Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আমাদের ক্রিকেট-সংস্কৃতি আগেও ছিল না, এখনও নেই: সাকিব আল হাসান

দেশের ক্রিকেট বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরগরম। ক্রিকেটারদের ধর্মঘট, দাবি-দাওয়া দিয়ে শুরু সেই জল গড়িয়েছে অনেক দূর। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ক্রিকেটারদের দাবি মেনেও নিয়েছে। এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের ১১ দফা জানিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানসহ জাতীয় দল ও ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলোয়াড়রা। এই দাবির প্রায় সবই দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের দাবি, ক্রিকেটারদের উন্নয়নের দাবি, যেখানে কোনো ব্যক্তি-স্বার্থ ফুটে ওঠার সুযোগ ছিল না।

ক্রিকেটারদের ধর্মঘট; Image Source: Daily Star/Ramin Talukder

এই ঘটনার কয়েকদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে সাকিব তুলে ধরেন দেশের ক্রিকেট নিয়ে বিভিন্ন ইস্যু সম্পর্কে। সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন আর সেগুলোর উত্তর যেন সাকিবদের ধর্মঘটের আগুনকে উগরে দিয়েছিল অনেকখানি। রোরের পাঠকদের জন্য সাকিব আল হাসানের সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় ভারত সফরের চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে দেখছেন?

অন্য যেকোনোটার (সিরিজ) চেয়ে ভারত সিরিজ বেশি চ্যালেঞ্জিং। টি-টোয়েন্টিতে সবসময় কিছু না কিছু সুযোগ থাকে, সেটা হোক না ছোট কিংবা বড় দল। এই ফরম্যাটে ৭০-৮০ ভাগ সময়েই শেষ তিন-চার বলে খেলার ফলাফল হয়ে যায়। তাই বলতে পারি, এখানে সবসময় সুযোগ থাকে।

টেস্টে, এটা একরকম বলা কঠিনই যে, কবে ভারতের মাটিতে কোন দল ভারতের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিল। তো এটা আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক আমরা সামর্থ্য দিয়ে কতটা কি করতে পারি।

তার মধ্যে আবার বাংলাদেশ ক্রিকেট একটা নেতিবাচক ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে…

এখানে কখনোই নেতিবাচক ট্রানজিশন পিরিয়ড ছিল না। যারা খেলত, তারা এখন লম্বা সময় ধরে খেলে যাচ্ছে। তারা বিশ্বকাপ খেলেছে, বিশ্বকাপের পরও খেলছে। তাই আমার মনে হয় না, এটাকে কোনো ট্রানজিশন পিরিয়ড বলা যায়।

সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমানের পারফরম্যান্স…

আমরা যদি তাদের রেকর্ড দেখি, তারা যে খুব খারাপ করছে, তা বলা যায় না। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সৌম্যর রেকর্ড খারাপ নয়। আমাদের দলে যেসব খেলোয়াড়ের গড় বেশ ভালো, সৌম্য তাদের একজন। আপনি যদি দেখেন, সে অল্প কিছু ম্যাচ খেলেই ১ হাজার রানের মাইলফলক পার করেছে। এমনকি, তার অফ ফর্মের সময়েও সে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় প্রথম দুই-তিনজনের মধ্যে রয়েছে।

সৌম্য সরকার; Image Credit: Mike Egerton/PA Images via Getty Images

একেকজন ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে তাদের খারাপ সময়টা একেকভাবে কাজ করে। সময়ের সাথে সাথে তাদের কাছে প্রত্যাশাও বাড়ে। আর সেই প্রত্যাশা সবসময় পূরণ করা কঠিন।

ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে…

সত্যি বলতে, যেহেতু আমি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলি না, তাই আমি যখন খেলতাম, তখনকার সময়ের সাথে বর্তমান অবস্থার তুলনা করা আমার জন্য কঠিন। দেখা গেল, একটা ম্যাচ খেললাম, তার আগের ম্যাচটা খেলেছি আরো পাঁচ বছর আগে। আপনি যদি গেল ৮ বছরে দুই-তিনটি ম্যাচ খেলেন, তাহলে মান নিয়ে কথা বলা আপনার জন্য নয়। এটা তারাই ভালো বলতে পারবে, যারা নিয়মিত প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও নিয়মিত খেলে।

আমি আফগানিস্তান সিরিজে কখনোই বলিনি যে, ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার কোনো মানে নেই, কিংবা কখনোই বলিনি যে, খেলতেই হবে। আমি বলেছিলাম যে, এটা ক্রিকেটারের উপর নির্ভর করে। হয়তো ঘরোয়া ক্রিকেট সবার জন্য প্রয়োজন নেই, কিংবা কিছু ক্রিকেটারের জন্য দরকার।

