Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বান্দরবানের পাহাড়ের কোলে এক অন্য ভুবনে

‘কাজপাগল মানুষ’, ঘনিষ্ঠরা আমার সম্পর্কে এককথায় বলতে হলে এই কথাই বলতো, আজ থেকে দেড় বছর আগে। এখন হয়তো বলবে, ‘ভ্রমণ পাগল’। এই ভিন্ন উপাধিপ্রাপ্তির পেছনে এই ট্রিপের ভূমিকা অনন্য। কাজের চাপে হাঁপিয়ে উঠে যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম, ঠিক তখন আমার পরিবার থেকে পাহাড়ের কোলে কিছুটা সময় কাটানোর প্রস্তাব আসে।

আমাদের এই ট্রিপের সময়কাল ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর রাতে যাত্রা শুরু হয়ে ২৬ ডিসেম্বর ভোরে শেষ। পাহাড়ের কোলে বেড়াতে যাব, তা-ও আবার কনকনে ঠান্ডায়। সেই সাথে ছিল ট্রেকিংও। বেশ কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল। উল্লেখ্য, আমার ও আমার পরিবারের জন্য এটিই ছিল প্রথম গ্রুপ ট্যুর, যেখানে সহযাত্রীদের মধ্যে অপরিচিতরাও ছিল। তাই এক্ষেত্রে মানসিক প্রস্তুতির গুরুত্ব অনেক বেশি। যদিও আমি এর আগে পরিবার ছাড়া, সহকর্মী ও সহপাঠীদের সাথে বেড়িয়েছি। আমার পরিবার থেকে ছিলাম আমি সহ আমার মা, ভাই, বোন এবং আমার খালাত বোন ও তার মেয়ে। বাকি সদস্যদের বিভিন্নজন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং তাদের প্রত্যেকেই এর আগে একাধিকবার গ্রুপ ট্যুরে গিয়েছিলেন।

সাঙ্গু পাড়ের দৃশ্য; ছবি: লেখক

অভিজ্ঞতার অভাবে প্রস্তুতি প্রয়োজনের চেয়ে যে বেশ কিছুটা বেশিই হয়ে গিয়েছিল, তার প্রথম উপলব্ধি হয় ফকিরাপুল বাস স্টপে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় দুই ঘন্টা আগে পৌঁছে। আমরা ভয়ে ছিলাম, বৃহস্পতিবার সবাই শহরের বাইরে যেতে চেষ্টা করায় জ্যাম একটু বেশি হতে পারে। বাসে উঠেই আমার বোন আগ বাড়িয়ে বললো, জানালার পাশের সিটে রাতে ও বসবে, আর দিনের বেলায় আমি। আমি শুধু জানালাম, রাতের বেলা বাইরের কিছুই চোখে পড়বে না, তার চেয়ে আমার সকালটাই ভাল। বেচারী তখনও জানতো না যে, ভোগান্তি আরও বেশি ছিল। ভোর হলে আমি তাকে ঘুমন্ত দেখে আর সিট বদলানোর জন্য ডেকে তুলিনি। আসলে সূর্যোদয় তার উল্টো দিকে থাকায় আমার সিটে বসেই বেশ দেখতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু ঘুম ভাঙার পরে ও আমায় জানালো, জানালার ফাঁক দিয়ে হু হু করে ঢুকে রাতভর ঠান্ডা বাতাস নিয়মিতই তার সঙ্গে ছিল!

মিলনছড়ির সেই কাঠের ফ্রেম; ছবি: লেখক
থানচি ব্রীজ, এর ওপারেই থানচি বাজার; ছবি: লেখক

