Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্যামেরার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং ধারাবাহিক বিবর্তন

মধুর স্মৃতিগুলো জমা রাখতে ক্যামেরার প্রয়োজন কতটা, সেটা বোধ করি নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। অধরা সময়কে ধরে রাখতে কিংবা স্মৃতির পাতা আওড়াতে, নিরাপত্তার প্রয়োজনে কিংবা ঘটনার সাক্ষী হিসেবে, পেশা কিংবা শখ মেটাতে ক্যামেরার সাথে তুলনীয় আর কিছু নেই।

ক্যামেরার সামনে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছবি তুলতে পছন্দ করেন অনেকেই। কেউবা আবার ক্যামেরার আড়ালেই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। আবার কেউ একা একা কিংবা পছন্দের মানুষ বা বস্তুটির সাথে সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকেন। ক্যামেরায় ছবি তুলুক বা না তুলুক, ক্যামেরা ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু এখন ক্যামেরা যতটা সহজলভ্য, আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর বা তার আগে ক্যামেরার কথা সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতো না। ক্যামেরা আবিষ্কার যেমন রাতারাতি হয়নি, তেমনি বর্তমান সময়ের মতো আধুনিক ক্যামেরা পেতে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। সর্বপ্রথম ক্যামেরা আবিষ্কার থেকে শুরু করে আজকের দিনের মুঠোফোনের ক্যামেরা পর্যন্ত ক্যামেরার বিবর্তনের ইতিহাস নিয়েই আজকের লেখা।

শুরুর আগে

শুরুর আগে ক্যামেরার কিছু দিক জেনে নেওয়া যাক। ক্যামেরা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘কামারা’ (kamara) থেকে, যার অর্থ করলে দাঁড়ায় খিলানযুক্ত কুঠরি। এটি সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল ১৭০৮ সালে। ক্যামেরার বদৌলতে জন্ম হয়েছে ফটোগ্রাফির। ফটোগ্রাফি শব্দটিও এসেছে গ্রিক দুটি শব্দ থেকে- fos অর্থ লাইট বা আলো আর grafo অর্থ আঁকানো। ১৮৩৯ সালে স্যার জন এফ. ডব্লিউ. হার্সেল প্রথম ব্যবহার করেন শব্দটি।

ক্যামেরার খেলা হলো আলো নিয়ে আর তাই বস্তু থেকে থেকে আসা আলোকে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ ছবি পাওয়া যায়। আলোর উজ্জ্বলতার তারতম্য তাই ছবির ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ফটোগ্রাফির ভাষায় যাকে বলে এক্সপোজার

ছবিটির তিনটি অংশে এক্সপোজারের পার্থক্য; Source: photographymad.com

ধারণার শুরুর পর থেকে ধারাবাহিক বিবর্তন

ক্যামেরা অবস্কিউরার মাধ্যমে ক্যামেরার নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। ল্যাটিন শব্দ ‘ক্যামেরা অবস্কিউরার’ অর্থ হলো অন্ধকার ঘর। একে অনেকে আবার পিনহোল ক্যামেরাও বলে থাকেন। ক্যামেরা অবস্কিউরার মূলনীতি ছিল, এটি একটি অন্ধকার ঘর হবে যার এক দেয়ালে থাকবে একটি লেন্সযুক্ত ছোট্ট ছিদ্র, আর আলো বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে সেই ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করবে এবং দেয়ালের অপরপ্রান্তে গিয়ে প্রতিবিম্ব গঠন করবে, কিন্তু উল্টোভাবে। এটিই ক্যামেরা অবস্কিউরা। এর মাধ্যমে ক্যামেরার ইতিহাস রচনা শুরু হয়, আর ফলাফল আজকের অত্যাধুনিক ক্যামেরা।

ক্যামেরা অবস্কিউরায় এক প্রান্তের ছিদ্র দিয়ে আলো প্রবেশ করে এবং এর উল্টোভাবে প্রতিবিম্ব গঠিত হয় দেয়ালের অপরপ্রান্তে ; Source: photopedagogy

