স্মার্টফোন যত দামিই হোক না কেন, সবারই কম-বেশি প্রধান অভিযোগ ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে। স্মার্টফোনের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। সাধারণত ব্যাটারি যে কোম্পানির বা যে উপাদান দিয়েই তৈরি হোক না কেন, সব ব্যাটারির ক্ষেত্রে চিরন্তন সত্য হলো, বানানোর দিন থেকে এর চার্জ ধারণক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে, সেটা সামান্য হলেও। কিন্তু মোবাইল সিস্টেম মনে করে, এটা কখনোই পরিবর্তিত হয় না।
স্মার্টফোনগুলো যেন একেকটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার। এমনকি সাধারণ কম্পিউটারের চেয়েও বাড়তি কিছু পাওয়া যায় স্মার্টফোনে। তবে সাধারণ কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে ব্যাটারির চার্জ বেশি সময় ধরে রাখা যায়। আসুন তাহলে জেনে নিই স্মার্টফোনে চার্জ ধরে রাখার ১১টি কার্যকরী উপায়।
১. সারা রাত চার্জ নয়
অনেকেই রাতের বেলা ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে উঠে দেখা যায়, ১০০% চার্জ হয়ে গেছে। সারা রাত ফোনে চার্জ দেয়ার এই প্রবণতা আমাদের অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, সারা রাত চার্জ দেয়ার ফলে ফোনের ব্যাটারি বাজেভাবে আক্রান্ত হয়। এছাড়া সারা রাত চার্জের ফলে ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে বিস্ফোরণও ঘটতে পারে।
তাই এই কাজটি সব সময় এড়িয়ে চলা উচিত। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে, আপনি একটি গ্লাস পানি দিয়ে পূর্ণ হবার পরেও অবিরত পানি ঢালছেন এবং গ্লাস উপচে পানি পড়ছে। যদিও এতে গ্লাসের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, কিন্তু পানির অপচয় হচ্ছে। ঠিক তেমনি, একটানা সারা রাত চার্জ দেয়ার ফলে আপাতদৃষ্টিতে ফোনের কোনো ক্ষতি না হলেও ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে।
২. ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা
স্মার্টফোনের একটি বড় অংশ হচ্ছে এর স্ক্রিন। চার্জ ধরে রাখার জন্য পর্দার ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখা ভালো। ফোনের সেটিংস থেকে এটি পরিবর্তন করা যায়। আবার কিছু মোবাইলে ব্রাইটনেস পরিবর্তনের জন্য শর্টকাট কী-ও থাকে। কিছুদিন ব্যবহার করলেই কম আলোর পর্দার সঙ্গে মানিয়ে নেয়া যায়। ডিসপ্লের ব্রাইটনেস যথাযম্ভব কমিয়ে দিন। দেখবেন আপনার মোবাইলে ব্যাটারির চার্জ অনেক বেশি সময় ধরে থাকছে।
৩. ভাইব্রেশন
ভাইব্রেশন ফাংশন অতিরিক্ত ব্যাটারি শক্তি ব্যবহার করে থাকে। তাই অতি প্রয়োজন না হলে ভাইব্রেশন মোড বন্ধ রাখতে পারেন। আর রিংটোন ভলিউম যতটুকু সম্ভব কমিয়ে রাখুন। বেশি ভলিউমও অতিরিক্ত ব্যাটারি শক্তি নিয়ে থাকে।
৪. নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার করা
স্মার্টফোনে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করা যায়। এগুলোর ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন মাত্রার মেমোরি, প্রসেসিং পাওয়ার লাগে। যেমন- ভিডিও দেখা বা উচ্চমানের গ্রাফিকসের গেম খেলার জন্য যে পরিমাণে ব্যাটারি খরচ হয়, তার থেকে অনেক কম ব্যাটারি খরচ হয় নোট লেখা বা ই-বুক পড়ার অ্যাপ ব্যবহার করলে। আবার একাধিক অ্যাপ একইসাথে ব্যবহার করা হলেও দ্রুত ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যেতে পারে।
৫. স্ক্রিন লকের সময়সীমা
অ্যান্ড্রয়েড প্রায় সব ফোনেই স্ক্রিন লক করার একটি অপশন থাকে। স্ক্রিন লক হওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা ধার্য করা থাকে। এই বৈশিষ্ট্যটি নির্ধারণ করে দেয় যে, ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনি ঠিক কতখানি সচেতন। ফোনের ব্যবহার শেষ হবার সাথে সাথে তা লক করে রাখা উচিত। লক থাকা অবস্থাতেও কল এবং এসএমএস আসবে। ফোন লক করা না থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু সেবা চলে এবং স্বাভাবিকভাবেই এতে ব্যাটারি খরচ হয়। আর লক করার আরও একটি সুবিধা হলো, ভুলবশত পর্দার কোথাও আঙুলের চাপ লাগলে কল চলে যাবে না বা কোনো অ্যাপ খুলবে না।
