ইতিহাস বিষয়ে আমার আগ্রহ বরাবরই কম ছিল। এই রাজা, সেই সম্রাট, অমুক সাম্রাজ্যের পতন কিংবা তমুক রাজ্যের অভিষেক- পাঠ্যবইয়ের পাতায় পড়তে হত এতসব শক্তপোক্ত নাম, জন্ম-মৃত্যু সাল আর রাজ-রাজড়ার গল্প। তবে মধ্যযুগের মোঙ্গল দলপতি এবং শাসনকর্তা কুবলাই খানের সাথে আমার পরিচয় ঘটে বেইজিং ভ্রমণের দিনগুলোতে।
মঙ্গোলিয়ান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের নাতি ছিলেন এই কুবলাই খান। আর তিনিই প্রথমবারের মতো ১২৭২ সালে বেইজিংকে চীনের তৎকালীন ইউয়ান ডাইন্যাস্টির রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। বেইজিং এর তখনকার নাম ছিল khanbaliq বা Dadu, আর এখন স্থানীয় ভাষায় অনেকেই একে Peking হিসেবে চেনেন। প্রায় ৩,০০০ বছরেরও বেশি সময় জুড়ে উত্থান-পতনের নানা গল্প নিয়ে চীনের ইতিহাসে বেশ ভালোভাবেই জড়িয়ে আছে আজকের এই বেইজিং।
বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে ‘চীন’ দেশের নাম। আমার একবার সুযোগ হয়েছিল ৬৮৬ শহরের এই দেশটির ৩টি শহর ঘুরে দেখার। এর মধ্যে গুয়াংঝু কিংবা সাংহাই এর গল্প না হয় অন্য কোনোদিন করা যাবে, আজকে চলুন কুবলাই খানের শহর নিয়েই আলাপ করি।
যাত্রা শুরুর কথা
প্রথমে একটু বলে নিই, গুয়াংঝুতে প্রথম দুই দিনের অভিজ্ঞতা ছিল মিশ্র, বেশ বেগ পেতে হয়েছিল ভাষা সংক্রান্ত জটিলতায় ।
ছোট্ট একটা গল্প বলি। প্রথমদিন গুয়াংঝু এয়ারপোর্ট থেকে আমরা বের হই আনুমানিক রাত তিনটার দিকে। বাইরে অপেক্ষমাণ ট্যাক্সি-ক্যাবগুলোকে ইংরেজিতেই বলছিলাম আমাদের আগে থেকে ঠিক করে রাখা হোটেলের ঠিকানা। কিন্তু সে কী! সবাই শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে কিংবা ‘চিং-মিং’ ভাষায় কী যেন বলে চলে যায়! জানতাম চীন দেশে নিজেদের ভাষার গুরুত্ব অনেক। কিন্তু সেটি যে এতটা প্রকট, তা জানা ছিল না। অধিকাংশ স্থানীয়রা নিজ ভাষা ছাড়া অন্য ভাষার অ-আ-ক-খ সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। ‘ভাষার আবিষ্কার এবং মানবজাতির ইতিহাসে এর গুরুত্ব‘- সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম! প্রায় দেড় ঘণ্টা ভাষা-অভিযান চালানোর পর কপাল গুণে দেখা মেলে এক ভারতীয় ভদ্রলোকের। কে জানে, তিনি উদ্ধার না করলে বাকি রাতটা হয়তো এয়ারপোর্টে উদ্বাস্তুর মতো করেই কাটিয়ে দিতে হতো!
অবশ্য পরবর্তী দিনগুলোতে আমাদের দো-ভাষীর কাজ করেছিল ‘বাইডু ট্রান্সলেটর’ নামক একটি চীনা মোবাইল-অ্যাপ। এখানে বলে রাখা ভালো, চীনে কিন্তু গুগল বা আমাদের পরিচিত ব্রাউজারগুলো একেবারেই নিষিদ্ধ। কারণ সেখানকার ব্রাউজার কিংবা অ্যাপ্লিকেশনগুলোকেও হতে হবে ‘মেইড-ইন-চায়না’!
