কয়েকদিন আগেই ডেভেলপার সম্মেলন ‘২০ থেকে নতুন আইওএস ১৪ ঘোষণা করা হয়। অ্যাপলের রিলিজ লাইনআপ ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরেই আইফোনে নতুন আইওএস আপডেট আসতে চলেছে। ঐতিহ্যগত রক্ষণশীলতা থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসে অ্যাপল এবার নতুন আইওএস আরও ব্যবহারকারী-বান্ধব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্ত করা হচ্ছে এমন কিছু ফিচার যা এতদিন শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড এবং উইন্ডোজ প্লাটফর্মেই ছিল। আইফোন ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের বেশ কয়েকটি দাবি এবার পূর্ণ হতে চলেছে।
নতুন আইওএসে কী কী নতুনত্ব থাকছে? চলুন, বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
উইজেডস
আগের আইওএসে শুধুমাত্র ‘টুডে স্ক্রিন’ থেকে উইজেডস ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও নতুন আইওএস ১৪ থেকে এই সীমাবদ্ধতা থাকছে না। নতুন আইওএসে ব্যবহারকারী চাইলেই ‘অ্যাট এ গ্লান্স’ থেকেই যেকোনো উইজেডস ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড বা উইন্ডোস ফোনের লাইভ টাইলসের মতো হোম স্ক্রিনের যে কোনো স্থানে, পছন্দমতো আকারে পিন করেও রাখা যাবে। হোমস্ক্রিনের জেসচারেই (+ আইকন থেকে) অ্যাপভেদে এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
উইজেডসের অপশন থেকে ব্যবহারকারী চাইলেই এখন তার আইফোনের হোমস্ক্রিন বা ‘টুডে স্ক্রিন’ নিজের পছন্দমতো কাস্টমাইজ করতে পারবেন। এছাড়া ‘স্মার্ট স্টাক’ থেকে স্মার্টফোন ব্যবহার বৈশিষ্ট্য নির্ভর (এআই ভিত্তিক) উইজেডস সাজেশন পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে একজন আইওএস ব্যবহারকারী আগের সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে এসে ঠিক অ্যান্ড্রয়েডের মতো হোমস্ক্রিন সাজিয়ে নিতে পারবেন।
অ্যাপ লাইব্রেরি
নতুন আইওএসে হোমস্ক্রিনের শেষে অ্যাপ লাইব্রেরি নামে নতুন স্ক্রিন সুবিধা থাকছে। এক্ষেত্রেও ব্যবহারকারী ঠিক অ্যান্ড্রয়েডের মতো স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবেন। ব্যবহারকারী চাইলেই তার পছন্দমতো অ্যাপগুলো বিভিন্ন ফোল্ডার করে সাজিয়ে রাখতে পারবেন। এক্ষেত্রে আইওএস ব্যবহারকারীকে কার্যকরী সাজেশনস প্রদান করবে।
যারা স্পটলাইট থেকে অ্যাপ খুঁজে নিতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য আগের স্পটলাইট অপশনটিও চালু থাকছে। হোমস্ক্রিনের নিচে স্ক্রল করে পছন্দমতো অ্যাপগুলো সাজিয়ে নেওয়া যাবে।
অ্যাপ ক্লিপ
অ্যাপ ক্লিপ হচ্ছে কোনো পণ্য কিংবা সেবা সম্পর্কিত অ্যাপগুলোর অংশবিশেষ (১০ মেগাবাইটের মধ্যে), যা সহজে, অল্প সময়ে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যাবে। গাড়ি পার্কিং, কফি বিলের মতো কাজগুলোতে এই অ্যাপ ক্লিপ বেশ সময় বাঁচাবে। অ্যাপলের নতুন অ্যাপ ক্লিপ কোড, এনএফসি ট্যাগস বা কিউআর কোড স্ক্যান করে যে কেউ সহজেই পরিষেবাটি উপভোগ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে স্ক্যান সম্পন্ন হলে সম্পর্কিত অ্যাপ ক্লিপটি আইফোন পর্দার নিচে ভেসে উঠবে।
মেসেজিং
