গত কয়েক মৌসুম ধরেই খেলোয়াড় কিনতে কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে দৌড়াতে হয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষদের। খেলোয়াড় কেনাবেচার সেই ইঁদুর দৌড়ে সবসময় প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর সরব উপস্থিতি দেখা যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বড় বড় ক্লাবগুলোর পাশাপাশি মাঝারি মানের ইংলিশ ক্লাবগুলোও খরচ করতে কোনো কার্পণ্য দেখায়নি।
প্রায় প্রতি মৌসুমেই কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করা ম্যানচেস্টার সিটি এবার হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও তাদের ছাড়াই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে মোট ছয়টি ক্লাব ১০০ মিলিয়ন ইউরোর উপর খরচ করেছে। চেলসি, লিভারপুলের পাশাপাশি দ্বিতীয় বিভাগ থেকে সদ্যই প্রিমিয়ার লিগে উত্তীর্ণ হওয়া ফুলহামও আছে এই তালিকায়। চলুন দেখে আসা যাক সেই ছয়টি ক্লাবের খেলোয়াড় কেনার আদ্যোপান্ত।
এভারটন – ১০০ মিলিয়ন ইউরো
চলতি মৌসুমেই এভারটন নিয়োগ দিয়েছে নতুন ম্যানেজার। হট সিটে বসা সাবেক পর্তুগিজ রাইট ব্যাক মার্কো সিলভা দায়িত্ব নিয়ে দলে ভেড়ান মোট ৬ জন খেলোয়াড়। যদিও এর মাঝে ফ্রি এজেন্টে যোগ দিয়েছেন বার্নার্ড। এছাড়াও ছয়জনের মধ্যে কোর্ট জুমা ও আন্দ্রে গোমেজকে গুডিসন পার্কে এনেছেন ধারে। তবে মার্কো সিলভা খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দ্বারস্থ হয়েছেন বার্সেলোনার কাছে। আন্দ্রে গোমেজ ছাড়াও বার্সেলোনা থেকে উড়িয়ে এনেছেন দুই ডিফেন্ডার।
তবে এভারটনের চলতি মৌসুমের ট্রান্সফার উইন্ডোর বড় চমক ছিলো তরুণ রিচার্লিসনকে মোটা দামে দলে ভেড়ানো। গত মৌসুমে ওয়াটফোর্ডের হয়ে দুর্দান্ত খেলা এই ব্রাজিলিয়ান তরুণকে ৩৯ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভেড়ায় এভারটন। এরই মধ্যে তিন ম্যাচে তিন গোল করে তার উপর রাখা আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন এই প্রতিভাবান তরুণ।
চুক্তিসমূহ
- রিচার্লিসন (ওয়াটফোর্ড) – ৩৯ মিলিয়ন ইউরো
- ইয়েরি মিনা (বার্সেলোনা) – ৩০ মিলিয়ন ইউরো
- লুকাস দিনিয়ে (বার্সেলোনা) – ২১ মিলিয়ন ইউরো
- কোর্ট জুমা (চেলসি) – লোন ফি ৮ মিলিয়ন ইউরো
- আন্দ্রে গোমেজ – লোন ফি ২ মিলিয়ন ইউরো
- বার্নার্ড ( শাখতার দোনেৎস্ক) – ফ্রি ট্রান্সফার
ওয়েস্ট হাম – ১০৫ মিলিয়ন ইউরো
২০১৮ মৌসুমের ট্রান্সফার উইন্ডোতেই দুবার নিজেদের ইতিহাসের পূর্বের ট্রান্সফার রেকর্ড ভাঙে ওয়েস্ট হাম। ৫ জন খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতেই ১০৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তারা। তুলুজ থেকে ইসা দিওপকে দলে ভেড়াতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তারা। তবে সেই রেকর্ড বেশিদিন অক্ষুণ্ন থাকেনি। দিনকয়েক পরই ৩৮ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ফিলিপে এন্ডারসনের অন্তর্ভুক্তি সেই রেকর্ডকে পেছনে ফেলে। ব্রাজিলিয়ান এই খেলোয়াড়ই চলতি মৌসুমে হবেন ওয়েস্ট হামের তুরুপের তাস।
