Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সহ-খেলোয়াড় হয়েও যারা ছিলেন একে অপরের শত্রু

ফুটবলে একই দলে খেলা খেলোয়াড়েরা পরস্পর সহযোদ্ধা হবেন এটাই তো স্বাভাবিক। সহ-খেলোয়াড় বলতেই মাথায় ভাসে তরুণ মেসিকে রোনালদিনহোর গোল বানিয়ে দেয়া, কাঁধে নিয়ে বুনো উল্লাস বা গোলখরায় ভুগতে থাকা নেইমারকে মেসির পেনাল্টি নিতে দেয়া। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই এমন সুসম্পর্ক থাকে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা পরিণত হয় চিরস্থায়ী বৈরিতায়, একইসাথে খেলেও তারা যেন শত্রু। আজকের লেখায় এমনই কিছু বৈরীভাবাপন্ন সহ-খেলোয়াড়ের কথা তুলে আনা হলো।

রবার্ট লেভানডস্কি ও কুবা ব্লাসজিকস্কি

কুবা ও লেওয়ান্ডস্কি একসাথে পোল্যান্ডের হয়ে; Source: Jastrząb Post

লেওয়ান্ডস্কি ও কুবা দুজনই পোলিশ এবং একই ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সতীর্থ। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক কখনোই ছিল না। অনেকের মতেই তাদের প্রাথমিক ঝামেলাটা ছিল ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে। এরপর এই চোরাস্রোত প্রকাশ্যে আসে যখন ইনজুরির কারণে কুবা দল থেকে বাদ পড়েন। কুবা ছিলেন সেই সময়ের পোলিশ অধিনায়ক। তার স্থলে দায়িত্ব পান লেভানডস্কি। এরপর তাকেই স্থায়ীভাবে অধিনায়ক করে দেয়া হয়, যেটা কুবা মানতে পারেননি। ঝামেলা এড়াতে তাকে দল থেকে বাদই দেয়া হয়। এরপর একসাথে খেললেও তাদের সম্পর্ক আর কখনোই উষ্ণ হয়নি।

ববি চার্লটন ও জ্যাক চার্লটন

ছবির মতো সম্পর্কটা এমন হৃদ্যতার ছিল না; Source: Jastrząb Post

ববি ও জ্যাক ছিলেন সহোদর ভাই। ববি চার্লটন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। ববি ও জ্যাক চার্লটন একসাথে জাতীয় দলে খেলে গিয়েছেন নিয়মিত, কিন্তু তাদের মধ্যে ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক তো দূরে থাক, সাধারণ বন্ধুসুলভ সৌজন্যও ছিল না। ছোটবেলা থেকেই তারা একে অপরের সাথে বৈরিতাপূর্ণ মনোভাব ধারণ করতেন, যেটা বড় হওয়ার পরও কমেনি, উল্টো বেড়েছে। দুই ভাই একসাথে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ জিতলেও তাদের মধ্যে কোনো কথাবার্তাও ছিল না। ববির স্ত্রীর সাথে ববির মায়ের সমস্যা ছিল, যেটা নিয়ে জ্যাক প্রকাশ্যে ববিকে কথা শুনিয়েছেন, যেটা প্রকারান্তরে দুই ভাইয়ের সম্পর্কের শেষ সুতোটিও ছিন্ন করে দেয়। ববি নিজের মুখেই একবার বলেছিলেন, “আমি জ্যাকের সম্পর্কে এতকিছু জানতে চাই না। ওর অস্তিত্ব আমার কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু না!

