Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এশীয় দেশের বানানো কয়েকটি উন্নত যুদ্ধবিমান

যুদ্ধবিমান বললেই সাধারণত আমাদের মাথায় ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার বানানো যুদ্ধবিমানের কথা মনে পড়ে। সামরিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ এই দেশগুলোই মূলত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ যুদ্ধবিমানগুলো বানিয়েছে। তবে বর্তমানে অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে এশিয়াতে দেশীয় যুদ্ধবিমান বানানোর হিড়িক পড়েছে। বিদেশ থেকে যুদ্ধবিমান কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাছাড়া বিদেশি বিমান অনেক সময়ই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। নানা দিক বিবেচনায় অনেক দেশই নিজস্ব পদ্ধতিতে বিমান বানাবার চেষ্টা করে। স্নায়ু যুদ্ধের সময় আর্জেন্টিনা, মিশর ও দক্ষিণ আফ্রিকা এই কাজে অল্প বিস্তর সাফল্য পেয়েছিল। বর্তমানে এশীয় দেশগুলোর মধ্যে চীন ছাড়াও যুদ্ধবিমান বানাবার ক্ষমতা রাখে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান এবং তাইওয়ান। এরকম কয়েকটি এশীয় বিমান নিয়ে আজ আলোচনা করা হলো।

হাল তেজাস

ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (হাল) সেই ষাটের দশকেই মারুত নামের একটি জঙ্গী বিমান বানিয়েছিল। সেটি ছিল এশিয়ার কোনো দেশের বানানো প্রথম জঙ্গী জেট বিমান। এরপর আশির দশকে ভারত একটি সুপারসনিক হালকা জঙ্গী বিমান বানানোর কাজ শুরু করে। এর ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালে আকাশে উড়ে হাল তেজাস। সংস্কৃত ভাষায় তেজাস অর্থ ‘উজ্জ্বল’।

তেজাস; Source: indiandefencereview.com

৪৫ ফুট লম্বা তেজাস অত্যন্ত আধুনিক বিমান। ডেল্টা উইং বিশিষ্ট এ বিমানে আছে হ্যান্ডস অন থ্রটল অ্যান্ড স্টিক প্রযুক্তি, ফ্লাই বাই ওয়্যার সিস্টেম এবং ইজরায়েলের বানানো অত্যাধুনিক রাডার। দিনে-রাতে যেকোনো সময় আকাশযুদ্ধের উপযোগী এই বিমান অত্যন্ত কার্যকরী। পাশাপাশি ভূমিতেও হামলা চালাতে সক্ষম। ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য তেজাসের আলাদা একটি সংস্করণ বর্তমানে বানানো হচ্ছে। বানানো সম্পন্ন হলে সেটি ভারতীয় ব্রক্ষ্মা ক্রুজ মিসাইল বহনে সক্ষম হবে। তেজাস চার হাজার কেজি ভর নিয়ে উড়তে পারে। বিমানটিতে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্রযুক্তি হিসেবে ভারতীয় মায়াবী নামক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ডিজাইনের কারণে তেজাস কিছুটা স্টিলথ ঘরানার বিমানের গুণাবলী অর্জন করেছে, অর্থাৎ রাডারে এটিকে সহজে শনাক্ত করা যায় না। তেজাসের গতিবেগ ১.৮ ম্যাক, রেঞ্জ ৮৫০ কিলোমিটার।

ভারতীয় বিমানবাহিনী অন্তত ২০০ তেজাস নিজেদের বহরে সংযোজনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ভারত ইতোমধ্যে এই বিমান রপ্তানীর ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু করেছে। একেকটি বিমানের নির্মাণব্যয় প্রায় ১৬০ কোটি রুপি।

চেংদু জে-২০

চেংদু অ্যারোস্পেস কর্পোরেশনের বানানো চেংদু জে-২০ হচ্ছে এশিয়ার প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। এর আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ ধরনের বিমান ছিল। ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনা বিমান বাহিনীতে যোগ হয়েছে এই বিমান।

