Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইনস্টাগ্রামের উত্থান, যাত্রা ও সাফল্য

ইনস্টাগ্রাম, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট। তুমুল জনপ্রিয় কিছু সোশ্যাল সাইট, যেমন; ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, মেসেঞ্জারের সাথে ইনস্টাগ্রামকে এক কাতারে দাঁড় না করালে, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তালিকা যেন অপূর্ণই থেকে যায়। ইনস্টাগ্রাম ইমেজ শেয়ারিং সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি, স্মার্টফোন ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মধ্যে ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং প্ল্যাটফর্ম। ফিটনেস, ট্রাভেলিং, বিউটি ও ফ্যাশন-ফিলগুড ধাঁচের ভিজুয়াল কন্টেন্ট অধিক হারে শেয়ারের কারণে ইনস্টাগ্রাম বিশ্বব্যাপী কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সকল সেলিব্রেটি, ফিল্ম স্টার, ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। Backlinkco এর এক আর্টিকেল অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১.৩৮৬ বিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী নিয়ে বিশ্বের সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মধ্যে ইনস্টার অবস্থান বর্তমান অবস্থান চতুর্থ।

ইনস্টাগ্রাম বর্তমানে অন্যতম সেরা এক সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট; Image Source : Pexels

ইতিহাস

২০০৯ সালে ২৭ বছর বয়সী কেভিন সিস্ট্রম Nextstop নামে একটি ট্রাভেল রেকোমেন্ডেশন স্টার্টআপে কর্মরত ছিলেন। তখন তার মাথায় নতুন এক অ্যাপের ভাবনা উদ্ভব হয়। ধারণাটি ছিল এ রকম, তৈরি করা অ্যাপে Location Check-in এর পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে Future Meetup Plan এবং Meetup Picture Post ধরনের কিছু ফিচার থাকবে।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়া কেভিন সিস্ট্রমের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কোডিংয়ে পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে কর্পোরেট ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েট হিসেবে সিস্ট্রম আগে অবশ্য গুগলে কাজ করেছেন। তাই কেভিন তার সাপ্তাহিক ছুটির পাশাপাশি অবসর সময়গুলো খুঁজে বের করে কোডিং শিখতে থাকেন। কোডিং চর্চার একপর্যায়ে তিনি Burbn নামে একটি ওয়েব অ্যাপ প্রোটোটাইপ তৈরি করে ফেলেন। ২০১০ সালের মার্চ মাসে সিলিকন ভ্যালি ভিত্তিক একটি স্টার্ট-আপ পার্টিতে যোগ দিলে, সেখানে ‘Baseline Ventures’ এবং ‘Andreessen Horowitz’ নামক দুইটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের বিনিয়োগকারীদের সাথে পরিচিত হন তিনি। সে পার্টিতেই কেভিন দুইজনকে Burbn এর প্রোটোটাইপ দেখান। প্রোটোটাইপ দেখে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় তারা অ্যাপটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশের সাথে পরবর্তী মিটিংয়ের সময় ও জায়গা নির্ধারণ করে দেন। দুই বিনিয়োগকারীর সাথে দীর্ঘ মিটিংয়ের পর কেভিন Nextstop এর চাকরি থেকে ইস্তফা নিয়ে পরিপূর্ণ মনোযোগ ঢালেন Burbn এর দিকে।

কেভিন সিস্ট্রম; Image Source : Wired

দুই সপ্তাহের মধ্যেই দুই ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম থেকে তিনি ৫০০,০০০ মার্কিন ডলার সিড ফান্ডিং নিতে সক্ষম হন। ফান্ডিং পাবার পরপরই তিনি একটি পরিপূর্ণ দল গঠনের কথা চিন্তা করেন। স্ট্যানফোর্ডে অধ্যয়নের সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মাইকেল ক্রেইগারের সাথে পরিচয় হয়েছিল তার। কেভিন Burbn কে পরিপূর্ণ একটি কাঠামোতে দাঁড় করানোর জন্য ক্রেইগারকে দলে ভিড়িয়ে নেন।

