Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.
ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীরা সময় পেলেই বেরিয়ে পড়েন প্রকৃতির বুকে চষে বেড়াতে। সাগর, নদী, ঝর্ণা বা পাহাড়ের মতো নিজস্ব পছন্দের জায়গায় থাকে তাদের বিচরণ। কেউ কেউ আছেন দুর্গম পাহাড় কিংবা পর্বতশ্রেণীর উঁচু-নিচু পথ বেয়ে হেঁটে বেড়ান মাইলের পর মাইল রাস্তা।
যানবাহনের চলাচল নেই, এমন বিস্তীর্ণ দীর্ঘ পথ হেঁটে ভ্রমণ করাই ‘হাইকিং’ নামে পরিচিত। বেশ কষ্টসাধ্য কাজ এবং সময়ের ব্যাপার হলেও প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণের নেশায় মত্ত মানুষ কি আর থেমে থাকেন! তারা ছুটে যান এক হাইকিং ট্রেইল থেকে আরেক ট্রেইলে, অজানাকে নিজের চোখে দেখার আকাঙ্ক্ষায়।
বিশ্বের এমনই কিছু আকর্ষণীয় হাইকিং ট্রেইল নিয়েই আজকের লেখা।
পেনিন ওয়ে, যুক্তরাজ্য
২৬৭ মাইলের লম্বা পথটি যুক্তরাজ্যের প্রাচীন দীর্ঘ দূরত্বের পথগুলোর মধ্যে একটি। ডার্বিশায়ারের ইডেল থেকে শুরু হয়ে ইয়র্কশায়ার ডেইল হয়ে কার্ক ইয়েথমে গিয়ে সম্পূর্ণ ভ্রমণে সময় লাগে তিন সপ্তাহের মতো। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পেনিন ওয়ে হাইকিংয়ের উপযুক্ত সময়। মধ্যবর্তী সময়ে তুষারপাতসহ নানা পরিবেশগত কারণে হাইকিং কঠিন হয়ে পরে। পথে অনেক জলাভূমি এবং ছোট-বড় পাহাড়ের দেখা মিলবে। পেনিন হিল পর্বতশ্রেণীর সর্বোচ্চ স্থান ‘ক্রস ফেল’, যার উচ্চতা ২,৯৩০ ফুট। যুক্তরাজ্যের বিচিত্র আবহাওয়া এই এক ভ্রমণেই অবলোকন করা সম্ভব ।
Image Source: Karen Goument
ক্যামিনো দে সান্তিয়াগো, স্পেন
ক্যামিনো দে সান্তিয়াগো মূলত প্রাচীন অনেকগুলো তীর্থযাত্রার পথের সমষ্টি, যার সবগুলো পথ এসে মিলিত হয় সান্তিয়াগো দে কম্পোসতোলা শহরের গির্জায়। যিশু খ্রিস্টের বার্তাবাহক ‘সেন্ট জেমস’ এর সমাধিস্থল এই গির্জায়, এই গির্জাটি নির্মাণ হওয়ার পরেই একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল শহরটি। দুটি পথ রয়েছে ক্যামিনো দে সান্তিয়াগো হাইকিংয়ের জন্য, একটি স্পেন হয়ে, অপরটি ফ্রান্স হয়ে। ফরাসি পথটি তুলনামূলকভাবে সহজ এবং অধিক জনপ্রিয়। অপরদিকে স্পেন হয়ে যাত্রা শুরু করলে উপকূলবর্তী পথ এবং পাহাড়ি রাস্তা ধরে হাঁটতে হয়।
অ্যাপালাচিয়ান ট্রেইল, যুক্তরাষ্ট্র
প্রায় ২,২০০ মাইলের এই পথটি আমেরিকার অন্যতম বিখ্যাত এবং বিশ্বের দীর্ঘতম হাইকিং ট্রেইলগুলোর মধ্যে একটি। পথটি জর্জিয়ার স্প্রিঙ্গার পর্বত থেকে শুরু হয়ে মেইনের কাটাডিন পর্বতে গিয়ে শেষ হয়। সম্পূর্ণ পথটি হাইকিংয়ে সাধারণ মানুষের সময় লাগে প্রায় ৫-৭ মাস! ট্রেইলটির বেশিরভাগ পথই ঘন বন এবং পাহাড়ের ভেতরে, কিছু অংশে পড়ে রাজপথ ও ছোট শহর। যুক্তরাষ্ট্রের ১৪টি অঙ্গরাজ্যের ভেতর দিয়ে গিয়েছে এই ট্রেইলটি। প্রতি বছর ৩ মিলিয়ন পর্যটক এই ট্রেইল দেখতে আসেন!
