পৃথিবীর ৩ ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। তাই যারা সাঁতার জানেন না বলে পানিতে নামতে পারেন না, তাদেরকে প্রায়ই মজা করে বলা হয়ে থাকে সেই অভাগাদের একজন, যাদের ষোলআনা জীবনের বারো আনাই বৃথা। যদিও এই কথাটি সেভাবে সত্য নয় বরং যারা স্কুবা ডাইভিং করেননি বা জানেন না, এ সম্পর্কে তথাপি সাগরতলের অতিপ্রাকৃত জগত দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাদের ক্ষেত্রে এ উক্তিটি বেশি প্রযোজ্য। স্কুবা ডাইভিং একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার অ্যাডভেঞ্চার, যা আপনাকে নিয়ে যাবে চিরচেনা এই পৃথিবীর অন্য এক অচেনা জগতে। আপনারা হয়তো মহাকাশে ভরশূন্য পরিবেশে নভোচারীদের ভেসে থাকা দেখেছেন, স্কুবা ডাইভিং পানির নিচে একই ধরনের অনুভূতি প্রদান করে। সবচেয়ে মজার কিংবা আক্ষেপের ব্যাপার হচ্ছে মহাশূন্য সমন্ধে মানুষের জ্ঞান অনেকদূর গড়ালেও সেই তুলনায় নিজেদের পৃথিবীতে পানির নিচের জগত সম্পর্কে ধারনা পারতপক্ষে শূন্যের কাছাকাছি। স্কুবা ডাইভিং বিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ইংরেজি উক্তি হচ্ছে; “Lands are already discovered, space is too far, let’s discover another universe under water”.
উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের জন্য প্রকৃতি উদার হস্তে বিলিয়ে দিয়েছে স্কুবা ডাইভিংয়ের অপার সম্ভাবনা। শুধুমাত্র মেক্সিকো এবং মিশরের উপকূল বাদ দিলে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চল স্কুবা ডাইভিং এর জন্য সবচেয়ে আদর্শ এবং জনপ্রিয়। এর মাঝে সবচেয়ে সমৃদ্ধ মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের মতো পৃথিবী বিখ্যাত প্রবাল প্রাচীর এই অস্ট্রেলিয়াতেই অবস্থিত। অদূরে দক্ষিণ মেরু থেকে আগত শীতল জল আর প্রশান্ত মহাসগরের উষ্ণ জলরাশির মিলন অস্ট্রেলিয়ার উপকূল জুড়ে তৈরি করেছে পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ মেরিন ইকোলজি বা বাস্তুসংস্থান। তাই পৃথিবীর অন্যতম অদ্ভুত আর সুন্দর জলজ প্রাণীকূলের দেখা মেলে খুব সহজেই। স্থলজ ক্যাঙ্গারু আর প্লাটিপাসের মতো জলজ সব ভিন্ন রকম প্রাণী দেখার নেশায় প্রতি বছর হাজার হাজার ডুবুরি পর্যটক তাই ছুটে আসেন এই উপকূলে, যা অস্ট্রেলিয়াকে অবধারিতভাবেই পরিণত করেছে স্কুবা ডাইভারদের মক্কায়। সাম্প্রতিককালে অস্ট্রেলিয়ার পর্যটনশিল্পের অনেক বড় একটা যোগান তাই আসে স্কুবা ডাইভিংয়ের মাধ্যমে, যা দিন দিন আরো বেশি পরিমাণে বিকশিত হচ্ছে। আক্ষেপের বিষয় হলেও সত্য যে, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের মত প্রবাল বাংলাদেশেও আছে, আছে প্রকৃতির অনন্য উপহার সেইন্ট মার্টিন নামক পুরো একটি প্রবাল দ্বীপ। অথচ বাংলাদেশ দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে এখনো এই অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প বিকশিত হতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে পর্বতারোহণ, সাইক্লিং, ক্যাম্পিং এবং ট্র্যাকিংয়ের মতো অনেকগুলো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস রাতারাতি বিকশিত হলেও সঠিক জ্ঞান এবং পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অবহেলিত থেকে গেছে স্কুবা ডাইভিং।
