গ্রিন হাউজ ইফেক্ট, বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি কিংবা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া শব্দগুলোর সাথে সবাই আমরা কমবেশি পরিচিত। পাঠ্যবই, পত্রিকা, ম্যাগাজিনে এ নিয়ে প্রচুর লেখালেখির বদৌলতে এতটুকু আমরা জানি, এগুলো সবই পরিবেশ বিপর্যয়ের নেতিবাচক প্রভাব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই। আমরা নির্দ্বিধায় ভবিষ্যত প্রজন্মকে রেখে যাচ্ছি এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের সামনে।
জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার মতো পরিবেশ রক্ষায় রয়েছে বিশেষ সংস্থা ‘United Nations Framework Convention on Climate Change (UNFCCC)‘- যা ১৯৯২ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে পরিবেশ রক্ষায়। নিয়মিত বিরতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সংস্থার বিশ্বসম্মেলন। ২০১৮ সালে পোল্যান্ডের কেটওয়াইস এ অনুষ্ঠিত হলো এর সর্বশেষ সম্মেলন ‘COP24’। এই সম্মেলন কতটুকু সফল কিংবা ব্যর্থ তা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। যদিও আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক বছর এর সদুত্তর পাওয়ার জন্য।
জলবায়ু পরিবর্তন ও এর নেতিবাচক প্রভাব
পৃথিবীর জলবায়ু সর্বদাই পরিবর্তনশীল। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত তা গ্রহণযোগ্য। যদি এই পরিবর্তনের মাত্রা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে হয় এবং যার ফলে নষ্ট হয় প্রকৃতির সাম্যবস্থা, তবেই তাকে জলবায়ুর পরিবর্তন হিসেবে গণ্য করা হয়। এই পরিবর্তনের পেছনে যতটা না প্রকৃতি নিজে দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী মানব সৃষ্ট কর্মকান্ড। জাতিসংঘের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে মানুষই দায়ী।
শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তির কল্যাণে জীবন সহজতর ও আধুনিক হলেও প্রকৃতিকে দিতে হয়েছে চড়া মূল্য। কলকারখানা কিংবা গাড়ির কালো ধোয়া, নির্গত বজ্র পদার্থ, কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি কিংবা ব্যাপকহারে বৃক্ষ নিধন বাতাসে বাড়িয়ে দিয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসের মাত্রা। বায়ুমণ্ডলে মাত্রাতিরিক্ত গ্যাসের কারণে সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া যা ‘গ্রিন হাউজ ইফেক্ট’ নামে পরিচিত। শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময় হতে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিনগুণ।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি হতে মানুষ প্রথম জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব অনুধাবন করতে পারে। বাড়তে থাকে প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতা। আর বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জলবায়ু পরিবর্তন। ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা। এ পর্যন্ত পৃথিবীর উষ্ণতম বছরগুলোর বেশিরভাগই ছিল বিগত দুই দশকে। ২০১৮ সালের প্রথম দশ মাসের গড় তাপমাত্রা তুলনামূলভাবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ছিল, যা ১৮৫০-১৯০০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকে প্রায় ০.৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
একই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ৩-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে বেড়ে চলছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, টর্নেডো কিংবা তাপদাহের মতো দুর্যোগের প্রবণতা। বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। ২১০০ সালের মধ্যে এই উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে ১-৪ ফুট। বিপদজ্জনকভাবে গলে যাচ্ছে আর্কটিক মহাসাগরের বরফ। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রীষ্মে বরফশূন্য আর্কটিক মহাসাগর দেখা যেতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে মানুষের অবহেলার কারণে সৃষ্ট এই বিপর্যয়ের কারণে ইতোমধ্যেই অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। দীর্ঘমেয়াদে সচেতন না হলে এর প্রভাব পড়বে সবক্ষেত্রে – মানুষের জীবনযাত্রায়, ফসল উৎপাদন কিংবা স্বাভাবিক ঋতুচক্রে। মোটকথা, আমাদের পৃথিবী দাঁড়িয়ে আছে এক বিস্ফোরণোন্মুখ অগ্ন্যুৎপাতের সামনে।
প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন (২০১৫)
জলবায়ুর এই বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় জাতিসংঘ ১৯৯২ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠা করে ‘United Nations Framework Convention on Climate Change (UNFCCC)‘ নামে একটি অঙ্গ সংগঠন। সংগঠনটি প্রতি বছর বিশ্বনেতাদের নিয়ে আয়োজন করে চলছে ‘বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন’। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করা ছিল এর মূল লক্ষ্য।
‘কিয়োটো প্রোটোকল’ এর মাধ্যমে সূচিত হয় প্রথম বড় ধরনের পরিবর্তন। সাময়িক সাফল্য এলেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল এই সংগঠনটি। শীর্ষস্থানীয় কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পোন্নত দেশসমূহের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে কোনো ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছিলো না।