সকালে বান্দরবান বাস স্টপে পৌঁছে চান্দের গাড়িতে যাত্রা শুরু হয়। তবে পাহাড়ের গহীনে আমরা তখনই রওনা হইনি। বরং ঘন্টাখানেকের বিরতি ছিল সকালের নাস্তার জন্য। চনমনে খিদেটা পরোটা, সব্জি, ডাল আর ডিম ভাজি দিয়েই মিটিয়েছিলাম। আমরা জানতাম, এরপর থেকে সৌর বিদ্যুতের কল্যাণে আলোকিত অঞ্চলে মুঠোফোনের ব্যাটারি চার্জ করাটা বিলাসিতার পর্যায়েই গণ্য হবে। সেই সাথে নেটওয়ার্কও থাকবে না। তাই পাওয়ার ব্যাংকের ওপর চাপ কমানোর জন্য কেউ ব্যাটারি চার্জ করতে, আবার কেউ ঢাকায় ফেলে আসা পরিবারের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। একইসাথে একে অপরের সাথে পরিচয়ের কাজটিও সেরে নিচ্ছিলাম। খাওয়া শেষেই যাত্রা শুরু হয় থানচি বাজারের উদ্দেশ্যে। এবারেই আমি প্রথম টের পাই, আমার মোশন সিকনেস আছে, তবে সেটা প্রথমবার এত উঁচুতে ওঠার কারণেই। শারীরিক অস্বস্তির কারণে আমি কারও সাথে কথা বিশেষ বলছিলাম না। সবাই ধরে নিল, আমি অহংকারী, অসামাজিক। পরে অবশ্য নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তারা দুঃখও প্রকাশ করেছিল।

সাঙ্গুর তীরে জুমচাষী আদিবাসী; ছবি: লেখক

দুই পাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই পৌঁছে গেলাম মিলনছড়ি। পাহাড়ের এত অপরূপ রূপ আমি আগে কখনও দেখিনি। ছবি তোলার জন্যে এখানে নিয়মিতই থামা হয়। এই তথ্যটা আমার অনভিজ্ঞতার কারণে জানা না থাকায় চেঁচিয়ে গাড়ি থামানোর অনুরোধ জানাই। প্রায় লাফ দিয়েই গাড়ি থেকে নেমে ঐ স্থানে ট্যুরিস্টদের জন্য তৈরি করে রাখা কাঠের ফ্রেমটির সামনে একে একে সবাই পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে যাই। এটা এই স্থানের ’ডিফল্ট অ্যাক্টিভিটি’। এরপরের যাত্রাবিরতি ছিল আরও প্রায় ঘন্টা দেড়েক পরে, চা তেষ্টা মেটানোর জন্য। আমি তখনও “চা-খোর” উপাধি লাভ করিনি। কিন্তু তারপরেও যে চা সেখানে পান করলাম, তা বেশ হতাশাজনক ছিল। তবে চা না পারলেও, এখানে সবাইকে চাঙ্গা করে তুলেছিল একটি অতিকায় আকারের শূকর। আমাদের দলের প্রায় সবাই চা-বিরতির সময়ে গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি ও ছবি তুলতে শুরু করে। এদেরই একজন এই শূকরটি স্থানীয় এক উপজাতির বাড়িতে আবিষ্কার করে এবং অন্যদের তার দর্শনে নিয়ে যায়। আমি অবশ্য যাইনি, তাই ছবিও নেই।

থানচি বাজারের একটি দোকানে স্থানীয় ত্রেতারা; ছবি: লেখক

এভাবেই হেসে খেলে পথ পাড়ি দিতে দিতেই এমন একটা পর্যায় এলো যেখানে বেশ কিছু উপজাতি শিশু রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আগত ট্যুরিস্টদের গাড়ি লক্ষ্য করে হাত নাড়ছিল। সাধারণত এই স্থানে এই বাচ্চাদের কিছু উপহার দেওয়া হয়ে থাকে। এই পথে আমরা সকলেই প্রথমবারের যাত্রী হওয়ায় এই ঘটনায় বেশ অপ্রস্তুত হয়েছিলাম। পরে জানতে পারি এখানে থেমে অনেকেই এই বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য খাতা-কলম উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন। আর চকলেট তো আছেই। যা-ই হোক, মোটামুটি বেলা ১ টার দিকে আমরা থানচি বাজার পৌঁছলাম। ও মা! কোথায় মোশন সিকনেস, কোথায় কী? আমি দিব্যি লাফিয়ে নেমে আমার ফোন নিয়ে বাজারের ভেতরে ঢুকে পড়ি ছবি তুলতে। অনুমতি এখানে অত্যাবশ্যক এবং তারপরেও, মাঝে মধ্যে রীতিমত রাগান্বিত আপত্তির শিকারও হওয়া লাগতে পারে। আর অন্যদিকে আমার দলের বাকিরা একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকে বিশ্রাম নিতে শুরু করেছিল। মায়ের হাঁক আমাকেও ফিরে আসতে বাধ্য করলো।

