বিশ্বের এমন কিছু আজব স্টেডিয়াম রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। ভৌগোলিক অবস্থান, নির্মাণশৈলী, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য কিংবা অদ্ভুত ডিজাইন, এই স্টেডিয়ামগুলোকে পরিণত করেছে বিশ্বের বিস্ময়ে। তো চলুন, কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু আজব স্টেডিয়াম সম্পর্কে।
১. এফকে ভয়েডোভাক স্টেডিয়াম
ভাবুন তো, আপনি স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখছেন, আর পাশে ঘাড় ঘুরালেই পাখির চোখে দেখতে পাচ্ছেন শহরের সৌন্দর্য্য। প্রায় ৮০ ফুট নিচে কর্মব্যস্ত মানুষের ছোটাছুটি, ট্রাম লাইনে চলছে ট্রাম, আর রাস্তা দিয়ে লাল-নীল বাতি জ্বালিয়ে পিঁপড়ার স্রোতের মত চলছে অজস্র গাড়ি। সবকিছুই আপনি উপভোগ করছেন পাখির চোখে। এদিকে স্টেডিয়ামে খেলা চলছে পুরোদমে। হয়তো ভাবছেন, এমন স্টেডিয়াম আবার কোথায় আছে!
হ্যাঁ, এই আজব ফুটবল স্টেডিয়ামটি অবস্থিত সার্বিয়ার বেলগ্রেডে। ভয়েডোভাক স্টেডিয়াম নামের এই প্লেগ্রাউন্ডটি বেলগ্রেডের হোম স্টেডিয়াম। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘রুফটপ স্টেডিয়াম’। ভয়েডাভাকের একটি শপিং সেন্টারের ছাদের উপর এই স্টেডিয়ামের অবস্থান। ভূমি থেকে এর উচ্চতা প্রায় পঞ্চাশ ফুট।
ভয়েডোভাকের পুরোনো স্টেডিয়ামটি ছিল একটি বহুমুখী স্টেডিয়াম। অবশ্য বেশিরভাগ ফুটবল ম্যাচের জন্যই ব্যবহৃত হত। ২০১১ সালে এই স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলা হয়। সে বছরই ওই একই জায়গায় ভয়েডোভাকের রাস্তায় একটি নতুন শপিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নতুন স্টেডিয়ামটির নির্মাণকাজও শুরু হয় করা হয়।
শপিং সেন্টারটির নির্মাণ কাজ আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের মার্চে খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু স্টেডিয়ামের কাজ তখনও কিছুটা বাকি ছিল। এরপর বাকি কাজ সমাপ্ত করে ২০১৩ সালের ৩১ আগস্ট স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করা হয়।
এই স্টেডিয়ামটির মোট ৫,১৭৪টি ধারণক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও ভিআইপি দর্শকদের জন্য রয়েছে জন্য রয়েছে ২৫০টি আসন। উয়েফা ইউরোপা লিগ এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের অনেকগুলো ম্যাচ এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজব গঠনপ্রণালী এবং অবস্থান একে বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর স্টেডিয়ামে পরিণত করেছে। যদিও ছাদের উপর অবস্থিত হওয়ার কারণে এর ধারণক্ষমতা খুব বেশি বৃদ্ধি করা যায়নি, কিন্তু আজব গঠন এবং অনন্য নির্মাণশৈলীর কারণে সারা বিশ্বব্যাপী স্টেডিয়ামটি বেশ পরিচিত।
২. অটোমার হিৎজফিল্ড গসপেন অ্যারেনা
