Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফেসবুক আউটেজ: কী হয়েছিল, কেনই বা সমাধানে এত সময় লাগল

৪ অক্টোবর ছিল ফেসবুকের ইতিহাসের একটি বিভীষিকাময়, লজ্জাজনক দিন। এদিন বিশ্বব্যাপী প্রায় ছয় ঘণ্টার মতো বন্ধ থাকে ফেসবুক এবং এই কোম্পানির মালিকানাধীন অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম, যেমন- ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার। এমনকি, বন্ধ থাকে ফেসবুকের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ওয়ার্কপ্লেসও, যার ফলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে ফেসবুক কর্মীদের মধ্যকার যোগাযোগ।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিভিন্ন দেশে ফেসবুক ডাউনের সময় সোমবারেই সীমাবদ্ধ থাকলেও, বাংলাদেশের মতো টাইমজোনে এগিয়ে থাকা অনেক দেশে সেটি চলে মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিক থেকে একে একে ফেসবুকসহ এর অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হবার পর, অবশেষে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে অনেকেই এসব সার্ভিস ফিরে পেতে থাকে, এবং সাড়ে চারটার দিকে ফেসবুকের সার্ভার সচল হওয়ার খবর নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে এখন অবধি দুই-একটা বিচ্ছিন্ন সমস্যা ছাড়া বেশ ভালোভাবেই চলছে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইন্সটাগ্রাম।

প্রায় ছয় ঘণ্টার বৈশ্বিক আউটেজের পর সচল হয়েছে ফেসবুক; Image Source: Anadolu Agency/Getty Images

কিন্তু এ চারটিই হলো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার দিক থেকে একদম সামনের সারির ওয়েবসাইট ও অ্যাপ। তাই যতক্ষণ এর কার্যক্রম বন্ধ ছিল, তাতেই বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমূর্তি, সবকিছুতে পড়েছে ব্যাপক প্রভাব। তাছাড়া, সবার মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে আরো একটি আশঙ্কা: হুট করে আবার কখনো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তো!

তাই এখন যে প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা প্রয়োজন তা হলো, ঠিক কী কারণে ঘটল ফেসবুকের এমন আউটেজ, আর কী কারণেই বা তা সারাতে ব্যয় হলো এত দীর্ঘ সময়।

কেন বন্ধ হলো ফেসবুক?

মঙ্গলবার এক বিবৃতির মাধ্যমে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, সাম্প্রতিক সংঘটিত আউটেজের কারণ ছিল ব্যাকবোন রাউটারের কনফিগারেশনে পরিবর্তন। এই ব্যাকবোন রাউটারগুলোই কোম্পানির বিভিন্ন ডেটা সেন্টারের নেটওয়ার্ক ট্রাফিকের মধ্যে সমন্বয় করে। এর আকস্মিক ক্যাসকেডিং ইফেক্ট (যখন একটি শৃঙ্খলের কোনো একটি ইউনিটে সমস্যা হলে ক্রমশ বাকি সবগুলোতেও সমস্যা দেখা যায়)-এর কারণেই ফেসবুকের সকল সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়।

এর অর্থ হলো, শুধু আমাদের সামনে দৃশ্যমান ফেসবুকই ডাউন হয়ে যায়নি, বরং একই সময়ে নেপথ্যে থেকে ফেসবুক চালায় যেসব সিস্টেম, তারাও থেমে গিয়েছিল।

ফেসবুকের এই ইন্টারনেট দুনিয়া থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কোম্পানিও কিছু তথ্য দিয়েছে।

যেমন- ক্লাউডফ্লেয়ার, যারা নিজেরাও কিছুদিন আগে অনুরূপ আউটেজ ইস্যুর সম্মুখীন হয়, ফেসবুকের সাম্প্রতিক আউটেজের ব্যাপারে নিজস্ব ব্যাখ্যা হাজির করেছে।

আজকের ইন্টারনেট যে আমাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির ইন্টারনেট, তা মূলত দুটো জিনিসের কারণে– ডোমেইন নেম সিস্টেম (ডিএনএস) এবং বর্ডার গেটওয়ে প্রটোকল (বিজিপি)।

ইন্টারনেটে সংযুক্ত রয়েছে অসংখ্য, আক্ষরিক অর্থেই অগণিত নেটওয়ার্ক। তাই সবকিছু ঠিকঠাক রাখার জন্য আপনার প্রয়োজন বিজিপির মতো কিছু, যা জানাবে আপনার কোথায় যাওয়া প্রয়োজন। ডিএনএস হলো কার্যত প্রতিটি ওয়েবসাইট লোকেশনের অ্যাড্রেস সিস্টেম, অর্থাৎ আইপি অ্যাড্রেস। অন্যদিকে বিজিপি হলো একটি রোডম্যাপ, যা খুঁজে বের করে কীভাবে সবচেয়ে সহজে ও নির্বিঘ্নে ঐ আইপি অ্যাড্রেসে পৌঁছান সম্ভব।