প্রথমেই আসি স্কুবা ডাইভিং কী বা কাকে বলে সেই প্রসঙ্গে। SCUBA বা self-contained underwater breathing apparatus মানে হচ্ছে একপ্রকার টেকনিক্যাল অথবা যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে আমাদের ডাঙ্গার মানুষেরা হয়ে যেতে পারেন পানিতে বসবাসকারী মাছের মতো। এখানে উচ্চ চাপের বাতাস বহনকারী একটি সিলিন্ডার এবং সেখান থেকে ডাঙ্গার মতো স্বাভাবিক নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সুবিধা থাকে, সেইসাথে থাকে পানির নিচে মাছের মতো ভেসে থাকার মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনমতো ডুবে যাওয়া এবং পানির উপর সম্পূর্ণ ভেসে থাকার কারিগরি সুবিধা এবং তাপমাত্রা অনুকূল পোশাক। এককথায়, স্কুবা পানিতে কিছু সময়ের জন্য মাছ হয়ে থাকার এক সয়ংসম্পূর্ণ যুগান্তকারী ব্যাবস্থা। স্কুবা ছাড়াও আরো অনেকভাবেই পানিতে ডাইভিং করা যায়, তবে সহজলভ্য এবং ব্যবহারিক সুবিধার কারণে স্কুবা ডাইভিং সবচেয়ে জনপ্রিয়।
সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাঙালিকে ঘরকুনো উপাধিতে ডাকা হয়ে থাকে, কি দেশে কি প্রবাসে! তবে প্রবাসের ব্যস্ত জীবনে তার প্রকোপ আরো বেশি। যদিও, বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ভীষণভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে, মাঝে মাঝে ছুটিতে ঘরের পাশের সৈকতে বেড়ানো বা লং ড্রাইভে যাওয়ার মধ্যেই অধিকাংশ প্রবাসীর অ্যাডভেঞ্চার সীমিত। আর তাই ঘরের পাশের সেই সৈকতের পানির নিচের এই অসাধারণ জগত বেশিরভাগ মানুষের কাছেই অচেনা, অজানা। পর্যাপ্ত পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ ব্যাতীত আমাদের দেশের অবকাঠামো, পর্যটন ব্যবস্থা, জল, পরিবেশ, আবহাওয়া এবং লম্বা বালুর সৈকত হুট করে স্কুবা ডাইভিং শুরু করার জন্য হয়তো আদর্শ নয়। তাই, অস্ট্রেলিয়া বা অন্যান্য উপকূলীয় দেশে বাসকরা প্রবাসীদের কথা বিশেষভাবে বলা হচ্ছে কারণ, এই সীমাবদ্ধতা তাদের নেই, পার্কে হেঁটে বেড়ানোর মতো করেই তারা হয়তো চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ভিন্ন সেই জগত থেকে।
যদিও অনেক বাংলাদেশি গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে অথবা ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ বা বালিতে স্কুবা এক্সপেরিয়েন্স নামক অত্যন্ত স্বল্প সময়ের পানিতে ডুব দেয়ার একধরনের অভিজ্ঞতা নিয়েছেন, কিন্তু সাগর তলের সেই বৈচিত্র্যময় জগত উপভোগ করার পর্যাপ্ত সময়টুকু এখানে দেয়া হয় না। অন্য সব অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের মত স্কুবা ডাইভিংএ বাঙালির অনীহার মূল কারণ অজানা ভীতি এবং বিপদ এড়িয়ে চলার মানসিকতা। এ ক্ষেত্রে হাঙ্গরের আক্রমণ অনেক বড় একটা মিথ হিসেবে কাজ করে, এমনকি অনেক প্রবাসী এই অচেনা