সুইজারল্যান্ডের গসপেন, আল্পসের উঁচু এই গ্রামটিতে রয়েছে পুরো ইউরোপের সর্বোচ্চ ফুটবল গ্রাউন্ড। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই স্টেডিয়ামটির উচ্চতা ৬,৫৬১ ফুট। চারপাশে বিস্তৃত পর্বতের মাঝখানে এই স্টেডিয়ামটি ফুটবল জগতের এক বিস্ময়কর নিদর্শন। স্টেডিয়ামটির সমস্যা হচ্ছে, খেলার সময় প্রায়শই বল গড়িয়ে পড়ে যেত কয়েক হাজার ফুট নিচের গভীর খাঁদে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য পরবর্তীতে একটি প্রতিরক্ষামূলক জাল দিয়ে মাঠ ঘিরে দেওয়া হয়। তবুও প্রত্যেকটি ম্যাচে প্রায় ৮-১০টি বল হারিয়ে যায়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই স্টেডিয়ামে গাড়ি নিয়ে পৌঁছানোর জন্য কোনো রাস্তা নেই। এমনকি পাহাড়ের গা বেয়ে হেঁটে চলার জন্যও কোনো পথ নেই। স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর একমাত্র মাধ্যম হলো ক্যাবল কার। অর্থাৎ, সুন্দর আল্পস পর্বতমালার উপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে আপনাকে পৌঁছাতে হবে এই স্টেডিয়ামটিতে। আর হ্যাঁ, এই স্টেডিয়ামে কোনো অফিশিয়াল আসন ব্যবস্থাও নেই, আপনাকে সবুজ ঘাস বিছানো ঢালু পাহাড়ে বসে খেলা দেখতে হবে।
স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করার জন্য প্রাথমিকভাবে পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। এরপর সুইজারল্যান্ড সরকার কৃত্রিমভাবে পাহাড় কেটে এর ফুটবল পিচটি নির্মাণ করে। স্টেডিয়ামটি বেশ ছিমছাম মনে হলেও এটি নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে সে দেশের সরকারকে।
ভূমি থেকে এর উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ার কারণে এখানে খেলোয়াড়দের জন্য নিঃশ্বাস নেওয়াটা বেশ কঠিন। তবে সুইজারল্যান্ডের খেলোয়াড়রা এতে বেশ অভ্যস্ত। এজন্য বাইরের কোনো দেশের সাথে খেলা হলেই স্বাগতিকরা অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করে।
এই স্টেডিয়াম নিয়ে বেশ কয়েকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফা। কারণ, ফিফার নীতিমালা অনুযায়ী ২,৭৫০ মিটারের বেশি উচ্চতায় আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরে বলিভিয়াসহ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো এর তীব্র প্রতিবাদ করে। বলিভিয়ারও এমন একটি স্টেডিয়াম রয়েছে, যা কি না পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। এ কারণে ফিফা তাদের এই অবস্থান থেকে সরে আসে।
৩. স্ভাঙ্গাস্কারে
এক পাশে সবুজ উপত্যকা অপর পাশে বিস্তৃত নীল জলরাশি, মাঝখানে স্ভাঙ্গাস্কারে স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। এই স্টেডিয়াম থেকে প্রকৃতিকে খুব ভালোভাবে দেখা যায়। আধুনিকতা এবং প্রকৃতির মিশেলে করা এই স্টেডিয়ামটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং বিস্ময়কর স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাহাড়ে চূড়ায় বসে স্টেডিয়ামে খেলা দেখাটা যেন অনেকটা পাখির চোখে দেখার মতো অনুভূতি জাগায়।
অসাধারণ এই স্টেডিয়ামটির অবস্থান ডেনমার্ক অধ্যুষিত ফারো আইল্যান্ডে। ফারো আইল্যান্ডের তফতির অঞ্চলে দ্বীপের এক পাশে অবস্থিত এই স্টেডিয়াম। বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্টেডিয়ামটির এক পাশে রয়েছে সমুদ্র সৈকত। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপ দেশটি এমনিতেই ছবির মত সুন্দর। সেই সৌন্দর্যকে অনেকগুনে বৃদ্ধি করেছে স্ভাঙ্গাস্কারে স্টেডিয়াম।