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর প্রথম সুখবর আসে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন COP21 এ। পাশ হয় বহুল প্রতীক্ষিত চুক্তি যা পরিচিত ‘প্যারিস এগ্রিমেন্ট’ নামে। ১৯৫টি দেশ স্বাক্ষর করে এই চুক্তিতে। এর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক শিল্পযুগের গড় তাপমাত্রা থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে রাখা এবং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
এছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় এই চুক্তিতে। পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমানোর জন্য অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয় এই চুক্তিতে। সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, ২০২০ সাল হতে কার্যকর হবে চুক্তিটি।
কেটওয়াইস জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (২০১৮)
প্যারিস সম্মেলনের পর কিছুটা ধীরগতি তৈরি হয় ‘প্যারিস এগ্রিমেন্ট ‘ বাস্তবায়নের ক্ষেত্র। পরবর্তী দুই সম্মেলনে বিশ্বনেতারা কোনো সঠিক দিকনির্দেশনা তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। আরও অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে ‘প্যারিস এগ্রিমেন্ট ‘ থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর দাবি করে ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে সরে আসেন।
ইউরোপের বেশ কিছু দেশ এই চুক্তি বাস্তবায়নে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করলেও যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া সহ বেশ কিছু দেশের সদিচ্ছার অভাবে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছিল আদৌ এই চুক্তি আলোর মুখ দেখতে পারবে কিনা। এমনি এক ধোঁয়াশা পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর এ পোল্যান্ডের কেটওয়াইস এ বসে ২৪তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন- COP24 ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় চীন সামনে এগিয়ে আসে ‘প্যারিস এগ্রিমেন্ট’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। সম্মেলনের ঠিক আগমুহূর্তে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এক রিপোর্টে উল্লেখ করে, ২০১৭ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ছিল ৪৫০ পিপিএম, যা পৃথিবীর বিগত ৫০ লক্ষ্ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আইপিপিসির (Intergovernmental Panel on Climate Change) আরেক রিপোর্টে বলা হয়, পৃথিবীর বিপর্যয় রক্ষার্থে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি অবশ্যই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হবে।
এই রিপোর্টগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি কার্যকরী রূপকল্পের প্রয়োজনীয়তা আবারো সকলের সামনে তুলে ধরে। দুর্ভাগ্যবশত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সৌদি আরবের মতো দেশগুলো এই রিপোর্টের সাথে দ্বিমত পোষণ করে। কিন্তু এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীনের ভূমিকা ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়। বিগত বছরগুলোতে চীন তাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমিয়ে এনেছিল। কেটওয়াইস সম্মেলনেও তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিল। সম্মেলনের শুরুতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতারেস এক ভাষণে বলেন ,
আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা এই সুযোগ নষ্ট করলে জলবায়ু পরিবর্তনের শেষ আশাটুকু হারিয়ে ফেলবো। এটা শুধু অনৈতিক না, বরং আত্মহত্যার শামিল।
সম্মেলনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হয়ে দাড়ায়, সর্বসম্মতিক্রমে একটি দিকনির্দেশনা এবং কর্মপন্থা তৈরী করা যা ঠিক করবে ২০২০ সালে কার্যকর হতে যাওয়া ‘প্যারিস এগ্রিমেন্ট’ কিভাবে বাস্তবায়িত হবে। দুই সপ্তাহ ব্যাপী এই সম্মেলন একের পর এক আলোচনা, পর্যালোচনা, বিতর্ক চলতে থাকে ঐক্যমতে আসার জন্য। শিল্পোন্নত অনেক দেশের জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আর্থিক ক্ষতি মেনে নিতে অপারগতা, পৃথিবীর নামিদামি অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরোক্ষ ইন্ধন প্রভৃতি কারণে বিলম্বিত হচ্ছিল একটি সর্বজনগৃহীত প্রস্তাব গ্রহণে।
অবশেষে সকল আশংকার অবসান ঘটিয়ে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ একটি কর্মপরিকল্পনা বা রূপরেখা মিলিতভাবে পাশ করতে সক্ষম হয়। সিদ্ধান্ত হয়, এই পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করেই বাস্তবায়ন করা হবে ২০২০ সালে ‘প্যারিস এগ্রিমেন্ট’। এই পরিকল্পনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো ছিল অংশগ্রহণকারী দেশগুলো কিভাবে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করবে সেই কৌশল প্রণয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং নিয়মিতভাবে প্রত্যেকটি দেশ স্বীয় অগ্রগতি পর্যালোচনা ইত্যাদি। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোকে এক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এই প্রস্তাবে।
