![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/saif.jpg?w=1200)
দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর বন্দী থাকার পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফীর ছেলে সাইফ আল-ইসলাম। আর তার মুক্তির পর থেকেই শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। সাইফ এখন কোথায় আছেন? কেমন আছেন? লিবিয়ার রাজনীতিতে তার ভবিষ্যত কী? তিনি কি পারবেন গৃহযুদ্ধে জর্জরিত বিভক্ত লিবিয়াকে একত্রিত করে এর নেতৃত্ব দিতে? চলুন দেখা যাক, আসলেই সাইফের মুক্তি লিবিয়ার ভবিষ্যতের জন্য কেমন তাৎপর্যপূর্ণ।
কে এই সাইফ আল-ইসলাম?
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/saif_al_islam_gadaffi-701x392.jpg)
যুদ্ধের আগে সাইফ আল-ইসলাম; Source: epa.gov
বর্তমানে ৪৫ বছর বয়সী সাইফ আল-ইসলাম লিবীয় নেতা মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফীর দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী সন্তান। ত্রিপলীর আল ফাতাহ ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকৌশলী হিসেবে গ্র্যাজুয়েট করা সাইফ পরবর্তীতে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০১১ সালের বিদ্রোহের আগের শেষ কয়েক বছর তাকেই লিবিয়ার ডিফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী মনে করা হতো, যদিও অফিশিয়ালি তিনি সরকারের কোনো দায়িত্বে ছিলেন না। গাদ্দাফীর পরে তিনিই হবেন লিবিয়ার ভবিষ্যত নেতা- এটাও প্রায় এক রকম নিশ্চিতই ছিল।
সংস্কারপন্থী এবং গণতন্ত্রমনা হিসেবে সাইফের সুপরিচিতি ছিল। বিভিন্ন সময় তিনি লিবিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা এবং গণতন্ত্রায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিল। লিবিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচী বাতিল, লকারবি বিমান হামলা সহ বিভিন্ন হামলার জন্য আমেরিকা এবং ফ্রান্সকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে লিবিয়ার উপর থেকে অবরোধ উঠিয়ে লিবিয়ার সাথে পশ্চিমা বিশ্বের সুসম্পর্ক স্থাপন করার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন সাইফ।
কিভাবে বন্দী হয়েছিলেন সাইফ?
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/Saif-al-Islam1-701x491.jpg)
বিদ্রোহের শুরুতে টিভিতে দেওয়া ভাষণে জনগণকে হুঁশিয়ার করছে সাইফ, Source: doualia.com
২০১১ সালে গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হলে সাইফ আল-ইসলাম পরিপূর্ণভাবে তার বাবার পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি মিডিয়া উঠে আসা নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি বর্ষণের দাবি অস্বীকার করেন। বিদ্রোহ চলতে থাকলে দেশ গোত্রে গোত্রে লড়াই করে হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং বিদেশীরা তেল এবং অর্থের লোভে লিবিয়ায় আগ্রাসন চালাবে বলে হুঁশিয়ারি করেন। তবে পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সময় নির্বাচন এবং সমঝোতার প্রস্তাব দিলেও ন্যাটো এবং বিদ্রোহীরা গাদ্দাফীর পুরো পরিবার ও সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আলোচনায় আগ্রহী না হওয়ায় তার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
২০১১ সালের ২৭শে জুন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তার বিরুদ্ধে বেসামরিক জনগণের উপর গুলি বর্ষণের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়, যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। গাদ্দাফীর মৃত্যুর তিন দিন আগে, ১৭ই অক্টোবরে, বানি ওয়ালিদ শহরের পতনের পর সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ন্যাটো তার কনভয়ের উপর বিমান হামলা করে। এতে তার ডান হাতে আঘাত লাগে।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/saif_al-islam_gadda_202817a-701x394.jpg)
ত্রিপলীর পতনের পূর্বমুহূর্তে ত্রিপলীর প্রাণকেন্দ্রে জনগণের সাথে সাইফ, Source: reuters.com
গাদ্দাফীর মৃত্যুর পর, ১৯শে নভেম্বর, মরুভূমি দিয়ে ছদ্মবেশে নাইজারে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার পথপ্রদর্শকের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে সাইফ বিদ্রোহীদের হাতে গ্রেপ্তার হন। পার্বত্য শহর জিনতানের ‘আবু বকর আল-সিদ্দীক’ নামক ব্রিগেড তাকে গ্রেপ্তার করে। তখন থেকে তিনি জিনতানেই বন্দী ছিলেন।
সাইফের কী বিচার হয়েছিল?