ক্রেইগার এর আগে ‘Meebo’ নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ এবং ‘ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনার’ হিসেবে কাজ করছিলেন। দুইজন মিলে Burbn নিয়ে আরও চুলচেরা বিশ্লেষণ চালিয়ে যান। গবেষণায় মোট তিন দিকে ফোকাস রেখেছিলেন তারা। সেগুলো হলো Check-in, Meetup Plan এবং Photo Sharing।

ব্যবহারকারীদের মাঝে ‘Check-in’ এবং ‘Meetup’ প্ল্যানের চেয়ে ‘Photo Sharing’ দিকটি বেশি জনপ্রিয়- গবেষণায় মূলত এই ফলাফলটি উঠে আসে। এজন্য তারা মোবাইলে তোলা ছবি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারকৃত ছবি নিয়ে বিস্তর ঘাটাঘাটি শুরু করেন। প্রথমেই তাদের তত্ত্বানুসন্ধানের মূল বিষয় হয় বাজারে থাকা ফটোগ্রাফি অ্যাপগুলো। সেসময় তাদের নজরে আটকে যায় ‘Hipstamatic’ নামে একটি ডিজিটাল ফটোগ্রাফি অ্যাপের দিকে, যা সেসময় মার্কেটে বেশ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিল। অ্যাপটিতে বিভিন্ন নজরকারা ফিল্টার থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ারের কোনো অপশন ছিল না তাতে। তারা ভাবলেন, এমন একটি অ্যাপ তৈরি করা দরকার, যা দিয়ে ফিল্টারকৃত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা যাবে।

সেই সূত্র ধরে তারা ‘Hipstamatic’ ও ‘Facebook’ এর বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে একটি অ্যাপ তৈরি করেন। পরবর্তীতে অ্যাপটির নাম পরিবর্তন করে Instagram রাখা হয়। Instagram শব্দটি মূলত ‘Instant Camera’ এবং ‘Telegram’ শব্দের কম্বিনেশন।

মাইকেল ক্রেইগার; Image Source : Christopher Michel/Wikimedia Commons

শুরুর দিকে ফটো শেয়ারিং এক্সপেরিয়েন্স বৃদ্ধির দিকে নজর দেন তারা। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল অ্যাপটিতে সামান্য ক’টা ফিচারই থাকবে, তবে সেগুলো ব্যবহারকারীদের কাছে হয়ে উঠবে খুবই প্রয়োজনীয়। ৮ সপ্তাহে মোট ৫ বার তারা অ্যাপটি আপডেট করেন। তারপর এর ভিন্ন ভিন্ন বেটার ভার্সন বন্ধুদের ব্যবহার করতে দিয়ে পরীক্ষা চালান। ওই পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন এবং বাগ ফিক্সের পর ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর অ্যাপটি বাজারে লঞ্চ করা হয়। তবে শুরুতে শুধুমাত্র আইফোনের জন্য উন্মুক্ত করা হয় অ্যাপটি। কারণ ২০১০ সালের ২৪ জুন রিলিজ হওয়া iPhone 4 এর ক্যামেরা ফিচারের দিকে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিল। ইনস্টার ফিল্টারও সেই ফিচারিক পালে নতুন হাওয়া যোগ করে। ফলশ্রুতিতে, মানুষ ছবি তোলার প্রতি বেশি আগ্রহী হতে থাকে। যে কারণে ইনস্টা দ্রুত গতিতে ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিতে সক্ষম হয়। মুক্তির প্রথম দিনেই এটি ২৫০০০ বার ডাউনলোড হয়, সপ্তাহ শেষে যা ১০০০০০ এর ঘরে গিয়ে পৌঁছায়।

আইফোন ফোরের জন্য সর্বপ্রথম রিলিজ দেওয়া হয় ইনস্টাগ্রাম অ্যাপ; Image Source : Pixabay

