বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচনা-সমালোচনা সবই মধ্যপ্রাচ্য ঘিরে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল বার বার আলোচনায় এসেছে আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব নিয়ে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল আরব বসন্ত, সিরিয়া যুদ্ধ, জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-এর উত্থান ও তাদের তাণ্ডব এবং ইয়েমেন সঙ্কট। সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে কাতারের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশের সম্পর্ক ছেদের ঘটনা- যা বিশ্ব গণমাধ্যমে ‘কাতার সঙ্কট’ নামে পরিচিত। এটা নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন জাগে। চলুন, এবার সেগুলো সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
সঙ্কটের সূচনা কবে থেকে?
গত মে মাসের ২৩ তারিখে কাতার নিউজ এজেন্সি (কিউএনএ) কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বরাত দিয়ে একটি খবর প্রকাশ করে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব সফর নিয়ে সমালোচনা করা হয়। সেই সঙ্গে ইরানের ব্যাপক প্রশংসা করা হয়, যা মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
পরবর্তীতে কাতার সরকারের যোগাযোগ দপ্তর থেকে জানানো হয় যে, কিউএনএ’র ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছিল এবং আমিরের বরাত দিয়ে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছিল সেটি মিথ্যা। এ বিষয় তদন্ত করে দোষীদেরকে শাস্তি দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।
তবে আল আরাবিয়্যা দাবি করেছে যে কিউএনএ’র ওয়েবসাইট হ্যাক হয়নি। ফলে আমিরের দেয়া বিবৃতি ভুয়া হতে পারে না। এ বিষয় তারা বেশ কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেছিল।
সৌদি আরবসহ অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
কাতারের আমিরের ‘ভুয়া’ বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর পর সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার সম্প্রচার তাদের দেশে বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তীতে দেশটির বিরুদ্ধে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস, আল কায়েদাকে সমর্থন দান, মুসলিম ব্রাদারহুডকে সহযোগিতা প্রদানের অভিযোগ এনে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে জিসিসিভুক্ত (GCC) দেশ বাহরাইন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত।
জিসিসি বলতে কি বোঝায়?
GCC মানে Gulf Cooperation Council। এটি আরব উপদ্বীপের ছয়টি দেশের একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট। দেশগুলো হলো সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কাতার। নিজের মধ্যে সম্পর্ক ও সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ১৯৮১ সালে এই জোটটি গঠন করা হয়।
কখন সৌদি আরবসহ অন্য দেশ কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে?
গত ৫ জুন স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় সর্বপ্রথম বাহরাইন সম্পর্ক ছেদের ঘোষণা দেয়। এর ১০ মিনিটের মধ্যে সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও মিশরও একই ঘোষণা দেয়। কয়েকদিন পর জর্ডান সম্পর্ক কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয় এবং সে দেশে আল জাজিরা প্রচার বন্ধ করে দেয়। পর্যায়ক্রমে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার মালদ্বীপ।
সম্পর্ক ছেদ বলতে কি বোঝায়?