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/21ibya-jumbo-701x501.jpg)
বন্দী হওয়ার পর ওবারী এয়ারপোর্টে আবু বকর সিদ্দীক ব্রিগেডের সদস্যদের সাথে সাইফ, Source: reuters.com
গ্রেপ্তারের পর থেকেই আইসিসি সাইফকে হস্তান্তর করার জন্য লিবিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। কিন্তু জিনতান কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে রাজি না হওয়ায় এবং ত্রিপলীর কেন্দ্রীয় সরকার খুবই দুর্বল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ত্রিপলীর কোর্টে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে সাইফের বিচারকার্য শুরু হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে এবং জিনতান কর্তৃপক্ষের অনিচ্ছায় তাকে ত্রিপলীর আদালতে হাজির করা হয়নি।
২০১৫ সালের ২৮শে জুলাই বিচার শেষ হয় এবং ত্রিপলীর আদালত সাইফের অনুপস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে। তবে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিস (OHCHR), হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) সহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই বিচারকার্যের অস্বচ্ছতার সমালোচনা করেছিল।
সাইফের রায় কেন কার্যকর হয়নি?
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/Gaddafi-701x469.jpg)
বিচার চলাকালে সাইফ, Source: reuters.com
রায়ে সাইফের মৃত্যুদন্ড হলেও সেই সময় ত্রিপলীতে অবস্থিত যে সরকার রায় কার্যকর করার কথা, তাদের আন্তর্জাতিক কোনো সমর্থন ছিল না। ২০১৪ সালেই লিবিয়ার সরকার দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ইসলামপন্থী মিলিশিয়ারা নবনির্বাচিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংসদকে (HOR) ত্রিপলী থেকে উচ্ছেদ করে এবং ২০১২ সালের নির্বাচনে বিজয়ী ইসলামপন্থীদের প্রাধান্যে গঠিত সংসদ (GNC) এবং তার স্যালভেশন সরকারকে ত্রিপলীতে পুনর্বহাল করে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংসদ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে গিয়ে সরকার গঠন করে।
জিনতানের আবুবকর আল-সিদ্দীক ব্রিগেড, যাদের হাতে সাইফ বন্দী ছিলেন, তারা সহ জিনতানের অধিকাংশ মিলিশিয়া পূর্বাঞ্চলের সরকারের সমর্থক। তাই ত্রিপলীর আদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ড হলেও জিনতান কর্তৃপক্ষ সাইফকে ত্রিপলীর সরকারের কাছে হস্তান্তর করেনি।
পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় জাতীয় ঐক্যমতের সরকার (GNA) গঠিত হয় এবং তারা ত্রিপলীতে এসে দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু ত্রিপলীর জিএনসি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একাংশ এবং পূর্বাঞ্চলের এইচওআর সমর্থিত সরকার এই নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। ফলে লিবিয়াতে কার্যত তিনটি সরকার সৃষ্টি হয়। এই বিশৃঙ্খলায় জিনতান সাইফের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজবন্দীকে নিজেদের হাতে রাখাই সমীচীন মনে করে।
সাইফকে কেন মুক্তি দেওয়া হলো?
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/21E8782D-E8C2-4D6E-B959-C834FCB6D1FA_v0_h-701x420.jpg)
বন্দী অবস্থায় প্লেনে করে জিনতানে নেওয়ার সময় সাইফ, Source: reuters.com
লিবিয়ার দুই সরকারের মধ্যে ত্রিপলী ভিত্তিক জিএনসি সরকারের মূল আদর্শ ছিল ইসলামিজম এবং গাদ্দাফী বিরোধী বিপ্লবের চেতনা। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে মূলত সেই সরকারের নিয়ন্ত্রাধীন অংশের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সেনাপ্রধান জেনারেল খলিফা হাফতারের নির্দেশে, যার ইচ্ছা লিবিয়াকে অনেকটা গাদ্দাফীর শাসনের আদলে মিলিটারি শাসনে ফিরিয়ে নেওয়ার। এ ব্যাপারে খলিফা হাফতার এবং তার সরকারের পক্ষে গাদ্দাফী সমর্থকদের সমর্থন আছে। এবং তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য পূর্বাঞ্চলীয় সরকার বিভিন্ন সময়ে সাবেক গাদ্দাফী সরকারের কর্মকর্তা এবং অভিযুক্ত বন্দীদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে মুক্তি দিয়েছে।
সাইফকেও হয়তো সে কারণেই মুক্তি দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে এটাই একমাত্র কারণ না-ও হতে পারে। এক্ষেত্রে বিদেশী কোনো রাষ্ট্রের সাথে কোনো ধরনের সমঝোতা, আর্থিক লেনদেন প্রভৃতিরও ভূমিকা থাকতে পারে।
সাইফ কি আসলেই মুক্তি পেয়েছেন?