Image Source: Mark VanDykeImage Source: Kevin Ornaldi
মাউন্ট তৌবকাল, মরক্কো
মাউন্ট তৌবকাল দক্ষিণ-পশ্চিম মরক্কোতে অবস্থিত। তৌবকাল এটলাস পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, উচ্চতা প্রায় ১৩,৬৭১ ফুট। ইমলিল নামের ছোট একটি গ্রাম থেকে সাধারণত যাত্রা শুরু করেন পর্বতারোহীরা। স্থানীয় গাইড এবং কুলি আবশ্যক সামিট সম্পন্ন করতে। ২০১৮ সালে দুজন পর্বতারোহী খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাইড রাখা বর্তমানে বাধ্যতামূলক। উত্তর আফ্রিকার এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণের জন্য অভিজ্ঞ ট্রেকার না হলে ভ্রমণ সম্পন্ন করা চাট্টিখানি কথা না!
‘সাংগ্রি-লা’ বা সুখের দেশ এবং ‘ল্যান্ড অফ দ্য পিসফুল ড্রাগন’ নামে বহুল পরিচিত দেশ ভুটান। ভুটানের হা ভ্যালিতে মেকোচাং থেকে শুরু হয়ে জানাধিনখাতে শেষ হওয়া এই হাইকিং ট্রেইলের উচ্চতা ৩,৫০০ মিটার থেকে ৪,১৫০ মিটারের মধ্যে। এই ট্রেইলের মধ্যেই কৃষিজমি যেমন দেখা যাবে, তেমনি পার হতে হবে পাহাড় বেয়েও। ভুটানের দর্শনীয় স্থানগুলো সংরক্ষিত থাকায় এবং ভ্রমণের জন্য ‘ট্যুরিস্ট পাস’ এর প্রয়োজন হওয়ায় এই ট্রেকগুলো এখনো প্রকৃতির নিজস্ব সৌন্দর্য ধরে রাখতে পেরেছে, পরিবেশ বিনষ্টকারী মানুষের থাবা এখনো পড়েনি বলা চলে। নৈঃশব্দ্য, দুর্গম পথ, বিচিত্র উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সবমিলিয়ে ভুটানের ছবির মতো সৌন্দর্য উপভোগের সাথে দেখা মিলবে কাঞ্চনজঙ্ঘারও।
source: Steve Lopes
আর্মেনিয়া সিল্ক রোড, আর্মেনিয়া
খুব বেশি পরিচিত না হলেও ইউরোপের অসাধারণ কিছু হাইকিং ট্রেইল আছে আর্মেনিয়াতেই। এককালে যোগাযোগ ও বাণিজ্যের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ ছিলো এই প্রাচীন সিল্ক রোড। আর্মেনিয়া সিল্ক রোডের এগারো দিনের এই যাত্রায় সানাহিন এবং হ্যাঘপ্যাট অঞ্চলের বেশ কিছু মঠের দেখা মিলবে, যা ইউনেস্কোর বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। সেই সাথে মিলবে আর্মেনিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আরাগ্যাটস আরোহণের সুযোগ। শত শত বছর পূর্বে এটি ছিলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি।
লাদাখের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান হলো এটি। সিন্ধু নদীর অববাহিকায় অবস্থিত এই অঞ্চল ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের কারণেই বিখ্যাত। ভারতীয় উপমহাদেশে সভ্যতার জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলে হাঁটতে হাঁটতেই মানুষ ফিরে যায় ইতিহাসের পাতায়। এই অঞ্চলের প্রতিটি স্থাপনা, সংস্কৃতি মনে করিয়ে দেয় পুরনো ইতিহাস। ভ্যালিতে হাঁটতে হাঁটতে একদিকে যেমন চোখে পড়বে ঐতিহাসিক মঠগুলো, অন্যদিকে তুষারাবৃত হিমালয়ের চূড়াগুলো! কোরিয়া, জাপান, চায়নার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থযাত্রার জন্য অন্যতম গন্তব্যস্থান এটি।
Image Source: tourmyindia.com
বাশো ওয়েফেরার, জাপান
বিখ্যাত জাপানি কবি মাতস্যু বাশো তার ভ্রমণকাহিনী ‘ন্যারো রোড টু দ্য ইনটেরিয়র’ (Oku no Hosomichi)– এ বর্ণিত ভ্রমণপথই বর্তমানে জনপ্রিয় একটি ট্রেইল। অন্তত ছ’দিন যাত্রার এই পথটি সেনদাই থেকে শুরু হয়ে ইয়ামাদেরা মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। মার্চ থেকে মে, এই সময়ে এই পথ ভ্রমণে বের হলে পথে পথে দেখা মিলবে সাদা ও গোলাপি চেরি ফুলের মেলা। কবি মাতস্যু বাশো বলেছিলেন,
