহজেই বল পায়ে রেখে সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান করা সতীর্থকে খুঁজে বের করতে পারেন এবং পাস দিয়ে আক্রমণের গতিশীলতা বজায় রাখতে পারেন। 

ফাইনাল থার্ডে আক্রমণের সময় দুইপাশের টাচলাইন এরিয়ায় ডেভিস এবং ন্যাব্রি অবস্থান করে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগকে প্রসারিত করার চেষ্টা করেন। আবার দুই হাফস্পেসে সানে এবং মুলার নিজেদের পজিশন নেন এবং এসময় গোরেৎজকা আরো উপরে উঠে আসেন। ফলে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা অনেকটা উভয়সংকটের মধ্যে পড়ে। তারা যদি দুই ওয়াইড উইঙ্গারকে (ন্যাব্রি এবং ডেভিস) মার্ক করার জন্য ছড়িয়ে পড়ে তবে গোরেৎজকা-মুলার-সানে-লেভানডফস্কি নিজেদের মধ্যে ডায়মন্ড আকৃতি গঠন করার সুযোগ পেয়ে যান। এতে করে তারা নিজেদের মধ্যে ক্রমাগত পাস খেলে প্রতিপক্ষের বক্সে গিয়ে শট করার সুযোগ পান। এসময় সাধারণত লেভানডফস্কি প্রতিপক্ষের সেন্টারব্যাকদের পেছনের ফাঁকা জায়গা লক্ষ্য করে রান নেন, মুলার বা সানে তাকে লক্ষ্য করে থ্রু বল বাড়ান, এবং লেভানডফস্কি সেখান থেকে গোল করার চেষ্টা করেন।

গোরেৎজকা-মুলার-সানে-লেভানডফস্কি মিলে ডায়মন্ড গঠন করেছেন; image credit: Author

আবার, যদি প্রতিপক্ষের খেলোয়াররা মিডফিল্ডে ওভারলোড তৈরি করে মুলার, সানে এবং গোরেৎজকার মধ্যকার পাসিং অপশনগুলো বন্ধ করে দেয় ওয়াইড এরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার বদলে, সেক্ষেত্রে দুই উইঙ্গার ন্যাব্রি এবং ডেভিস একেবারেই ম্যানমার্কিং ফ্রি হয়ে যাবে। এতে করে তারা প্রতিপক্ষের ফুলব্যাকের সাথে ‘ওয়ান-অন-ওয়ান’ অবস্থানে ড্রিবল করে ভেতরে ঢুকে পড়ার সুযোগ পান এবং লেভানডফস্কিকে লক্ষ্য করে ক্রস করে অথবা নিজেরাই শট নিয়ে গোল করার সুযোগ তৈরি করেন। বায়ার্ন মিউনিখের নিয়মিত একাদশের খেলোয়াড়দের মধ্যে ডেভিস এবং ন্যাব্রির প্রতি ম্যাচেই ‘সাক্সেসফুল ড্রিবলিং অ্যাটেম্পট’ এর সংখ্যা যথেষ্টই বেশি। তাই তাদের ম্যান মার্কিং ফ্রি রেখে ড্রিবল করার সুযোগ করে দিলে গোল হজম করার সম্ভাবনাই প্রবল! 

প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা ওয়াইড এরিয়ায় ন্যাব্রি এবং ডেভিসকে মার্ক না করায় তাদের সামনে ড্রিবল করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরী হয়ে যাচ্ছে; image credit: Author

তবে, বায়ার্ন মিউনিখের আক্রমণে মূল প্লেমেকারের ভূমিকা পালন করেন মুলার এবং সানেই। সানের গোলের সুযোগ তৈরির একটা বড় অংশ আসে তার ড্রিবল অ্যাটেম্পটগুলো থেকে। এদিক থেকে অবশ্য মুলার অনন্য। মুলারকে সাধারণত কালেভদ্রেই ড্রিবলিংয়ের চেষ্টা করতে দেখা যায়। প্লেমেকার হিসেবে মুলারের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে তার ‘পজিশনিং’। মুলার সাধারণত এমন জায়গায় অবস্থান নেন, যাতে করে প্রতিপক্ষের নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়ের পক্ষে তাকে মার্ক করাটা একপ্রকার অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়৷ এরপরও যদি কেউ তাকে আটঁসাটঁভাবে ম্যান মার্ক করে, তবে মুলার তার জায়গা থেকে ‘আউট অব পজিশনে’ সরে গিয়ে সতীর্থের জন্য প্রচুর ফাঁকা জায়গা তৈরি করে দেন। মুলারের এই ধরণের পজিশনিংকে বলা হয় ‘রমডয়টার’। 