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ও ভ্যান ডার ভার্ট

আয়াক্সের হয়ে ভ্যান ডার ভার্ট ও ইব্রাহিমোভিচ; Source: goal.com

ইব্রাকে নতুন করে চেনানোর কিছু নেই, নিঃসন্দেহে ও সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন স্ট্রাইকার তিনি। ভ্যান ডার ভার্টও খুব একটা গড়পড়তা মিডফিল্ডার নন। দুজনই আয়াক্সে বেড়ে উঠছিলেন। সম্পর্ক স্বাভাবিকই ছিল একটি ঘটনার আগ অবধি। ইব্রা খেলছিলেন সুইডেনের হয়ে আর ভ্যান ডার ভার্ট হল্যান্ডের হয়ে। ম্যাচের একপর্যায়ে বল কেড়ে নেয়ার সময় ভার্ট ফাউলের শিকার হন দুজনের দ্বারা, যার মধ্যে একজন ছিলেন ইব্রা। ভ্যান ডার ভার্ট ভেবেছিলেন, ইব্রাহিমোভিচ ইচ্ছা করে তাকে ইনজুরিতে ফেলতে চেয়েছিলেন এবং সংবাদ সন্মেলনে বলেও দিলেন এটা। ইব্রাও কি সহজে ছেড়ে দেয়ার লোক? তিনি উল্টো বলে বসলেন, “আমি তো দুটো পা-ই ভেঙে দিতে চাইছিলাম, কীভাবে যে একটা বেঁচে গেল!” এরপর থেকে ক্লাবে তাদের বাকি দিনগুলো আর আগের মতো কাটেনি ২০০৪ সাল অবধি।

লোথার ম্যাথাউস ও স্টেফান এফেনবার্গ

বায়ার্ন মিউনিখের জার্সিতে ম্যাথাউস ও এফেনবার্গ; Source: All soccer planet

এই দুজন ছিলেন একাধারে জার্মান জাতীয় দল ও বায়ার্ন মিউনিখের সতীর্থ, কিন্তু একজন আরেকজনকে মোটেও পছন্দ করতেন না। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে ম্যাথাউস পেনাল্টি নিতে চাননি বলে এফেনবার্গ তাকে ‘ভীরু’, ‘পলায়নকারী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। আবার ম্যাথাউস ২০০১ সালে এক ম্যাচ হারের পর গণমাধ্যমে সরাসরি বলেছেন, এফেনবার্গকে যেন বায়ার্ন ছেড়ে দেয়। ম্যাথাউসের কাছে তার খেলা ছিল ‘দুর্বল’ ধাঁচের, যা নাকি দলের জন্য কেবলই ক্ষতিকর! এফেনবার্গের ক্যারিয়ারের শেষদিকে তার আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়, যেটা ঝড় তুলেছিল একটি অধ্যায়ের কারণে। অধ্যায়টি ছিল ম্যাথাউসের নামে উৎসর্গ করা। বেশ তো, সমস্যাটা কী ছিল জানেন? অধ্যায়ের নাম ছিল ‘ম্যাথাউসের ফুটবল জ্ঞান’। পুরো অধ্যায়টা ছিল সাদা পাতা! এতটা দূর ছিল তাদের রেষারেষি। তবে তাদেরকে কৃতিত্ব দিতেই হবে, কারণ এত সমস্যা রেখেও তারা একসাথে খেলে গেছেন, যদিও কারোরই ক্রিসমাস কার্ড পাঠানোর তালিকায় অপরের নাম ছিল না নিশ্চয়ই!

এমলিন হিউজ ও টমি স্মিথ

লিভারপুলের অনেক সাফল্যের সঙ্গী ছিলেন হিউজ ও স্মিথ; Source: The Scotsman

হিউজ ও স্মিথ সত্তরের দশকে লিভারপুলের বহু সাফল্যের উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের নিজেদের মধ্যে কোনো সদ্ভাব ছিল না। স্মিথ ছিলেন লিভারপুলের ঘরের ছেলে। তাকে ডাকা হতো ‘আয়রন ম্যান’ বলে। লিভারপুলের অধিনায়কও ছিলেন তিনিই, কিন্তু বব পাইসির সাথে তার সম্পর্কের অবনতির কারণে তার কাছ থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয়া হয়। অধিনায়কত্ব পান হিউজ, যেটা স্মিথ মেনে নিতে পারেননি। ট্রেনিংয়ে তাদের মুখ দেখাদেখি হতো না, উল্টো প্রায়ই বচসা হতো। হিউজের অধীনে লিভারপুলের দারুণ সাফল্য এলেও স্মিথ কখনোই তাকে সহ্য করতে পারেন নি। ক্যারিয়ার শেষে বলেছিলেন, “আমার জীবনটাই ছিল ফুটবল, বিশেষত লিভারপুল। আমিও ছিলাম লিভারপুলের নেতা, কিন্তু ওই দু’মুখো লোকটার হাতে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড আমি মেনে নিতে পারি না।” কিন্তু এক্ষেত্রেও তারা তাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে মাঠের খেলায় টেনে আনেন নি।

