ডোনাল্ড ট্রাম্প! পুরো নাম ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। সম্ভবত বর্তমানের সবচেয়ে আলোচিত নাম এটি। এবারের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দুই দলের একটি রিপাবলিকান দলের মনোনীত প্রার্থী থেকে এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তিনি। তবে এর বাইরেও তার পরিচিতি আছে বিশাল ব্যবসায়ী হিসেবে। এবারের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দিতা করে আমেরিকার ৪৫তম প্রসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেন এই আলোচিত ব্যবসায়ীই। আমাদের আজকের আয়োজন সাজানো হয়েছে এই বিশাল ব্যবসায়ী এবং বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বিস্ময়কর অজানা তথ্য নিয়ে।
১৩ বছর বয়সে মিলিটারি স্কুলে
ট্রাম্প ছোট বেলা থেকেই কিছুটা উদ্ধত ছিলেন। তার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর তখন তাকে তার কিউ-ফরেস্ট স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। কিউ-ফরেস্ট একটি প্রাইভেট স্কুল ছিল। ট্রাম্পের বাবা সেখানকার ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তারপরও ট্রাম্পকে সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়। এ থেকে আমরা সেসময়ে তার উদ্ধতপনা সম্বন্ধে কিছুটা বুঝতে পারি। এর ফলে তার বাব-মা তাকে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই নিউ ইয়র্ক মিলিটারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিতে বাধ্য হন। তারা মনে করেছিলেন যে, ট্রাম্পের আরো বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন করা উচিত। নিউইয়র্ক মিলিটারি স্কুলে ট্রাম্প ক্যাপ্টেন পদবী অর্জন করেছিলেন।
ট্রাম্পকে ইংল্যান্ডে ঢুকতে না দেয়ার বিষয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিতর্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইংল্যান্ডে ঢুকতে দেয়া যায় কিনা এ বিষয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টে একটি বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছিল। ব্রিটেনের ২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ ট্রাম্পকে দেশে ঢুকতে না দেয়ার পক্ষে একটি পিটিশানে স্বাক্ষর করে। এর ফলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এ বিষয়ক বিতর্কটি আয়োজিত হয়েছিল।
দেউলিয়া থেকে বিলিওনিয়ার
ডোনাল্ড ট্রাম্প সমন্ধে এই বিষয়টি অনেকেই জানেন না। ১৯৯০ সালের দিকে ট্রাম্প প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছিলেন। সেসময় তার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছিল। এছাড়াও ৯০০ মিলিয়ন ডলারের ব্যক্তিগত ঋণও ছিল। তিনি তার ট্রাম্প শাটল প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত “ট্রাম্প টাওয়ার” আর আটলান্টিক সিটির ৩ টি ক্যাসিনো রক্ষা করতে সমর্থ হন। বর্তমানে তিনি ট্রাম্প অর্গানাইজেশানের সিইও। বর্তমানে তার অধীনে ১০০ টিরও বেশি কম্পানি রয়েছে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২.৬ বিলিয়ন ডলার।
দ্যা অ্যাপ্রেন্টিস নামক রিয়েলিটি শোর উপস্থাপক
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দ্যা অ্যাপ্রেন্টিস নামের একটি টিভি রিয়েলিটি শো এর হোস্ট বা, উপস্থাপক ছিলেন। তিনি এই রিয়েলিটি শোটির সহ প্রযোজকও ছিলেন। এ অনুষ্ঠান থেকে ট্রাম্পের এপিসোড প্রতি আয় ছিল ৩,৭৫,০০০ ডলার। এই রিয়েলিটি শোটি টিভি ইতিহাসের অত্যন্ত সফল একটি রিয়েলিটি শো।
৩ বার বিয়ে
হ্যাঁ, ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পর্যন্ত ৩ বার বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রী ইভানা ট্রাম্প, দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা মাপলেস এবং বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী শুধু একজন মডেলই নয়, চেক অলিম্পিক স্কি দলেরও সদস্য ছিলেন। ইভানা ট্রাম্প এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৯৯০ সালের দিকে ডিভোর্স হয়ে যায়। ট্রাম্পের সাবেক এই স্ত্রী ১৯৮৯ সালে তাদের মাঝে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে “রেপ” হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়াও তার সাবেক স্ত্রীকে তিনি বেশ গুরুতর আঘাতও করেছিলেন। একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে রাগের মাথায় তার স্ত্রীর মাথার চুলও ছিঁড়ে নিয়েছিলেন ট্রাম্প।
সবচেয়ে বাজে সহ অভিনেতার পুরস্কার
ট্রাম্প ১৯৯০ সালে “ঘোস্ট কান্ট ডু ইট” নামের একটি মুভিতে সহ অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেন। এ সিনেমায় বেশ বাজে অভিনয়ের জন্য অস্কারের বিপরীত একটি অ্যাওয়ার্ড রাজ্জি (গোল্ডেন রাস্পবেরি অ্যাওয়ার্ড) অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন (সবচেয়ে বাজে সহ অভিনেতা ক্যাটাগরিতে)। এ অ্যাওয়ার্ডটি অস্কার দেয়ার ঠিক এক দিন আগে দেয়া হয়ে থাকে।
ট্রাম্প অ্যালকোহল খান না