এই মৌসুমে বুন্দেসলিগায় প্রতি ম্যাচে মুলারের ৪.৭২টি পাস থেকে গোলের দিকে শট নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ, যা তার যেকোনো সতীর্থের চেয়েই অনেক বেশি। মুলারের ফাইনাল পাসের বেশিরভাগই লেভানডফস্কিকে উদ্দেশ্য করে, এজন্য দু’জনের মধ্যকার কম্বিনেশনও চোখে পড়ার মতো। লেভানডফস্কিও রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে, এই মৌসুমে ইতোমধ্যেই করে ফেলেছেন ৩৯ গোল!

এই মৌসুমটাও দুর্দান্ত কাটছে লেভানডফস্কির; image credit: Getty Images

প্রেসিং

হ্যান্সি ফ্লিকের অধীনে বায়ার্নকে ম্যান-টু-ম্যান প্রেসিং করতে দেখা যেত। এক্ষেত্রে ফ্লিক প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বলের দখল পুনরুদ্ধার করার জন্য ‘ওয়ান-অন-ওয়ান’ লড়াইয়ে তার খেলোয়াড়দের শক্তিমত্তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতেন। নাগেলসম্যানের অধীনেও বায়ার্নের প্রেসিং করার ধরন অনেকটা এরকমই। ব্যতিক্রম হচ্ছে, ফ্লিক বল কেড়ে নেওয়ার জন্য খেলোয়াড়দের পজিশনের পরোয়া করতেন না; যে কারণে বায়ার্নের প্রেসিং জোনকে অতিক্রম করতে পারলেই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা অনেকটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে যেত। এজন্য নাগেলসম্যান সবার আগে জোর দেন খেলোয়াড়দের পজিশনের উপর। বল কেড়ে নেওয়ার জন্য খেলোয়াড়রা ফর্মেশনের গঠন ঠিক রেখে প্রতিপক্ষকে প্রেস করে, যাতে প্রেসিংয়ে ব্যর্থ হলেও তাদের রক্ষণভাগ একেবারে উন্মুক্ত হয়ে না পড়ে।

বায়ার্ন মিউনিখ এই মৌসুমে লিগে ৬২.৮ শতাংশ সময় বলের দখল নিজেদের কাছে রেখেছে। তাই ‘আউট অব পজিশনে’ তাদের খুব একটা সময় কাটাতে হয়নি। বায়ার্নের ডিফেন্ডার এবং মিডফিল্ডাররা বল পায়ে বেশ দক্ষ হওয়ায় বিল্ডআপে তাদেরকে তেমনভাবে বলের দখল হারাতে দেখা যায় না। বায়ার্ন মূলত বলের দখল হারায় প্রতিপক্ষ বক্সের আশেপাশে এরিয়ায় গোলের সুযোগ তৈরির উদ্দেশ্যে থ্রু পাস কিংবা ক্রস করার সময়। প্রতিপক্ষ অর্ধে বলের দখল হারানোর পরপরই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের প্রেস করে পুনরায় বলের দখল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। ফাইনাল থার্ডে প্রেস করে প্রতিপক্ষের থেকে বলের দখল কেড়ে নেওয়ার কৌশলে ইউরোপীয় ফুটবলে বায়ার্নই সেরা দল বর্তমান সময়ে।

image credit: Author

উপরের চার্টটির দিকে যদি লক্ষ্য করি, ফাইনাল থার্ডে প্রেসিং এবং ট্যাকল করার দিক থেকে বায়ার্ন মিউনিখ ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। এতে করেই বোঝা যায়, ফাইনাল থার্ডে প্রতিপক্ষের থেকে বলের দখল পুনরুদ্ধার করে আক্রমণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নাগেলসম্যানের শিষ্যরা কতটুকু কার্যকরী।