সেবছরের ডিসেম্বরে ইনস্টাগ্রাম অ্যাপের ইউজার সংখ্যা এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। ইনস্টাগ্রামের এমন অভূতপূর্ব উন্নতি ও সাফল্য দেখে আরও অনেক বিনিয়োগকারী এতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে Series A ফান্ডিং থেকে ৭ মিলিয়ন ডলার আদায় করতে সক্ষম হয় ইনস্টাগ্রাম। ফলে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারের মতো ইনস্টাগ্রামও দ্রুত চলে আসে পাবলিক লাইমলাইটে। ২০১১ সাল থেকেই বিভিন্ন সেলিব্রেটি ইনস্টাগ্রামে নিজেদের অ্যাকাউন্ট খুলতে থাকে। খুব সহজেই অনেক বেশি ফ্যান ফলোয়ারদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হওয়াতে, তারকারা এই প্ল্যাটফর্মটিতে অ্যাকাউন্ট খুলাতে আগ্রহ দেখাচ্ছিল বেশি। সেলিব্রেটিদের অনুসরণ করে বিজনেস ব্র্যান্ডগুলোও ইনস্টাগ্রামের প্রতি নিজেদের ফোকাস বাড়াতে শুরু করে। প্ল্যাটফর্মটির সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে শুরু করল বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সারও। ফলে নতুন নতুন সেলিব্রেটি, ব্র্যান্ড এবং ইনফ্লুয়েন্সারে ফুলে ফেঁপে উঠতে লাগলো ইনস্টাগ্রাম।

২০১২ সালে টুইটারের কো-ফাউন্ডার জ্যাক ডোর্সি জানান, ইনস্টাগ্রাম আগ্রহী হলে তিনি ৫২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ইনস্টাগ্রামকে কিনে নিতে চান। কিন্তু কেভিন সিস্ট্রম জ্যাক ডর্সির এই প্রস্তাবে কোনো গ্রিন সিগন্যাল দেননি। সেবছর মার্চে এই ইনস্টাগ্রাম অ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ মিলিয়নে। ওইদিকে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম তখন ক্রমশ বাজারে তার জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে। ওই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলের ৩ তারিখ অ্যান্ড্রয়েড ২.৩ ভার্সনের জন্য প্লে স্টোরে ইনস্টাগ্রাম অ্যাপটি অবমুক্ত করা হয়। একদিনেরও কম সময়ে এটি ১ মিলিয়ন ডাউনলোডের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে অ্যান্ড্রয়েড ২.৩ ভার্সনের জন্য সর্বপ্রথম রিলিজ পায় ইনস্টাগ্রাম অ্যাপ; Image Source : Buzz Feed Ng

ইনস্টার এমন গগনচুম্বী জনপ্রিয়তা দেখে ফেসবুক নিজেদের আগ্রহ নিয়ে উঁকি দেয় তাতে। সে মাসেই ফেসবুক ১ বিলিয়ন ডলার ক্যাশ ও স্টকের বিনিময়ে ইনস্টাগ্রামকে নিজেদের ছায়াতলে নিয়ে আসে। তবে এক্ষেত্রে কেভিন সিস্ট্রম শর্ত দিয়েছিলেন, ইনস্টাগ্রাম ফেসবুকের অ্যাকুজিশনে থাকলেও, ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বতন্ত্র কোম্পানি হিসেবে এটি পরিচালিত হতে থাকবে। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসের শেষদিকে ইনস্টার মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ মিলিয়ন ছুঁয়ে ফেলে। এর সাত মাস পর নভেম্বরে, অল্পসংখ্যক ফিচার নিয়ে ইনস্টাগ্রাম তাদের ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু করে। ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে ইন্সটাগ্রামের একটিভ ইউজারের সংখ্যা ১০০ মিলিয়ন অতিক্রম করে। সে বছর জুন মাসে অ্যাপে যুক্ত করা হয় ভিডিও শেয়ারিং ফিচার। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ইনস্টাগ্রাম যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেটে ‘স্পনসরড পোস্ট অ্যাডভারটাইজমেন্ট’ এর পরিচয় ঘটায়। এরপরের বছর আগস্টে ইনস্টাগ্রামকে ‘বিজ্ঞাপন-বান্ধব’ করার উদ্দেশ্যে ইনসাইট ও অ্যানালাইটিকস সহ বেশকিছু বিজনেস টুলস যুক্ত করা হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে ইনস্টাগ্রাম বিভিন্ন অ্যাডভারটাইজিং ফিচার ইন্ট্রোডিউজ করতে থাকে। ২০১৪ তে তারা ‘অ্যামাজন ফায়ার’ ডিভাইস এর জন্য অ্যাপটি ডিজাইন করে ফেলে। অবশেষে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইনস্টাগ্রাম বিশ্বব্যাপী অ্যাড ফিচার উন্মুক্ত করে দেয়।

ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী বৃদ্ধির তুলনামূলক গ্রাফ; Image Source : Company Data

ইনস্টাগ্রাম অ্যাপের প্রথমদিকের ভার্সনে তাদের মিডিয়া ডিসপ্লে ছিল স্কয়ার রেশিও (যে অনুপাতে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সমান থাকে; ১ঃ১)। এর মানে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা তখন শুধু ৬৪০ পিক্সেল দৈর্ঘ্যের ছবিই আপলোড দিতে পারত। ২০১৫ তে সেই ফিচারে পরিবর্তন আনা হয়, যাতে ১০৮০ পিক্সেলের চেয়ে বেশি দৈর্ঘ্যের ছবিও আপলোড দেওয়া যায়। ইনস্টাগ্রাম ৫০০ মিলিয়ন একটিভ ইউজারের মাইলফলক ছোঁয় ২০১৬ সালের জুনে। সে বছর মাইক্রোসফট উইন্ডোজ চালিত ট্যাবলেট ও কম্পিউটারের জন্য ইনস্টাগ্রাম রিলিজ দেয়া হয়। নতুনত্ব আনার উদ্দেশ্যে আগস্ট মাসে স্ন্যাপচ্যাটের মতো স্টোরি ফিচারও যুক্ত করা হয়। রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠে ফিচারটি। 99Firms এর এক তথ্যসূত্রে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইনস্টা ইউজার এই ফিচারটি ব্যবহার করে থাকে।

আইজিটিভি; Image Source : Instagram

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ইনস্টাগ্রাম বিশটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শপিং বিজনেসকে সাথে নিয়ে ‘Shopping’ ফিচারটি শুরু করে, এবং সে ধারাতেই ২০১৭ সালের মার্চে ফিচারটি গ্লোবালি লঞ্চ করা হয়। শপিং ফিচারটি ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য এক নয়া সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। অংশগ্রহণ করা ব্র্যান্ডগুলোকে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বাহারি ধাঁচের প্রোডাক্ট অ্যাড করার সুযোগ দিয়েছিল, ফলে ব্যবহারকারীরা প্রোডাক্ট সম্বন্ধীয় বিভিন্ন তথ্য পেয়ে যাচ্ছিল এক ছাদের নিচে, সহজে। এছাড়াও এতে যুক্ত করা ছিল ‘Shop Now’ নামক একটি বাটন, যা রিটেলারের ওয়েবসাইটকে সরাসরি যুক্ত করে রাখত ফিচারটিকে। ফিচারটি আসার পরেই ইনস্টাগ্রামে সেলিব্রেটি ও ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে ব্র্যান্ডগুলোর কোলাবোরেশান গ্রাফ এক লাফে ঊর্ধ্বগামী হয়ে ওঠে।

ইনস্টাগ্রামের শপিং ফিচার; Image Source : Instagram

বাজারে উপস্থিত অন্যান্য ভিডিও প্ল্যাটফর্মের সাথে টেক্কা দেওয়ার জন্য তারা ২০১৮ সালের জুন মাসে IGTV নামে এক ভিডিও প্লাটফর্ম লঞ্চ করে। সে মাসেই ইনস্টা পৌঁছে যায় ১ বিলিয়ন একটিভ ইউজারের ঘরে। এরপর তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্মগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা। তাই ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ‘Reels’ নামে একটি ফিচার ইনস্টাগ্রামে যুক্ত করা হয়।

