Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সেই সালাহকে কতটুকু মিস করেছে এই বিশ্বকাপ?

৮ অক্টোবর, ২০১৭

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঘরের মাঠে কঙ্গোর মুখোমুখি হয় মিশর। এ ম্যাচে জয় পেলেই দীর্ঘ ২৮ বছর পর আবারো বিশ্বকাপে সুযোগ পাবে মিশর। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মোহাম্মদ সালাহর গোলে ১-০ তে মিশর এগিয়ে গেলেও ৮৭ মিনিটে কঙ্গো খেলায় সমতা ফেরালে মিশরের জনতা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। তবে কি এবারো অল্পের জন্য বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হারাতে হবে? ৯৪ মিনিটে মিশরের পাওয়া পেনাল্টিটা যেন আট কোটি মিশরের জনতার জন্য আশার বার্তা হয়ে আসে। সেই পেনাল্টি থেকে মোহাম্মদ সালাহ গোল করার পর মিশর যেভাবে উল্লাস করেছে সেটা সকল ফুটবলপ্রেমীর আবেগকে জাগিয়ে তুলেছিলো। যে খেলোয়াড়ের হাত ধরে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছিলো মিশর, সেই সালাহর হাত ধরে বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা সাফল্যটা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলো সমগ্র মিশরবাসী। 

বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হওয়ার পর এভাবেই দর্শকদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন সালাহ; Image Source: businessinsider

লিভারপুলের জার্সিতে সালাহর অসাধারণ পারফর্মেন্স সেই আশার পালে নতুন হাওয়া হয়ে আসে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে লিভারপুলের জার্সিতে ৫২ ম্যাচে ৪৪ গোল করেছিলেন এই ফরোয়ার্ড। লিভারপুলের হয়ে এই অসাধারণ পারফর্মেন্সের কারণে অনেকেই সালাহকে মেসি-রোনালদোর সাথেও তুলনা করছিলেন! সালাহর পারফর্মেন্সে ভর করেই ১১ বছর পর আবারো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠে লিভারপুল। লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলে এসে নিজ দলের বিশ্বকাপ মিশনে ঠিকঠাকভাবে যোগ দিবেন সালাহ- এটাই ছিল মিশরের জনতার প্রত্যাশা। কিন্তু সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো ওই ফাইনালেই! বলের দখল নিতে গিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সার্জিও রামোসের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে কাঁধে চোট পান সালাহ। ওই ইনজুরির কারণে সালাহর বিশ্বকাপে খেলা নিয়েই বড় ধরনের সংশয় সৃষ্টি হয়!

এই একটি ঘটনা সালাহর বিশ্বকাপ স্বপ্ন এলোমেলো করে দিয়েছে; Image Source : Fox Sports

এক সালাহকে বিশ্বকাপে খেলতে মিশরের জনতার প্রার্থনার কথা মোটামুটি সবাই জানে। শেষপর্যন্ত সালাহকে রেখেই ২৩ সদ্যসের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করে মিশর। তবে পুরোপুরি সুস্থ সালাহকে বিশ্বকাপে পাওয়া নিয়ে সংশয়টা কিন্তু তখনো রয়ে গিয়েছিলো। শেষপর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে, সুস্থ না হওয়ায় উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটিতে খেলতে পারেননি সালাহ। সালাহকে ছাড়া মিশরও আর উরুগুয়ের সাথে পেরে উঠেনি, ম্যাচটি তারা হারে ১-০ গোলে।

পরের দুই ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়া ও সৌদি আরবের  বিপক্ষে খেলেছিলেন সালাহ। তবে সেই দুই ম্যাচে তার দৌড়গুলো দেখেই স্পষ্ট বুঝা গিয়েছে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র দেশের কথা চিন্তা করেই সেই অবস্থায় মাঠে নেমে গিয়েছিলেন সালাহ। যদিও দুই ম্যাচে দুই গোল পেয়েছিলেন সালাহ, কিন্তু তার সেই জাদুকরী পারফর্মেন্স দেখা যায়নি। মিশরও সবগুলো ম্যাচ হেরে বিদায় নিয়েছে খালি হাতেই। অথচ এই বিশ্বকাপে অন্যতম শক্তিশালী আন্ডারডগ ধরা হচ্ছিলো সালাহর মিশরকে। এই বিশ্বকাপ কতটা মিস করেছে সেই পুরোপুরি সুস্থ সালাহকে? সালাহর এই ইনজুরি আর কোনদিকে প্রভাব রেখেছে? আজ আমরা সেসব নিয়েই আলোচনা করবো।  