জেন্স লেম্যান ও অলিভার কান

একই ফ্রেমে কান ও লেম্যান; Source: Flickr

স্ট্রাইকার, মিডফিল্ডার বা ডিফেন্ডার- এমন অনেকের ক্ষেত্রেই বেশ প্রতিযোগিতা হয়। কোচ চাইলে প্রতিদ্বন্দ্বী দুজনকে একসাথে খেলাতে পারেন, কিন্তু গোলকিপারের ক্ষেত্রে তা হয় না। জার্মানিতে প্রায় একই সময়ে দুজন গোলকিপার তুখোড় ফর্মে ছিলেন- জেন্স লেম্যান ও অলিভার কান। কান ইতোমধ্যে কিংবদন্তী, জার্মানির প্রথম পছন্দের গোলকিপার। ওদিকে লেম্যানও সাধ্যের সর্বোচ্চটাই করছেন। যদি অন্য কোনো জাতীয়তার হতেন, তবে নিশ্চিতই সেই দেশের প্রথম পছন্দের গোলকিপার হতেন। কিন্তু কান ছিলেন সেই পথে এক বাঁধা। ২০০৬ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে কানকে টপকে লেম্যান প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হন। তাদের মাঠের বাইরে চাপানউতোর কখনোই কমেনি। লেম্যানকে টপকে আর্সেনালে আলমুনিয়া যখন প্রথম পছন্দের গোলকিপার হন, তখন তা নিয়ে কান বেশ টিটকারি মেরেছিলেন। লেম্যানও একবার কানকে নিয়ে বলেছিলেন, “আমি কানের মতো জীবনযাপন করি না, আমার তো আর ২৪ বছরের বান্ধবী নেই!” ইঙ্গিত ছিল কানের ম্যানচেস্টারবাসী হোটেলের পরিবেশক বান্ধবীর দিকে!

টেডি শেরিংহ্যাম ও অ্যান্ডি কোল

মাঠের বাইরে শেরিংহ্যাম ও কোলের মধ্যে সম্পর্ক ছিল দারুণ শীতল; Source: sporteology.com

শেরিংহ্যাম ও কোল একসাথে বহুবছর ইংল্যান্ড জাতীয় দল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলেছেন। তাদের জুটিও ছিল ভয়ংকর। কিন্তু তাদের খেলা দেখে যদি কেউ ভেবে থাকে যে তাদের মাঠের বাইরের রসায়নও দারুণ, তবে এটা নিদারুণ ভুল। তাদের চোখাচোখিও হতো না বলতে গেলে। শুধু মাঠের ভেতর দলের ভালোর জন্য পেশাদারিত্বের সাথে যা করার তা করতেন।

শুরুটা হয়েছিল অনেক আগে। তখন ইংল্যান্ড জাতীয় দলে কোলের অভিষেক হতে যাচ্ছে। শেরিংহ্যামের জায়গায় কোচ তাকে মাঠে নামাচ্ছেন, স্বভাবতই কোল নার্ভাস। সাধারণভাবেই হাত মেলানোর জন্য শেরিংহ্যামের দিকে বাড়িয়ে দিলেন, কিন্তু শেরিংহ্যাম হাত মেলান নি। এরপরেই কোল বুঝে যান শেরিংহ্যামের সাথে তার বনবে না। সেই থেকে কথা বলা বন্ধ। এরপর ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে একসাথে খেলেছেন, একে অপরকে গোল বানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মাঠের বাইরে একটি কথাও বলেন নি একে অপরের সাথে। বিদ্বেষ কেমন ছিল তা বোঝা যায় কোলের একটি কথা থেকে, “আমি আমার পায়ের দুই জায়গায় ইনজুরি বাধিয়ে দেয়া নিল রুডিকের সাথে বসেও কফি খেতে পারবো, কিন্তু শেরিংহ্যামের সাথে? ভুলে যান!” সবাই ভেবেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নাটকীয়ভাবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতার খুশিতে হয়তো তাদের মধ্যে কথা হতে পারে। কিন্তু সে আশায়ও গুড়ে বালি দিয়ে তারা তাদের ঝগড়ার যবনিকাপাত করেন নি।

ফিচার ইমেজ: 7wallpapers.net

Related Articles