সকাল ছয়টা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। দেশের সর্বউত্তরের একেবারে শেষ সীমা বাংলাবান্ধার স্থল বন্দরের গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি। কনকনে ঠাণ্ডা। একেবারে হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে। কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে প্রকৃতি। সামনে বেশিদূর দেখা যাচ্ছে না কুয়াশার কারণে। টানা প্রায় ১৩ ঘণ্টা যাত্রা করে এসে শরীর সায় দিচ্ছে না, কিন্তু প্রকৃতি যেন নিশাচর সমুদ্রের ন্যায় আরো কাছে টানছে।
দূরে দেখলাম, ভারতের সীমানার পাশ দিয়েই একটি আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। কেউ সাইকেলে কিংবা কেউ হেঁটে হেঁটেই এই শীতের সকালে কাজে যাচ্ছে।
এসবের ছবি তুলে ঘুরে তাকিয়ে দেখি আমার গ্রুপের সবাই বাংলাবান্ধার তথা বাংলাদেশের শেষ সীমানা হিসেবে স্থাপিত এক বিশাল জিরো বা ‘শূন্য’র সামনে দাঁড়িয়ে। ঠিক তার ডান পাশেই ভারতের সীমানা গেট দেখা যাচ্ছে। শেষমেশ আমরা বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের সীমানার নো ম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে।
হ্যাঁ, ঘুরে এলাম হিমালয়কন্যা খ্যাত দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে। ঢাকা থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৪ই ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে পাঁচটায় এবং শেষ হয়েছিল ১৫ই ডিসেম্বর সকাল প্রায় সাড়ে ছয়টায়। সেদিন সারাদিন পঞ্চগড়ের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখে রাতে থাকার জন্য চলে গিয়েছিলাম ঠাকুরগাঁওয়ের আরডিআরএস গেস্ট হাউজে। সেদিন সন্ধ্যাটা ঠাকুরগাঁও জেলা শহরটা ঘুরে দেখেছিলাম। রাতে থেকে সকালে উঠেই চলে গিয়েছিলাম দিনাজপুরে। কম সময়ের মধ্যে যতটা ঘুরে দেখা যায় দেখে আবার ঠাকুরগাঁও ফিরে বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে করে ঢাকায়। এই পুরো ভ্রমণ বৃত্তান্তের দুই পর্বের প্রথম পর্বে আজকে থাকছে পঞ্চগড়ের ভ্রমণ।
পরিকল্পনা
নভেম্বর মাসের শেষের দিকের একদিনের কথা। নিয়মিত ৩/৪ জনের আড্ডা পরিণত হলো ৯/১০ জনে। কথায় কথায় ঘুরতে যাওয়ার কথা উঠলো। যেহেতু কমবেশি সকলেই বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত, তাই ডিসেম্বরে বিজয় দিবসের আগের দুই দিন মিলিয়ে তিন দিন আর দুই রাতের ট্যুরের পরিকল্পনা করে ফেললাম। কিন্তু যাব কোথায়? সবাই মিলে এই দায়ভার আমার কাঁধেই চাপিয়ে দিল। ২/৩ দিন পর সবাইকে জানালাম, দেশের উত্তরের শেষ সীমানা বাংলাবান্ধা যাওয়া যায়। বলাবাহুল্য, পঞ্চগড়ের কাজী এন্ড কাজী টি স্টেটের কয়েকটা ছবি দেখেছিলাম ফেসবুকের কয়েকটি গ্রুপে। মূলত টি স্টেটের সৌন্দর্য এবং এই সময়টায় নাকি পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজংঘা দেখা যায়। তাই এই জেলাটা পছন্দের তালিকায় ছিল। যেই ভাবনা সেই কাজ, আমরা যাচ্ছি হিমালয়কন্যা খ্যাত পঞ্চগড়।