সাধারণত সম্পর্ক ছেদ বলতে বোঝায় যে দেশের সাথে সম্পর্ক ছেদ করা হয় সেই দেশ থেকে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদেরকে (রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা) প্রত্যাহার করে নেয়া এবং কূটনৈতিক মিশন (দূতাবাস বা হাইকমিশনারের কার্যালয়) বন্ধ করে দেয়া। একই সঙ্গে ঐ দেশের প্রতিনিধিদেরকে দেশ ত্যাগ করতে নির্দেশ দেয়া হতে পারে। তবে সম্পর্ক একেবারে নিম্ন পর্যায় নেমে গেলে এমন আদেশ দেয়া হয়।
কাতার সঙ্কটে দেখা গেলো বহুমাত্রিকতা। কাতারের কূটনীতিকদেরকে দেশত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল বাহরাইন ও মিশর। সেই সঙ্গে নিজেদের কূটনীতিকদেরও প্রত্যাহার করে নিয়েছিল তারা।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আরো ভয়াবহ নির্দেশ জারি করেছিল। দেশ দুটিতে বসবাসরত ও সফররত সকল কাতারি নাগরিকদের দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশ ছেড়ে যেতে বলা হয়েছিল। নিজেদের নাগরিকদেরকেও কাতার থেকে ফিরে আসার আদেশ দিয়েছিল।
সৌদি আরব এখানেই থামেনি। ইয়ামেন যুদ্ধ থেকে কাতারি সৈন্যও ফেরত পাঠিয়েছিল। সৌদি নেতৃত্বাধীন জিসিসি রাষ্ট্রের সেনারা সেখানে হুথিদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
এমনকি কাতারের উট ও ভেড়াও ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি। দেশটিতে ৭,০০০ কাতারি উট ও ৫,০০০ ভেড়া ছিল। তবে কোনো কোনো পত্রিকা লিখেছে, সৌদি থেকে ১৫ হাজার উট ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কাতারগামী বা কাতার ফেরত সব ধরনের যানবাহন, নৌযান ও বিমান চলাচলের জন্য নিজেদের স্থল, নৌ ও আকাশপথ বন্ধ ঘোষণা করে সৌদি, আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর। উল্লেখ্য, শুধু সৌদি আরবের সঙ্গেই স্থল সীমানা আছে কাতারের।
কাতারের তাৎক্ষণিক বক্তব্য কী ছিল?
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে জানিয়েছিল- যে চারটি দেশ সম্পর্ক ছেদের পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা “অবৈধ”। “তাদের সিদ্ধান্ত সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের শামিল।” নিজেদের নাগরিকদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেটার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানিয়েছিল কাতার।
কোন কোন দেশ এখন পর্যন্ত কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছে?
এখন পর্যন্ত মোট ১০টি দেশ সম্পর্ক ছেদ করেছে। সেগুলো হলো: ১. বাহরাইন, ২. সংযুক্ত আরব আমিরাত, ৩. সৌদি আরব, ৪. মিশর, ৫. ইয়েমেন, ৬. লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের সরকার, ৭. মালদ্বীপ, ৮. মৌরিতানিয়া, ৯. সেনেগাল ও ১০. কমোরোস।
জর্ডান ও জিবুতি সম্পর্কের অবনতি ঘটালেও সম্পক ছেদ করেনি।
তবে এখনও কাতারে মোট ৮৯টি কূটনৈতিক মিশন চালু আছে। একটি প্রতিনিধি অফিস আছে এবং ৩৪টি দেশ আঞ্চলিক দূতাবাসের মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
এর আগে কি কখনো জিসিসি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল?
এর আগেও কাতার ও উপসাগরীয় অন্য দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থনের অভিযোগ এনে ২০১৪ সালেও কাতার থেকে নিজেদের কূটনীতিকদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন। তবে তখন কাতারের সঙ্গে তাদের সীমান্ত উন্মুক্ত ছিল এবং কাতারের নাগরিকদেরকে বের করে দেয়া হয়নি।
কাতারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ আনা হয়েছিল যে তারা মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিচ্ছে। এছাড়া দোহাভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকেও নিয়েও তাদের অভিযোগ ছিল।
২০১১ সালে যখন আরব বসন্ত শুরু হয়, তখন তাদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে মোড় নেয়। তখন সৌদি আরব ও কাতার ভিন্ন ভিন্ন দলকে সমর্থন দেয় বলে প্রতীয়মান হয়েছিল।
কাতারিদের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে কেমন প্রভাব পড়েছে?
উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতি তেল ও গ্যাস নির্ভর হওয়ায় নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নির্ভরশীলতা কম। অন্যদিকে, কাতার সমুদ্র তীরবর্তী রাষ্ট্র হওয়ায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমদানি-রফতানিতে কোনো সমস্যা হয় না।
সৌদি জোটের সম্পর্ক ছেদের পর ইরান ও তুরস্ক থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কাতারে আমদানি বেড়েছে। ফলে তাদের বাজারে বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। যদিও ৫ জুন সম্পর্ক ছেদের ঘোষণা আসার পর পর কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল।
সৌদি আরবের আকাশসীমা দিয়ে কি কাতারের বিমান চলাচল করতে পারে?