স্টেডিয়ামটি এক সময় ছিল ফারো আইল্যান্ডের জাতীয় দলের হোম গ্রাউন্ড। ১৯৯৮ সালে মাল্টার সাথে এই স্টেডিয়ামে ফারো আইল্যান্ডের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ফারো আইল্যান্ডের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১ হাজার। কিন্তু সেই ম্যাচে দর্শক হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৬ হাজারের অধিক। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে মাল্টাকে ২-১ গোলে হারিয়ে জয়লাভ করেছিল ফারো আইল্যান্ড। এই ম্যাচটি ফারো আইল্যান্ডবাসীদের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। জাতীয় দলটি এখন টর্সভালু’র একটি নতুন স্টেডিয়ামকে হোমগ্রাউন্ড করেছে। তবে সেখানকার দৃশ্য ঠিক এতটা মনোমুগ্ধকর নয়।
এই স্টেডিয়ামটি প্রথম চালু হয় ১৯৮০ সালে। সে সময় এটি ছিল পাথরে ভরা, এছাড়া কোনো ড্রেসিংরুমও ছিল না। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে মাঠে কৃত্রিম ঘাস স্থাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৮শে জুলাই এই স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে অসাধারণ এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা প্রায় ৬ হাজার।
৪. দ্য ফ্লোট অ্যাট ম্যারিনা বে
সিঙ্গাপুরে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাসমান স্টেডিয়াম। ম্যারিনা উপসাগরে অবস্থিত এই প্লেগ্রাউন্ডটি ‘ফ্লোটিং প্লাটফর্ম’ নামেও পরিচিত। ফুটবল স্টেডিয়ামটি সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত র্যাফেলস অ্যাভিনিউয়ের বাইরে ম্যারিনা উপসাগরে অবস্থিত একটি ভাসমান প্ল্যাটফর্মের উপর নির্মিত। স্টেডিয়ামটি শুধু ফুটবলের জন্যই নয়, বরং অন্যান্য ইভেন্টের জন্যও ব্যবহার হয়ে থাকে।
১৯৯৫ সালে এই স্টেডিয়ামটি সিঙ্গাপুর ফুটবল দলের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত হয়েছিল, যদিও ২০০৭ সাল থেকে এটি কোনো খেলার জন্য নির্দিষ্ট নয়। মূলত এটি এখন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল প্যারেড গ্রাউন্ড। সিঙ্গাপুরের বিশেষ দিনগুলো (যেমন: জাতীয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি) এখানে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া কনসার্ট, প্রদর্শনী অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম হয়ে থাকে।
স্টেডিয়ামটির স্ট্রাকচার সম্পূর্ণ ইস্পাত-নির্মিত। প্ল্যাটফর্মটির দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার এবং প্রস্থ ৮৩ মিটার। স্টেডিয়ামটি একসাথে নয় হাজার মানুষ, ৩০টি ভারি সামরিক যানসহ প্রায় ১০৭০ টন ওজন বহন করতে সক্ষম। তবে স্টেডিয়ামের প্ল্যাটফর্মটি ভাসমান হলেও গ্যালারিটা অবশ্য ভাসমান নয়। স্টেডিয়ামটির মোট ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার।
সিঙ্গাপুরের এই স্টেডিয়ামটি এখনও দারুণ আকর্ষণীয়। কেবল ক্রীড়া অনুরাগীরাই নয়, অনেক নামীদামী অ্যাথলেটরাও নিজের চোখে বিশ্বের একমাত্র ভাসমান স্টেডিয়াম দেখার স্বপ্ন দেখেন।
৫. এস্তাদিও বিবিভিএ
স্টেডিয়ামে খেলা উপভোগ করার পাশাপাশি যদি উপভোগ করা যায় কোনো নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী, তাহলে কার না ভালো লাগে!
