Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টরেন্ট যেভাবে কাজ করে

পাঠকরা যারা প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করেছেন। ডাউনলোড না করলেও ‘টরেন্ট’ শব্দটির সাথে পরিচিতি থাকবারই কথা! না শুনে থাকলেও ক্ষতি নেই। এই আর্টিকেলে আমরা টরেন্টের সকল খুঁটিনাটি নিয়ে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো।

টরেন্ট আসলে ফাইলের একটি ধরন। এই ফাইল যে পদ্ধতিতে ডাউনলোড করা হয় সেটির নাম বিট-টরেন্ট। যদিও অনেকেই এই সিস্টেমকেই ‘টরেন্ট’ বলতে পছন্দ করি। বিট-টরেন্ট হলো একধরনের সিস্টেম যা আপনাকে খুবই কম ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে খুবই দ্রুতগতির ডাউনলোড সেবা দিতে পারে। এর কারণ হলো, বিট টরেন্ট ব্যবস্থায় ডাউনলোডে যে পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় তা অন্যান্য সকল ডাউনলোড পদ্ধতি থেকে পুরোপুরিই ভিন্ন।

প্রথাগত ক্লায়েন্ট-সার্ভার ডাউনলোড সিস্টেম

আমরা সবাই ইন্টারনেট থেকে গান, মুভি ইত্যাদি ডাউনলোড করে অভ্যস্ত। সাধারণত আমরা যে পদ্ধতিতে ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউনলোড করি তা হলো ক্লায়েন্ট-সার্ভার ডাউনলোডিং মেথড। এই পদ্ধতিটি ভালোভাবে জানা জরুরি। তা না হলে এই ডাউনলোড সিস্টেমের সাথে বিট-টরেন্টের পার্থক্য ঠিক পরিষ্কার হবে না।

  • প্রথমে আপনি কম্পিউটার থেকে একটি ওয়েবপেজে যাচ্ছেন এবং ফাইল ডাউনলোড করার লিংকে ক্লিক করছেন।
  • আপনার কম্পিউটারের ওয়েব ব্রাউজার (ক্লায়েন্ট) সার্ভারকে (কেন্দ্রস্থলে থাকা একটি কম্পিউটার, যেখানে ওয়েবপেজ এবং আপনার ডাউনলোড করতে চাওয়া ফাইলটি রয়েছে) আপনার ডাউনলোড করতে চাওয়া ফাইলের একটি কপি ট্রান্সফার করার জন্য অনুরোধ জানায়।

এরপর ঐ ফাইলটি আপনার কম্পিউটারে কপি হতে শুরু করে। আর এ ট্রান্সফার নিয়ন্ত্রিত হয় একটি প্রটোকলের মাধ্যমে, যেমন: FTP (File Transfer Protocol), HTTP (Hypertext Transfer Protocol) ইত্যাদির মাধ্যমে।

এখন মূল ব্যাপার হলো, সার্ভার থেকে ফাইলটি ডাউনলোড করা ব্যক্তি আপনিই একা নন! ধরুন ঐ ফাইলটি যদি সাইজে বেশ বড় এবং জনপ্রিয় হয়ে থাকে, তাহলে সার্ভার থেকে ঐ ফাইল ডাউনলোড করার চাহিদাও থাকবে অনেক বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই সে সময় ডাউনলোড স্পীড কমে যাওয়া খুব বেশি আশ্চর্যজনক কিছু নয়। আবার প্রোটোকলের ধরন, সার্ভারে ট্র্যাফিকের পরিমাণ ইত্যাদির উপরেও এই ডাউনলোডিং যথেষ্ট নির্ভরশীল। ফলে সময়ভেদে আপনার ডাউনলোড স্পিড যথেষ্ট ওঠানামাও করবে।

ক্লায়েন্ট-সার্ভার ডাউনলোডিং মেথডের কাজ করার পদ্ধতি আমরা জানলাম। এখন দেখবো কীভাবে Peer-to-peer (বা সংক্ষেপে P2P) ফাইল শেয়ারিং সিস্টেম কাজ করে।

Peer-to-peer ফাইল শেয়ারিং

বিট-টরেন্টে ব্যবহৃত হয় Peer-to-peer (বা সংক্ষেপে P2P) ফাইল শেয়ারিং সিস্টেম। এই পদ্ধতিতে আপনাকে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়। এই সফটওয়্যারের কাজ হলো আপনার চাহিদার ফাইলটি কোন কোন কম্পিউটারে আছে সেগুলোকে খুঁজে বের করা। ঐ কম্পিউটারগুলো আসলে আপনার-আমার কম্পিউটারের মতোই সাধারণ কম্পিউটার, ক্লায়েন্ট-সার্ভারের সার্ভার কম্পিউটারের মতো নয়। এদেরকে বলা হয় Peers। এরকম কয়েকটি ধাপে P2P ফাইল শেয়ারিং সম্পন্ন হয়ে থাকে-