অ্যাপল আইওএস ১৪ থেকে মেসেজ পরিষেবায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ব্যবহারকারী এখন পছন্দের থ্রেডগুলোকে ফেসবুকের হোয়াটসঅ্যাপের মতো পিন করে রাখতে পারবেন। এছাড়া অন্যান্য ফিচারগুলো হচ্ছে মেনশন, ইনলাইন রিপ্লাই এবং নতুন মেমোজি অপশন। পছন্দমতো ছবি বা ইমোজি থ্রেড কনভার্সেশনের ফিচার হিসেবে সেট করা যাবে। এছাড়া ব্যবহারকারীদের জন্য মেসেঞ্জারের মতো করে কনভার্সেশন মিউট করে রাখার অপশন থাকছে।
সিরি
নতুন আইওএসে পরিমার্জিত এবং আধুনিক সিরি (অ্যাপলের ভয়েস কম্যান্ড) সুবিধা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে আগের নতুন সিরি উইন্ডো বাদ দিয়ে ‘অন দ্য গো অ্যাপ’ সিরি চালু করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সিরি সাজানো হয়েছে বেশ কিছু নতুন ফিচার দিয়ে। আধুনিক অনুবাদ সুবিধা,সার্চ,নলেজ টুলসসহ প্রয়োজনে কাউকে রেকর্ডকৃত ভয়েস মেসেজ পাঠানোর কাজটি এখন থেকে অনায়াসেই সিরি কমান্ডের মাধ্যমে করা যাবে।
ম্যাপস
আইওএসের নতুন সংস্করণে ম্যাপস অ্যাপটিতে বেশ ক’টি নতুন ফিচার সংযুক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইলেকট্রিক ভেহিকেল রাউটিং এবং কিউরেটেড গাইডস। নতুন যুক্ত হওয়া সাইক্লিং মোড থেকে রাস্তা সম্পর্কে আগেভাগেই ওয়াকিবহাল (সামনে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কি না) হওয়া যাবে। এছাড়া ইলেকট্রিক ভেহিকেল রাউটিং ফিচারের মাধ্যমে রাস্তায় ভেহিকেল চার্জ করে নেবার ব্যবস্থা এবং নতুন শহরের দর্শনীয় জায়গা সম্পর্কে সহজেই জেনে নেবার সুবিধা থাকছে।
বেটা সংস্করণে এখনই সব ফিচার পাওয়া না গেলেও স্ট্যাবল রিলিজে ম্যাপস থেকে সম্পূর্ণ সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে বলে অ্যাপল থেকে বলা হয়েছে।
কার কি
আসছে আইওএসের অন্যতম ফিচার হচ্ছে ডিজিটাল কার কি। এখন থেকে ব্যবহারকারী চাইলেই তাদের আইফোন কিংবা অ্যাপল ওয়াচকে গাড়ির চাবি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এনএফসি প্রটোকল কিংবা ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে এই ফিচারটি কাজ করবে বলে অ্যাপল থেকে বলা হচ্ছে। কেউ চাইলে সহজেই অন্য কাউকে তার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ শেয়ার করতে পারবেন। এমনকি গাড়ির মালিক চুরি হয়ে যাওয়া গাড়িটি দূর থেকেই আইক্লাউডের মাধ্যমে সহজেই লক করেও দিতে পারবেন।
এই ফিচারটি ব্যবহার করতে হলে হালনাগাদ আইফোনের প্রয়োজন হবে। ওয়াচের থেকে শুধুমাত্র অ্যাপল ওয়াচ ৫ স্মার্টওয়াচটি এই ফিচারটি সমর্থন করবে।
থার্ড পার্টি অ্যাপ
আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সম্ভবত এখন সবথেকে বড় সুখবরটি হচ্ছে- নতুন আইওএস ১৪ থেকে কেউ চাইলেই কোনো থার্ড-পার্টি অ্যাপকে প্রয়োজনে ডিফল্ট অ্যাপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে এখন ঠিক অ্যান্ড্রয়েড বা উইন্ডোস ডিভাইসের মতোই স্বাধীনতা উপভোগ সম্ভব হবে। আইফোনের নিজস্ব মেইল অ্যাপ কিংবা সাফারির বদলে চাইলেই ডিফল্ট হিসেবে জিমেইল কিংবা গুগল ক্রোম ব্যবহার করার মতো বিষয় আইওস ব্যবহারকারীদের কাছে অনেকটা স্বপ্নের মতোই!