আরব বিজ্ঞানী ইবনে আল হাইথাম বা আল হাজেন ১০২১ খ্রিস্টাব্দে আলোক বিজ্ঞান নিয়ে প্রকাশ করেন তার বই ‘কিতাব আল মানাযির’, যা পরবর্তী সময়ে আলোক বিজ্ঞানের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। এই বইয়ে সর্বপ্রথম তিনি ক্যামেরা অবস্কিউরার ধারণা উল্লেখ করেন। তাই তাকেই ক্যামেরা অবস্কিউরার অগ্রদূত ধরা হয়। কিন্তু এর আগেও চীনা দার্শনিক মোজির আনুমানিক ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বের লেখা এবং এরিস্টটলের প্রায় ৩৩০ খ্রিষ্টপূর্বের লেখায় ক্যামেরা অবস্কিউরার আংশিক ধারণা পাওয়া যায়।

সেই সময় এটি ব্যবহার করা হয়েছিল সূর্যগ্রহণ দেখার কাজে, আর এই কাজটি করেছিলেন লিউভেন ইউনিভার্সিটিতে রাইনার জেমা ফ্রিসিয়াস, ১৫৪৪ সালে। ক্যামেরা অবস্কিউরা ব্যবহার করে হাতে আঁকিয়ে ছবি সংরক্ষণ করতে হতো।

একজন শিল্পী ক্যামেরা অবস্কিউরা ব্যবহার করে বাস্তব ধর্মী চিত্র আঁকছেন; Source: Clipart ETC

প্রথম ছবি সংরক্ষণ

ক্যামেরা অবস্কিউরা ছিল অনেকটা প্রজেক্টরের মতো, যার কারণে কোনো ছবি হাতে আঁকা ছাড়া সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। এটি ছিল বেশ কঠিন, কারণ প্রতিফলিত ছবি সংরক্ষণ করার পদ্ধতি সে সময় কারো মাথায় আসেনি। কিন্তু ১৭২৭ সালে জার্মান পদার্থবিদ জোহান স্কালজ আলোক সংবেদনশীল রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করেন এবং প্রমাণ করেন যে, সিলভার লবণ আলোক সংবেদনশীল। কিন্তু তার এই আবিষ্কারকে তিনি ছবি সংরক্ষণের কাজে লাগাতে পারেননি, যার ফলে সংরক্ষণের উপায় আবিষ্কার হতে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো আরো ১০০ বছর। ১৮২৭ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী জোসেফ নিসেফোর নিপ্স ক্যামেরা অবস্কিউরা ব্যবহার করে ইতিহাসে প্রথম ছবি সংরক্ষণের কৃতিত্ব অর্জন করেন।

ইতিহাসে প্রথম সংরক্ষিত ছবি; Source: TutsPlus

তিনি ক্যামেরা অবস্কিউরায় একটা নকশা করা বিটুমিন আবৃত মেটাল প্লেট বসিয়ে দেন। এতে বস্তু থেকে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে প্লেটের উপরে যে অংশে পড়ে সে অংশে বিক্রিয়া হয়, আর বাকিটা থেকে যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন। এরপর সেটিকে একটি রাসায়নিক দ্রবণে ধোয়ার পর সাদা-কালো একটি ছবি পাওয়া যেত। কিন্তু একটি ছবি পেতে অপেক্ষা করতে হতো অনেকটা সময়। এটি সূর্যের আলোতে এক্সপোজ হতে সময় নিত ৮ ঘণ্টা বা তারো বেশি এবং খুব তাড়াতাড়ি ম্লান হয়ে যেত।