জনপ্রিয়তার পাশাপাশি আয়ের দিক থেকেও ইনস্টাগ্রাম ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করে দেখিয়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে ইনস্টার বার্ষিক রাজস্ব ছিল ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৬ তে সেখানে রাজস্ব চলে যায় ১.৮ বিলিয়নের ঘরে। এরপরের বছরগুলোতে রাজস্বের হার দ্বিগুণ, তিনগুণ, কখনো বা চারগুণ হারে বেড়েছে। যেমন, ২০১৭ তে ৪.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব থাকলেও ২০১৮ তে তা পৌঁছে যায় ১০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০২১ এ এসে যা প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ তে ইনস্টা ফেসবুকের সাথে মোট রাজস্বের ৩.৩ শতাংশ শেয়ার করলেও, বর্তমানে (২০২০) তা দাঁড়িয়েছে ৩৬.৯ শতাংশে। অথচ, ২০১৮ সালেও তা ছিল ১৮.১%।

ইনস্টাগ্রামের রাজস্ব বৃদ্ধির তুলনামূলক গ্রাফ; Image Source : E-Marketer/Bloomberg/Facebook

ইন্সটাগ্রামের এই আকাশচুম্বী সাফল্য ও জনপ্রিয়তা হুট করেই চলে আসেনি। এর জয়যাত্রার পেছনে ধনাত্মক প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে সুপরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারী কিছু অভিসন্ধান। বাজারে তখন বহু ইমেজ শেয়ারিং অ্যাপ থাকলেও শুধুমাত্র ইনস্টাগ্রামেই ‘সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার’ অপশন ছিল। আর অ্যাপের সহজ-সরল ও চিত্তাকর্ষক ইন্টারফেস ইউজারদের খুব সহজেই আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল। যাকে বলা যায় ‘সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস’। এছাড়া শুধু মোবাইল-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম হওয়ায়, ইনস্টাগ্রাম সবসময় তাদের নজর রেখেছিল অ্যাপ অপটিমাইজেশনের দিকে। কারণ, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল ইউজার এক্সপেরিয়েন্স সবসময় স্মুথ ও টপ-নচ রাখা।

স্মার্টফোন যাত্রার শুরুর দিকে ব্যবহারকারীরা যখন ভিজুয়াল মিডিয়ার প্রতি আসক্ত হচ্ছিল, তখনই ইনস্টাগ্রাম তাদের আকর্ষণীয় ফিল্টার ফটো এডিটিং ফিচার টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিল। পৃথিবীর নানা প্রান্তের জনপ্রিয় সকল সেলিব্রেটিরা ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খোলায়, তা দ্রুত অ্যাপটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়তা করেছিল। ভিজুয়াল ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া হওয়ায় ই-কমার্সের সাথে ইন্সটাগ্রামের ইন্টিগ্রেশন খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি। যার ফলে ব্র্যান্ডগুলো খুব দ্রুতই ইনস্টাগ্রামের সাথে মানিয়ে নিয়েছে, এবং ইউজারদের কাছে ইনস্টাগ্রামের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

খেলোয়াড়দের মধ্যে বর্তমানে সর্বোচ্চ লাইকপ্রাপ্ত পোস্ট হলো মেসির পিএসজি তে যোগ দেওয়ার পোস্ট; Image Source : Leo Messi/Instagram

তবে উপরে উল্লিখিত কারণসমূহ ছাড়াও ইনস্টাগ্রামের বর্তমান সাফল্যের পথ বিছিয়ে দিয়েছে সময়োপযোগী দুটি সিদ্ধান্ত। প্রথমটি হলো, ব্যবহারকারীদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে চেক ইন অ্যাপ থেকে ইনস্টাকে ফটো শেয়ারিং অ্যাপ হিসেবে অধিক প্রাধান্য দেওয়া। দ্বিতীয়ত, জায়ান্ট কোনো কোম্পানির সাথে কখন কোলাবোরেশান করতে হবে, তা বুঝতে পারা। উদাহরণ হিসেবে Yahoo বা Snapchat এর প্রসঙ্গ টানা যেতে পারে। Yahoo বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পাওয়ার পরেও সেগুলোতে সাড়া দেয়নি। একসময় জনপ্রিয়তার মসনদে আসীন থাকা Yahoo এর অবস্থা আজ বেশি একটা ভালো না। দিনকে দিন তাদের মার্কেট শেয়ারের ক্রমশ অধঃপতন ঘটছে। ওইদিকে স্ন্যাপচ্যাটও তারা জনপ্রিয়তা দিন দিন হারাচ্ছে। সেদিক বিবেচনা করলে ইনস্টার লাভের ঘড়া উপচে পড়েছে বলা যায়। অবস্থা বুঝে তারা মার্কেট ভ্যালু থেকেও বেশি দামে ‘own terms’ এর ভিত্তিতে ফেসবুকের কাছে বিক্রি হয়েছে।