ঘরোয়া ক্রিকেটের ফিটনেস ইস্যু নিয়ে…

আমি জানি না আসলে, তবে আমার সাথে যেটা হয়েছে… বিশ্বকাপে ভালো ফিটনেস নিয়ে খেলেছি, পারফরম্যান্সও ভালো করেছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো কিছু হলে সেটা নিয়ে বলা কঠিন। তবে হ্যাঁ, ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিটনেস নিয়ে এমন সিরিয়াসনেস অবশ্যই ভালো একটা উদ্যোগ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখন একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যেখানে আপনাকে ফিট থাকতেই হবে। কিন্তু আমরা এখানে সেই অর্থে পিছিয়ে আছি। তো, আমি এটাকে এভাবে দেখছি যে, আপনার ফিটনেস যদি ভালো না থাকে, তাহলে আপনার ভালো করার সুযোগ নেই। তার মানে এই নয় যে, ভালো ফিটনেস থাকলেই আপনি ভালো করবেন। কিন্তু না থাকলে ভালো করবেন না, এটা সত্যি।

ফিটনেস নিয়ে কাজ করে ভালো ফল পেয়েছেন সাকিব; Image Source: Daily Star/ Firoz Ahmed

তবে সব জায়গায় যদি ফিটনেস নিয়ে কাজ করার সুযোগ থাকত, তাহলে ভালো হতো। ধরা যাক, কাউকে রাজশাহী থেকে ঢাকা যেতে হচ্ছে ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে। এটা যদি রাজশাহীতেই হয়, তাহলে আরও ভালো হয়।

ইনডোর ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে হতাশা…

২০০৯ সালে যখন লিপু ভাই (গাজী আশরাফ হোসেন) ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, এবং কামাল ভাই (আহম মুস্তফা কামাল) বোর্ড সভাপতি ছিলেন, তখন ইনডোর করা হয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এর সুযোগ-সুবিধা একই রকম রয়েছে, এবং এখানে আমাদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু এখনও সেগুলো নিয়ে কাজ করা হয়নি। এগুলো নিয়ে আর কিছু বলার নেই। আমি একই জিনিস বারবার বলতে চাই না।

আমাদের দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে…

ক্রিকেটে আমাদের কখনোই সেরকম সংস্কৃতি ছিল না, এখনও নেই। যখনই কোনো নতুন কোচ আসেন, তিনি চেষ্টা করেন এখানকার ক্রিকেট সংস্কৃতি বদলে দিতে, প্রভাব রাখতে। কিন্তু যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, যদি আমরা সেই সংস্কৃতির ব্যাপারে না-ই জানি, তাহলে বদলাব কী করে?

বোর্ডের বিভিন্ন পলিসি নিয়ে…

যেহেতু অনেক উদ্যোগ এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে, আমি নিশ্চিত যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও করা হবে। পাপন ভাই (বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন) যেমনটা বলেছিলেন ক’দিন আগে, যে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদি ক্রিকেট নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের ক্রিকেট উপকৃত হবে।

টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক নির্বাচন নিয়ে তার সম্পৃক্ততা…

কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

খোলাখুলিভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যাগুলো নিয়ে যদি বলেন?

এটা তো আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। আমাদের সাংবাদিকদের মূল সমস্যা হলো, আপনারা সবই জানেন, কিন্তু কখনোই তা বলেন না। আপনারা সবসময় তা খেলোয়াড়ের কাছে শুনতে চান।

এমন নয় যে, আপনি এ ব্যাপারে জানেনই না। আপনারা সবাই জানেন, পর্দার আড়ালে কী হচ্ছে, কে করছে, সমস্যাগুলো কী। বিশেষ করে দেশের ক্রিকেটের কথা আসলে, আমরা যদি একেবারে সত্যিটাও না জানি, সেখানে আপনারা ঘটনার ৭০-৮০ ভাগ জেনে ফেলেন। কিন্তু আপনারা কখনোই সেগুলো লেখেন না, কথা বলেন না। উল্টো কারো কাছে গিয়ে বলেন, ‘ভাই, আপনি এটা বলেন, তারপর আমি লিখব।’ কেন?

সংবাদ সম্মেলনে সাকিব ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, সিইও সুজন; Image Source: Daily Star/ Firoz Ahmed

আমি এটা বলছি না যে, আপনারা কিছুই লেখেন না। কিন্তু সেই পরিমাণটা খুব অল্প, যা নিতান্তই নগণ্য।

বিপিএলে প্রতি দলে একজন করে লেগস্পিনার খেলানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কী বলবেন?