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/river-701x457.jpg)
বন্দী অবস্থায় আবু বকর সিদ্দীক ব্রিগেডের প্রধানের সাথে সাইফ, Source: reuters.com
গত বছর জুলাই মাসেও একবার গুজব উঠেছিল, সাইফ আল-ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে সময় কর্তৃপক্ষ এই দাবি নাকচ করে। পরবর্তীতে এ বছরের শুরু থেকেই শোনা যাচ্ছিল, সাইফকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি জিনতানের ভেতরে যেকোনো জায়গায় অবাধে চলাফেরা করতে পারেন, কিন্তু তার নিরাপত্তার স্বার্থেই তার সাথে সার্বক্ষণিক পাহারাদার থাকে।
তবে কয়েক সপ্তাহ আগে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সংসদ সকল গাদ্দাফীপন্থী বন্দীদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে তাদেরকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানোর পরপরই গত ৯ জুন, শুক্রবার জিনতানের আবু বকর সিদ্দিক ব্রিগেড এক বিবৃতিতে জানায় যে, তারা সাইফ আল-ইসলামকে ছেড়ে দিয়েছে এবং তিনি জিনতান ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন। এর পরপরই সাইফের মুক্তির সংবাদটা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে এখানে উল্লেখ্য যে, গত তিন বছর ধরে এখন পর্যন্ত মুক্ত বা বন্দী সাইফের কোনো ছবি, ভিডিও বা অডিও প্রকাশিত হয়নি। এমনকি কোনো নিরপেক্ষ ব্যক্তি সাইফকে দেখেছে বলেও দাবি করেনি। তাই কোনো প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না, আসলে সাইফের ভাগ্যে কী ঘটেছে।
মুক্তি পেয়ে থাকলে সাইফ এখন কোথায় আছে?
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/maxresdefault20-701x394.jpg)
বন্দী অবস্থায় মানবাধিকার কর্মীদের সাথে সাক্ষাত্কালে সাইফ, Source: YouTube
অনেকেই ধারণা করছে, মুক্তি পেলে সাইফ হয়তো পূর্বাঞ্চলীয় শহর আল-বেইদাতে যেতে পারেন, যেখানে তার মা অবস্থান করছেন। এছাড়াও পূর্বাঞ্চলের জনগণের একটি বড় অংশ এবং রাজনীতিবিদদের একাংশও তার পক্ষে আছেন। আবার কারো কারো ধারণা, তার পক্ষে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়াটাই সবচেয়ে বেশি যৌক্তিক, কারণ সেখানে তার সমর্থন সবচেয়ে বেশি।
অনেকে আবার ধারণা করছে, তিনি হয়তো স্বদেশ ছেড়ে অন্য কোনো দেশেও আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তার সুযোগ সীমিত, যেহেতু তার নামে এখনও আইসিসির ওয়ারেন্ট জারি আছে। সেক্ষেত্রে তিনি ইউরোপের কোনো দেশে না গিয়ে হয়তো মিসর, সুদান অথবা অন্য কোনো আফ্রিকান দেশে আশ্রয় নিতে পারেন।
মুক্ত সাইফ লিবিয়াতে কতটুকু নিরাপদ?
মোটেও নিরাপদ না। সাইফের বিপক্ষে যারা ছিল, যাদের আত্মীয়-স্বজন সাইফের বাবার বাহিনীর সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছিল, তারা সুযোগ পেলেই প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে জেনারেল হাফতারকে সাইফের পক্ষে মনে হতে পারে, কিন্তু ২০১১ সালে হাফতারও গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তাছাড়া হাফতার যদি নিজেই ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করতে চান, তাহলে সাইফ হবেন তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। সেক্ষেত্রে সাইফের সমর্থকরা হাফতারের জন্য প্রয়োজনীয় হবে, কিন্তু সাইফকে তার প্রয়োজন হবে না। তাই ওদিক থেকেও তিনি গুপ্ত আক্রমণের শিকার হতে পারেন রাজনৈতিক দোষারোপের খেলার অংশ হিসেবে।
লিবিয়াতে সাইফের জনপ্রিয়তা কতটুকু?