  • প্রথমে P2P ফাইল শেয়ারিং সফটওয়্যার চালু করে প্রয়োজনীয় ফাইলের জন্য একটি অনুরোধ পাঠানো হয়।
  • ফাইলটিকে খুঁজে বের করার জন্য সফটওয়্যারটি অন্য কম্পিউটারে কোয়েরি করে। সফটওয়্যারটি সে কম্পিউটারগুলোতেই ফাইলটির অস্তিত্ব খুঁজবে যেগুলো ঠিক ঐ সময়েই একই সফটওয়্যার দ্বারা কানেক্টেড।
  • যখন ফাইল শেয়ারিং সফটওয়্যারটি ঐ ফাইল সমেত একটি কম্পিউটার খুঁজে পায় ঠিক তখনই আপনার কম্পিউটারে ডাউনলোড শুরু হয়।

    P2P যেভাবে কাজ করে; Source: quoracdn.net

আপনি যদি ডাউনলোড করার পরেও ঐ সফটওয়্যার ওপেন রাখেন তাহলে কানেক্টেড থাকা অন্যান্য ব্যক্তিরাও আপনার কম্পিউটার থেকে .torrent ফাইলগুলো ডাউনলোড করতে পারবে। কেউ কেউ তাদের কাঙ্ক্ষিত ফাইলটি ডাউনলোড করার পরপরই ডিসকানেক্ট করে দেন যাতে আর কেউ তার কম্পিউটার থেকে ফাইল না নিতে পারে। একে বলা হয় leeching।

ক্লায়েন্ট-সার্ভার এবং P2P এর পার্থক্য; Source: bp.blogspot.com

সাধারণ P2P এর সাথে বিট-টরেন্টের পার্থক্য

অন্যান্য P2P ফাইল শেয়ারিংয়ের সাথে বিট-টরেন্টের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন, বিট-টরেন্ট প্রোটোকল ফাইল ট্র্যাকিংয়ের কিছু কাজ একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারকে দিয়ে করায়। একে বলা হয় ট্র্যাকার। আরেকটি অন্যতম পার্থক্য হলো Tit-for-tat পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মানে হলো আপনাকে ফাইল পেতে হলে ফাইল দিতে হবে! আপনি যত বেশি ফাইল সবার সাথে শেয়ার করবেন আপনার ডাউনলোড স্পীডও ততটাই বেশি হবে। আপনি যদি কেবল ডাউনলোড করে যান কিন্তু নিজের ফাইল শেয়ার না করেন, অর্থাৎ Leeching করেন, তাহলে আপনি ভালো ডাউনলোড স্পীডও আশা করতে পারেন না! আর এই ব্যাপারটাই বিট-টরেন্টে Leeching এর সমস্যা দূর করে। যার ফলে নিজের জন্য হলেও আপনাকে কিছু ফাইল শেয়ার করতেই হবে! শেষমেশ, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য বিটটরেন্টে একই সাথে ফাইলের বিভিন্ন অংশ ডাউনলোড শুরু হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই ক্লায়েন্ট-সার্ভার মেথড থেকে এর ডাউনলোড স্পীডও বেশি থাকে।

বিট-টরেন্ট যেভাবে কাজ করে

এতক্ষণ আমরা যা নিয়ে কথা বললাম, তাকে বিট-টরেন্টকে বুঝবার প্রেক্ষাপট বলতে পারেন। পাঠক এগুলো ভালোভাবে বুঝে থাকলে বিট-টরেন্টের কাজের পদ্ধতি বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।

এখন আমরা জানবো আপনার কম্পিউটারে কীভাবে একটি টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড হয়।