ভয়ে পানিতে সাঁতার কাটাও এড়িয়ে চলেন। তবে একথা বললে সম্পূর্ণ ভুল বলা হবে যে প্রবাসীদের স্কুবা ডাইভিংয়ে আগ্রহ নেই। এ পর্যন্ত যতজন বাঙ্গালীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে বা যারা স্কুবা ডাইভিং সম্পর্কে জেনেছেন তারা প্রত্যেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং জীবনে একবার হলেও ডাইভিং করার মানস ব্যক্ত করেন। আর তারপরেই আসে কিছু অবধারিত প্রশ্ন বা আশংকা। সবচেয়ে বেশি যে দুটি আশংকা আমাদের মাঝে কাজ করে, তার একটি হচ্ছে সাঁতার না জানা, আরেকটি হচ্ছে হাঙ্গর ভীতি।
প্রথমেই আসি সাঁতার জানা প্রসঙ্গে। মানুষ সাধারণত পানিতে ডুবে না মানে মানুষের শরীর পানি থেকে হালকা, মাথা ভারি, যার জন্য সাঁতার শেখা হয় আসলে মাথা পানির উপরে ভাসিয়ে রাখার কৌশল শেখার জন্য। পানির নিচে যেহেতু মানুষের ওজন আরো কমে যায় আর নিশ্বাস নেয়ার জন্য ভেসে থাকার প্রয়োজন হয় না, তাই আপনি সাঁতার না জানলেও সহজেই এই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। পারতপক্ষে আপনাকে ডুবে থাকার জন্য অতিরিক্ত ওজন শরীরে বহন করতে হয়। মানুষ আসলে মায়ের পেটে থাকতেই সাঁতার জানে, প্রত্যেকটা শিশু দশমাস বলতে গেলে ডুবুরি হিসেবেই বড় হয়েছে। তাই বাচ্চারা খুব সহজেই সাঁতার শিখতে পারে। যেহেতু ডাইভিং এ ভেসে থাকা নয়, ডুবে যাওয়াটাই মুখ্য, তাই সাধারণ স্কুবা এক্সপেরিয়েন্সের জন্য সাঁতার জানাটা প্রয়োজনীয় নয়। যদিও এটা একটা ব্যাবসায়িক প্রচারণা, যাতে সাঁতার না জানা অথবা পানি ভয় পাওয়া মানুষজন সহজেই এই সেবা ক্রয় করতে পারে। গ্রেট ব্যারিয়ার রীফ বা পৃথিবীর সব স্কুবা কেন্দ্রে কেউ ডাইভিং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য গেলে তাই সাঁতার না জানলেও যে কেউ নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পানিতে নামতে পারে। ডাইভিং কেন্দ্রগুলোতে অল্পসময়ের কিছু নিয়মকানুন এবং সাধারণ ডাইভিং পরিচিতি সেরে পর্যটকদের গাইডরা হাতে ধরে পানিতে নিয়ে যায়। কেতাবি ভাষায় একে বলে, ‘ডিস্কভার স্কুবা ডাইভিং’, মানে আপনি পানিতে নামার অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন, যদিও এটাকে কোনোভাবেই সম্পূর্ণ স্কুবা ডাইভিং অভিজ্ঞতা বলা যায় না। পরের পর্বে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
এটা কি নিরাপদ? অবশ্যই। একজন স্কুবা ইন্সট্রাক্টর অথবা ডাইভগাইড (ডাইভমাস্টার) দীর্ঘদিন পড়াশোনা এবং ব্যাবহারিক জ্ঞান অর্জন করে ধাপে ধাপে অসংখ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার মাধ্যমে প্রফেশনাল লাইসেন্স পেয়ে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, প্রত্যেক স্কুবা ইন্সট্রাক্টর বাধ্যতামূলক একজন ফার্স্ট এইড ইন্সট্রাক্টর এবং রেস্কিউ স্পেশালিষ্ট। তারা যে সেইসাথে দক্ষ সাঁতারু, সেটা সহজেই অনুমিত। সেই সাথে প্রযুক্তির কল্যাণ এবং উৎকর্ষ স্কুবা ডাইভিংকে অত্যন্ত নিরাপদ একটি অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে পরিণত করেছে, তাই বর্তমান সময়ে নির্ভয়ে এবং অত্যন্ত সহজেই জনসাধারণের কাছে স্কুবা ডাইভিং সহজসাধ্য আর নিরাপদ মাধ্যম। স্কুবা ডাইভিং অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত একটি স্পোর্টস, তাই এমনকি রোড ড্রাইভিং এর চেয়েও স্কুবা ডাইভিংকে বেশি নিরাপদ হিসেবে সহজেই ঘোষণা দেয়া যায়।