৬. ব্লুটুথ, জিপিএস ও ইনফ্রারেড ব্যবহার না করলে বন্ধ রাখা
মোবাইলের এসব ফাংশন ব্যাটারি শেষ করার জন্য একরকম নাটের গুরু হিসেবে পরিচিত। যখন এসব ফাংশন ব্যবহার করছেন না, তখন বন্ধ রাখুন।
জিপিআরএস, জিপিএস, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথের মতো বেতার সংযোগগুলো প্রয়োজনের সময় ছাড়া বন্ধ রাখা উচিত। কারণ এই সংযোগগুলো চালু থাকলে সেগুলো নিকটবর্তী সংযোগ উৎসটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে থাকে। আর এ সময় যে পরিমাণ ব্যাটারি খরচ হয়, তা সেবা ব্যবহারের সময়ের চেয়েও বেশি।
৭. পুশ নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা
ই-মেইল, ফেসবুক, গুগল প্লাস, টুইটারসহ আরও বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশনে ‘পুশ নোটিফিকেশন’ নামের একটি সুবিধা থাকে। এটা চালু থাকলে মোবাইল ফোনটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সার্ভার থেকে নতুন তথ্য সংগ্রহ করে। ফলে প্রয়োজন না থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পর পর ফোনটি নিজের মতো করে কাজ করবে আর চার্জ খরচ হবে।
৮. অতিরিক্ত ব্যাটারি
দ্রুত চার্জ শেষ হয়ে যায়, বলে অনেকেই অতিরিক্ত ব্যাটারি সঙ্গে রাখেন। যেন প্রয়োজনের সময় একটির চার্জ ফুরিয়ে গেলে অপরটি ব্যবহার করা যায়। বর্তমান সময়ের সব স্মার্টফোনেই লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার অনেকেই অতিরিক্ত চার্জার ব্যবহার করেন। কেউ কেউ আবার ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কিছুক্ষণ পরপরই চার্জ করার চেষ্টা করেন। তবে জেনে রাখা ভালো, মাসে অন্তত একবার ফোনের চার্জ সম্পূর্ণ শেষ হতে দিয়ে পুনরায় চার্জ করা উচিত। এতে ব্যাটারি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।
৯. ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা
স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য যখনই সম্ভব মোবাইল নেটওয়ার্কভিত্তিক ইন্টারনেট যেমন জিপিআরএস, থ্রিজির তুলনায় তারহীন ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা ভালো। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় অন্যান্য প্রযুক্তির ইন্টারনেট ব্যবহারের চেয়ে কম ব্যাটারি খরচ হয়। বাসা, অফিস বা অন্য কোথাও ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় সেখানে যদি ওয়াই-ফাই থাকে, তবে মোবাইলের ডাটা কানেকশন ব্যবহার না করে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করলে চার্জ ব্যয় কম হয়।
১০. লক স্ক্রিন নোটিফিকেশন চালু করুন
স্মার্টফোনের চার্জ বাঁচানোর আরেকটি ভালো বুদ্ধি হচ্ছে লক স্ক্রিন নোটিফিকেশন চালু করে রাখা। এতে বারবার আপনাকে লক খুলে নোটিফিকেশন দেখতে হবে না। ফলে চার্জ কম খরচ হবে।
১১. লো-পাওয়ার মোড
আপনার ফোনে যদি অ্যানড্রয়েড ৫.০ বা এর পরের ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম থাকে, তাহলে আপনার কপাল ভালো। কারণ ফোনের চার্জ ১৫ শতাংশের কম হলেই এসব অপারেটিং সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লো-পাওয়ার মোড চালু হয়ে যায়। অ্যানড্রয়েড অপারেটিংয়ের মার্শম্যালো ভার্সনে রয়েছে ‘ডোজ’ নামে একটি নতুন ফিচার। স্মার্টফোনের চার্জ কমে গেলে এই ফিচার ফোনটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাইবারনেশন মোডে নিয়ে যায় আর অনেকক্ষণ ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় থাকা অ্যাপগুলো বন্ধ করে দেয়।
মোবাইল ফোন ব্যবহারে একটু সচেতন হলে আর চার্জ অপচয় হবার উপরের দিকগুলো এড়িয়ে চললে আশা করা যায়, ফোনের চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ার এই সমস্যা থেকে আপনি সহজেই মুক্তি পাবেন।
ফিচার ইমেজ- Techadvisor