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/saif2-701x395.jpg)
যুদ্ধের পূর্বে সাইফ, Source: epa.gpv
এর উত্তরটা জটিল। ২০১১ সালে যারা গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে করেছে, যাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ মারা গেছে, তারা কখনোই চাইবে না সাইফ মুক্তভাবে লিবিয়াতে বিচরণ করুক, বা সাইফ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসুক। কিন্তু এর বাইরে লিবিয়াতে গাদ্দাফীর বিপুল সংখ্যক সমর্থক আছে, যারা সাইফের পক্ষে। তাছাড়া লিবিয়ানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা সংখ্যা আছে, যারা ২০১১ সালে মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এবং গণতন্ত্রের আশায় গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু গত ছয় বছরে লিবিয়ার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় হতাশ হয়ে গাদ্দাফীর শাসনামলকেই ভালো বলে মেনে নিচ্ছে। তারাও এখন সাইফের পক্ষে সমর্থন দিতে পারে।
লিবিয়ার রাজনীতিতে সাইফের ভবিষ্যত কতটুকু?
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/anp-19258494-701x493.jpg)
যুদ্ধের আগে সাইফ, Source: epa.gov
জনগণের মধ্যে সাইফের জনপ্রিয়তা থাকলেও কেবলমাত্র যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় এবং সে নির্বাচনে সাইফকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়, তাহলেই তিনি এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। কিন্তু আপাতত নির্বাচন হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই এবং হলেও যারা ক্ষমতায় আছে, তারা এবং সশস্ত্র মিলিশিয়ারা কখনোই চাইবে না সাইফ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে তাদের ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হোক। তাছাড়া আইনী জটিলতাও এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সাইফের মৃত্যুদন্ড ঘোষিত হয়েছে ত্রিপলীর সরকারের অধীনস্থ আদালতে। কিন্তু তাকে ক্ষমা করেছে পূর্বাঞ্চলীয় সরকার, যাদের এই মুহূর্তে কোনো আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, সাইফের পক্ষে কি সরাসরি জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে জনগণকে অনুপ্রাণিত করে আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা সম্ভব? সম্ভবত না। কারণ মিলিশিয়াদের অস্ত্রের কাছে জনগণ জিম্মি। এত বড় ঝুঁকি নিয়ে কেউ রাস্তায় নামার সাহস পাবে না।
তাছাড়া সাইফ জনপ্রিয় হলেও তিনি এসে ম্যাজিকের মতো সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন- এরকম বিশ্বাস খুব কম মানুষেরই আছে। গাদ্দাফীর অনেক ভক্তও লিবিয়ার বর্তমান সমস্যাকে সাইফের অদূরদর্শিতার ফসল হিসেবে দেখে। কারণ এই সাইফ আল-ইসলামই কাতারের মধ্যস্থতায় আল-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন চরমপন্থী গ্রুপ এবং ব্যক্তিকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে জেল থেকে মুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ২০১১ সালে বিদ্রোহের পরপরই এরাই কাতারের কাছ থেকে অর্থ এবং অস্ত্র সাহায্য নিয়ে গাদ্দাফীর পতন নিশ্চিত করেছিল।
এসব কারণে বলা যায়, সাইফ যদি বেঁচে থাকেন, তাহলে লিবিয়াতে তার ভবিষ্যত অনস্বীকার্য। কিন্তু সেটা এখনই নয়। তার জন্য আরও অনেক লম্বা সময়, প্রস্তুতি, আন্তর্জাতিক সমর্থন, অভ্যন্তরীন রাজনীতিবিদদের সাথে সমঝোতা প্রয়োজন। সবকিছু যদি পক্ষে থাকে এবং সাইফ যদি তার বাবার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং তার প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন, তাহলে একটা সময় পরে হয়তো তিনিই পারবেন লিবিয়াকে একত্রিত করে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে। কিন্তু আপাতত নিকট ভবিষ্যতে রাতারাতি সেরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা নাই। বরং এই মুহূর্তে তার আগমন রাজনীতির ময়দানে সমাধানের চেয়ে সমস্যাই বেশি তৈরি করবে। নেতৃত্ব দেওয়ার পরিবর্তে তিনি হয়তো হয়ে উঠবে আর দশজন মিলিশিয়া লীডারের মতোই জটিল রাজনীতির ময়দানের নতুন এক খেলোয়াড়।