
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পশ্চিমে এক ভয়াবহ বোমা হামলায় প্রায় ৪০ মানুষ নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন। সরকারী কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া জবানবন্দী থেকে জানা গেছে, আজ সকালে আফগান ভয়েস নিউজ এজেন্সি ও কাছাকাছি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলাকারীর শরীরে লুকিয়ে রাখা বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। আক্রমণের পরে নিরাপত্তা বাহিনী এলাকাতে সকল প্রকারের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া ছবি থেকে জানা গেছে, বিস্ফোরণের ফলে ঘটনাস্থলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং সেখানে বেশ কিছু লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঘটনাস্থলের ছবি; Source: AFP
আল জাজিরার সাংবাদিক আব্দুল্লাহ শাহুদ কাবুল থেকে এক প্রতিবেদনে বলেছেন, “শিয়া আফগানদের একটি সাংস্কৃতিক সংস্থার উপর এই আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে, যার ফলে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। গুরুতর আহত মানুষদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় অনেক মানুষই রক্তদান করতে এগিয়ে এসেছেন।”
আফগানিস্থানের রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানি এই আক্রমণকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি তার দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সন্ত্রাসীরা আমাদের মসজিদ, আমাদের পবিত্র স্থান এবং এখন আমাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আক্রমণ করছে।”

সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর এক আফগান নাগরিক সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন © Shah Marai
উপরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসরাত রাহিমি এএফপিকে জানিয়েছেন, হামলার মূল লক্ষ্য ছিল তাবায়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের ৩৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে শিয়া সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। সেখানে শিয়া সম্প্রদায়ের বেশ ক’জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে শিয়া মুসলিমরা বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় বিবিসিকে জানায়, সেই বিস্ফোরণের পর একই এলাকাতে আরও দুটি বিস্ফোরণ ঘটে।
আইএস এই বোমাহামলার দায় স্বীকার করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইএস আফগানিস্তান জুড়ে শিয়াদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর বেশ কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে। অন্যদিকে তালেবানরা আগেই এক বিবৃতিতে জানায়, এই বোমা হামলার পেছনে তাদের কোনো হাত নেই।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতের সখ্যা ছিল ৪০ জন। তবে কাবুলের হাসপাতালের পরিচালক জানান, নিহতদের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আফগানিস্তানে বোমা হামলার সংখ্যা বেড়েছে।
- গত মে মাসে আইএসআইএল জালালাবাদের এক টেলিভিশন ভবন লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যার ফলে ছয়জন মানুষ মারা যায়।
- পরে ৩১ তারিখে, কূটনৈতিক জেলার কাছাকাছি একটি ট্রাক বোমা বিস্ফোরিত হলে ১৫০ জন মানুষ নিহত হন। কারা এই হামলার পিছনে ছিল, এখনও সে ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
- অক্টোবর মাসে সংখ্যালঘু শিয়া মুসলমানদের একটি মসজিদে আক্রমণে অন্তত ৩৯ জন নিহত হন।
- নভেম্বরে শামসাদ টিভি নামের একটি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনে আইএসআইএল যোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য নিহত হন।
ফিচার ফটো © Rahmat Gul