Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্টোকসকে ইংল্যান্ড ফেরাল কেন?

অবসর নিলেও তাহলে আজকাল আর বলা যাচ্ছে না, অমুক ক্রিকেটার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন?

প্রথমে মঈন আলীকে টেস্ট অবসর ভাঙিয়ে ফেরালেন বেন স্টোকস, মাসদুয়েক পরে তিনি নিজেই হয়ে গেলেন শিকার। এবার জস বাটলার তাকে বোঝালেন ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলে তার গুরুত্ব। ফলাফল: ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা হলো স্টোকসকে নিয়েই।

এমনিতেই ইংল্যান্ড তাদের ক্রিকেট দেখার চোখ আমূল বদলে ফেলেছে যে, সাদা বলের ক্রিকেটারে ছেয়ে গেছে পুরো দেশ। স্যাম হেইন, স্টিভি এসকানাজির মতো ক্রিকেটাররা অন্য যেকোনো দেশেই হয়তো হয়ে যেতেন অবধারিত চয়েজ, কিন্তু ইংল্যান্ড তাদেরকে আনতে পারছে না জাতীয় দলের চৌহদ্দিতেও। এরকম প্লেয়ার পুলে ভরা দেশটা কেন প্রাক্তন ক্রিকেটারকে বানিয়ে দিল বর্তমান, প্রশ্নটা তাই উঠছেই। তার ওপর এমন ক্রিকেটার, যিনি এতটাই ‘আনফিট‘ যে, অলরাউন্ডার পরিচয় ভুলে ‘স্পেশালিস্ট ব্যাটার‘ হিসেবেই দলে রাখতে হবে যাকে।

এটাই স্টোকসের শেষ নয়। Image credit: Getty Images

‘স্টোকসই কেন’ প্রশ্নের প্রথম ব্যাখ্যাটা হতে পারে কেবল মাঠের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটেই। ২০১৯-২০২৩ বিশ্বকাপ চক্রে মাত্র ৩১ গড়ে রান করার পরও যেহেতু দলে ডাকা হয়েছে জেসন রয়কে, অনুমান করাই যায়, বিশ্বকাপে এবারও ইংল্যান্ড রয়-জনি বেয়ারেস্টো জুটিতেই আস্থা রাখবে। ভারতের মাটিতে খেলা, তিন নম্বরে জো রুট তাই প্রায় নিশ্চিত ‘স্টার্টার‘। পাঁচে অধিনায়ক জস বাটলার খেলছেন, নিশ্চিত এটাও।

সেক্ষেত্রে চারে যদি হ্যারি ব্রুককে নিয়ে পরিকল্পনা করা হতো, তবে টপ-মিডল অর্ডার পুরোটাই ঠাসাঠাসি হয়ে যেত ডানহাতি ব্যাটারে। বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার কিংবা ডানহাতি রিস্টস্পিনার যেহেতু সব দলেই আছেন, ম্যাচ-আপ মানতে গেলে এই দলটা তাই আদর্শ হতো না কোনোভাবেই। বেন স্টোকসকে নেওয়াতে ইংল্যান্ড তাই বাঁহাতি বিকল্প পেল মিডল-অর্ডারে।

ব্রুকের জায়গাটা স্টোকসের। Image credit: Getty Images

স্টোকসের স্পিন খেলার সামর্থ্য হতে পারে আরেকটা প্রভাবক। এমনিতেই মরগানের অবসরের পর থেকে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপ বেশ ভঙ্গুর দশা পার করছে। এর পর থেকে খেলা ১৪ ইনিংসে নয়বারই অলআউট হয়েছে ইংল্যান্ড। সেটাও সেভাবে স্পিনের পরীক্ষা না দিয়েই।

মিডল-অর্ডারে খেলবেন, তা-ও আবার ভারতের মাটিতে, স্পিনটা ভালো খেলতেই হবে। কত কম ঝুঁকি নিয়ে, বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে পারেন, স্পিনারদের সাবলীলভাবে খেলতে পারেন – ইনিংসের দ্বিতীয় পাওয়ারপ্লেতে কেউ ব্যাটিংয়ে নামলে প্রথমে খুঁজে দেখা হয় এই সামর্থ্যগুলোই। মাঝের পাওয়ারপ্লেতে স্পিনারদের স্টোকস খেলেছেন ৪৭.৪৭ গড় আর ৯১.৯৭ স্ট্রাইক রেটে। ম্যাচ-আপ আর সামর্থ্যের প্রশ্নে স্টোকস তাই লেটার মার্কস পেয়েই উত্তীর্ণ।

কিন্তু, বাঁহাতি, স্পিন ভালো খেলেন এই যুক্তি দেখিয়ে দলে ডাকা হলে বেন ডাকেট কী দোষ করেছিলেন? তিনিও তো বাঁহাতি। স্পিনটাও যে খারাপ খেলেন না, গত পাকিস্তান সফরেই প্রমাণ রেখেছিলেন। এমন একজন ব্যাটার থাকার পরও কেন অবসর ভাঙিয়ে ফেরাতে হবে আরেক বাঁহাতি ক্রিকেটারকে?