ফারাওদের স্বপ্নভঙ্গ

সালাহর এই ইনজুরি সবচেয়ে বড় প্রভাব রেখেছে মিশর দলের পারফর্মেন্সে। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ খেলতে আসা মিশর সালাহকে কেন্দ্র করেই নিজেদের সমস্ত রণকৌশল সাজিয়েছিলো। কিন্তু সালাহর ইনজুরি মিশরের সমস্ত পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দেয়। উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটা যারা দেখেছেন তারা সবাই একমত হবেন যে সেই ম্যাচে সালাহ থাকলে ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো।

পরের দুই ম্যাচে সালাহ খেলেছেন ঠিকই, কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় নিজের দলকে আগের মতো সেবা দিতে পারেননি। রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর সাবেক স্কটিশ উইঙ্গার প্যাট নেভিন তো বলেই দিয়েছেন “রাশিয়ার বিপক্ষে সালাহ যতগুলো সুযোগ পেয়েছিলেন সেগুলো থেকে ফুলফিট থাকলে সে কতগুলো গোল করতেন এটা ভেবেই আমি অবাক হচ্ছি।” সালাহর এই ইনজুরি আট কোটি মিশরীয়র স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিয়েও জয়ের দেখা না পেয়েই ফারাওদের বিশ্বকাপ শেষ হলো। 

মোহাম্মদ সালাহর এই গোল সত্ত্বেও বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পায়নি মিশর; Image Source : telegraph

ম্যাড়ম্যাড়ে এক গ্রুপ

ডিসেম্বরে যখন বিশ্বকাপের গ্রুপিং হয় তখন গ্রুপ এ-কে দেখে সবাই কিছুটা হতাশ হয়েছিলো। কারণ এই গ্রুপের চার দল স্বাগতিক রাশিয়া, উরুগুয়ে, মিশর, সৌদি আরব- কেউই সেই অর্থে বর্তমান ফুটবলের পরাশক্তি নয়। তা-ও অনেকেই আশা করেছিলো রাশিয়া ও উরুগুয়ের সাথে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে যাওয়ার জন্য সালাহর মিশরের জমজমাট এক লড়াই হবে । কিন্তু সালাহর ইনজুরি সবার সেই আশা মাটি করে দিয়েছে।

প্রথম দুই ম্যাচে হেসেখেলে জিতে রাউন্ড অফ সিক্সটিনের টিকিট কেটেছে উরুগুয়ে ও সৌদি আরব। অথচ সেই চিরচেনা সালাহকে দেখা গেলে এই গ্রুপটা বেশ জমজমাট হতে পারতো। সালাহর প্রসঙ্গে মিশরের কোচ হেক্টর কুপার বলেছেন“ইনজুরির কারণে সালাহ আমাদের সাথে অনুশীলন করতে পারেনি, তাকে একা একা অনুশীলন করতে হয়েছে। আমরা জানি সে কত বড় মাপের খেলোয়াড়, সে ইনজুরিতে না পড়লে সবকিছু অন্যরকম হতে পারতো।”  

সাইডলাইনে বসে উরুগুয়ের বিপক্ষে দলের হার দেখছেন মোহাম্মদ সালাহ; Image Source : Dailymail

অন্যতম বড় তারকার উজ্জ্বল আলো থেকে বঞ্চিত হওয়া

বিশ্বকাপের অন্যতম আকর্ষণ বড় তারকাদের বিশ্বমঞ্চে পারফর্ম করতে দেখা। এই তারকারা নিজেদের সেরাটা খেললে বিশ্বকাপের আকর্ষণ আরো বেড়ে যায় তা বলাই বাহুল্য। এই বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ তারকা ধরা হয়েছিলো লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, আঁতোয়ান গ্রিজম্যান ও মোহাম্মদ সালাহকে। কিন্তু এই পঞ্চপান্ডবের মধ্যে মোহাম্মদ সালাহর সেই বিধ্বংসী রূপ থেকে এই বিশ্বকাপ বঞ্চিত হলো। তাছাড়া গ্রুপপর্ব থেকেই মিশর বিদায় নেওয়ায় সালাহর মতো তারকা মাত্র দুটি ম্যাচে নামার সুযোগ পেয়েছেন। সব মিলিয়ে ইনজুরির কারণে সালাহর মতো বড় তারকার জ্বলে না ওঠাটা এই বিশ্বকাপের এক আক্ষেপ হিসেবেই থেকে যাবে। 