ক্লাউডফ্লেয়ার আমাদের জানাচ্ছে, সোমবার রাত থেকে কয়েক দফা আপডেটের মাধ্যমে ফেসবুক বিজিপিকে এটাই জানিয়েছে যে, ফেসবুকে যাওয়ার সেসব পথের কোনো অস্তিত্বই নেই। এবং শুধু ফেসবুক না, ফেসবুক কর্তৃক পরিচালিত অন্য কোনো সিস্টেমেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। তার মানে হলো, যারা ফেসবুকে প্রবেশ করতে চাইছিল, তারা ফেসবুকের অ্যাড্রেসে পৌঁছানোর কোনো বিদ্যমান পথ খুঁজে পাচ্ছিল না।

সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিক থেকে বন্ধ হতে থাকে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ; Image Source: Filip Singer/EPA

ইন্সটাগ্রাম, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ কেন ডাউন ছিল?

যেমনটি আগেই বলা হয়েছে, ফেসবুকে সংঘটিত সমস্যা ফেসবুকের সঙ্গে সংযুক্ত সকল সার্ভিসকেই প্রভাবিত করেছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ফেসবুকের নিজস্ব আভ্যন্তরীণ সিস্টেমও, যে কারণে ফেসবুকে কর্মরত স্টাফদের সঙ্গে অফিসের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, এবং তারা তাদের নিয়মিত ব্যবহৃত কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। ঠিক এই কারণেই, কোম্পানিটির মালিকানাধীন ইন্সটাগ্রাম, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের ভাগ্যেও নেমে আসে অভিন্ন পরিণতি।

সমস্যা সমাধানে এত সময় লাগল কেন?

ফেসবুকের নিজস্ব আভ্যন্তরীণ সিস্টেমও পরিচালিত হয় একই জায়গা থেকে, যার ফলে কর্মচারীদের পক্ষে সমস্যা শনাক্ত করে সমাধান বের করা ছিল অত্যন্ত দুষ্কর।

গার্ডিয়ানের যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রযুক্তি সম্পাদক অ্যালেক্স হার্ন বিষয়টি টুইটারে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, “ফেসবুক সবকিছুই চালায় ফেসবুক দিয়ে,” ফলে সচরাচর তারা যেভাবে অন্য যেকোনো সমস্যার সমাধান করে, তা এবারের সমস্যায় কার্যকর ছিল না।

ফেসবুক স্টাফরা তাদের নিজেদের যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্কপ্লেসে প্রবেশ করতে পারছিল না, এবং আউটেজের কারণে তাদের নিজেদের অফিসের কাজও করতে পারছিল না সিকিউরিটি পাস সিস্টেমে গোলযোগ দেখা দেয়ায়।

ফেসবুকের বিবৃতি থেকে বোঝা যাচ্ছে, এত দীর্ঘ সময়ের জন্য এত বিস্তৃত ধরনের আউটেজের একটিই অর্থ, তা হলো: তারা গোটা সিস্টেমকে পূর্ণ কর্মক্ষমতায় ফিরিয়ে আনছিল অত্যন্ত ধীর গতিতে।

কীভাবে শেষ পর্যন্ত সমস্যা সারানো হলো?

ফেসবুক এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেনি। ফলে প্রকৃতপক্ষে ঠিক কী থেকে সমস্যার উৎপত্তি হলো, আর কীভাবেই বা তারা সেটির সমাধান করতে সক্ষম হলো, তা নিয়ে এখনও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত তাদের সার্ভারে একটি টেকনিক্যাল টিম পাঠিয়েছিল, যেন ম্যানুয়ালি সমস্যার উৎপত্তিস্থল থেকে সেটির সমাধান করা যায়।

ফেসবুকের ডেটা সেন্টার; Image Source: Mark Zuckerberg/Facebook

ভবিষ্যতে কি এ ধরনের আউটেজ এড়ানো যাবে?