এই সাফল্যের পর সম্মেলনের সভাপতি মিচেল কুর্তিকা বলেন,
প্যারিস এগ্রিমেন্ট এর ব্যাপারে সবাইকে একসাথে করা ছিল এক বিরাট দায়িত্ব। সামনে অনেক পথ বাকি। আমরা কাউকে পেছনে ফেলে আসতে চাইনি।
এছাড়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসে এই সম্মেলন থেকে –
- পোলিশ রাষ্ট্রপতি জলবায়ু রক্ষায় বনভূমির অবদানের কথা উল্লেখ করে ‘জলবায়ুর জন্য বনভূমি’ নামে নতুন নীতি ঘোষণা করেন
- জার্মানি ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ এর জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলার প্রদান করে এবং নরওয়ে ৫১৬ মিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে
- বিশ্বব্যাংক ২০২১-২০২৫ সাল নাগাদ জলবায়ু রক্ষায় ২০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকার করে
- যুক্তরাজ্য আফ্রিকায় নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে ১০০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের ঘোষণা দেয়
এভাবে, শিল্পোন্নত দেশগুলো আশাব্যাঞ্জক আরো অনেক প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।
কেটওয়াইস সম্মেলনের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা
আপাতদৃষ্টিতে কেটওয়াইস সম্মেলনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য পূরণ হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর সফলতা নির্ভর করবে অনেকগুলো বিষয়ের উপর। তাই এখনই এই সম্মেলনকে সফল কিংবা ব্যর্থ হিসেবে না ধরে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো বেশ কয়েক বছর। তাছাড়া জলবায়ু সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে দেশগুলো কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করবে, ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে আর্থিক সাহায্যের পদ্ধতি কিংবা সদস্য দেশ তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে ইত্যাদি।
এছাড়া অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিটি দেশকে জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরাদ্দ রাখতে হবে প্রতি বছর। ধনী দেশগুলো এক্ষেত্রে কী পরিমাণ ছাড় দিতে রাজি হবে সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর্থিক কিংবা রাজনৈতিক কারণে সেক্ষেত্রে কোনো দেশ যদি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো চুক্তি থেকে সরে আসে তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
আশার কথা, কেটওয়াইস সম্মেলনের গৃহীত পরিকল্পনা বিশ্ব নেতাদের একই মঞ্চে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। দিয়েছে ২০২০ সালে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া ‘প্যারিস এগ্রিমেন্ট ‘ সম্পর্কে একটু স্বচ্ছ ধারণা। এই চুক্তির অন্যতম রূপকার লরেন্স তৌবিয়ানার ভাষায় ,
আমি খুশি যে, কেউই এখন বলতে পারবে না, আমাকে কী করতে হবে সে সম্পর্কে আমি জানি না এবং এটা এখন আর সত্য নয়। এই বিষয়টি এখন খুবই পরিষ্কার।
তিনি আরো বলেন,
রাশিয়ার মতো দেশ যারা চুক্তিটি স্বচ্ছ না এই অজুহাতে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত ছিল তারা আর এই অজুহাত দিতে পারবে না।
সবথেকে বড় সফলতা সকল বিশ্বনেতাদের জলবায়ু রক্ষায় ঐক্যমত প্রকাশ এবং আগামী প্রজন্মকে একটি নিরাপদ পৃথিবী উপহার দেওয়ার জন্য একযোগে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করা। এই বিষয়ে স্প্যানিশ বাস্তুসংস্থান মন্ত্রী তেরেসা রিবেরার মন্তব্যটি ছিল চমকপ্রদ ,
এটা সহজ ছিল না। এটা অনেকটা ২০০ জন বন্ধু নিয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার মতো যেখানে শুধুমাত্র একটি মেন্যু থাকবে সবার খাবার জন্য। এটা সহজ ছিল না কিন্তু আমরা পেরেছি। বিষয়টা সত্যি অসাধারণ।
যদিও, প্রথম থেকেই অনেক পরিবেশবাদী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করে আসছিলো এ ধরণের চুক্তির। তাদের দাবি, যতদিন পর্যন্ত দেশগুলো নিজেদের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থে কিছুটা ছাড় দিতে রাজি হবে না, ততদিন পর্যন্ত এই ধরণের চুক্তি বা পদক্ষেপ কোনো সুফল বয়ে আনবে না। তাই অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন, বাস্তবে এই সম্মেলন এবং এর গৃহীত প্রস্তাব কতটা সুফল বয়ে আনবে আগামীর পৃথিবীর জন্য।
ইতোমধ্যে চলে গেছে অনেকটা সময়। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি বিগত বছরগুলোতে। ফলে, জলবায়ুর যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে যা আর পূরণ করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রগুলোর সম্প্রতি একযোগে জলবায়ু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা নতুন করে আশাবাদী করে তুলেছে আমাদের।
‘প্যারিস এগ্রিমেন্ট’ এবং এর সাথে গৃহীত প্রস্তাবগুলো সামনের দিনগুলোতে পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে দাঁড়াবে, সেই স্বপ্ন দেখি আমরা। অনেক বিতর্ক থাকতে পারে এ চুক্তি নিয়ে, তবু মন্দের ভালো হিসেবে এটা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। নাহলে আগামী প্রজন্মের কাছে দায়ী হয়ে থাকবো আমরা। একটি সুন্দর সবুজ পৃথিবীর প্রত্যাশায় আমরা সবাই।