  • আপনি একটি ওয়েবপেজ ওপেন করে আপনার প্রয়োজনীয় ফাইলের লিংক ক্লিক করেন।
  • আপনি ক্লিক করার সাথে সাথেই বিট-টরেন্ট ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার একটি ট্র্যাকারের সাথে যোগাযোগ করে যাতে করে সে Seed কম্পিউটারগুলোকে (যেসব কম্পিউটারে সম্পূর্ণ ফাইলটি রয়েছে) খুঁজে বের করতে পারে। একইসাথে সে সেসব কম্পিউটারকেও খুঁজে বের করে যাদের কাছে ঐ ফাইলের কিছু অংশ আছে (এদেরকে বলা হয় Peers; এর মানে হলো এরা ঐ সময় ফাইলটি ডাউনলোড কিংবা আপলোড করছেন)
  • ট্র্যাকার Swarm (ডাউনলোড বা আপলোড প্রসেসের মধ্যে থাকা কম্পিউটার) এর মধ্যে থাকা সকল Seeds ও Peers এর হিসাব রাখে।
  • ট্র্যাকারটি বিট-টরেন্ট ক্লায়েন্ট সফটওয়্যারকে Swarm-এ থাকা অন্যান্য কম্পিউটার থেকে ঐ ফাইলের টুকরো টুকরো অংশ ডাউনলোড করতে সাহায্য করে। আর একইসাথে আপনার কম্পিউটারে ঐ ফাইলের বিভিন্ন টুকরো একইসাথে ডাউনলোড হতে শুরু করে।
  • আপনার কাঙ্ক্ষিত ফাইলটি ডাউনলোড হয়ে যাওয়ার পরও যদি আপনি বিট-টরেন্ট ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার ওপেন রাখেন, তাহলে Swarm-এ থাকা অন্যান্য ব্যক্তিরা আপনার কম্পিউটার থেকে .torrent ফাইল ডাউনলোড করার সুযোগ পাবেন। আর যদি আপনি সেই সুযোগ না দিতে চান তাহলে tit-for-tat সিস্টেম অনুযায়ী আপনার পরবর্তী ডাউনলোডের গতিও থাকবে কম!

    বিট-টরেন্ট যেভাবে কাজ করে; Source: theglobeandmail.com

Swarm-এ থাকা কম্পিউটারের পরিমাণ যত বেশি হবে ডাউনলোড স্পীডও থাকবে তত বেশি। কারণ Swarm-এ বেশি কম্পিউটার থাকা মানেই ফাইলটির জন্য বেশি উৎস থাকা। আর এই কারণেই বৃহদাকার-জনপ্রিয় ফাইল ডাউনলোড করার জন্য বিট-টরেন্ট খুবই কার্যকরী।

টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করবেন যেভাবে

যেকোনো টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করার জন্য আপনার প্রথমে যে জিনিসটির প্রয়োজন, তা হলো একটি টরেন্ট ক্লায়েন্ট। অনেকগুলো টরেন্ট ক্লায়েন্ট পাবেন উইন্ডোজের জন্য। এর মধ্যে utorrent খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও নিজের পছন্দমত অন্যান্য ক্লায়েন্টও ব্যবহার করতে পারেন। ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার ইনস্টল করে যেকোনো ইন্টারনেট ব্রাউজার দিয়ে টরেন্ট লিংকে ক্লিক করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা টরেন্ট ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার এর মাধ্যমে ডাউনলোড শুরু হবে।

আর গুগলে সার্চ করলেই বিভিন্ন ধরণের টরেন্ট সাইটের সন্ধান পাবেন। তবে সাবধান থাকবেন পাইরেসির হাত থেকে!

টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করা কি অবৈধ?

বৈধ-অবৈধ নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর। আপনি যে ফাইল ডাউনলোড করছেন, তার উপর যদি কারো কপিরাইট থাকে এবং আপনি যদি সেটা টরেন্টের মাধ্যমে বিনামূল্যে ডাউনলোড করেন তাহলে সেটা অবশ্যই অবৈধ। অনেকেরই ধারণা আছে যে টরেন্ট মানেই পাইরেসির জগত। হয়ত অধিকাংশ সময় সবাই পাইরেসির জন্য ব্যবহার করে বলে এটা মনে হওয়া অমূলক নয়। তবে এই পদ্ধতিতে যে সব কিছু পাইরেসি হয় তা কিন্তু নয়। বিট-টরেন্ট সিস্টেম কিন্তু সম্পূর্ণ বৈধ। আপনি যখন কোনো ফাইল ডাউনলোড করছেন তখন আপনাকেই দেখে নিতে হবে সেটার কোনো মালিকানা আছে কিনা।

কপিরাইটেড ফাইলের আদান-প্রদান সত্ত্বেও বিট-টরেন্ট প্রোগ্রাম কিন্তু একইসাথে বৈধ এবং যথেষ্ট উদ্ভাবনীমূলক। ওপেন সোর্স ও tit-for-tat সিস্টেমের কারণে বিট-টরেন্ট যে পরবর্তী প্রজন্মের ফাইল-সার্ভিং সফটওয়্যারগুলোর সেতু হিসাবে কাজ করবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

ফিচার ইমেজ- Alphacoders

Related Articles