“মানুষের দুটো জীবনের মধ্যে অন্য একটি সময় আছে, সেটি হলো চেরি ফুল ফোটার সময়”।
Image Source: shutterstockImage Source: Sean Pavone
ড্রাগনস ব্যাক ট্রেইল, হংকং
হংকং মূলত গগনচুম্বী অট্টালিকা এবং অত্যন্ত সরু রাস্তাগুলোর জন্য বিখ্যাত হলেও অসংখ্য হাইকিং ট্রেইল রয়েছে এখানে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেইল ড্রাগনস ব্যাক ট্রেইল। শেক-ও রোড থেকে যাত্রা শুরু হয়, ট্রেইলের সর্বোচ্চ উচ্চতা শেক-ও চূড়া (৯৩২ ফিট)। যাত্রা শেষ হয় ‘বিগ ওয়েভ বে’ নামক সমুদ্র সৈকতে গিয়ে। পাহাড়ি পথ, ঝর্ণা, সমুদ্র সবকিছুরই দেখা মিলবে এই ট্রেইল হাইকিংয়ে। পথটি কিছু দূর পর পর মার্কিং করে দেওয়া আছে, তাই পথ হারাবার ভয়ও নেই। সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠলে সম্পূর্ণ ট্রেইলের পরিদৃশ্য দেখা যাবে।
দ্য ডিঙ্গল ওয়ে, আয়ারল্যান্ড
১১১ মাইল দীর্ঘ এই পথটি আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি কেরির ট্রালি থেকে শুরু হয়ে ট্রালিতে এসেই শেষ হয়। এই ট্রেইলের পথটি গোলাকার, সম্পূর্ণ পথ ঘুরে আসতে সময় লাগে ৮ দিনের মতো। উপকূলীয় সমভূমি, পাহাড়, লেক, সমুদ্র-সৈকত সব মিলিয়ে বৈচিত্রময় ভূ-প্রকৃতির দেখা মেলে এই অঞ্চলে। ভূ-প্রাকৃতিক দৃশ্যের বৈচিত্র্য এই ট্রেইলের অন্যতম আকর্ষণ। এই ট্রেইল দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকগুলো দর্শনীয় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানও চোখে পড়বে।
আফ্রিকার এই দেশটিকে প্রকৃতি যেন দু’হাত ভরে দিয়েছে সৌন্দর্য। বিউইন্ডি ইমপেনেট্রেবল ন্যাশনাল পার্ক ধরেই এই পথের শুরু। এর নাম ইমপেনেট্রেবল বা অভেদ্য। কারণ অসংখ্য বাঁশঝাড়, গুল্মলতা, ফার্নেসের বৃদ্ধির ফলে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করে এই পথ পাড়ি দেওয়া অত্যন্ত দুরূহ কাজ। এই জঙ্গলেই দেখা মেলে বিরল প্রজাতির বিশালদেহী গরিলার। গরিলা দেখতেই দুর্ভেদ্য এই পথে পা বাড়ায় মানুষ। জঙ্গলটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রায় ৩০০ মাইল দীর্ঘ এই হাইকিং ট্রেইলটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হাইকিং ট্রেইল। উপকূল দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ফেথিয়ে থেকে আনতালিয়ার পথ, এই পথটি ৩,০০০ বছর আগের লিসিয়ানদের প্রাচীন কিছু পথের সমষ্টি। লাল- সাদা চিহ্ন দেওয়া এই পথে হাঁটতে হাঁটতেই প্রাচীন পাথুরে সমাধি থেকে শুরু করে লিসিয়ানদের সভ্যতার দৃশ্য মিলবে। পর্বত চূড়া, পাইন গাছের বন, পাথুরে উপকূল, নির্জন সৈকত, প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ সব কিছুরই দেখা মিলবে এই পথে। ইতিহাসের দৃষ্টান্ত আর প্রকৃতি যেন মিলেমিশে একাকার এই প্রাচীন পথে।
উপকূলবর্তী কেপ ন্যাচারালিস্ট লাইট হাউজ থেকে শুরু হয়ে কেপ লিউইনের লাইট হাউজে শেষ হয় ১২৩ কিলোমিটারের এই পথটি। পথিমধ্যেই রাত্রিযাপনের জন্য ক্যাম্পসাইট এবং ক্যারাভান পার্ক আছে। অন্তরীপ, উপকূলীয় দৃশ্য, পর্বত চূড়া, গুহা এসব কিছু নিয়ে এই পথটি। বছরের যেকোনো সময়ই এই পথ হাইকিংয়ের জন্য উপযুক্ত। ‘কেপ ন্যাচারালিস্ট’ থেকে ‘সুগারলফ’ পর্যন্ত পথটি হুইলচেয়ার চলাচলের উপযোগী করে বানানো হয়েছে। অন্য যেকোনো হাইকিং ট্রেইলের থেকে এই ব্যাপারটি কেপ টু কেপ ট্র্যাককে আলাদা করে তুলেছে।
Image Source: Ben AndlaraImage Source: Sean Blocksridge