নতুন ট্রান্সলেট অ্যাপ
নতুন আইওএসে ভয়েস অনুবাদ সমর্থিত নতুন ট্রানসলেশন অ্যাপ থাকছে। ১১টি ভিন্ন ভাষা সমর্থিত এই ট্রানসলেশন অ্যাপ তাৎক্ষণিক অনলাইন-অফলাইন ট্রান্সলেশন এবং টেক্সট ট্রান্সলেশন ফিচার সমর্থন করবে। ল্যান্ডস্কেপ মোডে স্বয়ংক্রিয় কনভারসেশন মোড চালু হবে, ফলশ্রুতিতে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় সহজভাবে অনুবাদ করা যাবে।
পিকচার ইন পিকচার সাপোর্ট
আইওএস ১৪ পিকচার-ইন-পিকচার ফিচার সমর্থন করবে। বেশ আগে থেকে অ্যান্ড্রয়েডে চালু হওয়া এই ফিচার আইফোন ব্যবহারকারীদের যেকোনো অ্যাপ্লিকেশন চালু থাকা অবস্থাতে ফেসটাইম অথবা ভিডিও প্লেব্যাকের মতো সুবিধা প্রদান করবে।
নতুন ফিটনেস অ্যাপ
নতুন আইওএসে পুরোনো অ্যাক্টিভিটি অ্যাপটিকে নতুন নকশায় সাজানো হয়েছে। ফিটনেস নামের নতুন এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী সহজে হোমস্ক্রিনে যাবতীয় তথ্য পাবেন। এই অ্যাপে এখন রিংস, ওয়ার্কআউট, ট্রেন্ডস এমনকি নতুন ড্যান্স মোড থাকছে।
হেলথ অ্যাপ
হেলথ অ্যাপটিকেও নতুন মাত্রা দেওয়া হয়েছে। এতে হেলথ চেকলিস্ট, স্লিপ ম্যানেমেন্ট, সেফটি মেজার্স, ইমারজেন্সি সস, মেডিকেল আইডি, ইসিজি ফল ডিটেকশন নামের বেশ কিছু নতুন ফিচার দেওয়া হয়েছে।ব্যবহারকারী চাইলেই এখন প্রয়োজনীয় সব মেডিকেল রেকর্ড হেলথ অ্যাপের মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
বাড়তি নিরাপত্তা
প্রাইভেসির ক্ষেত্রে নতুন আইওএসে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে যেকোনো থার্ড-পার্টি অ্যাপ বা অ্যাপ স্টোরের কোনো অ্যাপকে ইউজার ডাটা সংগ্রহ করার আগেই ব্যবহারকারীর সুস্পষ্ট অনুমতি অবশ্যই নিতে হবে। নিখুঁত লোকেশন শেয়ারিং চাইলে সম্ভাব্য লোকেশন শেয়ারিং ফিচার দিয়ে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। এমনকি, মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা ব্যক্তিগত ডাটা সংগ্রহ করার আগে লাইট-ব্লিঙ্কিং দিয়ে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করবে।
সাফারি
নতুন আইওএসে সাফারি ব্রাউজারে বেশ কিছু নতুন ফিচার আনা হয়েছে। এখন থেকে অ্যাপলের নিজস্ব এই ব্রাউজার থেকে ক্রস-সাইট ট্র্যাকার, ডাটা ব্রিচ প্রোটেকশনসহ গুগল ক্রোমের মতো বিল্ট-ইন ট্রান্সলেশন সুবিধাও পাওয়া যাবে।
হোম
হোম অ্যাপটিতেও বেশ কিছু নতুন সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। অটোমেশন, এক্সপ্যান্ড কন্ট্রোল, অ্যাডাপ্টিভ লাইটিং, অন-ডিভাইস ফেস রিকগনিশনের মতো বেশ কিছু আধুনিক ফিচার দিয়ে এটি সাজানো হয়েছে।
অন্যান্য
নতুন আইওএসে আরও কিছু নতুন ফিচার এবং সুবিধা যুক্ত হচ্ছে। ওয়েদার অ্যাপে মিনিট-বাই-মিনিট আপডেটসহ অ্যানিমেশনগত পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া আইপড ইকোসিস্টেম সাপোর্ট, ফাইন্ড মাই অ্যাপের ক্ষেত্রে থার্ড-পার্টি প্রোডাক্ট এবং এক্সেসোরিস সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। হেডফোন অ্যাকোমোডেশন, সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডিটেকশনের মতো কার্যকরী এবং আধুনিক সব ফিচার দিয়ে নতুন আইওএস সাজানো হয়েছে।