যদিও প্রথমে ট্যুরে যাওয়ার জন্যে ১০ জনের সম্মতি ছিল ধীরে ধীরে তা নেমে ছয়জনে পরিণত হলো। ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের সবচাইতে দীর্ঘতম ট্রেন যাত্রা উপভোগ করতে করতে যাবো কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের ৮ দিন আগেও ট্রেনের কোনো টিকেটই পাইনি। যেহেতু ১৬ই ডিসেম্বরের আগে শুক্র আর শনিবার ছিল সরকারি ছুটি, তাই কর্মজীবী সবাই-ই নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরছিল। টিকেটের খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম, শুধুমাত্র হানিফ আর শ্যামলী পরিবহনের একটা করে বাস একেবারে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত যায়। আমাদের পরিকল্পনা ছিল বাংলাবান্ধা থেকে ঘুরতে ঘুরতে পঞ্চগড় আসবো এবং সেখান থেকে বিকেলের মধ্যে ঠাকুরগাঁও গেস্ট হাউজে।
যাত্রারম্ভ
১৪ই ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে চারটার মধ্যে সবাই আড্ডার স্থলে এসে মিলিত হয়। তারপর শ্যামলীতে আমাদের বাসের কাউন্টারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। মূল বাস ছাড়তে দেরি হয় আধা ঘন্টার মতো। এত দূরে আর এতটা সময়ের ব্যাপার। তাই আমরা ভেবেছিলাম, অন্তত বাসের সিটগুলো আরামদায়ক হবে। কিন্তু আমাদের আশায় গুড়েবালি। যা-ই হোক, পাশাপাশি সিট হওয়াতে আলাপ করতে করতেই আমরা শেরপুরে ফুড ভিলেজে থামি সাময়িক বিরতির জন্যে। বিরতি শেষে আমাদের বাসের ড্রাইভার সোহেল ভাই যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। এতটা রাস্তা খুব ধীরেসুস্থে চালিয়ে আসলেও ফুড ভিলেজ থেকে বের হয়েই তিনি সর্বোচ্চ গতিতে বাস চালাতে শুরু করলেন। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কখন বলতে পারবো না। তবে চোখ খুলেই প্রথমে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখি, রাস্তা থেকে খানিকটা দূরেই কমলা বর্ণের লাইট জ্বলে আছে। বুঝতে পারলাম, পঞ্চগড় পেরিয়ে আমরা এখন তেতুলিয়ার কাছাকাছি।
তেঁতুলিয়া বাস স্ট্যান্ডে বাস থামে পাঁচটারও পরে। আমাদের বাসের ড্রাইভার সোহেল ভাই তেঁতুলিয়ার নামকরা খাবারের হোটেল ‘নূরজাহান’ এ আপ্যায়ন করান। বলা বাহুল্য, আমাদের টিকেটে বিশেষ কিছু লেখা ছিল, যার জন্য সাধারণ যাত্রীর চাইতে একটু বেশিই সমাদর পেয়েছি আমরা। সেখান থেকে ড্রাইভার বদলী হয়ে দেলোয়ার ভাই আমাদের বাংলাবান্ধা অবধি নিয়ে যান এবং তিনি নিজে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে স্বল্প সময়ে আর স্বল্প খরচে পঞ্চগড় ঘোরা যাবে।
পঞ্চগড় জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
পঞ্চগড় জেলায় মানব বসতি স্থাপনের সঠিক দিনকালের হিসাব না থাকলেও; ইতিহাস ঘেঁটে বেশ কয়েকটি বিষয় জানা যায়। প্রাচীনকালের ‘পুন্ড্র’ নগরের একটা নগরী ছিল এই পঞ্চগড়, যাকে খুব সম্ভবত ‘পঞ্চনগরী’ ডাকা হত। তবে সবচাইতে বহুল প্রচলিত মত হচ্ছে, পাঁচটি গড়ের অবস্থানের কারণেই একে পঞ্চগড় বলে ডাকা হয়। গড়গুলো হচ্ছে ভিতরগড়, মীরগড়, হোসেনগড়, রাজনগড় এবং দেবেনগড়।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন জনপদ এই পঞ্চগড়। ইতিহাস বলে, এখনকার মতো অতীতেও এই এলাকা সীমান্তবর্তী এলাকা ছিল। পুন্ড্র সাম্রাজ্যই নয়, বরং গুপ্ত, পাল, সেন এবং মুসলিম শাসকগণের আয়ত্তাধীন ছিল এই নগরী। আরো জানা যায়, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন খলজি তিব্বত আক্রমণের সময় এই জনপদ পেরিয়েই গিয়েছিলেন।