দাগেরোটাইপ

নিপ্সের তৈরি ক্যামেরা অবস্কিউরার এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্যে লুইস দাগের কাজ শুরু করেন এবং এর এক্সপোজার মাত্র ৩০ মিনিটে আনতে ও একে দীর্ঘস্থায়ী করতে সক্ষম হন। ১৮২৯ সালে তিনি নিপ্সের সাথে কাজ শুরু করেন। আর ১৮৩৯ সালে নিপ্স মারা যাবার পর আরো কিছু গবেষণা করে সুবিধাজনক ও কার্যকর একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন দাগেরো এবং নিজের নামের সাথে মিল রেখে এর নাম দেন দাগেরোটাইপ (Daguerreotype)।

লুইসের দাগেরোটাইপ, এটি প্রস্তুত করেছিলেন স্যুসে ফেহখ ১৮৩৯ সালে; Source: Wikimedia Commons

এই পদ্ধতিতে ছবিকে একটি সিলভার প্লেটেড কপার পাতের উপর স্থাপন করা হয়। এরপর এটিকে পালিশ করার পর আয়োডিন দ্বারা লেপন করে প্লেটে একটি আলোক সংবেদনশীল পৃষ্ঠ তৈরি করা হয়। এরপর সেই প্লেটটিকে ক্যামেরায় স্থাপন করে কিছু সময়ের জন্য এক্সপোজ করে সিলভার ক্লোরাইডের দ্রবণে ধুয়ে নিলেই ছবি প্রস্তুত।

১৮৩৯ সালে লুইস ও নিপ্সের সন্তান দাগেরোটাইপটি ফরাসি সরকারের কাছে বিক্রি করে দেন। আর এর পদ্ধতি নিয়ে একটি বই লিখেন। এর পরপরই দাগেরোটাইপ ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে অনেক জনপ্রিয়তা পায়। ১৮৫০ সালের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা এত বাড়ে যে, নিউইয়র্কে প্রায় ৭০টি দাগেরোটাইপ এর স্টুডিও তৈরি হয়।

দাগেরোটাইপে তোলা ইতিহাসের প্রথম ছবি যেটাতে মানুষ ফ্রেমবন্দী হয়, ১৮৩৯; Source: Tutsplus

ক্যালোটাইপ

দাগেরোটাইপের সমস্যা ছিল, এটি থেকে মূল ছবির কোনো কপি বানানো যেত না। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করেন উইলিয়াম হেনরি ফক্স টালবোট। তিনি ছিলেন একজন ইংরেজ গণিতবিদ এবং লুইসের সমসাময়িক। তিনিই প্রথম নেগেটিভ ছবির আবিষ্কারক। ১৮৪০ সালে তিনি ক্যালোটাইপ তৈরি করেন এবং পেটেন্ট লাভ করেন ১৮৪১ সালের দিকে। শুরুর দিকে এই ক্যালোটাইপ থেকে পাওয়া যায় নেগেটিভ কপি। এই নেগেটিভ কপি থেকে কন্ট্যাক্ট প্রিন্ট তৈরি করে ছবির আরেকটি কপি তৈরি করা যেত। একে আবিষ্কারকের নামানুসারে অনেকে টালবোটাইপও বলে। গ্রিক শব্দ ক্যালোটাইপের অর্থ সুন্দর ছবি।