সালাহর পাগল ভক্তদের উপস্থিতি কমে যাওয়া 

মিশরের জনতাসালাহকে কতটা  ভালোবাসে এটা তো আমরা কমবেশি সবাই জানি। মিশরের জনতার কাছে সালাহ হচ্ছেন জাতীয় নায়ক। মিশরের জাতীয় ভোটে অনেক মানুষ সালাহর নাম ব্যালটে লিখে দিয়েছিলো! মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবা নেইমার সবাই নিজ নিজ দেশে ভীষণ জনপ্রিয়, কিন্তু সালাহর জনপ্রিয়তা এদের সবার থেকে আলাদা। সালাহর ভক্তদের পাগলামি অন্য সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। রাশিয়া বিশ্বকাপেও সালাহর এই ভক্তদের কিছুটা দেখা গিয়েছে, তবে সালাহ নিজের সেরাটা খেলতে পারলে এমন ভক্তদের আরো বেশি পরিমাণে দেখা যেত তা বলাই বাহুল্য। সেদিক থেকেও এই বিশ্বকাপ কিছুটা বঞ্চিত হয়েছে। 

সালাহর পাগল ভক্তদের পাগলামির কিছু নমুনা; Image Source : BBC

ব্যালন ডি’অরের প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়া

এভারের ব্যালন ডি’অর জেতার প্রতিযোগিতায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর লিওনের মেসির সাথে মোহাম্মদ সালাহর নামটাও বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছিলো। লিভারপুলের হয়ে অনবদ্য এক মৌসুম পার করায় এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। তবে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে যাওয়ায় সালাহ সেই রেসে কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিলেন। সেই রেসে ফেরার জন্য সালাহর সামনে বড় সুযোগ ছিল এই বিশ্বকাপ, দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে বড় কিছু করলে সালাহ আবারো ব্যালন ডি’অর জেতার দৌড়ে চলে আসতেন তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সালাহর দল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার কারণে সেই সুযোগটাও হারিয়ে ফেললেন তিনি। অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নিজে চার গোল করে পর্তুগালকে পরের পর্বে নিয়ে গিয়েছেন। তাই এই ইনজুরির কারণে সালাহ ব্যালন ডি’অর রেস থেকেও একপ্রকার ছিটকেই গিয়েছেন। 

বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দিতে পারলে ব্যালন ডি’অরের রেসে রোনালদোর সাথে সালাহও থাকতে পারতেন; Image Source : BBC

পরিশেষে একটাই কথা, কিছু মহান খেলোয়াড়ের অনবদ্য পারফর্মেন্স বিশ্বকাপের এই মাহাত্ম্যের অন্যতম বড় একটি কারণ। ভাগ্যটা সহায় থাকলে সেই তালিকায় মোহাম্মদ সালাহর নামটাও ঢুকে যেতে পারতো। একটি অপ্রত্যাশিত ইনজুরি শুধুমাত্র একজন খেলোয়াড়ের স্বপ্ন ভাঙ্গেনি, সেই ইনজুরি আট কোটি মিশরিয় জনতার স্বপ্নকেও আঘাত করেছে। শুধু সালাহ নয়, ইনজুরির কারণে ব্রাজিলের দানি আলভেজ, আর্জেন্টিনার সার্জিও রোমেরো, লানজিনির বিশ্বকাপ স্বপ্নও ভেঙ্গে গিয়েছে। ইনজুরির কারণে আর কোনো খেলোয়াড়ের বিশ্বকাপ স্বপ্ন যাতে বিবর্ণ না হয়, আর কোনো জাতির স্বপ্ন যাতে ভেঙ্গে না যায় সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। 

ফিচার ইমেজ : The Natioanl 

Related Articles