১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল এই পঞ্চগড় থানা। ১৯৮০ সালের পহেলা জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও মহকুমাকে পঞ্চগড় মহকুমা নামে অভিহিত করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৮৪ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় মহকুমার পাঁচটি থানা তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, অটোয়ারী, বোদা এবং দেবীগঞ্জ নিয়ে তিনদিকে ভারতের সীমানা নিয়ে পঞ্চগড় জেলার সৃষ্টি হয়।
দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট
আমরা যখন বাংলাবান্ধা পৌঁছাই তখন সকাল সাতটার বেশি বাজে। আমরা ছয়জন ছাড়া ঐ মুহুর্তে ঐ এলাকায় কেউই ছিল না। এমনকি কোনো বর্ডার গার্ডও না। বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের সামনে বাংলাদেশের সীমানা শেষের ফলক এবং সেখান থেকেই কয়েক গজ সামনে এগিয়ে বাংলাবান্ধার জিরো পয়েন্ট। আমরা যখন প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি তখন পেছন থেকে বাইকে করে দুজন গার্ডকে আসতে দেখলাম। পরিচয় জেনে নিয়ে আন্তরিকভাবেই জানালেন যে, তাদের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা এখনো আসেনি। তারা আসার পর আর কোনো সমস্যা নেই এখানে থাকতে, তবে এখন থাকা যাবে না। অনেকবার বলেও লাভ হলো না, কেননা তিনি শুধুমাত্র তার আদেশ পালন করছেন।
কী আর করা, দূর থেকে জুম লেন্স দিয়ে জিরো এবং ভারতের সীমানা গেটের কয়েকটা ছবি তুলে বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের সামনে চলে এলাম আবার বাসে ওঠার জন্যে। তবে আপনাদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি, আমরা খুব বেশি সকালেই বাংলাবান্ধা চলে গিয়েছিলাম, যার কারণে আমাদের মিস হয়েছে, তবে আটটা-নয়টার সময় থেকে আর কোনো ধরনের ঝামেলা হয় না। আর যদি বিকাল দিকে, বিশেষ করে আসরের নামাজের পর পর যেতে পারেন, তাহলে দুই দেশের বর্ডার গার্ডদেরই প্যারেড করা অবস্থায় দেখতে পাবেন এবং সেটা উন্মুক্ত সকলের জন্যে। আর সাথে কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শনও পেতে পারেন।
কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট: দেশের একমাত্র সমতল ভূমির অর্গানিক চা-বাগান
জিরো পয়েন্টের সাথে সেলফি বা ছবি তুলতে না পারার দুঃখ মনে পুষে নিয়ে বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের সামনের এক চায়ের দোকানে লাল চা পান করলাম। চা শেষে দিনের প্রথম বাসে করে আমরা তিন্নু বাজার চলে গেলাম। সেখানের এক খাবারের হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা ঠিক করে চলে গেলাম রওশনপুর। বলাবাহুল্য, কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেটটা রওশনপুরের ভেতরে। আবার একে স্থানীয়রা আনন্দধারা নামেও চেনে। সদর থেকে গ্রামের ভেতর দিয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে যেতে হয় এই জায়গায়। এখানে যেতে চাইলে তিন্নু বাজার কিংবা যেখান থেকেই যান না কেন, রিজার্ভ অটো নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। নাহয় কয়েক কিলোমিটার হেঁটেও কোনো কিছু পাবেন না। আর অনেক বেশি আঁকাবাঁকা রাস্তা হওয়াতে একবারে মনে রাখাটাও অনেক কষ্টসাধ্য।