উইলিয়াম হেনরি ফক্স টালবোট ১৮৬৪; Source: Wikimedia Commons

কোডাক ব্রাউনি এবং ফটোগ্রাফিক ফিল্মের জন্ম

১৯ শতকের শেষের দিকে ১৮৮০ সালে জর্জ ইস্টম্যান প্রতিষ্ঠা করেন ইস্টম্যান ড্রাই প্লেট এন্ড ফিল্ম কোম্পানি । ইস্টম্যানকে বলা হয় ফটোগ্রাফিক ফিল্মের প্রবর্তক। ১৮৮৫ সালে পেপার ফিল্ম আর ১৮৮৯ সালে সেলুলয়েড ফিল্ম উৎপাদন শুরু করেন তিনি। ফটোগ্রাফিক ফিল্ম ব্যবহার করে ১৮৮৮ সালে বাজারে আনেন তার বানানো ক্যামেরা কোডাক। এটি একটি সাধারণ ক্যামেরা, আর ছিল ফিক্সড ফোকাস লেন্স। ১৯০০ সালে তার আরেকটি ক্যামেরা বাজারে আসে, যার নাম ছিল কোডাক ব্রাউনি। এটি ছিল অনেক বেশি সস্তা আর এই ক্যামেরার মাধ্যমেই স্ন্যাপশটের সূচনা ঘটে। ব্রাউনি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায় এবং বিপুল পরিমাণে এর বিক্রি হয়।

কোডাক ব্রাউনির ভেক্টর আর্ট; Source: Picsart

ফ্ল্যাশলাইট এবং রঙিন ছবি

ক্যামেরা আবিষ্কারের পর থেকে সূর্যের আলোর ওপর নির্ভর করে ছবি তুলতে হত। কিন্তু অন্ধকারে বা খারাপ আবহাওয়াতে যখন সূর্যের আলো থাকে না, তখন ছবি তোলা ছিল প্রায় অসম্ভব। আর তখনই দেখা দেয় কৃত্রিম আলোর প্রয়োজনীয়তা, আর এর ফলাফল মুঠোফোনগুলোর ফ্ল্যাশলাইট পর্যন্ত পৌঁছেছে। ১৯২৫ সালে অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী পল ভিয়েরকটার ম্যাগনেসিয়ামকে বৈদ্যুতিকভাবে জ্বালান একটি গ্লাস গ্লোবের মধ্যে। সর্বপ্রথম ফ্ল্যাশলাইট বাজারে আসে ১৯৩০ সালে, যেটি তৈরি করেছিল জার্মান কোম্পানি হাউজার। উনিশ শতক থেকেই রঙিন ছবি প্রস্তুত করার চেষ্টা করতে থাকেন বিজ্ঞানীরা, কিন্তু বিশ শতকের আগে তা বাণিজ্যিকভাবে সম্ভব হয়নি।

১৮৬২ সালে দুজন ফরাসি বিজ্ঞানী লুইস ডুকোস ডি হরোন এবং শার্লেক ক্রস বেশকিছু রঙিন ফটোগ্রাফি পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য পেটেন্ট লাভ করেন। প্রথম কালার প্লেট বাজারে আসে ১৯০৭ সালে। কিন্তু ইতিহাসের প্রথম রঙিন ছবিটি ১৮৬১ সালে ফ্রেমে আবদ্ধ করেন স্কটিশ পদার্থবিদ জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল, যিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম নিয়ে কাজ করার জন্য।

ইতিহাসের প্রথম তোলা রঙিন ছবি, একটি ছক কাটা ফিতার; Source: Tututsplus

35mm

কোডাক ব্রাউনি বেশ সস্তা হলেও এটা কম্প্যাক্ট ছিল না। অস্কার বার্নাক তাই সিদ্ধান্ত নিলেন কম্প্যাক্ট ক্যামেরা নিয়ে কাজ করার। তিনি একটি প্রোটোটাইপ ক্যামেরা তৈরি করেন ১৯১৩ সালে ৩৫ মিলিমিটার ফিল্ম ব্যবহার করে, যার নাম ছিল 35mm Ur-Leica। এর আগে ৩৫ মি.মি. ফিল্ম ব্যবহার করা হতো মোশন ছবির জন্য, কিন্তু স্থির ছবির জন্য প্রথম এই ফিল্ম প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেন বার্নাক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য বার্নাকের আবিষ্কারের কাজে বিঘ্ন ঘটে। তাই বিশ্বযুদ্ধ শেষে আবার কাজে নেমে পড়েন এবং ১৯২৩-১৯২৪ সাল পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে বাজারে ছাড়েন Leica 1 এবং ক্রেতাদের থেকে বেশ ভাল সাড়া পান। এরপরেই শুরু হয় এর বাণিজ্যিক উৎপাদন। সেই সময় তিনি জার্মান কোম্পানি Leitz এ কাজ করতেন, আর তাই Leica নামটি ঠিক করেছিলেন Leitz এর Lei এবং Camera এর Ca নিয়ে।

