Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আইফেল টাওয়ার: লোহার তৈরি আশ্চর্য এক কাঠামো

ফ্রান্সের প্যারিস শহরে নির্মিত আইফেল টাওয়ারটি পৃথিবীর স্থাপনা নির্মাণের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ১৮৮৭ থেকে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। লৌহনির্মিত আইফেল টাওয়ারের অবস্থান প্যারিসের চ্যাম্প ডি মার্সে, শ্যেইন নদীর কাছে।

১৮৮৭ সালে ফ্রান্স সরকার যখন ফরাসী বিপ্লবের স্মৃতি হিসেবে শর্তবাষিকী পালনের তোড়জোড় করছিল, তখন সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় এক নিদর্শনে ধরে রাখার জন্যই এই প্রতীকি মিনারটি তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আর এ কাজের জন্য বিখ্যাত সেতু প্রকৌশলী আলেকজান্ডার গুস্তাভ আইফেলকে বেছে নেওয়া হয়েছিলো। তিনি পেটা লোহার খোলা জাফরি (Open lattice) দিয়ে ৩০০ মিটার (৯৮৪ ফুট) উঁচু এই নিখুঁত ও চমৎকার মিনারটি নির্মাণ করেন। তার নামানুসারেই মিনারটির নাম রাখা হয়েছিলো ‘আইফেল টাওয়ার’।

বিশ্বসেরা স্থাপনা হলেও এই টাওয়ারকে নিয়ে রয়েছে কৌতূহলোদ্দীপক বেশ কিছু তথ্য। আইফেল টাওয়ার সম্পর্কিত রোমাঞ্চকর সেসব তথ্য নিয়েই সাজানো হয়েছে এই লেখাটি।

আইফেল টাওয়ার নির্মাণে নির্মাতা নিজেই আগ্রহী ছিলেন না

আইফেল টাওয়ার ফরাসী স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হলেও প্রথমদিকে প্যারিসের অধিবাসীরা মোটেও পছন্দ করেনি টাওয়ারটিকে। নির্মাণের পরে উঁচু এ টাওয়ারটি অনেকেরই চক্ষুশূল হয়ে দেখা দিয়েছিল। সে সময় বিভিন্ন সংবাদপত্রে পাঠকদের পাঠানো চিঠিপত্রে দেখা যায়, তারা একে শহরটির অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করছিলেন।

এর থেকেও মজার ব্যাপার হলো, স্বয়ং গুস্তাভ আইফেলই টাওয়ারটি নির্মাণে তেমন আগ্রহী ছিলেন না! কিন্তু তিনিই এই টাওয়ারের প্রধান স্থপতি। ইঞ্জিনিয়ার মরিস কোয়েচিন ও এমিল নউগুইয়ার এর ডিজাইন করেন।

কতদিন লেগেছিল আইফেল টাওয়ার তৈরি করতে?

আইফেল টাওয়ার তৈরির কাজ শুরু হয় ১৮৮৭ সালের ২৮ জানুয়ারি, আর সবমিলিয়ে কাজ শেষ হয় ১৮৮৯ সালের ৩১ মার্চ। এটি তৈরি করতে সময় লাগে সর্বমোট ২ বছর ২ মাস ৫ দিন, তৈরিতে অবিরাম শ্রম দিয়েছেন ৩০০ শ্রমিক। তারা ১৮,০৩৮ টুকরো রড আয়রন ও ২৫ লাখ নাটবোল্ট সংযোজন করেন। নির্মাণ শেষে এর ওজন দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার টন এবং উচ্চতা ৯৮৪.২৫ ফুট। এই টাওয়ারের নির্মাণকাজটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্থাপত্যশিল্পের ক্ষেত্রে এক বিপ্লবের সূচনা করেছিলো। দু’একর জমি জুড়ে এর ভিত্তি। টাওয়ারটির চূড়া থেকে ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এক নজরে দেখে নেওয়া যায়।

Source: worthwhilesmile.com

১৯০৯ সালে এর চূড়ায় বসানো হয় একটি বেতার অ্যান্টেনা। এতে এর উচ্চতা আরও ২০.৭৫ মিটার (৬৬ ফুট) বেড়ে যায়। সেই থেকে আইফেল টাওয়ারকে বেতার তরঙ্গ প্রেরণের জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বিস্ময়কর স্থাপত্যের মধ্যে ১২০টি আ্যন্টেনা রয়েছে। টাওয়ারটির একেবারে শীর্ষে ওঠার জন্য প্রায় ১,৬৬৫টি ধাপ রয়েছে। অন্যথায়, শীর্ষে ওঠার জন্য টাওয়ারটির মধ্যে স্থাপিত লিফট বা এলিভেটরও ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঋতুর ভিত্তিতে এর উচ্চতা পরিবর্তিত হয়

রড আয়রন দিয়ে নির্মিত হওয়ার কারণে টাওয়ারটির ধাতব পদার্থ বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড়-ছোট হয়। উষ্ণতার কারণে গ্রীষ্মকালে এর দৈর্ঘ্য বৃ্দ্ধি পায়। গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়লে এর আকার বেড়ে যায় প্রায় ৬.৭৫ ইঞ্চি। ঝড়ো হাওয়ায় এটি সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কাঁপতে পারে!