আগেই বলেছি, আমরা এমন একটা সময় বেছে নিয়েছিলাম, যে সময়টায় লোকজন যেমন বাড়ি ফিরছে, তার সাথে সাথে আমাদের মতোও আরো অনেক দল বিভিন্ন জেলা দর্শনে বের হয়েছে। টি এস্টেটের গেটের সামনে নেমেই দেখি দুই দল ভেতরে ঢোকার জন্যে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে ঢুকতে চাইলে রেফারেন্স কিংবা অনুমতি লাগে। ঢাকা থেকে অনুমতি নিয়ে যেতে হয়, নাহয় ভালো রেফারেন্স লাগে, কেননা এটা টি এস্টেটের কার্যালয় এবং মালিকের ব্যক্তিগত বাংলো। তাই দারোয়ানকে টাকা দিয়েও আপনি চাইলেই ভেতরে ঢুকতে পারবেন না। তবে যদি আন্তরিকভাবে বুঝিয়ে বলেন, তাহলে ভিড় না থাকলে এমনিই ঢুকতে দেয়। যেহেতু ট্যুরের সকল স্পটের দায়িত্ব ছিল আমার কাঁধে, তাই দারোয়ান ভাইকে ডেকে নিজের পরিচয় দিলাম। তিনি জানালেন, ভেতরে অনেক লোক আছে। সবাই ছুটিতে ঘুরতে আসাতে ভিড় হয়ে গেছে। দশটার দিকে যেতে বললেন। ততক্ষণের জন্য চা বাগান ঘুরে দেখার জন্যে বললেন।
চা বাগানে গিয়ে ছবি তুলে দশটার খানিকটা পর এসে দেখি তখন আরো বেশি লোকজন সেখানে। আর প্রত্যেকেই রেফারেন্স নিয়ে এসেও দাঁড়িয়ে আছে, আর আমরা তো কোনো রেফারেন্সও আনিনি। তাই শঙ্কিত ছিলাম জিরোর মতো এটাও হয়তো বাদ দিতে হবে। কিন্তু দারোয়ান ভাই আমাকে পাশে ডেকে নিয়ে তার স্যারের নাম্বার দিলেন। ফোন দিয়ে নিজেদের পরিচয় দিলাম এবং দারোয়ান ভাইয়ের হাতে একটা ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিলাম তাকে দেখানোর জন্যে। একটু পরই দারোয়ান ভাই এসে ভেতরে নিয়ে গেলেন আমাদের।
ভেতরে ঢুকে যা দেখেছি তাতে এক লাইনে বোঝানোর জন্যে আপাতত একটি লাইনই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, প্রকৃতি আর আধুনিকতা যখন মিশে যায়, তখন এক আদি আর অকৃত্রিম নৈসর্গিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সত্যিকার অর্থেই আপনি ভেতরে ঢুকলেই বুঝতে পারবেন কেন এই কথাটা বলেছি। সৌখিনতায় মানুষ কী কী করতে পারে তার এক নিদর্শন হচ্ছে কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেটের এই ব্যক্তিগত বাংলো এবং অফিস কার্যালয়ের পুরো জায়গাটি।
দৃষ্টিনন্দন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই হাতের ডান দিকে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে লতাপাতার ছায়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন এক প্রবেশপথ। চারিদিকে সবুজের সমারোহে হারিয়ে যখন আপনি সে পথের শেষ প্রান্তে আসবেন, তখন আধুনিক ধাঁচে গড়া কিছু দৃষ্টিনন্দন কটেজ আপনার দৃষ্টি কাড়বে। ভেতরে একটা লেকও আছে, তার পাশেই কয়েকটা কটেজ এবং লেকের ঠিক মাঝেই ব্রিজ পেরিয়ে যাওয়া যায় দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগারে।
ব্রিজ থেকে শুরু করে হাঁটার রাস্তা, লেক, বিশ্রামাগার, বাংলো, কাঠের কটেজ সবকিছুতেই আভিজাত্য আর নান্দনিকতার স্পষ্ট ছাপ পাবেন। খোলা মাঠে কিছু ঘোড়াকে দেখবেন ঘাস খেতে। ভুলেও সামনে যাবেন না, কেননা এই ঘোড়াগুলোর কামড় দেয়ার বাজে অভ্যাস আছে। আর বের হওয়ার সময় মীনা বাজারে চলে যাবেন। সেখানে আপনি অর্গানিক চা-পাতা এবং অর্গানিক মিষ্টি পাবেন।