পৃথিবীর অনবদ্য সব স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে এস্তাদিও বিবিভিএ অন্যতম। স্টেডিয়ামের গ্যালারির ফাঁক দিয়ে যেন উঁকি দেয় দূরের সুুউচ্চ পর্বতগুলো। অসাধারণ নকশা এবং অবস্থান এই স্টেডিয়ামকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামগুলোর একটিতে পরিণত করেছে।
এই স্টেডিয়াম এর অবস্থান মেক্সিকোর ন্যুভো লেওন শহরে। ১,৮৭,০০০ বর্গমিটার এরিয়ার বিশাল জায়গা নিয়ে এই স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। এই স্টেডিয়ামের নির্মাণশৈলী এবং গঠনপ্রণালী মুগ্ধ করবে যেকোনো ক্রীড়া অনুরাগীকে।
এই স্টেডিয়ামটি এফসি মন্টেরি’র হোম প্লেগ্রাউন্ড। ২০১১ সালের আগস্টে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০১৫ জুলাইয়ে শেষ হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় সে বছরেই, ২ আগস্টে। প্রাথমিকভাবে ধারণক্ষমতা ছিল ৫১ হাজার। পরে ২০১৬ সালে ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে ৫৩,৫০০তে উন্নীত করা হয়। স্টেডিয়ামটির পিচের দৈর্ঘ্যে ২৬৫ মিটার এবং প্রস্থে ২২৩ মিটার। মেক্সিকান আর্কিটেকচার ফার্ম ভিএফও এবং বহুজাতিক আর্কিটেকচার সংস্থা পপুলাস এই চমৎকার স্টেডিয়ামটির ডিজাইন করেছিল।
এস্তাদিও বিবিভিএ’র অবস্থান শহর ছাড়িয়ে বেশ দূরে। শহুরে কোলাহল ছেড়ে বন্য পাহাড়ি অঞ্চলে গিয়ে এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছে। অবশ্য এর জন্য কানাঘুষাও কম হয়নি। বন্য অঞ্চলে স্টেডিয়াম নির্মাণ করা নিয়ে সে দেশের সরকার দেশি ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর তোপের মুখে পড়ে। কারণ, ধারণা করা হচ্ছিল, এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করতে গিয়ে নির্বিচারে বন ধ্বংস এবং বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো বাধাই কাজে আসেনি।
এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণে সর্বমোট ব্যয় হয়েছিল ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একটি ক্লাব থিমবিশিষ্ট রেস্তোঁরা, একটি ক্লাব লাউঞ্জ এবং ভিআইপি লাউঞ্জগুলো এই স্টেডিয়ামকে মেক্সিকোর সবচেয়ে বিলাসবহুল স্টেডিয়ামে পরিণত করেছে। ২০১৭ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি জাস্টিন বিবার তার বিশ্ব ভ্রমণে অংশ হিসাবে এই স্টেডিয়ামে পারফর্ম করেছিলেন। ঐতিহাসিক সেই কনসার্টে ৫০,০০০-এরও বেশি লোক অংশ নিয়েছিল।
৬. ইগ্রালিস্তে বেটারিয়া
কোলাহলমুক্ত নির্ঝঞ্ঝাট প্রকৃতিক পরিবেশ বসে খেলা উপভোগ করছেন। খোলা মাঠের চারপাশে যতগুলো স্থাপনা চোখে পড়ছে, সবগুলোর বয়সই মোটামুটি পাঁচ শতকের উপরে। খেলার সঙ্গে সঙ্গে যেন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন সেই প্রাচীন ঐতিহ্যের দারুণ অভিজ্ঞতা। সবগুলো স্থাপনা আর স্থানের সাথে জড়িয়ে আছে বিস্তৃত প্রাচীন ইতিহাস। নিঃসন্দেহে এমন অনুভূতি আপনি বারবার পেতে চাইবেন!