এবার ফাইনাল থার্ডে বায়ার্নের প্রেসিংয়ের ধরন ব্যাখ্যা করা যাক। গোলকিপার থেকে বিল্ডআপের শুরুতে লেভানডফস্কি দুই সেন্টারব্যাককে মার্ক করার পরিবর্তে তাদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করেন। অপর ফরোয়ার্ডরাও তখন প্রতিপক্ষের ফুলব্যাকদের সরাসরি মার্ক করার পরিবর্তে তাদের থেকে বেশ খানিকটা দূরে পজিশন নেয়। গোলকিপার যখনই কোনো সেন্টারব্যাককে পাস দেয় সাথে সাথে লেভানডফস্কি সেই সেন্টারব্যাকের সাথে অপর সেন্টারব্যাকের পাসিং অপশন বন্ধ করে দেয়। অপর ফরোয়ার্ডরা সরাসরি প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের মার্ক করার পরিবর্তে মিডফিল্ডারদের থেকে ডিফেন্ডারদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ফলে বল বাহকের কাছে তখন শুধুমাত্র তার পাশের ফুলব্যাককে পাস দেওয়ার সুযোগ থাকে। ফুলব্যাককে পাস দেওয়ার সাথে সাথে বাকি ফরোয়ার্ডরাও সরাসরি প্রেসিংয়ে অংশ নিতে উপরে উঠে আসে, মিডফিল্ডাররা তখন প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডারদের সরাসরি ম্যান মার্ক করতে শুরু করে। এতে করে বল বাহকের কাছে ‘প্যানিকড’ লং পাস দেওয়া ছাড়া আর কোনো সুযোগ থাকে না। 

image credit: Author/Breaking The Lines

ব্যাপারটা আরো সহজভাবে বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক। উপরের ছবিতে বার্সেলোনার বিল্ডআপ শুরু করার সময় বায়ার্নের খেলোয়াড়রা প্রেসিং করতে শুরু করেনি। টের স্টেগান গার্সিয়াকে পাস দেওয়ার সাথে সাথেই লেভানডফস্কি গার্সিয়ার সাথে অপর পাশের পাসিং অপশন বন্ধ করে দেন। তখন গার্সিয়ার পাশের ফুলব্যাক জর্দি আলবা ফ্রি, কারণ বায়ার্নের রাইটব্যাক পাভার্ড তখনো আলবার চেয়ে অনেকটা দূরত্বে। সবচেয়ে সহজ পাসের অপশন হওয়ায় গার্সিয়া আলবা বরাবরই পাস দেন, এবং সেটিই ছিল সবচেয়ে বড় ভুল! আলবা বল রিসিভ করার সাথে সাথেই পাভার্ড উপরে উঠে এসে আলবাকে সরাসরি প্রেস করতে শুরু করেন। ন্যাব্রি তখন গার্সিয়াকে ছেড়ে আলবার কাছাকাছি গিয়ে আলবার সাথে অপর ডিফেন্ডারদের পাসিং অপশন বন্ধ করে দেন। অপর ফরোয়ার্ডরা বার্সেলোনার বাকি ডিফেন্ডারদের মার্ক করে রাখে। ফলে আলবার কাছে উদ্দেশ্যহীন লং পাস দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। অতঃপর, বায়ার্ন পুনরায় বলের দখল নিজেদের করে নেয়।

নাগেলসম্যানের অধীনে মৌসুমের শুরুটা কিছুটা ছন্নছাড়া হলেও যত দিন গেছে, বায়ার্ন ততই তাদের স্বরূপে ফিরেছে। বুন্দেসলিগায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সাথে তাদের ব্যবধান ৯ পয়েন্টের। জুলিয়ান নাগেলসম্যানের শিষ্যরা নিশ্চিতভাবেই আরেকটি বুন্দেসলিগা শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপপর্বের সবকয়টি ম্যাচ জিতেই তারা পরের রাউন্ডে পা রেখেছে, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রিয়ান ক্লাব রেড বুল সাল্জ‌বার্গ। প্রথম লেগে ১-১ ড্র অবস্থায় আগামীকাল আবারও খেলতে নামবে তারা দ্বিতীয় লেগে, নিঃসন্দেহে জয়টাকেই তারা করছে পাখির চোখ। বায়ার্ন মিউনিখ নিজেদের ইতিহাসে সপ্তমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়ান্স লিগের শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলতে পারবে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। 

Related Articles