যা-ই হোক, ফিরে আসি মূল গল্পে। গুয়াংঝু থেকে বেইজিংয়ে যাবার অনেক রকম উপায়ের মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে সহজে যাওয়া যায় ইন্টার-সিটি হাই-স্পিড বৈদ্যুতিক ট্রেনের মাধ্যমে। চীনদেশের রেলওয়ে সিস্টেম বোঝা আপনার-আমার মতো সাধারণ লোকের জন্য চাট্টিখানি কথা নয়। এটা রীতিমত গবেষণার বিষয়। একটুও বাড়িয়ে বলছি না। দেশে বসে যখন গুগল করছিলাম তখন সায়েন্স-ডিরেক্ট-এ কয়েকটি গবেষণাপত্রও দেখেছিলাম, যেখানে এই জটিল সিস্টেমকে সহজ করে বোঝানোর নিরর্থক চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।
শুধু একটুখানি নমুনা শোনাই। সমগ্র চীন জুড়ে রয়েছে ৬,৩৯৭টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন এবং ২,৮৪৮টি স্টেশন। ট্রেনগুলোকে আবার G, C, D, Z, T, K, P ও Y এই আটটি ভাগে ভাগ করা। একেক ভাগের আবার একেক রুট, একেক স্পিড, একেক রকম সময়সূচী ইত্যাদি। কেমন যেন ঘোর-প্যাঁচানো ব্যাপার-স্যাপার!
রাত আটটার ট্রেনে রওয়ানা হয়ে প্রায় দশ ঘণ্টা পর আমরা যখন বেইজিং শহরে পৌঁছাই তখন ভোর ছয়টা। হাই-স্পিড ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম। ডি-টাইপ ট্রেনের সেকেন্ড ক্লাস কেবিন হলেও এর চাকচিক্য আর ভেতরের উন্নত ব্যবস্থা দেখে অবশ্যই অবাক হতে হবে। প্রতি ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চললেও ভেতরে বসে একটুও বোঝার উপায় নেই। মনে হবে, আপনি বুঝি নিজ বাড়িতে আরাম করে ঘুমিয়েই পার করে দিয়েছেন ২,২৯৪ কিলোমিটার পথ।
রাতের জার্নি হওয়াতে চারপাশটা ভালো করে দেখার তেমন সুযোগ ছিল না। তবে আলো-আঁধারিতে যেটুকু অনুমান করেছি কিংবা ভোরবেলায় দেখেছি, তা সত্যিই অসাধারণ। ছোট এয়ার-টাইট জানালা দিয়ে তাকালে কখনও দেখতে পাবেন আপনি কোনো সুউচ্চ ব্রিজের ওপর, কখনো কোনো পাহাড় কেটে বানানো সুড়ঙ্গের ভেতর, কিংবা কখনো সাঁই করে চলে যাচ্ছেন কোনো আকাশচুম্বী ভবনের নাকের ডগা দিয়ে। আবার কখনো অস্পৃশ্য ঘন জঙ্গল, শান্ত-নিশ্চুপ নদী কিংবা শুধুই নীরব বিস্তীর্ণ প্রান্তর। কারণ গুয়াংঝু থেকে বেইজিংয়ের এই যাত্রা পথে আপনি পার হচ্ছেন ‘হেবেই’, ‘হেনান’ এবং ‘হুবেই’ প্রদেশের আরো বেশ কয়েকটি শহর।
রেলস্টেশন থেকে বের হতে গেলেও আপনাকে ঘুরতে হবে অনেকখানি রাস্তা। আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন থেকে অনেকগুলো সিঁড়ি বা লিফট পার হয়ে দেখতে পেলাম ভোরের বেইজিংকে। প্রায় ১৮.৮ মিলিয়ন মানুষের এই শহর তখন খানিকটা ঝিমিয়ে আছে। আশেপাশে একটুখানি হেঁটে সকালের নাস্তা সেরে নিয়েছিলাম। স্টেশন এলাকা বলেই হাতের কাছে পেয়ে যাবেন খাবার বা প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান।
চীনে খাবারের বেলায় আপনাকে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। আমি বলবো, অর্ডার করার আগে মেন্যুতে খাবারের উপকরণ বা উপাদানগুলোতে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিন। নাহলে ভুল করে হয়তো খেয়ে ফেলবেন সাপ, কেঁচো বা নাম-না-জানা কোনো জন্তুর মাংস। আর তাদের রন্ধনপ্রণালী অবশ্যই আমাদের মতো এত মশলাদার নয়। তাই যারা শুধুমাত্র এশীয় ধাঁচের খাবারে অভ্যস্ত তাদের একটু কষ্ট পোহাতে হবে।
আগে থেকে আমাদের কোনো ট্যুর প্ল্যান ছিল না। স্থানীয় একজন পরামর্শ দিলেন, এয়ারপোর্ট বেশি দূরে নয়। সেখানে গেলেই ট্যুরিস্টদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা রকম ট্যুর-প্যাকেজ সহজেই নেওয়া যাবে। আর এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে ছোটখাট একটা সিটি ট্যুরেরও স্বাদ পাওয়া যাবে।
সেই অনুযায়ী কাজ। এয়ারপোর্টে পৌঁছে সবকিছু ঠিকঠাক করে আমরা মোটামুটি এগারোটা-বারোটা নাগাদ রওয়ানা দিলাম ‘বাডালিং’ এর উদ্দেশ্যে।
কী আছে বাডালিং-এ?
