![](https://assets.roar.media/assets/UbSMlc8wH8QgneZc_Colorful_city_building-Bing_wallpaper_1366x768.jpg?w=1200)
ভ্রমণের নেশা আছে আমাদের প্রায় সবারই, শখ আর সামর্থ্য মিলিয়ে সে নেশাকে তৃপ্তি দিতে আমরা ঘুরে বেড়াই দেশ বিদেশের নানান জায়গায়। কখনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কখনো বৈচিত্র্যময় মানুষ, কখনো মজাদার খাবার, কখনো বা মানুষেরই বিস্ময়কর কোনো সৃষ্টি আমাদের টেনে নিয়ে যায় এমন সব জায়গাতে।
আজকের লেখায় থাকছে পৃথিবীর এমন কিছু শহরের কথা যার বাড়িগুলো দেখলে সত্যিই আপনার মনে হবে যেন, কল্পরাজ্যে এলাম নাকি! অজস্র রঙে রঙিন বাড়িগুলো এই শহরগুলোকে করে তুলেছে পর্যটকদের জন্য দারুণ আকর্ষণীয়। এই শহরগুলো দেখলে মনে হবে যেন দক্ষ শিল্পীর নিপুণ তুলির আঁচড়ে আঁকা একেকটা ছবি! ঘুরে আসবেন নাকি একবার?
উইলেমস্টাড, নেদারল্যান্ড
ক্যারিবিয়ান সাগরের দক্ষিণাংশের একটি দ্বীপ কুরাকাওয়ের রাজধানী হল উইলেমস্টাড। এই দ্বীপটি কিংডম অব নেদারল্যান্ডের অংশ। শহরটিতে ঢোকার মুখেই আছে বিশাল এক পোতাশ্রয়।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/slider2-701x329.jpg)
উইলেমস্টাড শহরের চারটি অংশ। দুটি অংশের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে এক মাইল দীর্ঘ একটা চ্যানেল যেটি ক্যারিবিয়ান সাগরের সাথে যুক্ত, আর অন্য দুই অংশের মাঝখানে আছে আরেকটি পোতাশ্রয়।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/110-701x561.jpg)
শহরের প্রধান আকর্ষণ এর রঙিন বাড়িগুলোই। ডাচ স্থাপত্যকলার নিদর্শন মেলে এগুলোর নির্মাণকাজে। এই শহরের অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপত্যশিল্প আর এর প্রবেশমুখের ভিন্নতা একে এনে দিয়েছে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ এর স্বীকৃতি প্রাপ্তি।
বুরানো, ইতালি
অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের ভেনেশিয়ান ল্যাগুন উপসাগরের একটি দ্বীপ বুরানো। বিখ্যাত শহর ভেনিসও কিন্তু এই উপসাগরেই অবস্থিত।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/21-701x394.jpg)
উত্তর ইতালির এই দ্বীপটির গোড়াপত্তন করেছিল রোমানরা। বুরানো শহরের ছোটো ছোটো রঙিন বাড়িগুলো আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে এর উজ্জ্বল রঙের বাহার দিয়ে।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/31-701x438.jpg)
বুরানোর অধিবাসীরা কিন্তু যেমন খুশি তেমন রঙ করে দিতে পারে না নিজেদের বাড়িগুলোকে। অনেক আগে থেকেই একটা প্রথা প্রচলিত আছে এখানে। কেউ যদি নিজের বাড়ি নতুন করে রঙ করতে চায় তাহলে তাকে আগে সরকারি অনুমতি নিতে হয়, যে রঙ ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যাবে ওটাই ব্যবহার করতে হবে বাড়ির গায়ে।
ভ্রাতজওয়ালফ, পোল্যান্ড
ভ্রাতজওয়ালফ পোল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর। শহর ইংল্যান্ড ভিত্তিক সংস্থা গ্লোবালাইজেশন এন্ড ওয়ার্ল্ড সিটিস রিসার্চ নেটওয়ার্ক এই শহরের মানুষের জীবনযাত্রার উচ্চমানের কারণে একে পৃথিবীর অন্যতম ‘গ্লোবাল সিটি’ ঘোষণা করেছে।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/41-701x467.jpg)
এই শহরের ঝলমলে রঙিন বাড়িগুলোর দেখা মিলবে এর মার্কেট স্কোয়ার এলাকায় গেলে। ১৩ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই মার্কেট স্কোয়ারে আছে ওল্ড টাউন হল, সেইন্ট এলিজাবেথ চার্চ আর সল্ট স্কোয়ার। সল্ট স্কোয়ার আবার বিশেষভাবে পরিচিত এর মনোমুগ্ধকর ফুলের দোকানগুলির জন্য।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/51-701x467.jpg)
আরেকটা কথা, এই শহরে গেলে দেখে আসতে ভুলবেন না ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত অপরূপ স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন সেন্টেনিয়াল হলটি, যেটিকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে।