একটু পরেই অবশ্য সবাই মিলে ছুটলাম স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের দিকে, থানচি থেকে পাহাড়ের আরও গভীরে রেমাক্রি ও নাফাখুম যাওয়ার জন্য অনুমতি নিতে। এক্ষেত্রে দলের প্রতিটি সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হয় এবং যাত্রার নির্ধারিত সময়কাল উল্লেখ করতে হয়। যদি কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে বা কোনো দল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিরে না আসে, তাহলে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়। তাই চাইলেও পরিকল্পনার চেয়ে বেশি সময় নিয়ে এই পাহাড়ি অঞ্চলে থাকা যায় না। থানচি বাজারেই রয়েছে একটি স্কুল। এই বাজারে দিনে-রাতে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে উপজাতি মানুষেরা। বাঙালিও রয়েছে এখানে।

থানচি বাজারের পেছনে নৌকার ঘাট; ছবি: লেখক
লম্বা সিঁড়ি বেয়ে তারপরেই নৌকা ভ্রমণ শুরু; ছবি: লেখক

দুপুরের খাবার শেষ করে আমরা চলে গেলাম বাজারের পেছনের ঘাটে। বেশ লম্বা সিঁড়ি দিয়ে নেমেই উঠে পড়লাম আমাদের দলের জন্য ভাড়া নেওয়া তিনটি ‍ডিঙি নৌকায়। এই নৌকাগুলোর ভেতরের দিকের দুই ধারেই বিভিন্ন রঙের নকশা করা থাকে। সিঁড়ির উপর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে বেশ লাগে- একেবারে ছবির মতো। আমার দাদুর বাড়ি আর নানুর বাড়ির মধ্যে রয়েছে যমুনা নদী। বঙ্গবন্ধু সেতু তৈরির আগে জলপথে চলাচলকারী সাবমেরিন বাদে, যমুনা পাড়ি দিতে প্রায় সব ধরনের জলযানেই অসংখ্যবার যাতায়াত করেছি আমরা। কিন্তু এত সুন্দর নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছাত্রজীবনে ”নৌকা ভ্রমণ” রচনাতেও কখনো পড়িনি। সাঙ্গু নদীর সৌন্দর্য বর্ণনার ভাষা আমার বা অন্য কারো জানা আছে বলে মনে হয় না। আর না কোনো কৃত্রিম লেন্সের পক্ষে সেই সৌন্দর্য বন্দী করা সম্ভব। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড় আর মাঝ দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে সাঙ্গু। দমবন্ধ করা এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমাদের সকলেরই তৃপ্তির ‍নিঃশ্বাস পড়ছিল আর মুখ দিয়ে বিভিন্ন স্তুতি বাক্য বের হচ্ছিলো, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল মূল আয়োজকের বলা “টাকা উসুল হয়ে গেছে রে” লাইনটি!