এই সৌন্দর্যের ভেতর হারিয়ে গিয়ে কতটা সময় যে পার হয়ে গিয়েছে বলতেই পারবো না। সময়জ্ঞান হিসেবে রাখার কথা, কেননা আমাদের এখনো পুরো পঞ্চগড় ঘুড়ে দেখা বাকি। তাই দেরি না করে দারোয়ান ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে এলাম। কিন্তু আমরা বোকার মতো যে কাজটা করেছিলাম সেটা হচ্ছে, আমাদের অটো আমরা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তাই আবার সেই দারোয়ান ভাইয়ের সহায়তায়ই একটা অটো পেয়ে গেলাম। সেটাতে করে তিন্নু বাজার চলে এলাম।
তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো, মহানন্দা নদী এবং জলপাইগুড়ি ব্রিজ
তিন্নু বাজার নেমে আবার অটো নিলাম তেঁতুলিয়া বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে। যাত্রাপথে আঁখ ক্ষেতে দেখলাম আঁখ কাটা চলছে, আর তখনই দলের সবাই অটো থামিয়ে একজনকে পাঠালো আঁখ চেয়ে নিয়ে আসতে। অটোর চালক নিজে থেকেই নেমে গেলেন যেন আরো খানিকটা বাড়িয়ে দেয়। প্রায় ৩/৪টা আস্ত আঁখ কেটে কয়েক টুকরো করে আমাদের হাসিমুখেই দিয়ে দিল তারা। কিন্তু আফসোস, এই আঁখগুলো সাধারণত চিনিকলের জন্য করা হয়, তাই এগুলো খুব মিষ্টি হলেও রস একদমই নেই এবং প্রচণ্ড শক্ত। এরপর চলে এলাম তেঁতুলিয়া বাস স্ট্যান্ডে। ভোর বেলা তেঁতুলিয়ার বিখ্যাত তেঁতুল গাছটা ঠিকমত না দেখলেও তখন দেখে নিয়ে আবার হোটেল নূরজাহানে ঢুকে গেলাম হালকা চা-নাস্তা খেতে।
খাওয়া শেষে আমাদের বাসের ড্রাইভার দেলোয়ার ভাইকে ফোন দিলে তিনি এসে একটা অটো ঠিক করে দিলেন। সেটাতে করে প্রথমে গেলাম তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো দেখতে। প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো গাছগাছালি পরিবেষ্টিত এই বাংলোটি মনোমুগ্ধকর। পাশেই আছে পিকনিক স্পট। এবং ডাকবাংলোর সামনে একটি জায়গা আছে, যেখানে লেখা- কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার স্পট। সাধারণত দু’দেশের আকাশ পরিষ্কার থাকলে তবেই ভোরে কিংবা সন্ধ্যায় খুব ভালোভাবেই এই পাহাড়ের চূড়া দেখা যায়। কিন্তু, আমাদের দুর্ভাগ্য, কেননা আমরা যেদিন পৌঁছেছি সেদিন প্রচুর কুয়াশা ছিল। কয়েকটা ছবি তুলে দ্রুতই চলে গেলাম পুরাতন বাজার।
পুরাতন বাজার হচ্ছে আগের হাট, যেটা এখন আর নেই। পুরাতন বাজারে অটো থেকে নেমেই প্রথমে চোখে পড়বে সামনে ভারতের সীমানা অতিক্রম করা নিষেধ। একটি প্রাচীন ঘাট আছে, যেটা দিয়ে নীচে নেমে কিংবা সেটার উপর থেকে দাঁড়িয়েই দেখা যায় হাঁটু-সমান মহানন্দা নদীর পানিতে পাথর উত্তোলনের দৃশ্য।
টারশিয়ারী যুগে সমুদ্রের এক প্রলয়ংকারী জলোচ্ছাস এবং প্লাবনে পশ্চিমবঙ্গসহ এ দেশের অনেক অঞ্চলই পানির নীচে তলিয়ে গিয়েছিল। সেজন্যে সমুদ্রজাত পাললিল শিলাস্তর দিয়ে এ দেশের বেশ কিছু অঞ্চল পরিপূর্ণ, যার মধ্যে পঞ্চগড় অন্যতম। তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় ৫/৬ ফুট গর্ত করলেই দেখা মেলে পাথর এবং পানিশাল কাঠের। তাই এই অঞ্চলের অনেক লোকই পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