এলসিডি টাচ স্ক্রিন, হলোগ্রাফিক ডিসপ্লে আর গ্লাস ককপিট বিশিষ্ট এ বিমান অনেক দিক থেকে মার্কিন এফ-৩৫ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কয়েক ধরনের মিসাইল বহনে সক্ষম এটি। চীনা জিয়াং ডব্লিউএস-১৫ ইঞ্জিন ব্যবহার করবে এই বিমান। এটি ৬৬ ফুট লম্বা, গতিবেগ ম্যাক ২ এর বেশি এবং এর একেকটির নির্মাণব্যয় প্রায় ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চীনা বিমান বাহিনীতে ২০টির মতো জে-২০ আছে। বিমানটি নিখাদ স্টিলথ প্রযুক্তিসম্পন্ন। যদিও এর সামনের অংশে বসানো কানার্ড (ছোট ডানা) এর স্টিলথ গুণাবলী অনেকাংশে নষ্ট করে দেবে বলে অনেকে মনে করেন। তবে এই কানার্ডের কারণেই বিমানটি আকাশে অনেকগুণ সাবলীলভাবে ব্যবহার করা যায়।

চেংদু জে-২০; source: nextbigfuture.com

অনেকে ধারণা করেন মার্কিন লকহিড এফ-৩৫ এর অনেক গোপন তথ্য কোনোভাবে চীনাদের হাতে পাচার হয়ে যাওয়ার তাদের পক্ষে এত দ্রুত এমন একটি বিমান বানানো সম্ভব হয়েছে। পশ্চিমারা শুরুতে অন্যান্য চীনা বিমানের মতোই জে-২০ কেও নিম্নমানের বিমান হিসেবে বিবেচনা করছিল। কিন্তু পরে তারা মতামত পাল্টেছে। চেংদু জে-২০ মার্কিন এফ-৩৫ এর তুলনায় বেশি দূর উড়তে পারে, কাজেই মার্কিন নৌবাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় জাহাজগুলোর জন্য এটি বেশ বিপজ্জনক এক বিমান। বিমানটিত আকাশযুদ্ধেও দারুণ লড়াই করবার ক্ষমতা রাখে। ভারতের ধারণা, চীন এই বিমান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে।

জয়েন্ট ফাইটার ১৭ থান্ডার/ফাইটার চায়না-১ ফিয়ার্স ড্রাগন

পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স আর চীনের চেংদু অ্যারোস্পেস কর্পোরেশন যৌথভাবে বানিয়েছে এই বিমান। পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে এফ-১৬ এর পাশাপাশি এটিকেও মূল বিমান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এফ-১৬ এর মতোই এটি আকাশ থেকে ভূমিতে হামলাকারী, পাশাপাশি গোয়েন্দাগিরির কাজেও ব্যবহার করা চলে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে শ’খানেক থান্ডার বানিয়ে ফেলেছে।

থান্ডার; source: theaviationist.com

চীনের বিখ্যাত ডিজাইনার ইয়াং ওয়েই-এর তত্ত্বাবধানে নির্মিত থান্ডার প্রথম আকাশে উড়ে ২০০৭ সালে। ৫০ ফুট দীর্ঘ এই বিমান ১২ হাজার কেজি ভর নিয়ে ম্যাক ১.৬ গতিতে উড়তে পারে। এর রেঞ্জ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার। বিমানটি প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র বহন করতে পারে। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন গাইডেড ও আনগাইডেড বোমা, মিসাইল ইত্যাদি। রাশিয়ার তৈরি আরডি-৯৩ ইঞ্জিনের সাথে এটি অত্যাধুনিক চীনা ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত।