চীনের মহাপ্রাচীর দেখার জন্য জনপ্রিয় মোটামুটি দশটি পয়েন্টের একটি হলো বাডালিং। নাহ, আমি চীনের মহাপ্রাচীর তৈরির ইতিহাস বর্ণনা করতে বসবো না, কিংবা চাঁদ থেকে একে আদৌ দেখা যায় কি না, সেই যুক্তি তর্কেও যাবো না।
যাত্রাপথে মনে হবে হঠাৎ কোনো পাহাড়ের মাঝখান থেকে উঁকি দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীরের খণ্ডাংশগুলো, যেন লুকোচুরি খেলছে। বাডালিং এর মুখে পৌঁছানোর পর দেখতে পেলাম উত্তর এবং দক্ষিণ- দুই দিকে তরতর করে উঠে গেছে সীমানা প্রাচীর। আপনি যেকোনো একদিক থেকে শুরু করতে পারেন। দক্ষিণ দিকের অংশটি তুলনামূলক ছোট। যেদিক থেকেই শুরু করুন না কেন আগে অবশ্যই টিকিট কেটে নিতে ভুলবেন না।
গোটা চীনের উত্তর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ২১,১৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সম্পূর্ণ মানব-নির্মিত এই প্রাচীরের মাত্র ১২ কিলোমিটার পড়েছে বাডালিং-এ। তবে সংরক্ষণের সুবিধার জন্য মাত্র ৪ কিলোমিটারের মতো প্রাচীর আর ১৯টি ওয়াচটাওয়ার পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। প্রথমদিকে শুধু বালি আর পাথর দিয়ে নির্মিত হলেও আজ আমরা মহাপ্রাচীরের যে রূপ দেখতে পাই তা মূলত ‘মিং ডাইন্যাস্টি’ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বেশ কয়েকবার ভাঙা-গড়ার ফসল।
আমি শুধু হাঁটছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম। কেমন যেন শিহরণ কাজ করছিল। কত দূর-দূরান্ত থেকে কত কষ্ট করে বয়ে আনতে হয়েছিল এসব নির্মাণ সামগ্রী! এত বড় প্রাচীর নির্মাণ তো চাট্টিখানি কথা! না জানি কত মানুষ বরণ করে নিয়েছিল মৃত্যুকে! জনশ্রুতি আছে, যারা মারা যেত তাদের নাকি এই প্রাচীরের নিচেই সমাধিস্থ করা হতো!
আসলেই কি দরকার ছিল এই প্রাচীরের? আদৌ কি এই প্রাচীর শত্রুর আক্রমণ থেকে চীনকে রক্ষা করতে পেরেছিল? এতসব প্রশ্নের মাঝে প্রচলিত একটি প্রবাদ আমার মাথায় ঘুরছিল, নট রিচ গ্রেট ওয়াল, নট গুড ম্যান।
হিম-শীতল বাতাস, সাদা-গোলাপি ফুলের সারি, একটু পরপর দুর্গের মতো অংশ, সেখানে আবার পাথরে খোদাই করা কী যেন সব লেখা- সব মিলিয়ে কেমন একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি!
বাডালিং-এ আপনি চাইলে কেবল-কার, পুলি, স্লাইডিং কার বা স্লো-রোলার কোস্টারে চড়ে ঘুরে দেখতে পারেন চারপাশ। আমি আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যোগ করেছিলাম ‘কেবল-কার’কে। মাঝারি সাইজের একটা গাড়ির মতো জায়গায় অনেক পর্যটক, কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে। তাই আমার মতে একে বলা উচিত ‘কেবল-বাস’! এই বাহন উত্তরের কিছু ভ্যালির মতো অংশে আমাদের ঘুরিয়ে এনেছিল।
এছাড়াও বাডালিং গ্রেট-ওয়াল মিউজিয়াম, ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্ক, মেমোরিয়াল হল সহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গা আপনি ঘুরে দেখতে পারেন।
বাডালিং থেকে ফেরার পর বিশ্রাম, সন্ধ্যার দিকে সিল্ক-স্ট্রিট, টাইম-স্কয়ারসহ বেইজিং এর রাস্তায় রাস্তায় আঁতিপাঁতি ঘোরাঘুরি, আর শেষে রাতের খাবার সেরে হোটেলে ফিরে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাওয়া। এভাবেই কুবলাই খানের শহরে সমাপ্তি ঘটে আমাদের প্রথম দিনের।
দ্বিতীয় দিনের উপাখ্যান
আগেই বলেছি, ইতিহাস আমার বোধগম্য নয়। তাই দ্বিতীয় দিনে ঘুরে দেখা মধ্যযুগীয় স্থাপত্যকলার নিদর্শনগুলোর মর্ম উদ্ধার করা আমার পক্ষে মোটামুটি দুঃসাধ্য।
শুরু করেছিলাম বিখ্যাত ‘ফরবিডেন সিটি’ থেকে, যার স্থানীয় নাম ‘গুগং’। কুবলাই খানের পরবর্তী শাসকবর্গ অর্থাৎ মিং-সম্রাটদের আমলে ১৪ বছর ধরে প্রায় ১৭৮ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত হয় এই রাজপ্রাসাদ। নাম শুনে মনে হতে পারে, এখানে বুঝি সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। মিং-রাজাদের আমলে এই নিয়ম প্রযোজ্য হলেও, এর প্রায় ৬০% অংশ এখন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।
পুরো প্যালেস জুড়ে রয়েছে ৯০টি কোয়ার্টার, ৯৮০টি ভবন এবং ৮,৭২৮টি রুম। রাজকীয় ব্যাপারই বটে!