পাথর উত্তোলনের জন্যে বিশালাকারের রাবারের টিউব নিয়ে মহানন্দা নদীর মাঝে চলে যান পাথর সংগ্রহকারীরা। নদীর মাঝ থেকে কখনো কয়েকজন মিলে, আবার কখনো নিজে একাই পাথর তুলে রাবার টিউব ভর্তি করে পাড়ে নিয়ে আসেন। তারপর বিভিন্ন আকৃতির পাথরগুলো থেকে ময়লা ছাঁকিয়ে একটা কাঠের বাক্সে ভর্তি করে নেয়। একটা কাঠের বাক্স একবার ভর্তি হলে সেটাকে এক সেপটিক বা এক ফেরা বলে।
নদীর পাথর উত্তোলনের মাঝে ওপাড়ে চোখ পড়তেই ভারতের কাঁটাতারের সীমানা দেখলাম এবং বামপাশে দূরে একটা ব্রিজ দেখলাম। সেটাকে অনেকে বড় ব্রিজ বলে, আবার অনেকে স্লুইস গেট বলে কেননা একইসাথে স্লুইস গেটের কাজ এবং যানবাহন চলাচলের কাজ হয় এই ব্রিজ দিয়ে। অনেকে আবার জলপাইগুড়ি ব্রিজ বলে, কেননা ধারণা করা হয়, ভারতের জলপাইগুড়ি অংশটা ঐদিকেই অবস্থিত।
পঞ্চগড় যাত্রা ও কিছু কথা
অটোতে করে ফিরে এলাম তেঁতুলিয়া বাস স্ট্যান্ড। বোর্ডবাজার যাওয়ার বাসের জন্যে অপেক্ষায় আছি সবাই। বোর্ডবাজার নেমে ৫ কিলোমিটার ভেতরেই মহারাজার দীঘি এবং ভেতরগড় দুর্গ। আমাদের দলের মধ্যে দুজন হঠাৎ করেই বলে বসলো তাদের শরীর খারাপ লাগছে। আর তখন রোদের তাপে বেশ খানিকটা ভ্যাপসা গরমও লাগছিল। টানা ১৩ ঘন্টার যাত্রা, ঘুমহীন রাত, কাঁধে ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঘোরাঘুরি, তার উপর ভ্যাপসা গরম- এত ধকল তাদের শরীর সামলাতে পারেনি হয়তো। যা-ই হোক, যেহেতু সেখানকার বেশিরভাগ বাসই লোকাল, তাই দুজনের কথা চিন্তা করে এককথায় বাধ্য হয়েই অটো ঠিক করলাম একেবারে পঞ্চগড় সদর পর্যন্ত।
অটোতে করে যখন বোর্ডবাজারের কাছাকাছি, তখন অটো চালককে আমি বললাম ভেতরে যেতে, এজন্য আলাদা করে ভাড়া বাড়িয়ে দেবো। তিনি আমাকে বললেন, সকালেই এক দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু অতিরিক্ত কুয়াশা থাকার কারণে ভেতরগড় দুর্গ পুরোটা পলিথিন দিয়ে ঢাকা। আরো বললেন, সাধারণত বৃষ্টির দিনে এবং অতিরিক্ত কুয়াশার দিনে এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের খনন কাজ বন্ধ থাকে এবং পলিথিন দিয়ে পুরোটা নিদর্শন ঢেকে রাখা হয়। ভেতরে ১০ কিলোমিটার রাস্তা গিয়ে যদি কিছুই দেখতে না পারি, তবে না যাওয়াটাই ভালো- এমন চিন্তাতেই মহারাজার দীঘি দেখার কথাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।
তেঁতুলিয়া থেকে পঞ্চগড় সদর আসতে প্রায় সবকটা থানাই পেড়িয়ে আসতে হয়। এবং প্রত্যেকটা থানাতেই কিছু না কিছু দেখার আছেই। তবে দেখতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সময় নিয়ে আসতে হবে এবং গ্রামের ১০/১২ কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে দেখতে হবে। আমাদের সময় ছিল সীমিত। তখন বাজে তিনটার কাছাকাছি। পঞ্চগড় মহিলা কলেজ চলে এলাম বাংলাদেশের একমাত্র রকস মিউজিয়াম দেখে যাব বলে। অটো থেকে নেমে পারমিশন নেয়ার জন্যে কলেজের ভেতরে গেলাম।