Ur-Leica 1914; Source: Wikimedia Commons

Leica I 1927; Source: Wikimedia Commons

টিএলআর এবং এসএলআর

পরবর্তী আবিষ্কার ক্যামেরার ইতিহাসে আমূল পরিবর্তন ঘটায়। আর সেটি হলো সিঙ্গেল লেন্সের ব্যবহার। এর মাধ্যমে যার ছবি তোলা হচ্ছে, তার শট নেওয়ার আগেই ভিউ ফাইন্ডারে দেখা যায়। তবে প্রথমে প্রচলিত ছিল ‘টিএলআর’ বা ‘টুইন লেন্স রিফ্লেক্স’ ক্যামেরা। এই ক্যামেরার প্রধান সমস্যা ছিল, এতে দুটি লেন্স ব্যবহৃত হতো, একটি ভিউফাইন্ডারের জন্য, অন্যটি ছবি তোলার জন্য। কিন্তু লেন্স দুটি লম্বভাবে থাকত বলে ভিউফাইন্ডারে যা দেখা যেত, একদম তা-ই উঠতো না ছবিতে। এর সমাধানে ছিল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরা। এতে একটি লেন্সেই দুটি কাজ করা যেত মিরর ব্যবহারের কারণে। ১৯২৮ সালে ফ্র্যাংক এবং হেইডেক প্রথম টিএলআর তৈরি করেন। আর ১৯৩৩ সালে একটি জার্মান কোম্পানি Ihagee Exakta নামের একটি এস এল আর ক্যামেরা প্রথম বাজারে আনে। এতে ছিল ১২৭টি রোলফিল্ম। ১৯৫২ সালে জাপানের বাজারে আসে আসাহিফ্লেক্স , তৈরি করে অপ্টিকাল আসাহি কোম্পানি, যেটি পরবর্তীতে পেন্ট্যাক্স ক্যামেরা নামে পরিচিতি পায়। এতে ব্যবহার করা হয়েছিল ৩৫ মি.মি. ফিল্ম । এরপর থেকে একে একে এস এল আর ক্যামেরার জগতে প্রবেশ করতে থাকে ক্যানন, ইয়াসিকা, নাইকনের মতো ক্যামেরা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। নাইকন এফ সিরিজ নিয়ে এসএলআর এর বাজারে প্রবেশ করে।

Zeiss Ikon Contaflex 35 টিএলআর; Source: tlr-cameras.com

এসএলআর, কন্ট্যাক্স এস ১৯৪৯; Source: Wikimedia Commons

পোলারয়েড

এবার আসা যাক একটি ভিন্নধর্মী ক্যামেরায়। যখন সব ক্যামেরা প্রচলিত পথ ধরে হাঁটে, তখন ১৯৪৮ সালে বাজারে আসে পোলারয়েড কর্পোরেশনের তৈরি ইন্সট্যান্ট ফিল্ম ক্যামেরা ‘ল্যান্ড ক্যামেরা ৯৫’। পোলারয়েড কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এডউইন হারবার্ট ল্যান্ড। এই ক্যামেরার বিশেষত্ব ছিল এটি শট নেওয়ার এক মিনিটের মধ্যেই ছবির প্রিন্ট কপি বের হয়ে যেত ক্যামেরা থেকেই। ক্যামেরাটি মার্কেটে আসার পর বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায়। প্রথমদিকে কেবল সাদা-কালো ছবি তুলতে সক্ষম হলেও, ১৯৬৩ সালে রঙিন ফিল্ম বাজারে আনে প্রতিষ্ঠানটি।