চুক্তিসমূহ
- ফিলিপে এন্ডারসন (লাৎসিও) – ৩৮ মিলিয়ন ইউরো
- ইসা দিওপ (তুলুজ) – ২৫ মিলিয়ন ইউরো
- আন্দ্রেই ইয়ারমোলেঙ্কো (ডর্টমুন্ড) – ২০ মিলিয়ন ইউরো
- লুকাস ফ্যাবিয়ানস্কি (সোয়ানসি) – ৮ মিলিয়ন ইউরো
- কার্লোস সানচেজ (ফিওরেন্টিনা) – ৫ মিলিয়ন ইউরো
ফুলহাম – ১০৯ মিলিয়ন ইউরো
এই মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগে উত্তীর্ণ হওয়া লন্ডনের ক্লাব ফুলহাম দলবদলের বাজারে দেখিয়েছে বড়সড় চমক। সার্বিয়ান ফরোয়ার্ড আলেকজান্ডার মিত্রোভিচ ছাড়াও বড় বড় ক্লাবগুলোর রাডারে থাকা জন মাইকেল সেরিকেও দলে ভেড়িয়েছে তারা। সেরিকে দলে ভেড়াতে গিয়ে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে দামী ট্রান্সফারের রেকর্ড ভেঙেছে লন্ডনের এই ক্লাবটি।
এই দুজন সহ মোট সাতজন খেলোয়াড় কিনে এই মৌসুমে সবেচেয়ে বেশি খেলোয়াড় কেনার দিক থেকে শীর্ষস্থান দখল করে ফুলহাম। তবে শুধু খেলোয়াড় কিনেই বসে থাকেনি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। দলকে ঢেলে সাজানোর জন্য ধারে দলে ভেড়ায় আরো ৫ জন খেলোয়াড়। সেখানে আন্দ্রে শুর্লে ও লুসিয়ানো ভিয়েত্তোর মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়ও রয়েছেন। মোট ১২ জন নতুন খেলোয়াড় দলে নিয়ে প্রিমিয়ার লিগে আবার নতুন উদ্যমে মাঠে নামবে সদ্য দ্বিতীয় বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হওয়া ফুলহাম।
চুক্তিসমূহ
- জন মাইকেল সেরি (নিস) – ৩০ মিলিয়ন ইউরো
- আন্দ্রে জাম্বো (মার্শেই) – ২৫ মিলিয়ন ইউরো
- আলেকজান্ডার মিত্রোভিচ (নিউক্যাসেল) – ২০ মিলিয়ন ইউরো
- আলফি ময়সন (সোয়ানসি) – ১৭ মিলিয়ন ইউরো
- জো ব্রায়ান (ব্রিস্টল সিটি) – ৭ মিলিয়ন ইউরো
- ফাব্রি (বেসিকতাস) – ৬ মিলিয়ন ইউরো
- ম্যাক্সিমে (নিস) – ৪ মিলিয়ন ইউরো
- আদ্রে শুর্লে (ডর্টমুন্ড) – লোন ফি ৪০০ হাজার ইউরো
এছাড়াও অর্থ লেনদেন ছাড়াই লোনে এসেছেন সার্জিও রিকো (সেভিয়া), টিম ফসু (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), কালাম চ্যাম্বার্স (আর্সেনাল) ও লুসিয়ানো ভিয়েত্তো (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ)।
লেস্টার সিটি – ১১৫ মিলিয়ন ইউরো
রিয়াদ মাহরেজের বিদায়ে ফক্সদের মাঝমাঠে একজন খেলোয়াড়ের অভাব হলেও মাহরেজের কল্যাণে বেশ কিছু অর্থ এসেছিলো ক্লাবটির হাতে। তবে সেই অর্থ খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রেই কাজে লাগিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বেশ কিছু আনকোড়া তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে তারা। সাতজন খেলোয়াড় কিনতে চলতি মৌসুমে লেস্টার সিটির খরচ হয়েছে ১১৫ মিলিয়ন ইউরো।
