Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের নভেম্বরের সেরা ছবিগুলো

এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিকের আইসল্যান্ডের নীলাভ হিমবাহের প্রেমে হেঁটে চলা; অথবা বাকি বিশ্ব থেকে আপাত বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়ার ‘রহস্যময়’ রাজধানীর এক কুয়াশাচ্ছন্ন লালাভ সকাল। প্রায় ৫ হাজার মিটারের বরফাচ্ছাদিত উঁচু পাহাড়ের অমসৃণ চূড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অবাধ্য এক পাহাড়প্রেমী কিংবা দৈনিকের রুটিনমাফিক কম্যুটার ট্রেনের জন্য সমতল প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত কিছু মানুষ। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন হাজারো-লাখো চলমান গল্পকে নিশ্চল ফ্রেমে বন্দী করে রাখেন কিছু ‘পাগলাটে’ ফটোগ্রাফার। গত নভেম্বর মাসে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের বাছাই করা এরকম দশটি ছবি ও ক্যামেরার পিছনে থাকা কারিগরদের নিয়ে আজকের এই লেখা

আইসল্যান্ডের ওয়াটার গ্লেসিয়ার

আইসল্যান্ডের হিমবাহ সকাশে বরফের এক ‘নীলাকাশে’ © HONG JEN CHIANG

ইংরেজিতে বলা হয় ওয়াটার গ্লেসিয়ার, যাকে আইরিশরা ডাকে Vatnajökull নামে। প্রায় হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে অবস্থিত আইসল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হিমবাহ এটি। আইসল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই হিমবাহ গেম অব থ্রোনসের দ্বিতীয় সিজনের অন্যতম একটি শুটিং স্পট ছিল। ফটোগ্রাফার হং জেন শিয়াং তার সনি ILCE-7RM2 ক্যামেরায় ছবিটি তুলেছিলেন।

লেক বগোরিয়ার পর্যটকেরা

বগোরিয়ার মৌসুমি পর্যটকেরা © TEONG LIN NG

ফি বছর আগস্ট ও অক্টোবরের শুরুতে কেনিয়ার লেক বগোরিয়াতে ঘুরতে আসে লাখ লাখ পর্যটক। তারা এখানে থাকে পরবর্তী বর্ষা পর্যন্ত। কিন্তু এই পর্যটকেরা কেউই মানুষ না; এরা সবাই পাটল বর্ণের ফ্লেমিংগোর পাল। প্রতি বছর আগস্ট-অক্টোবরের এই সময়ে কেনিয়ার লেক বগোরিয়ার নিম্নভূমির এই সমাবেশ পরিণত হয় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ লেসার ফ্লেমিংগোর ঝাঁকে। ফটোগ্রাফার তেয়োং লিন ক্যাননের EOS 5DS R ক্যামেরায় এই ছবিটি ধারণ করেন ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট কেনিয়ার লেক বগোরিয়া থেকে।

পিয়ং ইয়ংয়ের নিষিদ্ধ সকাল

উত্তরের ‘নিষিদ্ধ’ সকাল © REUBEN TEO

ফটোগ্রাফার রিউবেন তেউ সাহসী না দুঃসাহসী, এটা নিয়েই আলোচনা হতে পারে এখানে। জিপিএস ট্র্যাকার, স্যাটেলাইট ফোনের পাশাপাশি ১৫০ মিলিমিটারের বেশি ফোকাল লেংথের ক্যামেরার লেন্স নিয়ে যে দেশে প্রবেশ নিষেধ, এটি সেই উত্তর কোরিয়ার রাজধানীর এক প্রশান্ত সকাল। অক্টোবরের এক স্নিগ্ধ সকালে প্রাত্যহিক সূর্যের লাল রং তায়েডং নদীকে রাঙিয়ে দেওয়ার মুহূর্তে রিউবেন তার জানালা থেকে ছবিটি তোলেন। শত-সহস্র নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ উত্তর কোরিয়ার এই অসাধারণ সুন্দর পরাবাস্তব সকালটিকে নাইকনের D800 ক্যামেরায় ধারণ করেন ফটোগ্রাফার রিউবেন তেউ