এ ধরনের আউটেজ খুবই বিরল ঘটনা। তাই অদূর ভবিষ্যতে ফের একই রকমের ঘটনা ঘটলে সেটা হবে বিস্ময়কর। কিন্তু তাই বলে এ ধরনের সমস্যার যে পুনরাবৃত্তি ঘটবে না খুব শীঘ্রই, সে কথাও জোর গলায় বলা যাচ্ছে না।

এই যে সদ্যই ফেসবুক আউটেজ দেখা গেল, এছাড়াও ২০২০ সালে ক্লাউডফ্লেয়ারের আউটেজ দেখা গিয়েছিল, এবং এ বছরের জুনেও বৈশ্বিক কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (সিডিএন) ফাস্টলির আউটেজ দেখা গিয়েছিল। এ ধরনের আউটেজ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, বিপুল পরিমাণ লোক নির্ভরশীল এমন কোনো অনলাইন সার্ভিসের যদি পরিচালনার একটিই প্রধান পয়েন্ট থাকে, এবং সেই পয়েন্ট কোনো ধরনের গোলমাল দেখা দেয়, তার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে।

মানুষ তো ফেসবুক কেবল তাদের বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গেই সংযুক্ত থাকতে ব্যবহার করে না। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসাও তাদের অন্যান্য সার্ভিস, যেমন- অনলাইন সেলস ওয়েবসাইটে লগ ইনের জন্য ফেসবুককে ব্যবহার করে থাকে। কোনো কোনো দেশে ফেসবুকের সার্ভিসগুলোই এখন হয়ে উঠেছে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম, বিশেষত হোয়াটসঅ্যাপ এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে রয়েছে। তাই একবার ফেসবুকের মতো বিশাল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেলে কয়েক বিলিয়ন মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তার কালো ছায়া নেমে আসে, যা কখনোই সুখকর ইঙ্গিত নয়।

এই আউটেজের ফলে কি পারসোনাল ডেটা ঝুঁকিতে পড়ল?

না, ফেসবুকের সাম্প্রতিক আউটেজের ফলে ব্যবহারকারীরা অন্য অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হলেও, নতুন করে তাদের পারসোনাল ডেটা হুমকির মুখে পড়েনি। তবে অন্য যেকোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফেসবুকে পারসোনাল ডেটা নিয়ে যে ঝুঁকি রয়েছে, তা এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে।

ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন ফ্রান্সেস হাউগেন; Image Source: Robert Fortunato/AP

এই ঘটনার সময়টা কি সন্দেহজনক নয়?

হ্যাঁ, এমন একটা সময় ফেসবুককে এ ধরনের আউটেজের সম্মুখীন হতে হলো, যখন ফেসবুকে আগে থেকেই নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত, বিতর্কে জেরবার। তাই সম্ভাব্য হ্যাকিং বা অ্যাটাকের কথা যদি কারো মাথায় এসে থাকে, তবে সেটি অস্বাভাবিক কিছু নয়।

মাত্র গত সপ্তাহেই ফেসবুক বাচ্চাদের জন্য ইনস্টাগ্রামের লঞ্চিং থামিয়ে দিয়েছে, কেননা একটি আভ্যন্তরীণ গবেষণায় উঠে এসেছে, অ্যাপটি যে মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে সে ব্যাপারে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে।

এরপর গত রবিবার ফেসবুকের সাবেক সিভিক ইন্টিগ্রিটি প্রোডাক্ট ম্যানেজার ফ্রান্সেস হাউগেন জনসম্মুখে এসেছেন ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে। তিনি দাবি করেছেন, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জনগণের নিরাপত্তার চেয়ে কোম্পানির প্রবৃদ্ধি ও মুনাফাকেই অধিক প্রাধান্য দেয়।

সিক্সটি মিনিটসকে তিনি বলেন,

“আজকের দিনে আমরা যে ফেসবুকের অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছি, সেটি আমাদের সমাজকে খণ্ড-বিখণ্ড করে দিচ্ছে, এবং বিশ্বব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার জন্ম দিচ্ছে।”

সোমবার ৬০ হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ; Image Source: Reuters

কী পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হলো?

এখন পর্যন্ত এমন কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি, যার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে বা অনুমান করে বলা যাবে ফেসবুকের উপর নির্ভরশীল ব্যবসাগুলোর ঠিক কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তবে এই আউটেজ, এবং এরও আগে রবিবার থেকে চলমান হুইসেলব্লোয়ার সংবাদের কারণে, সোমবার ফেসবুকের শেয়ারের দর পড়ে গেছে ৪.৯ শতাংশ। ব্লুমবার্গের মতে, এতে মার্ক জাকারবার্গের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা

This article is in Bengali language. It discusses about the recent Facebook outage. Necessary references have been hyperlinked inside. 

Featured Image © Getty Images

Related Articles