চুক্তিসমূহ
- জেমস ম্যাডিসন (নরউইচ) – ২৫ মিলিয়ন ইউরো
- রিকার্ডো পেরেইরা (পোর্তো) – ২২ মিলিয়ন ইউরো
- কাগলার সোয়াঞ্চু (ফ্রেইবুর্গ) – ২১ মিলিয়ন ইউরো
- ফিলিপ বেঙ্কোভিচ (ডায়নামো জাগরেব) – ১৫ মিলিয়ন ইউরো
- রাচিড গেজ্জাল (ব্রিস্টল সিটি) – ১৪ মিলিয়ন ইউরো
- ড্যানি ওয়ার্ড (লিভারপুল) – ১৪ মিলিয়ন ইউরো
- জনি ইভান্স (ওয়েস্ট ব্রম) – ৪ মিলিয়ন ইউরো
চেলসি – ১৩৭ মিলিয়ন ইউরো
ট্রান্সফার উইন্ডোতে এতটা সরব উপস্থিতি ছিলো না চেলসির। মাত্র দুজন খেলোয়াড় কিনতেই এই বিশাল অর্থ খরচ করে ব্লুজরা। চলতি মৌসুমে নাপোলির দায়িত্ব ছেড়ে চেলসির ডাগ আউটে বসেছেন মাউরিজিও সারি। নিজে চেলসিতে আসার পাশাপাশি নাপোলি থেকে নিয়ে এসেছেন ইতালিয়ান মিডফিল্ডার জর্জিনহোকে। ট্রান্সফার উইন্ডোর শেষের দিকে কোর্তোয়ার রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়াতে তড়িঘড়ি করেই চেলসি সেই শূন্যস্থান পূরণ করে কেপা আরিজাবালাগাকে দলে ভিড়িয়ে। তার জন্য চেলসিকে গুনতে হয় রেকর্ড সংখ্যক অর্থ। বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলকিপার হওয়ার পাশাপাশি কেপা এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে দামি সাইনিংও।
এছাড়াও চেলসি ধারে মাতেও কোভাচিচ ও ফ্রিতে রবার্ট গ্রিনকে ভেড়ায় স্ট্যাম্পফোর্ড ব্রিজে।
চুক্তিসমূহ
- কেপা (অ্যাথলেটিক বিলবাও) – ৮০ মিলিয়ন ইউরো
- জর্জিনহো (নাপোলি) – ৫৭ মিলিয়ন ইউরো
- রবার্ট গ্রিন (হাডর্সফিল্ড) – ফ্রি ট্রান্সফার
- মাতেও কোভাচিচ (রিয়াল মাদ্রিদ) – লোন
লিভারপুল – ১৮৭ মিলিয়ন ইউরো
এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি খরচ করা দলগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানটি দখল করে নেয় ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল। গত মৌসুমে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলা লিভারপুলের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো গোলবার। লরিস কারিউসে ভরসা করতে না পেরে বিশ্বকাপের আগেই রেকর্ড দাম দিয়ে ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এলিসনকে অ্যানফিল্ডে নিয়ে আসেন ক্লপ। যদিও পরবর্তীতে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন কেপা। গোলকিপারের পাশাপাশি কৌতিনহোর ফেলে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণে মাঝমাঠকেও শক্তিশালী করেন ক্লপ। দলে ভেড়ান ফ্যাবিনহো ও লিভারপুলের দীর্ঘদিনের লক্ষ্য নাবি কেইটাকে। সাথে ট্রান্সফার মার্কেটের আগুন গরম অবস্থার তুলনায় বেশ কম দামেই পেয়ে যান সুইস খেলোয়াড় জের্দান শাকিরিকে।
চুক্তিসমূহ
- এলিসন (রোমা) – ৬৭ মিলিয়ন ইউরো
- নাবি কেইটা (আরবি লাইপজিগ) – ৬০ মিলিয়ন ইউরো
- ফ্যাবিনহো (মোনাকো) – ৪৫ মিলিয়ন ইউরো
- জের্দান শাকিরি (স্টোক সিটি) – ১৫ মিলিয়ন ইউরো