মাত্র ২০ বছরের জন্য নির্মিত হয়েছিল টাওয়ারটি

নির্মাণকালীন পরিকল্পনায় টাওয়ারটি নির্মিত হয়েছিল ২০ বছরের জন্য। কিন্তু ফরাসি সামরিক বাহিনী ও সরকার রেডিও যোগাযোগের জন্য একে ব্যবহার শুরু করে। ১৯০৯ সালে প্যারিস শহর কর্তৃপক্ষ একে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

টাওয়ারটিতে কোনো নির্দিষ্ট রং ব্যবহার করা হয়নি

আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করার জন্য টাওয়ারটির উপরের অংশে কিছুটা গাঢ় রং ব্যবহার করা হয়। তবে নিচের দিকে ক্রমান্বয়ে হালকা রং ব্যবহার করা হয়। টাওয়ারটি রক্ষা করার জন্য প্রতি সাত বছর পর পর রং করা হয়। এতে ৫০ থেকে ৬০ টন রং ব্যবহার করা হয়, সম্পূর্ণভাবে রঙ করতে সময় লাগে প্রায় ১৮ মাস!

কোনসময় আইফেল টাওয়ার সবচেয়ে চমকপ্রদ হয়ে ওঠে?

Source: pixeltalks.com

আইফেল টাওয়ার, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় ৫ মিনিটের জন্য ঝলমল করে ওঠে। টাওয়ারটির আলোকসজ্জায় প্রায় ৩৩৬টি প্রজেক্টর এবং ২০,০০০টি বাল্ব ব্যবহার করা হয়েছিল।

প্রথমে টাওয়ারের লিফট সচল ছিল না

আইফেল টাওয়ারে ১৮৮৯ সালের ৬ মে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময় ৩০ হাজার দর্শনার্থীকে ১,৬৬৫টি ধাপ পার হয়ে শীর্ষে পৌঁছাতে হয়।

 

আইফেল টাওয়ারের প্রতিকৃতি কোথায় কোথায় অবস্থিত?

বিশ্বে আইফেল টাওয়ারের ৯টিরও বেশি প্রতিকৃতি রয়েছে। এর মধ্যে বিশিষ্ট কয়েকটি হল লাস ভেগাস (নেভাদা), ডুরাঙ্গো (মেক্সিকো) এবং শেনঝেন (চীন)।

ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান হিসেবে স্বীকৃতি

এই অঞ্চলের ল্যুভর থেকে আইফেল টাওয়ার এবং প্লেস দি লা কনকর্ড থেকে গ্র্যান্ড এবং পেটিট প্যালেস ১৯৯১ সালে এক বিশ্ব ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে। ইউনেস্কো এগুলোকে স্বীকৃতি দেয়।

অর্থের বিনিময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী আসে এখানে

Source: pixeltalks.com

অর্থের বিনিময়ে দেখা স্থাপনার শীর্ষে রয়েছে আইফেল টাওয়ার। অন্য স্থাপনাগুলোর তুলনায় এখানে প্রতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী ঘুরতে আসে। প্রতি বছর এ টাওয়ার দেখতে প্রায় ৭০ লাখ দর্শনার্থী আসে, যাদের ৭৫ ভাগই আসে বিদেশ থেকে।

বিশ্বসেরা পর্যটনকেন্দ্র

Source: pinterest.com

এ টাওয়ার পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করেছে। বার্ষিক প্রায় সত্তর লক্ষ জনসাধারণ এখানে ঘুরতে আসে। টাওয়ারটির ভেতরে অবস্থিত দুটি রেস্তোঁরা হলো লা 58 ট্যুর আইফেল এবং লা জুল ভার্ন। আইফেল টাওয়ার একটি বিশ্ববিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক, যেটি প্যারিসের প্রায় সমগ্র জায়গা থেকে দেখা যেতে পারে।

এটি শুধু পর্যটনকেন্দ্রই নয়

এখানে একটি সংবাদপত্র অফিস আছে। এছাড়াও এতে রয়েছে পোস্ট অফিস, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার ও একটা থিয়েটার। আইফেল টাওয়ারের প্রথম তলাটি প্রত্যেক বছর আইস রিংক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

নানা ঘটনার সাক্ষী

প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এ টাওয়ারটি বেতার তরঙ্গ সম্প্রচার করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় প্যারিসে নাৎসি বাহিনীর আগমনের আগে এর লিফটের তার কেটে দিয়েছিল মিত্র বাহিনী। নাৎসিরা যেন টাওয়ারটি ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তবে মিত্র বাহিনীর সৈন্যরা ফিরে আসার পরে সেটি আবার ঠিক করা হয়েছিল। টাওয়ারটির সর্বোচ্চ তলায় একবার আগুনও লেগেছিল।

তৎকালীন বিজ্ঞানের মাইলফলক

গুস্তাভ আইফেল এ প্রসঙ্গে বলেন, “এটি শুধু আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সৃষ্টি নয়, এটি এ শতাব্দীর শিল্প ও বিজ্ঞানের নিদর্শন।”  এ টাওয়ারটি নির্মাণের সময় আরেকটি প্রযুক্তিও ভ্রূণ পর্যায়ে ছিল- ফটোগ্রাফি। টাওয়ারটি নির্মাণের সময় বহু ফটোগ্রাফার এর নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি তুলে রাখেন।

ফিচার ইমেজ: pinterest.com

Related Articles