যতই সামনে আগাচ্ছি ততই যেন প্রকৃতি আরও উদার হতে লাগলো। এক সময় এলো বড় পাথর বা রাজা পাথর নামে পরিচিত ‍তিন্দু অঞ্চলের বিখ্যাত স্থানটি। এখানে দুই পাশের পাহাড় থেকে ছোট বড় অসংখ্য পাথর পড়ে নৌকার চলার সোজা পথে বাধার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু তৈরি করেছে এমন এক স্থানের, যাকে এই মর্ত্যের না বললে, অবাক হতাম না। বলা বাহুল্য, এটিও একটি ‘ডিফল্ট স্থান’ যেখানে সবাই বিরতি নিয়ে ইচ্ছেমতো ছবি তোলে। শীতকাল বলেই হয়তো নদীর বেশ কিছু স্থানই ছিল অগভীর । তাই মাঝে মাঝে ইঞ্জিন বন্ধ করে বৈঠা দিয়েই নৌকা চালানো হচ্ছিল। একটা সময়ে পানির গভীরতা এতই কমে যায় যে জানমালে বোঝাই ডিঙিগুলো নদীর প্রায় তল ছুঁয়ে যাচ্ছিল। এভাবে চললে নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হতে পারে। তাই আমাদের তিনটি নৌকার সব পুরুষেরা নেমে নদীর ধার ধরে পাহাড়ের ঝোপের মধ্যে দিয়ে হেঁটে পরবর্তী স্থানে, যেখানে পানির গভীরতা বেশি ছিল, এসে আবার নৌকায় উঠে। এই সময় সূর্য পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। শীতের দিনে পাহাড়ের কোলে মায়াময় ছিল সেই বিকেলটি। একসময় আমরা পৌঁছে গেলাম রেমাক্রি বাজারে।

তিন্দুর রাজাপাথর/বড়পাথর; ছবি: লেখক
তিন্দুর রাজাপাথর/বড়পাথর; ছবি: লেখক

এতক্ষণ সাঙ্গু নদীর চলমান সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হয়ে থাকায় রেমাক্রির শান্ত সৌন্দর্য ডুবন্ত সূর্যের ম্লান আলোয় কেমন যেন একটা আবেশের তৈরি করলো আমাদের মনে। রেমাক্রি বাজার ছোট। কয়েকটি কুঁড়ের মতো ঘর একইসাথে দোকান, রেস্তোরাঁ আর আদিবাসীদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আসার পথেই দেখেছিলাম তুলনামূলক ছোট নৌকা ও বাঁশের তৈরি ভেলায় আদিবাসীরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে- থানচি থেকে রেমাক্রি। বসবাসরত আদিবাসীদের এবং আগত ভ্রমণকারীদের প্রয়োজনীয় আধুনিক জগতের সামগ্রী এভাবেই পাহাড় ঘেরা এই ছোট্ট গ্রামটিতে সরবরাহ হয়ে থাকে। বাজারের কাছেই রয়েছে ভ্রমণকারীদের রাতে থাকার জন্য কাঠ ও বাঁশের তৈরি আদিবাসীদের কটেজ। আমরাও এগুলোরই একটিতে রাতে থাকলাম। এর নিচতলায় রয়েছে বাথরুম ও গোসলখানা আর কাঠের তৈরি বড় বড় কয়েকটি ধাপ উপরে উঠে টানা বারান্দাওয়ালা কয়েকটি ঘর। এসকল কটেজে পুরো পরিবার ছাড়া নারী ও পুরুষ এক ঘরে থাকা নিষেধ। এমনকি কিশোরদের জন্যও এই নিয়ম প্রযোজ্য।

কটেজে উঠেই আমাদের দলের পুরুষেরা চলে গেল রেমাক্রির স্রোতে তৈরি হওয়া ছোট্ট ঝর্ণাটিতে গোসল করতে। আর আমরা ’মহিলা মন্ডলি’ কটেজেই একে একে গোসল পর্ব সেরে নিলাম। কনকনে ঠান্ডার মধ্যে ঠান্ডা পানি দিয়েই গোসল করতে হলেও বেশ ঝরঝরে লাগছিল। গোসল শেষে দোতলার বারান্দায় বসেই দেখলাম আলোর প্রস্থান ও অন্ধকারের আগমন। ইতিমধ্যেই দলের অন্য সদস্যরাও ফিরে এসেছে। অদ্ভুত এক পরিবেশ। ঠিক সামনেই বয়ে চলেছে সাঙ্গু নদী থেকে তৈরি হওয়া খালের মতো একটি অংশ। তার পাশে রয়েছে উঁচু পাহাড়। আর আমাদের পাশেই কলকল শব্দ তুলে অবিরাম বয়ে চলেছে রেমাক্রি ঝর্ণা। কিছুক্ষণ পরেই কুয়াশা ঘিরে ফেললো আমাদের চারপাশ। কিন্তু ক্লান্ত শরীরকে শান্ত করার জন্য ঐ বারান্দার এক কোনায় আমরা কয়েকজন বসে গল্প করতে লাগলাম। আমাদের আয়োজক ভাইটি কিছু শুকনো খাবার দিয়ে গেলেন নাস্তার জন্য। আর বিনোদনের জন্য ছিল পাহাড়ি মশার অর্কেস্ট্রা!