সুইস সুউচ্চের অমসৃণতায়

সুইস আল্পসের মোহনীয় মায়ায় © Ben Tibbetts

সুইজারল্যান্ডের ভ্যালাইস ক্যান্টনে অবস্থিত তাশহর্ন পর্বতটি পেনিন আল্পস পর্বতশ্রেণীর অন্যতম। ফটোগ্রাফার বেন টিবেটস একদল সাহসী পর্বতারোহীদের সাথে রওয়ানা হন ১৪ হাজার ৭৩৪ ফুট উঁচু সুইস আল্পসের তাশহর্ন পর্বতের সাথে বন্ধুতা করার মানসে। টিবেটস এই ছবিটি তোলেন যখন তারই এক সহযাত্রী টম কনি তুষারাবৃত তাশহর্নের চূড়ায় আরোহণ করেন

তানজানিয়ার হারিয়ে যাওয়া হাই

হারিয়ে যাচ্ছে চিতা, হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষিপ্রতা © Mohammed AlNaser

সকাল হয়েছে আফ্রিকায়। হাই তুলে যখন দিনের শুরু করছে তানজানিয়ার এই ‘মহামান্য’ চিতাটি, ঠিক সেই সময় মহাম্মেদ আল নাসের তার নাইকন D5 দিয়ে অতি দ্রুততার সাথে ছবিটি তুলে ফেলেন। দেখে মনে হবে যে, কোনো মজার কৌতুক শুনে হাসছে সে; কিন্তু এনডুটুর এই চিতাদের মুখে পারতপক্ষে হাসি নেই। চোরা শিকারিদের খপ্পরে পড়া আর ক্রমাগত বাসস্থান হারানোর কারণে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে তানজানিয়ার চিতারা।

স্প্যানিশ উপকূলের প্রস্তর সমাবেশ

এমন কঠিন আবরণ লুকিয়ে রেখেছে প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছরের পুরনো ইতিহাসকে © Fran Llano

পাথরের প্রতিটি ভাঁজে, সূক্ষ্ম খাঁজে যেন লুকিয়ে আছে সহস্র বছরের সুপ্ত জ্ঞান। উত্তর স্পেনের বাস্ক উপকূল দিয়ে হেঁটে গেলে চোখে পড়বে খাঁজে খাঁজে সজ্জিত এই পাথুরে সমাবেশ। ধাপে ধাপে সেজে থাকা এই পাথরগুলো যেন একেকটা কোটি বছরের পুরাতন বই। স্প্যানিশ ফটোগ্রাফার ফ্রান লানো তার ক্যাননের EOS 6D দিয়ে বেশ ধৈর্য নিয়ে ছবিটি তুলেছেন ২০১৭ সালের এক বসন্ত বেলায়।

সাতটা সাইত্রিশের নেদারল্যান্ড

অপেক্ষার প্রত্যূষে © Takeshi Ishizaki

নেদারল্যান্ডের দক্ষিণের এক প্রদেশ উত্তর ব্যাবন্ত। এখানেও হয় দিন-রাতের আনাগোনা; দিনের প্রারম্ভে ঘুম ভাঙে মানুষের। বেরিয়ে পড়ে তারা বেঁচে থাকার তাগিদে, মিশে যায় জীবন স্রোতে। ফটোগ্রাফার তাকেশি ইশিযাকির এই ছবিটি কর্মব্যস্ত মানুষের এক মুহূর্তের অপেক্ষার প্রতিচ্ছবি যেন। ছবিটি যখন তোলা হয়েছিল, তখন ইশিযাকির ঘড়িতে বাজে সকাল সাতটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট। কুয়াশা ভেদ করে মানুষেরা আসছিল; কিছুক্ষণের দাঁড়িয়ে থাকা আর তারপর প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ানো ট্রেনে করে হারিয়ে যাওয়া সেই কুয়াশার চাদরে। মানুষের এই আগমন-অপেক্ষা-প্রস্থানের রহস্যময় গতিশীল চক্রের স্থির উপস্থাপনের এই ছবিটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন তাদের নভেম্বর এপিসোডে নির্বাচিত করে।