না, কাতারের বিমান সৌদি আরব, আমিরাত, মিশর ও বাহরাইনের আকাশসীমা দিয়ে চলাচল করতে পারে না।
জিসিসির সব রাষ্ট্রই কি সম্পর্ক ছেদ করেছে?
না, জিসিসির অন্য পাঁচটি দেশের মধ্যে ওমান ও কুয়েত সম্পর্ক ছেদ করেনি। কুয়েতের আমির মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সমঝোতার জন্য কী কী শর্ত দিয়েছে সৌদি জোট?
কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গত ২৩ জুন ১৩টি শর্ত দিয়েছিল সৌদি জোট এবং সেগুলো মেনে নিতে ১০ দিনের সময় দিয়েছিল। শর্তগুলো হলো:
১. ইরানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
২. সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে হবে।
৩. আল জাজিরা ও এর সঙ্গে যুক্ত অন্য গণমাধ্যমগুলো বন্ধ করতে হবে।
৪. কাতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অর্থায়ন করে এমন সব গণমাধ্যম বন্ধ করতে হবে।
৫. কাতারে তুরস্কের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বন্ধ করতে হবে এবং কাতারের সঙ্গে তুরস্কের যেকোনো ধরনের মিলিটারি সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে।
৬. সৌদি, আমিরাত, বাহরাইন, মিশর, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ কর্তৃক ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষিত কোনো ব্যক্তি, দল বা সংগঠনকে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।
৭. সৌদি, আমিরাত, বাহরাইন, মিশর কর্তৃক ঘোষিত সন্ত্রাসী বা পলাতক ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে ও তাদের সম্পত্তি জব্দ করতে হবে।
৮. সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ করা বন্ধ করতে হবে।
৯. সৌদি, আমিরাত, বাহরাইন, মিশরে যারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে হবে এবং তাদের সম্পর্কে যে তথ্য আছে তা হস্তান্তর করতে হবে।
১০. কাতারের নীতির ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরে জান-মালের যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
১১. শর্ত মেনে নেয়ার পর প্রথম বছর প্রতি মাসে একবার, দ্বিতীয় বছরে তিন মাসে একবার এবং পরের ১০ বছর যাবৎ প্রতি বছর একবার করে শর্ত মানা হয়েছে কিনা তা নিরীক্ষা করে দেখার অনুমতি দিতে হবে।
১২. সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিলে থাকতে হবে।
১৩. উপরের শর্তসমূহ সংবলিত কাগজ হাতে পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে মেনে নিতে হবে। তা না হলে এই শর্ত অকার্যকর হিসেবে গণ্য হবে।
শর্তের জবাবে কাতার কী বলেছে?
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদির জোটের দেয়া শর্ত নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, “এগুলো যুক্তিসঙ্গত বা বাস্তবায়নযোগ্য নয়।” অন্যদিকে এক মুখপাত্র বলেছেন যে, “সরকার সেগুলো পর্যালোচনা করছে।”
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি বলেছেন, “অবরোধ দেয়া দেশগুলোকে অভিযোগের একটি যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবায়নযোগ্য তালিকা দিতে আহ্বান করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বাস্তবসম্মত শর্তের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই তালিকা কোনো মানদণ্ডই পূরণ করে না।”
তিনি আরো বলেন, “এই শর্তই প্রমাণ করে যে তাদের অবরোধ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য নয়, কাতারের সার্বভৌমত্ব সীমিত করা ও পররাষ্ট্রনীতি অন্যের উপর নির্ভরশীল করার জন্য।”
আল জাজিরার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
কাতার সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত আল জাজিরা বাক স্বাধীনতা দমিয়ে দেয়ার অভিযোগ তুলেছিল। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, “কোনো সরকার বা কোনো কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে মাথা নত না করে পেশাগত মানদণ্ড বজায় রেখে আমরা সাংবাদিকতা চর্চা করি।”
শর্ত না মানলে কী হবে?
আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে শর্ত মানতে ব্যর্থ হলে কাতারকে একপেশে করে রাখা হবে। তিনি বলেন, “এর বিকল্প সম্পর্কের আরো অবনতি নয়। বিকল্প হলে একপেশে করে রাখা। যারা উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী এজেন্ডায় সক্রিয়ভাবে মদদ দিবে তাদের সঙ্গে সমষ্টিগতভাবে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি না।”
তুরস্ক কী বলেছে?
তুরস্ক আরব দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতার কথা বলেছে। সেই সঙ্গে তারা কাতারকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে। ২০১৪ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী কাতারে একটি সামরিক ক্যাম্পও প্রতিষ্ঠা করছে। সঙ্কট শুরু হওয়ার পর সেখানে সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি করেছে দেশটি।
ইরান কি কাতারের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তোলার সুযোগ নিচ্ছে?
সৌদি আরবের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার পর কাতারে খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে ইরান। শিয়াপন্থী দেশটির কৃষিপণ্য রফতানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজা নৌরানি বলেছেন যে তারা ১২ ঘণ্টার মধ্যে দোহায় খাবার পৌঁছাতে পারেন।
সঙ্কট নিরাসনে আলোচনা ও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন ইরানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বারহাম ঘাসেমি বলেছেন, “এই অস্থিরতা এই অঞ্চলের প্রত্যেকের স্বার্থের হানি ঘটাতে পারে।”
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাহজুব জিউইরি বলেছেন, “উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে কোনো দীর্ঘ মেয়াদী কলহ ইরানকে এই অঞ্চলে শক্তিশালী করে তুলবে।”
ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে জড়ালো?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরের পর পরই কাতার সঙ্কট শুরু হলো। ট্রাম্প সৌদিতে আরব দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের সফরের আগের রাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস কাতারের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা বলেছিলেন এবং ইসলামপন্থীদের সমর্থন করার সমালোচনা করেছিলেন।
ওয়াশিংটন সম্মেলনে গেটস বলেছেন, “কাতারকে যেকোনো একপক্ষ বেছে নিতে বলুন অথবা মিলিটারি বেস কমিয়ে আনাসহ আমরা সম্পর্কের প্রকৃতি পরিবর্তন করব।”
কিন্তু কাতার সঙ্কট শুরু হওয়ার পর হোয়াইট হাউস বলেছে যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব মীমাংসা করতে সহযোগিতা করতে চান ট্রাম্প।পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন যে কাতারকে উগ্রবাদের মদদদাতা হিসেবে ইঙ্গিত করেছিলেন আরব নেতৃবৃন্দ।
ইসরায়েল কি এতে যুক্ত?
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এভিদোর লাইবারম্যান বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলোর বিভেদ। এটা থেকে বোঝা যায়, আরব দেশগুলোও বুঝতে পেরেছে যে ইহুদিবাদ নয়, সন্ত্রাসবাদই তাদের বিপদ।”
সঙ্কটের সমাধান নিয়ে অনেক কথা হলেও কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত ছাড় দিতে নারাজ। কাতারকে যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল, সেটি পার হলে শর্ত মেনে নিতে আরো ৪৮ ঘণ্টা সময় বৃদ্ধি করেছিল সৌদি জোট। কাতার ইতোমধ্যে নিজেদের জবাব মধ্যস্থতাকারী কুয়েতি আমিরের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। জবাব পাওয়ার পর সৌদি আরব বলেছে, তারা নিজেদের প্রতিক্রিয়া পরে জানাবে। কাতার যে সৌদি জোটের দাবি মেনে নেয়নি, সেটা দেশটির অর্থমন্ত্রী আলী শরীফ আল-এমাদির কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, “সৌদি জোটের অবরোধের মুখোমুখি হওয়ার মতো যথেষ্ট ধনী কাতার।”
তার কথা থেকে বোঝা যায়, সহসাই কাটছে না সঙ্কট। ফলে জিসিসি থেকে বের হয়ে ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে অলিখিত জোটে যোগ দিল কাতার। শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।