লিওনেল মেসির বর্তমান ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার সংখ্যা ২৭৮ মিলিয়ন; Image Source : Leo Messi/Instagram

ইনস্টাগ্রামের পরিসংখ্যান

  • পুরো বিশ্ব থেকে প্রতিমাসে প্রায় ১ বিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী ইনস্টাগ্রামে অ্যাক্সেস করে।
  • পুরো বিশ্ব থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী ইনস্টাগ্রামে অ্যাক্সেস করে।
  • ব্যবহারকারীর সংখ্যা (১.৩৮৬ বিলিয়ন) হিসেবে বর্তমানে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তালিকায় ইনস্টাগ্রাম আছে চতুর্থ স্থানে। প্রথম, দ্বিতীয়, ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে ফেসবুক (২.৮৫ বিলিয়ন), ইউটিউব (২.২৯ বিলিয়ন), হোয়াটসঅ্যাপ (১.৬ বিলিয়ন)।
  • ৪.১৮ বিলিয়ন সক্রিয় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ২৩.৯২% ব্যবহারকারী প্রতিমাসে ইনস্টাগ্রামে অ্যাক্সেস করে। সংখ্যার হিসেবে যা ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বসবাসরত মোট জনসংখ্যার সমান।
  • এক ঘোস্ট ডাটা রিপোর্ট অনুসারে, ইনস্টাগ্রামের ৯৫ মিলিয়ন ইউজার হতে পারে ফেক বট।
  • ইনস্টাগ্রাম সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ভারতে। সেখানে ইনস্টার ইউজার সংখ্যা প্রায় ১৮০ মিলিয়ন। এরপরের স্থানে আছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র (১৭০ মিলিয়ন), ব্রাজিল (১১০ মিলিয়ন), ইন্দোনেশিয়া (৯৩ মিলিয়ন), রাশিয়া (৬১ মিলিয়ন)।
  • মানুষজন প্রতিদিন গড়ে ২৯ মিনিট ব্যয় করে এই ইনস্টাগ্রামে। এরমধ্যে ২৫ বছরের কম বয়সী মানুষেরা গড়ে ৩২ মিনিট এবং ২৫ বছরের অধিক মানুষেরা গড়ে ২৪ মিনিট করে ব্যয় করে।
  • ২৫-৩৪ বছর বয়সী মানুষের মাঝে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। শতকরার হিসেবে প্রায় ৩২.১%। ২৯.৯% নিয়ে এরপরের স্থানে আছে ১৮-২৪ বছর বয়সী মানুষজন। ১৩-১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে শতকরা হার ৭.৫%।
  • শুরু থেকেই কেভিন সিস্ট্রম চেয়েছিল তাদের কোম্পানিতে কর্মী সংখ্যা যেন কম থাকে। তাই ১৩ জন কর্মীর এক দল নিয়ে শুরু হয়েছিল ইনস্টার যাত্রা। এই ১.৩ বিলিয়ন মানুষের ইনস্টাগ্রামকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মাত্র ৪৫০ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া আছে। অন্যদিকে তাদের প্যারেন্ট কোম্পানি ফেসবুকে চাকরিরত আছে মোট ৫৮ হাজার কর্মী।
  • ইনস্টাগ্রামে বর্তমানে সবচেয়ে ফলো করা পেজ ইনস্টার নিজের পেজটাই, যার বর্তমান অনুসারী সংখ্যা ৪৩৬ মিলিয়ন।
    ৩৬০ মিলিয়ন ফলোয়ার নিয়ে দ্বিতীয়তে আছেন ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তৃতীয়, চতুর্থ, ও পঞ্চম যথাক্রমে কাইলি জেনার (২৭৮ মিলিয়ন), লিওনেল মেসি (২৭৭ মিলিয়ন), ডোয়াইন জনসন (২৭৬ মিলিয়ন)।

Related Articles