ভ্যালপারাইজো, চিলি
ভ্যালপারাইজো মানে হল প্যারাডাইস অন দ্য ভ্যালি অর্থ্যাৎ, স্বর্গ নেমে এসেছে যে উপত্যকায়। চিলির ভ্যালপারাইজো প্রদেশের অন্যতম কেন্দ্রীয় শহর হল ভ্যালপারাইজো, যেটাতে অবস্থিত আছে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর আর নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো, আছে চারটি সুপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/61-701x468.jpg)
ল্যাটিন আমেরিকার স্টক এক্সচেঞ্জের যাত্রা শুরু হয়েছে এ শহর থেকে। চিলির প্রথম পাবলিক লাইব্রেরিটিও এখানে। আর স্প্যানিশ ভাষার টিকে থাকা সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনোটি প্রকাশিত হয় এই শহর থেকেই।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/71-701x467.jpg)
পর্যটকদের চোখ জুড়িয়ে দেবে এই শহরের নয়নাভিরাম রঙিন বাড়িগুলো। পাথরের ব্লক গাঁথা রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে দেখা মিলবে স্ট্রিট আর্টিস্টদের দারুণ সব হাতের কাজ। চিলির সাংস্কৃতিক রাজধানী বলে পরিচিত এ শহরের সঙ্গীত কিংবা বর্ণিল সব উৎসবের আয়োজনের মাঝেই আপনি খুঁজে পাবেন চিলি’র ঐতিহ্যগুলোকে।
সিনকে তেরে, ইতালি
ইতালির সাগর উপকূলবর্তী এক পাথুরে এলাকার নাম সিনকে তেরে। পাঁচটি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই এলাকাটি। আশেপাশের পাহাড়ি অঞ্চলসহ এই গোটা এলাকাটিকে ইউনেস্কো ঘোষণা করেছে “ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/101-701x468.jpg)
অনেক অনেক কাল আগে মানুষ সাগর পারের পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপনা নির্মাণ করত সাগরের দিকে নজর রাখার জন্য। তেমন করেই গড়ে উঠেছে সিনকে তেরের জনবসতিগুলো। প্রতিটি গ্রাম দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন এক এক টুকরো রূপকথার দৃশ্য।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/92-701x468.jpg)
এখানে বেড়াতে গেলে এই পাশাপাশি দাঁড়ানো রঙিন বাড়িগুলো আপনাকে ভুলিয়ে দেবে দীর্ঘ পথ পেরুনোর ক্লান্তি। গ্রামগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে রেললাইন দিয়ে। ট্রেনে চেপে মাত্র পাঁচ মিনিট লাগে একটা থেকে আরেকটায় যেতে। চাইলে হেঁটেও যাওয়া যায়, তবে হাঁটবার রাস্তাগুলো কিন্তু পাহাড়ের কিনারায়, পাথুরে আর পিচ্ছিল, রোমাঞ্চকর তো বটেই!
গ্যামলা স্টান, সুইডেন
গ্যামলা স্টানের শাব্দিক অর্থ ‘পুরনো শহর’। সুইডেনের স্টকহোমে অবস্থিত এই প্রাচীনকালের শহরটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এর ইতিহাস আর সৌন্দর্য দুয়ের জন্যই।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/111-701x468.jpg)
এর গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৩ শতকে। মধ্যযুগীয় পাথুরে রাস্তা আর প্রাচীন স্থাপত্য ছড়িয়ে আছে গোটা শহর জুড়ে। শহরের মাঝখানের চত্বরটির নাম স্তর্তরগেট। এই চত্বরের চারপাশ জুড়ে আছে প্রাচীন আমলের বণিকদের বাড়িগুলো। নানান রঙের এই বাড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে পথের দুপাশে। রেনেসাঁ যুগের স্থাপত্যকলার ছাপ রয়েছে কোনো কোনো বাড়ির কারুকাজে। কোনো কোনোটির বয়স তিনশরও বেশি। নীরব শান্ত শহরের পথগুলো ধরে হেঁটে গেলে মনে হবে যেন এসে পড়েছেন সুদূর অতীতের কোনো ইতিহাসের পাতায়।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/121-701x467.jpg)
এ শহরেই গেলে ঘুরে আসতে ভুলবেন না ‘ডেন গিলডেন ফ্রেডেন’ রেস্টুরেন্টটি। গিনেজ রেকর্ড অনুযায়ী, এটিই পৃথিবীর প্রাচীনতম রেস্টুরেন্ট যেটি সেই ১৭২২ সালে নির্মাণের পর থেকে এখনও এর অন্দরের সাজসজ্জা একটুও পরিবর্তন করা হয় নি।
সেইন্ট জন’স, কানাডা