মাঝের ওভারে আবারও রুট-স্টোকস জুটি। Image credit: Getty Images

এর উত্তরটা সম্ভবত ইংল্যান্ডের ২০১৯ বিশ্বকাপের সাফল্যে লুকিয়ে। ২০১৫ বিশ্বকাপের ভরাডুবির পরে যে বিশদ ‘সাংখ্যিক বিশ্লেষণ’ চালিয়েছিল ইসিবি, সেখানে উঠে এসেছিল যে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য অভিজ্ঞতা জরুরি। ২০১৫-১৯ চক্রে ইংল্যান্ড তাই গুরুত্ব দিয়েছিল ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর ওপর। বিশ্বকাপে ঢোকার আগে ৭৫-এর অধিক ম্যাচ খেলেছেন, ইংল্যান্ড গতবার এমন ক্রিকেটার পেয়েছিল ৯ জন।

ইয়োন মরগান ছেড়ে দিয়েছেন, লিয়াম প্লাংকেটকেও ছেটে ফেলা হয়েছে এর আগেই। অভিজ্ঞতা তাই এমনিতেই কমে যাচ্ছিল। এই দু’জনের শূন্যস্থান পূরণ করা যেত যেভাবে, ইংল্যান্ড বাছেনি সেই রাস্তাও। ওয়ানডে ক্রিকেটটাই তো ইংল্যান্ডের কাছে এখন আর গুরুত্ব পাচ্ছে না সেভাবে।

বিশ্বকাপ জিততে এক্সপেরিয়েন্স ম্যাটারস। Image credit: Getty Images

ওয়ানডে ক্রিকেট যে ইংল্যান্ডের কাছে আর গুরুত্ব পাচ্ছে না ততটা, সেটা বোঝা যাবে তাদের ওয়ানডে ম্যাচের সংখ্যা অকস্মাৎ কমে যাওয়াতেই। ২০১৫-১৯ চক্রে যেখানে ৮৮টা ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল তারা, এবারের বিশ্বকাপ চক্রে সংখ্যাটা নেমে গেছে অর্ধেকেরও নিচে।

‘দ্য হান্ড্রেড’-এর সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ঘরোয়া ক্রিকেটের ওয়ানডে ম্যাচগুলোও বয়কটই করতে হচ্ছে ইংলিশ ক্রিকেটারদের, ব্রুক যেমন সর্বশেষ ঘরোয়া ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৯ সালে। আর আন্তর্জাতিক ওয়ানডেও কমে গেছে বলে ক্রিকেটারদের ওয়ানডে ক্রিকেটের জল-হাওয়ার সঙ্গে পরিচিত করা যায়নি ঠিকঠাক। ব্রুককে ভবিষ্যৎ মানলেও ইংল্যান্ড যেমন এখন অব্দি মাত্র তিনটা ওয়ানডেই খেলাতে পেরেছে তাকে।

হ্যারি ব্রুক জায়গা পাচ্ছেনই না ওয়ানডেতে; Image Credit: Getty Images

স্টোকসকে অবসর থেকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ড তাই চেষ্টা করল অভিজ্ঞতা বাড়াতে। এবারও যেমন ৭৫-এর বেশি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বকাপে যাচ্ছেন, ইংল্যান্ড এমন খেলোয়াড় পাচ্ছে ৮ জন। আর, ভারতের মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতাতেও যথেষ্ট ঋদ্ধ তারা।

স্টোকসকে ইংল্যান্ড দলে ফেরাল কেন, প্রশ্নটার তাই একক কোনো উত্তর দাঁড় করানো মুশকিল। বরং, বলা যেতে পারে, বেশ কিছু প্রভাবক মিলে ইংল্যান্ডের নির্বাচকদের ঠেলে দিয়েছে এই সিদ্ধান্তে, বিশ্বকাপ ধরে রাখার মিশনে স্টোকসই সেরা বিকল্প।

তবে, অনেকেই বলছেন, স্টোকসকে দলে ফেরানোর এই সিদ্ধান্তটা হিতে বিপরীত হয়ে ফিরতে পারে আখেরে। ভবিষ্যতের জন্য কী বার্তা গেল, এমন নৈতিক প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। দল নির্বাচনের ধারাবাহিকতাই বা রক্ষা হলো কোথায়?

বাটলারের ভরসার নাম স্টোকস। Image credit: Getty Images

তবে, সব সময়ই পরিকল্পনাটা যে সুদূরপ্রসারী ভাবনায় করতে হবে, এই দিব্যিই বা কে দিয়েছে! ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে ইংল্যান্ড তাদের সাদা বলের প্লেয়ার পুলকে নিয়ে গেছে অস্পর্শনীয় গভীরতায়, দল নির্বাচনের টেবিলে ইংল্যান্ডকে বারবারই পড়তে হচ্ছে ‘মধুর সমস্যায়’। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড তাই ভাবতেই পারে তাৎক্ষণিক সাফল্য লাভের রাস্তা।

আর দল নির্বাচনে ধারাবাহিকতা কোথায় থাকল প্রশ্নগুলোও যে অর্থহীন, সেটা বেরিয়ে এসেছিল ইংল্যান্ডের আগাপাশতলা সাংখ্যিক বিশ্লেষণেই। আগের বছর ধরে যে দলই নির্বাচন করা হোক, বিশ্বকাপেও একই দল নিয়ে গেলে বিজয় সুনিশ্চিত, এর কোনো মানে নেই। বরং, কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খান, এমন ক্রিকেটাররাই হতে পারেন অস্ত্র।

আর স্টোকসের মতো ক্রিকেটার তো অস্ত্র নন, রীতিমতো মারণাস্ত্র।

This article is in Bangla language. This article is an analysis on Stokes' U-turn from ODI retirement and the logic behind it. Necessary images are attached inside.

Featured image © Getty Images

Related Articles