যদিও স্কুবা ডাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে বা নিজে নিজে স্কুবা উপভোগ করতে হলে আপনাকে সাঁতার জানতেই হবে। তাই ব্যাবসায়িক কারণে সব স্কুবা সেন্টার আপনাকে পানির নিচে নিয়ে গেলেও সাঁতার না জানলে আপনি প্রায় কিছুই উপভোগ করতে পারবেন না। এটা অনেকটা সাইকেল চড়ার মতো। আপনি পেছনের ক্যারিয়ারে বসে খুব সহজেই সাইকেল চড়া উপভোগ করতে পারেন কিন্তু সাইকেল চালানোর সেই অনুভূতি পুরোপুরি নিতে পারবেন না। আপনি যদি সাঁতার না জানেন, পানিতে সবসময় একটা অজানা ভয়ের মধ্যে থাকবেন, অথবা হাত-পা ছুঁড়ে কীভাবে নড়াচড়া করতে হয় সেই ব্যাপারটাও আয়ত্ত করতে পারবেন না। আপনি যখন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে হাত-পা ছুঁড়ে পানির নিচে কায়দা করার চেষ্টা করবেন, ততক্ষণে আপনার সিলিন্ডারের বাতাস শেষ হয়ে স্কুবা এক্সপেরিয়েন্সও শেষ। আপনি খুব কম দেখতে আর উপভোগ করতে পারবেন, যেখানে উপভোগ করাটাই আসল। আপনি যত বেশি ভয় পাবেন, আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস তত দ্রুত হবে এবং আরো দ্রুত আপনি সিলিন্ডারের বাতাস শেষ করে ফেলবেন। তাই যদি আপনি ভয়কে কিছুটা সময় চুপ করিয়ে রাখতে পারেন, তাহলে সাঁতার না জেনেও হয়তো ২০-৩০ মিনিট সময় নিয়ে ডিস্কভার স্কুবা সিস্টেমে আপনিও উপভোগ করতে পারেন সেই অদ্ভুত জগতের সৌন্দর্য।
এবার আসি প্রকৃত স্কুবা ডাইভিং প্রসঙ্গে। স্কুবা ডাইভিং একটি সম্পূর্ন টেকনিক্যাল স্পোর্টস, তাই এর খুঁটিনাটি জানা আবশ্যক। প্রকৃত বা আসল স্কুবা ডাইভিং বলতে কোন টার্ম নেই, যদিও এখানে পর্যাপ্ত তাত্ত্বিক এবং ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে স্কুবা লাইসেন্স অর্জন করা বা একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ ডুবুরি হওয়া বোঝানো হচ্ছে। সকল ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সাধারণ সাঁতার জানা এখানে একান্তই প্রয়োজনীয়। বেসিক বা প্রাথমিক ডাইভিং শেখার জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ডাইভিং স্কুলের প্রশিক্ষণ কোর্স বিদ্যমান। অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থা ডাইভিং সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে, যা এইএসও সার্টিফাইড (এটা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)। এদেরকে বলা হয় ডাইভিং স্কুল। এই স্কুলগুলো আবার আন্তর্জাতিক ফুটবল বা ক্রিকেটীয় বডির মত একটা সংস্থার অধীনে কাজ করে। তাই আপনি যে স্কুল থেকে বা যে পদ্ধতিতেই ডাইভিং শেখেন না কেন, মোটামুটি তা সব একই ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। আন্তর্জাতিক যেকোনো স্কুল থেকে একবার