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গেরিলাদের সাথে যুদ্ধে থান্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। মায়ানমার ও নাইজেরিয়া ইতোমধ্যে এই বিমান কিনেছে। পাশাপাশি আর্জেন্টিনা, সৌদি আরবসহ বহু দেশ এই স্বল্পদামী অথচ আধুনিক বিমানটি নিজেদের বহরে যোগ করবার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। ২০১৭ সালে একটি পাকিস্তানি থান্ডার একটি ইরানি ড্রোনকে ভূপাতিত করে।

মিতসুবিসি এফ-২

১৯৭৫ সালে মিতসুবিসি আর ফুজি মিলে বানায় মিতসুবিসি এফ-১। তবে সেটি বিশেষ কার্যকরী না হওয়ায় তারা এফ-২ বানাবার প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০০০ সালে এটি জাপানি বিমান বাহিনীতে এফ-২ প্রবেশ করে।

মিতসুবিশি এফ-২; source: Flugzeuginfo.net

এফ-২ দেখতে অনেকটা মার্কিন এফ-১৬ এর মতো। বিমানটিতে বেশ কিছু মার্কিন প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট, গতিবেগ ম্যাক ২। আট হাজার কেজি ভর বহনের পাশাপাশি বিমানটি পাড়ি দিতে পারে ৪ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব। জাপানী আকাশসীমায় ঢুকে পড়া রুশ বিমানের মোকাবেলা করবার জন্য বেশ কয়েকবার এফ-২ ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে জাপানি বিমানবাহিনীতে এই ঘরানার শ’খানেক বিমান আছে।

টি-৫০ গোল্ডেন ঈগল

৪৩ ফুঁট লম্বা, একক ইঞ্জিন বিশিষ্ট টি-৫০ যুদ্ধবিমান বানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ২০০৫ সালে এটি কোরীয় বিমানবাহিনীতে যোগ দেয়। টি-৫০ মূলত প্রশিক্ষণ বিমান। ছোটখাট সামরিক অভিযানের ক্ষমতাও এর আছে। আসলে একে মার্কিন এফ-১৬ ফ্যালকনের একটি নিচুমানের কোরীয় সংস্করণ বলা চলে। ইতোমধ্যেই ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড এই বিমান কিনেছে। এর অনেক প্রযুক্তিই অবশ্য মার্কিন কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে ধার করা। তবুও বিমানটিকে অনেকার্থেই কোরীয় বিমান বলা চলে। ম্যাক ১.৫ গতিবেগ নিয়ে টি-৫০ উড়তে পারে প্রায় ৪৮ হাজার ফুট উচ্চতায়। বেশ কিছু রকেট আর বোমা বহন করতে পারে বিমানটি।

গোল্ডেন ঈগল; source: youtube

আইডিএফ চিং কুয়ো

তাইওয়ানের বানানো চিং কুয়ো এর নামকরণ হয়েছে সাবেক এক তাইওয়ানিজ প্রেসিডেন্টের নামে। চীনের চাপে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে যুদ্ধবিমান বিক্রিতে নারাজ হওয়ায় তাইওয়ান নিজেই নব্বইয়ের দশকে এই বিমান তৈরি করে।

চিং কুয়ো; source: pinterest

প্রায় ৫০ ফুট লম্বা চিং কুয়োর রেঞ্জ এক হাজার কিলোমিটার। গতিবেগ ১.৮ ম্যাক। চারটি মিসাইলের পাশাপাশি এটি বোমাবহনেও সক্ষম। মূলত প্রতিবেশী কমিউনিস্ট চীনের বিমানবাহিনীর মহড়া নেওয়ার জন্যেই তাইওয়ান এই বিমান বানিয়েছে। এর অত্যাধুনিক রাডার ৩৫ মাইল রেঞ্জের মধ্যে শত্রুর গতিবিধি শনাক্ত করতে সক্ষম। তাইওয়ান ২০২০ সাল পর্যন্ত এই বিমান ব্যবহার করবে।

ফিচার ইমেজ – Pinterest.com

Related Articles