দুপুরের কাঠফাটা রোদ মাথায় নিয়ে এর খুব অল্প একটু অংশই আমরা ঘুরে দেখেছিলাম। সাথে ছিল ঢোকার মুখের দোকান থেকে কেনা অডিও সেটের মতো এক বস্তু! প্যালেসের যে যে অংশেই আমরা পা রাখছিলাম, নিমিষেই এটি গড়গড় করে বলে দিচ্ছিল সেই জায়গার নির্মাণ-ইতিহাস।
শ্বেত-পাথরের বিস্তৃত প্রাঙ্গণ, দ্বারপ্রান্তে বিশাল সিংহ, প্রাসাদগুলোর নিখুঁত কারুকার্য অথবা ‘দ্য প্যালেস মিউজিয়াম’! ইতিহাসপ্রেমী কিংবা স্থাপত্যকলায় আগ্রহ থাকলে আপনি অবশ্যই মুগ্ধ হতে বাধ্য। আর আমার মাথায় কেবলই ঘুরছিল আশ্চর্য সব চিন্তা!
এই বিশাল জায়গায় সম্রাটরা কি ফুটবল খেলতেন? আর এই এক তলার সমান উঁচু হাঁড়িতে কি রান্না করতেন তারা? কিংবা কখনো কি এই বাগানে বসে কাঁদছিলেন কোনো রাজকুমারী?
সে যাক গে। ফরবিডেন সিটির বাইরের অংশ বেশ সুন্দর। একটু কাছেই বেইহাই পার্ক। লেকের শান্ত-শীতল পরিবেশ আর মৃদুমন্দ বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আমি প্রকৃতিপ্রেমী, তাই এখানেই বসে রইলাম। অন্য প্রান্তের ‘তিয়ানানমান স্কয়ার’ আমাকে তেমন টানেনি।
তিয়ানানমানের সাথেও জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস, একসময় ফরবিডেন সিটির মূল ফটক হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই স্কয়ার।
ফরবিডেন সিটি থেকে চার কিলোমিটার দূরে গেলেই ‘টেম্পল অভ হেভেন’। এর আয়তাকার মন্দিরগুলো নির্দেশ করে ‘পৃথিবী’কে আর মাঝের মার্বেল-বাঙ্ক যুক্ত তিনচালা অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির মতো মন্দিরটি নির্দেশ করে ‘স্বর্গ’কে। শীতের দিনে ফসলের ভালো ফলনের আশায় এই মন্দিরে বসে জাঁকজমকপূর্ণ প্রার্থনা করা হতো। আমার কাছে মনে হলো, ফরবিডেন সিটির নির্মাণশৈলীর সাথে এর বেশ মিল রয়েছে।
আর প্রায় ত্রিশ মিনিটের রাস্তার পেরোলেই দেখা পাওয়া যেত ‘সামার প্যালেস’ এর। তবে আমরা সেখানেই ক্ষান্ত দিলাম। কারণ বিকেল পেরোলেই যেতে হবে রেলস্টেশনে, গন্তব্য চীনের আরেক বাণিজ্য-কেন্দ্র ‘সাংহাই’।
এর মধ্য দিয়েই বিদায় জানাই কুবলাই খানের শহরকে, সাধুবাদ জানাই বেইজিংকে! কত রাজবংশ এলো-গেলো, বেইজিং তবু ‘রাজধানী’ হিসেবে রয়ে গেলো!