কানাডার পূর্বদিকের নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাবার্ডর প্রদেশের রাজধানী হল সেইন্ট জন’স শহর। ধারণা করা হয়, উত্তর আমেরিকায় ইংরেজদের হাতে প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে পুরনো শহর এটি। পূর্ব প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর সেইন্ট জন’সের আয়তন সাড়ে চারশ বর্গ কিমি, বসবাস করে প্রায় সোয়া দুই লাখ মানুষ।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/131-701x469.jpg)
পর্যটকদের কাছে শহরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর ‘ওয়াটার স্ট্রিট’ ও ‘ডাকওয়ার্থ স্ট্রিট’ এর ধারের বাড়িগুলো। উজ্জ্বল রঙে রঙিন এই পুরনো বাড়িগুলোর মধ্যেই পর্যটকদের জন্য আছে অনেক রেস্টুরেন্ট, বুটিক শপ ও কেনাকাটার হরেক আয়োজন।
এই শহরটি ইতিহাসে বিখ্যাত আরেকটি কারণে। নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানি জি মার্কনি তার রেডিও দিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের এপার-ওপার যোগাযোগের পরীক্ষা যখন করছিলেন, সর্বপ্রথম সিগনালটি পাওয়া গিয়েছিল এই সেইন্ট জন’স শহরেই।
মেন্টন, ফ্রান্স
মেন্টন হল ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি প্রাচীন শহর। ভূমধ্যসাগরের বুকের এ শহরটির অবস্থান একবারে ফ্রান্স আর ইতালির সীমান্তের পাশেই। অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে একে বলা হয় ‘পার্ল অব ফ্রান্স’ বা ফ্রান্সের মুক্তা।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/141-701x467.jpg)
মেন্টনে মানুষ বসবাস করেছে সে প্রাগৈতিহাসিক কালেই। আদিম মানুষ ও আধুনিক মানুষের প্রথম দিককার নমুনা পাওয়া গেছে এখানে। খ্রিস্টিয় ১১ শতকে এসে এখানে বড় আকারে জনবসতি গড়ে উঠে। এর আবহাওয়া লেবু, কমলা আর ছোট ধরণের কমলালেবু উৎপাদনের জন্য আদর্শ। আর এই শহরের প্রতীকই হল তাই লেবু। প্রতি বছর এখানে উদযাপিত হয় জমজমাট লেবু উৎসব।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/151-701x1051.jpg)
মেন্টনের বাড়িগুলো বিখ্যাত এদের দারুণ চোখ ধাঁধানো রঙের জন্য। এখানে এলে আরও বিমোহিত হতে হবে এর পৃথিবীবিখ্যাত বাগানগুলোর জন্য। বিংশ শতকের শুরুতে এখানে তৈরি করা শুরু হয় বাগানগুলো। বাগানের ফুল আর মেন্টনের বাড়িগুলোর রঙ আপনাকে অবশ্যই নিয়ে যাবে স্বপ্নের কোনো স্বর্গরাজ্যে।
টোবারমরি, স্কটল্যান্ড
টোবারমরি হল মুল নামক স্কটিশ দ্বীপেপুঞ্জের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি ছোট্ট শহর। এ শহরের অধিবাসী আছেন প্রায় ১০০০ জন। দ্বীপপুঞ্জের একপ্রান্তের সারি সারি রঙিন বাড়ি দেখলে মনে হয় যেন শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা কোনো নৈসর্গিক ছবি।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/16-701x464.jpg)
১৭৮৮ সালে এই শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয় মাছ ধরার বন্দর হিসেবে। একে ঘিরে রয়েছে এক বিশাল গল্প। তবে সেটা গল্প না সত্যি, আজও নিশ্চিত হওয়া যায় নি। টবেরমরি উপসাগরেই নাকি একটা স্প্যানিশ জাহাজ ডুবে গিয়েছিল যেটা ছিল স্বর্ণের বার দিয়ে ভর্তি। প্রায় ৪ লক্ষ ডলার সমমূল্যের স্বর্ণ তলিয়ে যায় এই দ্বীপেরই আশেপাশে কোথাও। সেই ১৯৫০ সালে একবার জোরেসোরে খোজার চেষ্টা করা হয়েছিল জাহাজের ধ্বংসাবশেষ, কিছুই মেলেনি। এরপর এখন পর্যন্ত আর উদ্ধারকাজ চালানো হয়নি।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/02/171-701x526.jpg)
শহরের এক পাশে প্রধান সড়ক। সেই সড়কের ধারে সারি সারি বাড়ি, বর্ণিল সাজে সজ্জিত। বেশিরভাগ বাড়িতেই চলছে দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট। দূর থেকে বাড়িগুলো দেখলে মুগ্ধ তো হবেনই, সেই রাস্তা ধরে ঘুরে বেরালেও উপভোগ করতে পারবেন নানান রঙের মাধুর্য।