কিন্তু ভেতরে ঢুকেই মনটা খারাপ হয়ে গেল কেননা সেদিন কলেজে পরীক্ষা চলছিল যা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। তারপরও অধ্যক্ষ স্যারের দেখা পেলাম। তিনি আমাদের দেখাতে পারছেন না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। আর তার পরেরদিনও দেখার কোনো সুযোগ নেই, কেননা পরের দিন বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠান আছে। কী আর করা! অগত্যা চলে এলাম সেখান থেকে। পঞ্চগড় সদরে খুব সম্ভবত এক ব্রাহ্মণ হোটেলে খাবার খেয়ে বের হয়েই শুনলাম শীতকালের জন্যে পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁওগামী শেষ বাস যায় ৫-৫:৩০ এর মধ্যে। তাই যতটুকু ঘুরে দেখতে পেরেছি ততটুকুর শান্তি নিয়েই ঠাকুরগাঁওয়ে গেস্ট হাউজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। যেতে সময় লাগে আরো দেড় থেকে দুই ঘন্টা। কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তি এবং বিভিন্ন স্থান না দেখতে পারার দুঃখ এক নিমিষেই মিলিয়ে গেল ঠাকুরগাঁওয়ের আরডিআরএস গেট হাউজে বাইরের আর ভেতরের চমৎকার পরিবেশ দেখে। পরের পর্বে ঠাকুরগাঁও এবং দিনাজপুর নিয়ে বিস্তারিত থাকছে।
পঞ্চগড়ের দর্শনীয় স্থান সমূহ
একটা পর্যটন নগরীর হওয়ার জন্যে যেসব উপাদানের প্রয়োজন তার সবকিছুই পঞ্চগড়ে আছে এবং পঞ্চগড়ে দর্শনীয় স্থানও অনেক আছে। তবে পঞ্চগড় ছোট জেলা হলেও দর্শনীয় স্থানগুলোর দূরত্বের উপর ভিত্তি করে একদিনে ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। আর আমাদের মতো ভরা শীতকালের দিনে তো সম্ভবই না, তবে দীর্ঘ লম্বা দিনে হয়তো সম্ভব হতেও পারে।
১. ভিতরগড় দুর্গ;
২. মহারাজার দীঘি (প্রায় ১৫০০ বছর প্রাচীন) ও কাজল দীঘি;
৩. রকস মিউজিয়াম; (বাংলাদেশের একমাত্র পাথরের যাদুঘর)
৪. বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর ও জিরো পয়েন্ট;
৫. তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো এবং পিকনিক স্পট;
৬. মির্জাপুর শাহী মসজিদ; (প্রায় ৪০০ বছর পুরানো)
৭. ছেপড়াঝাড় পাহাড়ভাঙ্গা মসজিদ; (প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো)
৮. বার আউলিয়ার মাজার;
৯. গোলকধাম মন্দির;
১০. বদেশ্বরী পিঠ মন্দির; (এ মন্দির বাংলাদেশে দুটি আছে কেবল। এটি এবং সীতাকুন্ডে একটি)
১১. জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ি;
১২. সমতল ভূমির চা-বাগান এবং কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট বাংলো;
১৩. দেবীগঞ্জ সেতু ও ধরধরা রেল সেতু;
১৪. এশিয়ান হাইওয়ে, রবীন্দ্র চত্বর ও নজরুল চত্বর;
১৫. মীরগড়ের অবশিষ্ঠাংশ; হোসেনগড় বর্তমানে ভারতীয় ভূখন্ডে চলে গেছে। দেবেনগড়, রাজনগড় এবং মীরগড়ের বেশিরভাগ অংশই এখন বিলুপ্তপ্রায়।
১৬. মহানন্দী নদী, পাথর উত্তোলন এবং ভারতের জলপাইগুড়ি ব্রীজ;
১৭. কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন; (হেমন্তকালে এবং শীতের শুরুতে কিংবা শেষের দিকে);
১৮. বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়াম;