ট্রাম্প অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকেন। তার ভাই একজন অ্যালকোহলিক ছিলেন এবং তার এই অভ্যাসের জন্য ১৯৮২ সালে তিনি মারা যান।
ব্যাটম্যান এবং ট্রাম্প টাওয়ার
ট্রাম্পের বসবাসের জন্য তৈরি বিল্ডিং ট্রাম্প টাওয়ার ক্রিস্টোফার নোলানের দ্বারা নির্মিত ব্যাটম্যান সিরিজের ৩য় সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে। “দ্যা ডার্ক নাইট রাইসেস” সিনেমায় এই বিল্ডিংটি কাল্পনিক ওয়েইন ইন্টারপ্রাইজ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ট্রাম্প টাওয়ারই হল বসবাসের জন্য তৈরি করা পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা বিল্ডিং। ১৯২৯ সালে তৈরি করা আর্ট ডেকো বিল্ডিংটি ভেঙ্গে ট্রাম্প এ বিল্ডিংটি তৈরি করেছিলেন। আর্ট ডেকো বিল্ডিংটি আর্কিটেকচারগত দিক থেকে এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই সেটি ভেঙ্গে সেখানে ট্রাম্প টাওয়ার তৈরির ঘটনা বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
এ বিল্ডিং তৈরি করতে যেয়ে ট্রাম্প ২০০ পলিশ শ্রমিক নিয়োগ করেছিলেন। তাদের দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করানো হত। দিনে প্রায় ১২ ঘন্টা করে কাজ করিয়ে নেয়া হত। তাদের প্রতি ঘন্টা কাজের মজুরি ছিল মাত্র ৪ থেকে ৫ ডলার। যদিও ট্রাম্প বিষয়গুলো জানতেন না বলে দাবী করে থাকেন।
ট্রাম্পের বোন
ট্রাম্পের বোন ম্যারিয়ানে ট্রাম্প বারি একজন আমেরিকার সিনিয়র সার্কিট জাজ। এই পদটি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রদান করা হয়ে থাকে। ম্যরিয়ানে ১৯৯৯ সালে এই পদের জন্য মনোনীত হন। কিন্তু তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দি হিলারি ক্লিনটনের স্বামী বিল ক্লিনটন। ট্রাম্পের বোন রিপাবলিকান হওয়ার পরও ডেমোক্রেট বিল ক্লিনটন তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান।
ডোনাল্ড ট্রাম্প পরবর্তিতে দাবী করেন যে তার বোনকে এ পদে বসানো হয়েছিল কারণ তিনি বিল ক্লিনটনের প্রেসিডেন্সি পদে লড়াইয়ের সময় তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছিলেন। এ সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, “যখন আপনি তাদের দেবেন, তখন তারা সকল ধরনের কাজই করবে যা আপনি তাদের বলবেন।“
এর আগেও প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য লড়েছিলেন ট্রাম্প
এর আগেও ২০০০ সালে ট্রাম্প রিফর্ম পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লড়াই করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ভোট শুরুর একদম আগে আগে তিনি তা থেকে সড়ে আসেন। তারপরও বেশ কিছু জায়গায় রিফর্ম পার্টির ভোটে ট্রাম্প জয় লাভ করেছিলেন।
নিজের ব্যবসার জন্য বাইরের শ্রম ব্যবহার
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই তার বক্তব্যে আমেরিকাকে আবার গ্রেট বা, মহান বানানোর কথা বলে থাকেন। তিনি বাইরের শ্রম ব্যবহারের বিপক্ষেও বলে থাকেন। চায়না এবং মেক্সিকোকে আমেরিকার অর্থনীতি ধ্বংসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। কিন্তু আসলে তিনি নিজেও নিজের ব্যবসার কাজে প্রায় সব কাজ বিদেশের শ্রম দ্বারা করে থাকেন। যে দেশের শ্রমিকরা সবচেয়ে কম খরচে তার কাজ করে দেয় সেই দেশেই তিনি তার কাজ আউটসোর্সিং হিসেবে পাঠান। ট্রাম্পের কাপড় ব্যবসা মূলত টিকেই আছে চায়না আর বাংলাদেশের উপড় ভর করে। ট্রাম্পের গহনার ব্যবসাও চায়নার উপড় নির্ভরশীল। এমনকি নিজের নির্বাচনী প্রচারের বিভিন্ন সামগ্রীও তিনি কম খরচে চায়না থেকে বানিয়ে এনেছিলেন। এবং সেগুলো পরিধান করেই তিনি মানুষের সামনে চায়নার শ্রম ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিয়মিত বক্তব্য দিয়েছেন।
ইমিগ্র্যান্ট
বিদেশি ইমিগ্র্যান্টের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রায়সই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রেখেছেন। অভিবাসীদের বিষয়ে তার শক্ত অবস্থান এবং পরবর্তিতে বাইরের লোকদের আমেরিকায় না আসতে দেয়ার ব্যাপারে তার বক্তব্যগুলো সারা বছর ধরেই আলোচিত ছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হল ট্রাম্পের নিজের মা ম্যারি আন্নে ম্যাকলিওড ছিলেন একজন স্কটিশ ইমিগ্র্যান্ট। এছাড়াও তার দাদা-দাদী জার্মানী থেকে এসেছিলেন। যদিও বহু বছর ধরে ট্রাম্প বিশ্বাস করতেন তার দাদা-দাদীরা সুইডিশ ছিলেন। এর পেছনের কারণ হল তার বাবা নিজেদের পরিবারকে জার্মানীর বদলে সুইডেন থেকে এসেছে বলেই পরিচয় দিতেন। ট্রাম্পের বাবা ১৯৬০ সালে এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, তার চেনা পরিচিত অনেকেই ইহুদী ছিল। আর তাদের কাছে জার্মান পরিচয় দেয়াটা আসলে খুব ভাল কিছু ছিল না।
টুইটারে প্রতি মাসে গড়ে ৬৭,০০০ নতুন ফলোয়ার
ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব ভাল করেই জানেন যে বর্তমান যুগে সোস্যাল মিডিয়াগুলোতে সক্রিয় থাকা অত্যন্ত জরুরী। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৬৭,০০০ নতুন ফলোয়ার পেয়ে থাকেন।