আবারও বলছি, এটা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের ব্যাপার। আপনি যদি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেই লেগস্পিন খেলতে না পারেন, তাহলে কীভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টে লেগস্পিন সামলাবেন?

বিশ্বকাপ নিয়ে হতাশার কথা…

দলের দিক থেকে চিন্তা করতে গেলে, অবশ্যই এটা হতাশাজনক ছিল। আমি মনে করি, আমাদের দারুণ সুযোগ ছিল, কিন্তু আমরা তা কাজে লাগাতে পারিনি। আমাদের দলটা খুব ভালো অবস্থানে ছিল, এবং আমি মনে করি, আমরা অন্যান্য দলের তুলনায় অনেক শক্তিশালী দল ছিলাম। কিন্তু দলগতভাবে আমরা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারিনি।

বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার ফিটনেস ইস্যু নিয়ে…

ফিটনেসের চেয়েও বড় কথা, আপনি যদি পারফরম্যান্স ‘আপ টু দ্য মার্ক’ না রাখতে পারেন, তাহলে তা থেকে উদ্বেগ তৈরি হয়। যদি পারফরম্যান্স ভালো হয়, তাহলে ফিটনেস নিয়ে কথা হবে না। অবশ্যই দুটোই একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। সাধারণভাবে আপনি যখন ভালো পারফর্ম করবেন, তখন অন্যদের মধ্যেও ভালো করার অনুপ্রেরণা আসবে। কিন্তু যখন পারফর্ম করতে পারবেন না, তখন এটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন…

প্রত্যেক মানুষেরই নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। আমরা যদি বিশ্বকাপ জিততে পারি, তাহলেই সেটা হবে সর্বোচ্চ পাওয়া।

আসন্ন বিপিএল একটু অন্যভাবে হচ্ছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক হচ্ছে না অন্যান্যবারের মতো…

অনেক ক্রিকেটার এবার বিপিএলের কারণে বিগ ব্যাশ থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নিয়েছিল। সেইসব ক্রিকেটার স্বাভাবিকভাবেই এখন হতাশ হবে। এগুলো অন্যান্য ক্রিকেটারের মধ্যেও ছড়িয়ে যাওয়ার কথা। আমি জানি না, এই নেতিবাচক ব্যাপারগুলো এরই মধ্যে শুরুও হয়েছে কি না। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব হতাশ। কিন্তু বোর্ড যেটা মনে করবে, সেটাই ঠিক হবে। আমি কেবল আমার হতাশার কথা বলতে পারি।

ক্রিকেটে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আদৌ রয়েছে কি না…

আমি তো দেখি না। আসলে, আমরা শুধু চলমান সিরিজকে ফোকাস করি। কিন্তু আমাদের যদি বিশ্বকাপ জয়ের মতো কিছু নিয়ে ভাবতে হয়, তাহলে হয়তো ৬-৮ মাসের অগ্রিম পরিকল্পনা করতে হবে। এছাড়া, আমরা শুধুই চলমান সিরিজ নিয়ে কাজ করি। এটা একটা অভ্যাসের ব্যাপার। সমর্থকরা চাইবে, আমরা সব ম্যাচ জিতি। আজই গাছ লাগাব, কালই ফল চাইব। এ কারণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা কঠিন।

২০১৯ বিশ্বকাপে ম্যাচ সেরার পুরস্কার বিতরণীতে সাকিব; Image Credit: Gareth Copley-ICC/ICC via Getty Images

এখানে দেশের ক্রিকেট অভিভাবকের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্রিকেটারদের সমর্থনের ক্ষেত্রে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। এখানে আসলে একজন লং-টার্ম নীতিনির্ধারক প্রয়োজন। তাহলে অনেক ভালো কিছু ঘটবে। কৌশলগত অনেক কিছু পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

রাজনীতিতে আপনার অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে?

এই মুহূর্তে আমি শুধুই ক্রিকেট নিয়ে ভাবছি, এটা নিয়েই ভাবতে চাই। ভবিষ্যৎ পরে দেখা যাবে। ব্যাপারটা আমি বরং আলাদাই রাখি। পরিস্থিতি যদি পক্ষে থাকে, কেন নয়? তবে না হলেও সমস্যা নাই, যা আছে খারাপ নাই। 

This is an interview of star cricketer from Bangladesh, Shakib Al Hasan. Country's t-20 and test captain has talked about numbers of issues of Bangladesh cricket. All necessary links have been hyperlinked.

Feature Photo: BCB/Ratan Gomes

Related Articles