কিন্তু নব্বইয়ের দশকে ডিজিটাল ক্যামেরার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৮ সালে ইন্সট্যান্ট ফিল্ম বানানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১০ সালেই আবার ইন্সট্যান্ট ফিল্ম ফরম্যাটে ফিল্ম উৎপাদন শুরু করে, আর ২০১৭ সালে পোলারয়েড অরিজিনালস নামে নতুন করে যাত্রা শুরু করে তারা।

একটি পোলারয়েড ক্যামেরা; Source: Tutsplus

ডিজিটাল এসএলআর এবং ফোন ক্যামেরা

ডিজিটাল ক্যামেরার গুরুত্ব নতুন করে কিছু বলার নেই। ডিজিটাল ক্যামেরা আসার আগ পর্যন্ত ফটোগ্রাফির শখ ছিল বিলাসিতার মতো ব্যাপার, কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরা আসার পর খুলে গেছে অনেক দ্বার। এখনকার ফটোগ্রাফির প্রাণ হলো ডিজিটাল এসএলআর।

১৯৬৯ সালে বেল ল্যাবরেটরিতে জর্জ স্মিথ এবং উইলিয়ার্ড বয়েল চার্জ কাপোলড ডিভাইস (CCD) আবিষ্কার করেন, যা ডিজিটাল ক্যামেরার ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। এই যন্ত্রটি মূলত একটি সমন্বিত বর্তনীর মতো কাজ করে, যা একটি সিলিকনের তৈরি পৃষ্ঠের ওপর বসানো থাকে। আর এতে থাকে অসংখ্য আলোক সংবেদনশীল পদার্থ, যার উপর বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলোর কণা এসে পড়লে সেগুলো চার্জযুক্ত হয় এবং আলো বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত হয়। ফলশ্রুতিতে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া যায় ছবির একটি ডিজিটাল কপি। এখানে ছবি সংরক্ষণের জন্য দরকার হয় না কোনো ফিল্ম বা নেগেটিভের। তার বদলে ব্যবহার করা হয় মেমোরি কার্ড, যা এই যুগে মানুষের তথ্য সংরক্ষণের নিত্যদিনের সাথী।

১৯৭৫ সালে কোডাক কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার স্টিভ স্যাজন প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা তৈরি করেন। ৮ পাউন্ড ভরের ওই ক্যামেরাটিতে ০.০১ মেগাপিক্সেল ব্যবহার করে সাদা-কালো ছবি উঠানো যেত এবং সেটি একটি ক্যাসেট টেপে রেকর্ড করা হতো। একটি ছবি তুলতে সময় নিত ২৩ সেকেন্ড, যদিও কোডাক এটিকে বাজারে আনেনি।

১৯৮৬ সালে কোডাক প্রথম মেগাপিক্সেল সেন্সর আবিষ্কার করে। আর ১৯৮৮ সালে ফুজি তাদের প্রথম জেনারেশনের ডিজিটাল ক্যামেরা DS-1P প্রস্তুত করে, কিন্তু এটিও বাজারে আনেনি তারা।

১৯৯০ সালে প্রথম বাজারে বিক্রিত ডিজিটাল ক্যামেরা হলো ডি ওয়াই ক্যাম মডেল ১, যার সে সময় বাজার মূল্য ছিল ৬০০ মার্কিন ডলার। এরপর ১৯৯৪ সালে অ্যাপল বাজারে আনে তাদের প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা অ্যাপল কুইক টেক (Apple Quick take)।

 

অ্যাপল কুইক টেক; Source: myfavoriteapple.com

এবার আসা যাক মুঠোফোনের ক্যামেরার দুনিয়াতে। ফোন ক্যামেরার ইতিহাস না বললে ক্যামেরার ইতিহাস যেন অপূর্ণই থেকে যায়।প্রথম ক্যামেরা ফোন Sharp J-SH04 বাজারে আসে ২০০০ সালে, আর এটি বাজারে আনে জাপানের একটি মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘জে ফোন’। এই ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছিল ০.১ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। একই বছর স্যামসাং বাজারে আনে তাদের প্রথম ক্যামেরা ফোন SCH-V200।

