- সিরিয়াতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর হামলায় সিরীয়ার সরকার সমর্থিত বাহিনীর শতাধিক যোদ্ধা নিহত হয়েছে। এক বিবৃতির মাধ্যমে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে।
- গতকাল বুধবার গভীর রাতে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেইর আজ্জুর প্রদেশে এ ঘটনা ঘটে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
- প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী কুর্দি নেতৃত্বাধীন এলাকা দেইর আজ্জুরে আক্রমণ করলে সে আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে যৌথ বাহিনী এ হামলা চালায়।
- মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর সাথে সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং সরকার সমর্থিত মিলিশিয়াদের এর আগেও সংঘর্ষ হয়েছিল। তবে এটি মার্কিন আক্রমণে সিরীয় বাহিনীর হতাহতের সবচেয়ে বড় ঘটনা।
US-led coalition launches air and artillery strikes in Syria, killing more than 100 pro-Assad regime fighters https://t.co/H0T7RJfMZK
— CNN International (@cnni) February 8, 2018
মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার রাতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সমর্থিত বাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দেইর আজ্জুরে মার্কিন মিত্র বাহিনী, কুর্দি ও আরব জোটের সমন্বয়ে গঠিত এসডিএফের (সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস) উপর ‘প্ররোচনাবিহীন’ আত্রমণ চালায়। তাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্যই পাল্টা বিমান হামলা এবং কামানের গোলা নিক্ষেপ করে যৌথবাহিনী।
যৌথবাহিনীর এক কর্মকর্তা দাবি করেন, তারা এই আক্রমণ চালিয়েছিলেন ‘আত্মরক্ষার জন্য’। সরকারপন্থী যেসব যোদ্ধা নদীর অন্য তীরে ফিরে গিয়েছিল, তাদের উপর আক্রমণ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, যৌথবাহিনীর ধারণা, সরকারপন্থী বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল এলাকাটিতে অবস্থিত তেলক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। উল্লেখ্য, ‘ওমর’ তেলক্ষেত্রটি ২০১৪ সাল থেকেই জঙ্গী সংগঠন আইএসের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এরপর গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন সমর্থিত কুর্দি ও আরব জোট এসডিএফ আইএসকে পরাজিত করে তেলক্ষেত্র সহ পুরো এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আক্রমণটি করা হয়েছে মধ্য ইউফ্রেটিস উপত্যকার নিকটবর্তী খুশাম গ্রামে। গ্রামটির অবস্থান রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সমঝোতা হওয়া সীমানার চেয়েও ৮ কিলোমিটার পূর্ব দিকে, যা মার্কিন সমর্থিত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, সিরীয় সরকারের ৫০০ যোদ্ধা ট্যাংক, আরপিজি নিয়ে এসডিএফ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আক্রমণ করে। কিন্তু পাল্টা আক্রমণে তাদের প্রায় ১০০ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। বিপরীত দিকে কেবলমাত্র একজন এসডিএফ যোদ্ধা সামান্য আহত হয়েছে। এর বাইরে মার্কিন বা এসডিএফ বাহিনীর কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
অন্যদিকে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম সানা (SANA) এই আক্রমণকে ‘আগ্রাসন’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী এ হামলা ছিল যৌথ বাহিনী কর্তৃক স্থানীয় জনগণের উপর আগ্রাসন, যারা জঙ্গী সংগঠন আইএস এবং মার্কিন মদদপুষ্ট এসডিএফ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। হতাহতের সংখ্যা উল্লেখ না করে সানা জানায়, এ হামলায় বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছে এবং এতে এলাকার বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
The US says it has launched strikes against pro-Syrian government forces in eastern Syria after an “unprovoked attack” on the HQ of its partnered SDF forces there. pic.twitter.com/hNyAOVv4Fr
— Louisa Loveluck (@leloveluck) February 8, 2018
লন্ডন ভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ এর পক্ষ থেকেও এ আক্রমণের সংবাদ দেওয়া হয়েছে। তবে তারা নিহতের সংখ্যা মাত্র ২০ বলে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটির প্রধান রামি আব্দেল রহমান জানান, সরকার সমর্থিত বাহিনী প্রথমে এসডিএফের উপর আক্রমণ করলে এসডিএফ পাল্টা আক্রমণ করে এবং পরবর্তীতে যৌথবাহিনী তাদের সাথে যোগ দেয়।
উল্লেখ্য, সিরিয়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২,০০০ সৈন্য আছে, যাদের অধিকাংশই ৫০,০০০ সদস্য বিশিষ্ট কুর্দি-আরব জোট সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স তথা এসডিএফকে সহযোগিতা করছে। এসডিএফ গত বছর আইএস বিরোধী যুদ্ধে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। তারা আইএসের তথাকথিত রাজধানী রাক্বাও আইএসের হাত থেকে মুক্ত করে। সিরিয়ার সরকার সমর্থিত বাহিনীর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সংঘর্ষ এবারই প্রথম না। এর আগেও একাধিকবার আসাদ বাহিনীর উপর আক্রমণ করেছিল। গত বছর জুন মাসে সিরিয়ার একটি এসইউ-২২ যুদ্ধ বিমানও বিধ্বস্ত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী।
ফিচার ইমেজ- STRINGER/ AFP