মাসাই মারার দ্য গ্রেট মাইগ্রেশন

ছুটে চলেছে জলের পানে © Jonas Stenqvist

মনে আছে ডেভিড অ্যাটেনবরোর উপস্থাপনায় বিবিসিতে প্রচারিত Nature’s Great Events সিরিজটির কথা? ছয়টি পর্বে সাজানো এই সাড়া জাগানো সিরিজটির তৃতীয় পর্ব ছিল আফ্রিকার বিখ্যাত The Great Migration নিয়ে। প্রায় এক মিলিয়ন বন্য প্রাণী আর জেব্রার এক বিশাল পথ পরিক্রমার বিস্ময়কর ফলাফল দেখা যায় সেরেঙ্গেটির সবুজ ভূমিতে। কেনিয়া অংশের সেরেঙ্গেটি বাস্তুসংস্থানের নাম মাসাই মারা। ফটোগ্রাফার জোনাস স্টেঙ্কভিস্ট যখন নাইকন D500 ক্যামেরা চোখের সামনে রেখে এই ছবিটি তোলেন, জেব্রারা তখন মারা নদীর পানে ছুটে চলছিল।

জাপানের উৎসবের আমেজে

জাপানের ঐতিহ্যবাহী আতশবাজির উৎসব © Naomi Sugitani

প্রতি বছর আগস্টের নয় তারিখ আতশবাজির এক উৎসব হয় জাপানে। নদীর উপর নির্মিত অস্থায়ী প্ল্যাটফর্মের উপর বাঁশের সিলিন্ডারের সাহায্যে এই আতশবাজির উৎসবে মাতে সবাই। কামনা করা হয় সুখ ও সৌভাগ্যের। ছবিটি এ বছরের ৯ আগস্ট জাপানের পার্বত্য গ্রাম তাকায়ামা থেকে সনির ILCE-7M2 ক্যামেরায় ধারণ করেন ফটোগ্রাফার নাওমি সুগিতানি।

মায়ানমারের যন্ত্রণার রক্ষাকবচ

এক যন্ত্রণাক্লিষ্ট মৃত ঐতিহ্যের জীবন্ত সাক্ষী © Han Lin Teh

এ গল্প যন্ত্রণার, এ কাহিনী অত্যাচারের, এ উপাখ্যান শত শতাব্দীর। এ যেন স্বীয় সৌন্দর্যে স্বেচ্ছায় কালিমা লেপন, পাছে যাতে কেউ লেপে দিতে না পারে কলঙ্কের যন্ত্রণাময় তিলক। এ ছবি কেবল মায়ানামারের এক আদিবাসী বৃদ্ধার তামাক সেবনের ধোঁয়াটে গল্প নয়, এ ছবি এক ইতিহাসের স্থির রূপান্তর। অনেক আগেকাল থেকেই মায়ানমারের অত্যাচারিত অনেক আদিবাসীই মুখে এমন উল্কি আঁকতো, যাতে তাদের মেয়েরা রক্ষা পায় অপহরণের হাত থেকে, কিংবা অত্যাচারী বার্মিজ রাজার লোলুপ দৃষ্টি থেকে। এই উল্কি অঙ্কন খুব একটা সুখকরও ছিল না তাদের জন্য। অবর্ণনীয় যন্ত্রণা ভোগ করে মেয়েদের মুখমণ্ডলে এঁকে দেওয়া হতো এই ‘রক্ষাকবচ’। অনেকে মারাও যেত এরকম কষ্টদায়ক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময়। আর যারা বেঁচে থাকতো, তারা বহন করে বেড়াতো এক পরিবর্তিত মুখাবয়ব। এ যেন এক যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আরেক যন্ত্রণাকে আমন্ত্রণ জানানো। খুশির খবর এই যে, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে মায়ানামারে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় এই যন্ত্রণাদায়ক প্রথাটিকে। ফটোগ্রাফার হান লিনের ক্যামেরায় যেন ফুটে উঠেছে এক শতাব্দী প্রাচীন যন্ত্রণার চলমান ঐতিহ্য।

ফিচার ইমেজ: Source: All The Photographers, Edited by Writer

Related Articles