এরকমই এক স্টেডিয়াম রয়েছে ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়ায়। যদিও এটি আয়তনে খুব বেশি বড় নয়। এই স্টেডিয়ামটি ক্রোয়েশিয়ার ঐতিহাসিক ট্রোগির শহরে অবস্থিত। ট্রোগির ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন ফুটবল ক্লাব, যা ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্টেডিয়ামটি স্থাপিত হয় ১৯১১ সালে। এটি ইউরোপের সবচেয়ে পুরনো স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে অন্যতম। সে সময় এটি ছিল একটি সাধারণ খেলার মাঠ, যেখানে ট্রোগির ছেলেরা খেলাধুলা করত। পরে ১৯১২ সালে ট্রোগির ফুটবল ক্লাব গঠনের পর এটি তাদের হোম গ্রাউন্ডে পরিণত হয়।
ট্রোগির ইউরোপের অন্যতম পুরাতন শহর, যা ইউনেস্কো কর্তৃক ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। স্টেডিয়ামটি ঠিক এই কারণেই বিখ্যাত, স্টেডিয়ামের চারদিকে যে সমস্ত স্থাপনাগুলো রয়েছে সবগুলোই ঐতিহাসিক। খেলার মাঠের দক্ষিণ গোলপোস্টের পিছনে রয়েছে একটি পঞ্চদশ শতাব্দীর দুর্গ কামেরলেঙ্গো, এবং উত্তর গোলপোস্টের পিছনে রয়েছে প্রাচীন সলিটেয়ার টাওয়ার। স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুম এবং ভিআইপি গ্যালারি পশ্চিমে পাশে নির্মাণ করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের পূর্বপাশে মাত্র ১০ মিটার দূরে রয়েছে নীল জলরাশির বিশাল সমুদ্র। একদিকে যেমন রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য, অন্যদিকে চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। সব মিলিয়ে এই স্টেডিয়ামটি পরিণত হয়েছে বিশ্বের বিস্ময়ে।
চমৎকার এই স্টেডিয়ামটির গ্যালারি খুব বেশি বড় নয়, সর্বসাকুল্যে ধারণক্ষমতা মাত্র এক হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু দু’টি সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ কামেরলেঙ্গো ক্যাসল এবং সান মার্কো টাওয়ারের মাঝামাঝি অবস্থিত এই স্টেডিয়ামের ইতিহাস বেশ বিস্তৃত। এই শহরের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য এবং সৌন্দর্য্য, সবটা মিলিয়ে এই স্টেডিয়ামটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামগুলো মধ্যে একটি।
৭. দ্য মিউনিসিপাল স্টেডিয়াম অফ ব্রাগা
আজব ধরনের এই স্টেডিয়ামটি পর্তুগালের ব্রাগা শহরে অবস্থিত। মন্টে ক্রাস্তো পাহাড়ের পাদদেশস্থ প্রাচীন এক শিলাখনিতে এই স্টেডিয়ামের অবস্থান। এটি ‘স্পোর্টিং ব্রাগা’-এর হোম স্টেডিয়াম। ভৌগোলিক অবস্থান এবং অনন্য নির্মাণশৈলী এই স্টেডিয়ামটিকে বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর স্টেডিয়ামে পরিণত করেছে। স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা ৩২,২৮৬ জন। এটি পর্তুগালের সপ্তম বৃহত্তম ফুটবল স্টেডিয়াম। প্রিৎজকার আর্কিটেকচার পুরষ্কারপ্রাপ্ত বিখ্যাত স্থপতি এদুয়ার্দো সাউতো মৌরা স্টেডিয়ামটির নকশা করেছেন।
স্টেডিয়ামটি মন্টে ক্রাস্তোর উত্তর প্রান্তে একটি বিচ্ছিন্ন নগর অঞ্চলে পাহাড়ের গা ঘেঁষে অবস্থিত। স্টেডিয়ামটি অনেকটা ঝুলন্ত সেতুর মতো, যার গ্যালারির নিচে কোনো স্তম্ভ নেই। গ্যালারিটি সরাসরি শূন্যে ঝুলন্ত। সরাসরি দু’পাশের গ্যালারি একে অপরের সাথে সম্পূর্ণ ইস্পাতনির্মিত স্ট্রিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত। বিখ্যাত স্থপতি এদুয়ার্দো সাউতো মৌরা প্রাচীন দক্ষিণ আমেরিকান ইনকান ব্রিজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই স্টেডিয়ামের নকশা করেন। এই অনন্য নির্মাণশৈলী এবং নকশার জন্যই এই স্টেডিয়ামটি পৃথিবীর অন্যতম দর্শনীয় স্টেডিয়ামে পরিণত হয়েছে।
সর্বপ্রথম ২০০০ সালে স্থপতি এদুয়ার্দো এই স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। সে সময় ২০০৪ সালের ৫ই জুন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে ইউরোপে মোট দশটি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়। এই স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল তৎকালীন ৮৩.১ মিলিয়ন ইউরো। ২০০৪ সালের ইউরো চাম্পিয়নশিপ এর জন্য নির্মিত দশটি স্টেডিয়ামের মধ্যে এটি ছিল চতুর্থ সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল স্টেডিয়াম। স্পোর্টিং ব্রাগা এবং সেল্টা ভিগোর মধ্যে একটি ফুটবল ম্যাচের মাধ্যমে ২০০৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।