প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর একটি লাইসেন্স দেয়া হয়, যা পৃথিবীর যেকোনো দেশে যেকোনো স্কুবা স্কুলেই গ্রহণযোগ্য। তার মানে একজন সার্টিফায়েড স্কুবা ডাইভার হিসেবে আপনি যেখানেই যাবেন, চাইলেই আপনার লাইসেন্স দেখিয়ে নিজেই স্কুবা ইক্যুইপমেন্ট হায়ার করে বা গাইডের সাথে চলে যেতে পারবেন সেখানকার পানির নিচের বৈচিত্র্যময় জগত অবলোকন করতে। লাইসেন্স ছাড়া আপনি কোথাও স্কুবা ট্যাঙ্ক বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি হায়ার করতে পারবেন না বা গাইডের সাথে যেতে পারবেন না। এটা আজীবন কাজ করে, ঠিক একবার সাইকেল চালনা শেখার মতো। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বা আপনার ঘরের পাশের পানিতে একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ ডুবুরি হিসেবে নিজে নিজে নেমে যাওয়ার জন্য স্কুবা সার্টিফিকেটের কোনো বিকল্প নেই।
ডাইভিং শেখার দ্বিতীয় বা ক্ষেত্রবিশেষে প্রধান অন্তরায় হাঙ্গর ভীতি। হাঙ্গর মানুষ খায় না, তার মানুষ খাবার কোনো প্রয়োজন নেই। সিনেমায় হাঙ্গরকে যেভাবে দানব আর রক্তখেকো দানব হিসেবে দেখানো হয়, হাঙ্গর আসলে তা নয়। অন্য সব বুনো প্রাণীর মত হাঙ্গর নিতান্তই একটা প্রাণী। পৃথিবীতে ৪৮৯ বা তার বেশি প্রজাতির হাঙ্গরের মধ্যে মাত্র ৩টি প্রজাতির হাঙ্গরের মানুষকে আক্রমণ করার রেকর্ড পাওয়া যায়। প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে গড়ে হাঙ্গরের আক্রমণের রেকর্ড পাওয়া যায় ৮০টির মতো, যদিও এর দুই তৃতীয়াংশ আক্রমণের রেকর্ড শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ঘটে। আর এই আক্রমণে মৃত্যুর হার একদম হাতে গোনা, সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ৬ জনের কম। অথচ প্রতিদিন পৃথিবীজুড়ে কয়েক মিলিয়ন মানুষ পানিতে নামে। যদিও দুটো বিষয় এক নয় তবুও শুধু ধারণা দেয়ার জন্য একটা ব্যাপার চিন্তা করা যায়; প্রতিদিন শুধুমাত্র বাংলাদেশেই সড়ক দুর্ঘটনায় গড় মৃত্যুর হার দেড় শতাধিক। সেখানে বিশ্বজুড়ে বছরে ৫-৬ জন মানুষের মৃত্যুর কারণে হাঙ্গর ভীতি একটা অজানা অযৌক্তিক ভয় ছাড়া আর কিছুই নয়। আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে হাঙ্গরের আক্রমণ সাধারণত পানির উপরিভাগে হয়ে থাকে, ডাইভারদের উপর হাঙ্গরের আক্রমণের রেকর্ড নিতান্তই কম।
হাঙ্গর এবং এর আক্রমণ নিয়ে বিস্তারিত পাবেন আমাদের পরবর্তী পর্বে।
এ পর্বে স্কুবা ডাইভিং কী এবং সে সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা করার চেষ্টা করে হয়েছে। পরবর্তী পর্বগুলোতে কীভাবে সহজেই স্কুবা ডাইভিং শেখা যায়, তার বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সেইসাথে হাঙ্গর, হাঙ্গর নিয়ে মিথ এবং পানিতে হাঙ্গর এড়ানোর সহজ প্রযুক্তিগত সমাধান নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে। আপনার নিজ নিজ এলাকার ঘরের পাশের পানিতে অজানা সব প্রাণীর পরিচিতি তো থাকছেই। আজ এ পর্যন্তই, দেখা হবে পরের পর্বে।
ফিচার ইমেজ ক্রেডিট- লেখক (ফাহাদ আসমার)