জে ফোন এর Sharp J-SH04; Source: secure.sharp.eu

নকিয়া ২০০২ সালে বাজারে আনে তাদের প্রথম ক্যামেরা ফোন নকিয়া ৭৬৫০। ০.৩ মেগাপিক্সেল এর ফোনটি দিয়ে ৬৪০X৪৮০ রেজ্যুলুশনের রঙিন ছবি তোলা যেত। এর ৩ বছর পর নকিয়া বাজারে আনে সে সময়ের সব চেয়ে সাড়া জাগানো এন সিরিজের ‘এন ৯০’। এটি ছিল নকিয়ার প্রথম মোবাইল, যাতে Carl Zeiss লেন্স ব্যবহার করা হয়েছিল। পাশাপাশি এতে ছিল ভিডিও করার সুবিধাও। এরপর পর্যায়ক্রমে বাজারে আসে নকিয়া এন সিরিজের এন ৯৩, এন ৯৫, এন ৮২, এন ৮৬, এন ৮। এরমধ্যে এন ৯৫ এ সর্বপ্রথম ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যুক্ত করে ,আর এন ৮ এ ১২ মেগাপিক্সেল।

নকিয়া ৭৬৫০; Source: Windows Blog

ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে ক্যামেরাযুক্ত ফোন। যদিও সে সময় আলাদা ডিজিটাল ক্যামেরাগুলো থেকে ফোন ক্যামেরাগুলো ছিল বেশ দুর্বল। ফিক্সড ফোকাস লেন্স, ছোট সেন্সর, সীমাবদ্ধ কার্যকারিতা- এসব সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বেশ জনপ্রিয়তা পেতে থাকে ফোনের ক্যামেরাগুলো। স্মার্টফোন আসার পর থেকে মোবাইল ফটোগ্রাফির সূচনা হয়। প্রথম অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ‘এইচটিসি ড্রিম’ এ ছিল ৩.১৫ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, যাতে ছিল অটোফোকাস ফিচার। আর প্রথম জেনারেশনের আইফোন নিয়ে আসে ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা।

স্মার্টফোনের বদৌলতে অনেকে শখের ফটোগ্রাফি শুরু করে। সেলফি তোলার জন্য স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্রন্ট ক্যামেরার উপর জোর দিচ্ছে। হয়তো খুব শীঘ্রই ডিএসএলআর এর জায়গা দখল করে নেবে স্মার্টফোন ক্যামেরাগুলো।

একটি ছবি হাজার শব্দের সমান। আর তাই বিশ্ব জুড়ে ক্যামেরার এত প্রয়োজনীয়তা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিনোদন জগত বা সংবাদ মাধ্যম, সবখানে ক্যামেরার জয়জয়কার। কারো কাছে এটি কেবল বিনোদনের উৎস, আবার কারো কাছে এটি একটি হাতিয়ার। ইতিহাস সবসময় নতুন করে ভাবতে শেখায়। ক্যামেরা অবস্কিউরা থেকে ফোন ক্যামেরা পর্যন্ত আসতে লেগেছে অনেকটা সময়, কিন্তু সেই ২০০ বছর আগের ক্যামেরা আর আজকের দিনের ক্যামেরার মধ্যে পার্থক্য সত্যি মনের মধ্যে বিস্ময় জাগায়। প্রযুক্তির উন্নয়ন থেমে থাকেনি কখনো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নই আজকের আধুনিক ক্যামেরার ফলাফল। কে জানে, হয়তো ভবিষ্যতের ক্যামেরা হবে হয়তো আরো বিস্ময়কর!

This article is in Bangla Language. It's about a short history of camera and its evolution.
References used in this article are hyperlinked inside this article. 
Featured Image: MARK THIESSEN / NATIONAL GEOGRAPHIC

Related Articles