পঞ্চগড়ের আঞ্চলিক সংস্কৃতির জনপ্রিয় গান হচ্ছে ‘হুলির গান’। অনেকটাই পালা শ্রেণীর গান। যদিও বা, সনাতন ধর্মের হুলি পূজার নাম থেকে এই নামের উৎপত্তি তা সত্ত্বেও এই গানে ফুটে ওঠে সমসাময়িক জীবনযাপনের অসংগতির চিত্র, দুঃখ-বেদনা-সুখ কিংবা প্রেমের ইতিহাস। কখনো তা রসাত্মকভাবে আবার কখনো তা ব্যাঙ্গত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এই গানে একজন ছোকরা (মেয়ের সাজে ছেলে) এবং একজন সং (জোকার) থাকেন যারা বিভিন্ন নাটকীয়তার সাথে সাথে কাহিনীর ধারাবাহিক বিন্যাস করেন। বর্ণিল পোশাকে সজ্জিত হতে হয় এই গানে অংশগ্রহণ করতে চাইলে। একেকটা গানে প্রায় ১০-১২ জন পর্যন্ত অংশগ্রহণ করে থাকেন। কাসর, সারঙ্গী, ঢোল বাঁশি সহ আরো বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্র ব্যবহার করা হয় এ গানে।
আবাসন ব্যবস্থা
পঞ্চগড় পরিপূর্ণভাবে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে উঠতে না পারলেও পঞ্চগড়ে আবাসন ব্যবস্থার স্বল্পতা নেই।
সরকারি আবাসনসমূহ
১. পঞ্চগড় সার্কিট হাউজ;
২. জেলা পরিষদ ডাকবাংলো;
৩. তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো;
৪. বাংলাবান্ধা ডাকবাংলো;
৫. পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের রেস্ট হাউজ;
এছাড়া, তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণার, দেবীগঞ্জ ডাকবাংলো, বোদা ডাকবাংলো, আটোয়ারী ডাকবাংলো, কৃষি ফার্ম গেস্ট হাউজ, রেশম প্রকল্প গেস্ট হাউজসহ আরো অনেকগুলো সরকারিভাবে থাকার আবাসনের ব্যবস্থা আছে।
বেসরকারি আবাসনসমূহ
১. মৌচাক আবাসিক হোটেল;
২. সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ;
৩. হোটেল রাজনগর আবাসিক;
৪. হিলটন বোর্ডিং;
৫. হোটেল প্রীতম আবাসিক;
এছাড়া, হোটেল ইসলাম, এইচ কে প্যালেস, নীরব গেস্ট হাউজ, রোকসানা বোর্ডিং, ইসলাম আবাসিক হোটেল, মুন স্টার সহ আরো অনেকগুলো আবাসিক হোটেলে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। আমাদের ট্যুরের ভিডিও পাবেন এখানে।
পঞ্চগড়ের মানুষজন সহজ সরল এবং অতিথিপরায়ণ স্বভাবের। তাদের সাথে আন্তরিকভাবে কথা বললে তারা খুব খুশি হন এবং নিজে থেকেই যেকোনো সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসেন। পঞ্চগড়ের মানুষজনের আরেকটা স্বভাব হচ্ছে, তারা চান তাদের জেলাটাও যেন পর্যটনের নগরী হিসেবে পরিচিতি পায়। তাই তারা চান আরো বেশি পর্যটক আসুক। সাধারণত অন্যান্য জায়গায় অপরিচিত বা পর্যটক দেখলেই দাম বাড়িয়ে নেয়, কিন্তু পঞ্চগড়ে এটা খুবই কম। পঞ্চগড় দুর্যোগপ্রবণ জেলা নয়, আবার এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্য যেকোনো জেলার চাইতে শান্তিপূর্ণ। তবে পঞ্চগড়ে ঘুরতে হলে সবচাইতে ভালো হেমন্তকাল কিংবা শীতের শুরু অথবা শীতের একদম শেষে। দিনটা বড় থাকলে একদিনে অনেকগুলা দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করা সম্ভব।
তবে পঞ্চগড়ের যাতায়াত ব্যবস্থা অন্যান্য পর্যটন নগরীর মতো উন্নত নয়। তাই যেখানেই যাবেন রিজার্ভ করে যাবেন যাতে ঘুরে দেখে বের হয়ে আবার অন্য কোথাও যেতে পারেন। অথবা দল বেঁধে গেলে মাইক্রো বা ভ্যান ভাড়া করে নিতে পারেন। যদিও অনেক জায়গায় মাইক্রো ছেড়ে অটোতেই উঠতে হতে পারে। আর পঞ্চগড়ের স্থানীয় বাসের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য দেয়াটা মুশকিল, কেননা আগে সাদা পতাকা লাগানো বাসগুলো ছিল গেটলক সার্ভিস। কিন্তু বর্তমানে কয়েক রঙের পতাকা লাগানো বাস আছে এবং সবাই-ই নিজেদের গেটলক বলে। আদতে কে যে গেটলক তা খুঁজে বের করা মুশকিল!