সাঙ্গুর দুই পাশের পাহাড়; ছবি: লেখক
নৌকায় সাঙ্গু পাড়ি; ছবি: লেখক
তিন্দু; ছবি: লেখক

তারপরেও আমরা খুশি ছিলাম এই ভেবে যে, রাতভর এই জায়গায় বসে জমিয়ে আড্ডা চলবে। এমনকি চেয়ারের সংখ্যার চেয়ে আমাদের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় নির্বাক একটি প্রতিযোগিতাও চলছিল আমাদের মধ্যে। কিন্তু একটু পরেই আমাদের ‘একক আধিপত্যের’ ভুল ভেঙে দিয়ে কটেজটি অতিথিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। আর স্থান প্রতিযোগিতায় নিশ্চিত হার হবে জেনেই আমরা আমাদের জন্য নির্ধারিত ঘরে চলে গেলাম। এরপর গুড় দিয়ে তৈরি হালকা লবণাক্ত চা আর সরিষার তেল দিয়ে মাখা মুড়ি-চানাচুরের সাথে চলতে লাগলো পোর্টেবল স্পিকারে গানের আসর। ঘরের মাঝের কচি বাঁশের তৈরি বিভাজিকাটির এপার থেকে ওপারে চলতে থাকলো গানের জন্য অনুরোধের পালা।

রাত ৯টার দিকে রাতের খাবারের জন্য আমরা কটেজ থেকে আরও উঁচুতে অবস্থিত একটি আদিবাসী বাড়িতে চলে গেলাম। বাড়িতেই তৈরি ডাল, ভাত, আলু ভর্তা আর কষানো মুরগির মাংস ‍দিয়ে পেটপুরে খাওয়ার সময়েই বুঝেছিলাম, খাবারের মান অত্যন্ত ভাল। আমাদের আয়োজক কটেজের মালিককে আগে থেকে না বলায় আমাদের বরাতে পাহাড়ের কোলে বার-বি-কিউ অবশ্য জোটেনি। রাত সাড়ে দশটার দিকেই ঘুমানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই দেখে বেশ বিরক্তই লাগছিল। কিন্তু পরদিনের ট্রেকিংয়ের জন্য ঘুম খুব জরুরি। বিনোদনের কিন্তু এখনও বাকি আছে! রাতভর চলেছিল ঘটনার ধারাবাহিক নাটক। আর ঐ যে বলেছিলাম- অনভিজ্ঞতা, তার আরও বেশ কিছু নমুনা পেয়েছিলাম পরদিন।

পাহাড়ের কোলে মায়াময় বিকেল; ছবি: লেখক
তিন্দু বাজারের একাংশ; ছবি: লেখক
রেমাক্রি বাজারের প্রথম দর্শন; ছবি: লেখক

ট্যুরের মোট খরচ ছিল জনপ্রতি প্রায় ৭ হাজার টাকা। আয়োজককে আগে থেকেই বলে রাখায় লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করাই ছিল। আর বার-বি-কিউ করতে চাইলে অবশ্যই কটেজের কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই বলে রাখবেন।

[পরের দিনের গল্প এখানে]

চান্দের গাড়িতে করে পাহাড়ের গহীনে যাত্রা শুরু; ছবি: লেখক

This article has been written in Bengali and it depicts a personal travel the author experienced with her family in the hilly regions of Bandarban. It contains helpful information for other interested travelers.

Feature image: Author

Related Articles